রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৩৪
অধ্যায়: ৭৪ সহনশীলতা, ধীরস্থিরতা ও কোমলতা
সৌন্দর্য ও শোভা সৃষ্টিতে কোমলতা
হাদীছ নং: ৬৩৪

হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোমলতা যে জিনিসেই থাকে, তাকে তা সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যে জিনিস থেকেই কোমলতা তুলে নেওয়া হয়, তাকেই তা অশোভন করে। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৯৪; আল আদাবুল মুফরাদ: ৪৬৯; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৪৯২; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ১৬১৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩০৪; সুনানে আবূ দাউদ: ২৪৭৮)
74 - باب الحلم والأناة والرفق
634 - وعنها: أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ في شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ، وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে কোমলতা অবলম্বনে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি সরাসরি এ কথাটি বলেছিলেন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-কে লক্ষ্য করে। একদিন তিনি একটি উটে চড়েছিলেন। উটটি ভালো চলছিল না। তিনি সেটিকে দ্রুত চলার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! কোমলতা অবলম্বন করো। কেননা কোমলতা যে জিনিসেই থাকে, তাকে তা সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যে জিনিস থেকেই কোমলতা তুলে নেওয়া হয়, তাকেই তা অশোভন করে।
অর্থাৎ উট চালানোও যদি কোমলভাবে হয়, তবে তা সুন্দরভাবে হয়। হাদীছটিতে কথাটি বলা হয়েছে ব্যাপকভাবে। সুতরাং যে-কোনও জিনিসে কোমলতা অবলম্বন করা হবে, তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। কঠোরতা দ্বারা কোনও জিনিসই ভালো হয় না। এমনকি ইবাদত-বন্দেগীও। কেউ যদি গায়ের জোরে ইবাদত-বন্দেগী করতে চায়, তবে সে তা কখনওই ভালোভাবে করতে পারবে না। শরীরের সবটা শক্তি ব্যয় করে নামায পড়তে চাইলে কিংবা রোযা রাখতে চাইলে তা কদিন পারা যাবে? একসময় ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দেবে। তাই আসানীর সঙ্গে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করলেই ভালোভাবে করা যায় ও নিয়মিত করা যায়। শিশুদের লালন-পালন কোমলভাবে করলেই তা সুন্দর হয়। শিক্ষাদানে কোমলতা অবলম্বন করলে ভালো সুফল পাওয়া যায়। খাদেম ও অধীনদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করলে তাদের দ্বারা সেবাযত্নের কাজ সুন্দর ও সুচারু হয়। স্বামী- স্ত্রীর পারস্পরিক আচরণ কোমল হলে দাম্পত্যজীবন সুন্দর হয়।

পক্ষান্তরে কর্মপন্থা কঠোর ও রূঢ় হলে কোনও কাজই নিখুঁত হয় না। ইবাদত হয় ত্রুটিপূর্ণ, দাম্পত্যজীবন হয় অশান্তিময়, লালন-পালন ও তত্ত্বাবধানের কাজ হয় অসুন্দর, শিক্ষাদান হয় দায়সারা। এমনকি চাষাবাদের কাজেও কঠোরতা কাম্য নয়। কৃষক-শ্রমিক আপন কাজে কোমলমতিত্বের পরিচয় না দিলে তার দ্বারা যা হবে তা কেবলই শক্তির অপচয়। যে উদ্দেশ্যে তার শক্তিব্যয়, তা কখনওই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ও সুচারুরূপে পূরণ হবে না। সকল কাজের বেলায় এ কথা সত্য। কর্মপন্থায় কোমলতা অবলম্বন হয় তখনই, যখন সে কাজে প্রাণের স্পর্শ থাকে। প্রাণ দিয়ে কাজ না করলে সে কাজে কঠোরতার ছাপ পড়ে। ফলে তা হয় অসম্পূর্ণ ও দোষযুক্ত। অভিজ্ঞতা দ্বারাই এটা প্রমাণিত। সে কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছ দ্বারা সকল কাজে কোমলতা অবলম্বনের প্রতি উৎসাহদান করেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

কোনও কাজ ত্রুটিহীন ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে চাইলে তা অবশ্যই আন্তরিকতার সঙ্গে ও কোমলভাবে করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৬৩৪ | মুসলিম বাংলা