আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৬- দুআ - যিকরের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬৩১৪
৩৩৫১. ডান গালের নীচে ডান হাত রেখে ঘুমানো।
৫৮৭৫। মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ......... হুযাইফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাতখানা গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনার নামেই মৃত্যুবরণ করি। এবং আপনার নামেই জীবিত হই। আর যখনই জাগতেন তখন বলতেনঃ আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা, তিনি মৃত্যুদানের পর আমাদের পুনরায় জীবন দান করলেন এবং তারই দিকে আমাদের পুনরুত্থান।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে ঘুমাতেন তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- وضع يده تحت خده (তাঁর হাত গালের নিচে রাখতেন)। অন্য বর্ণনায় আছে-
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أخذ مضجعه جعل كفه اليمنى تحت خده الأيمن
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন ডান হাত ডান গালের নিচে রাখতেন।
(সুনানে নাসাঈ: ২৩৬৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬৫৩৫; মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৩১;সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪৫; মুসনাদে আবু ইয়া'লা ১৬৮২; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৬১৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫২২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০০৮৪; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লায়লা: ৭৩০)
বোঝা গেল ঘুমের একটি আদব হল ডান হাত ডান গালের নিচে রেখে শোওয়া। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের দু'আ পড়তেন। ঘুমের বিভিন্ন দু'আ আছে। এ হাদীছে বর্ণিত দু'আটি হল- اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا.(হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি ও বাঁচি)। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জীবন ও মৃত্যু আপনারই হাতে। তাই আমি আপনার নামেই মৃত্যুবরণ করছি অর্থাৎ ঘুমাচ্ছি। আর আপনার নামেই আমি জীবিত হব। অর্থাৎ আমি যদি এ ঘুম থেকে জাগি, তবে সে জাগাটা হবে আপনার ইচ্ছায় এবং আপনারই কুদরতে।
এ দু'আয় ঘুমকে 'মৃত্যু' এবং ঘুম থেকে জাগাকে 'জীবনলাভ' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। অপর এক হাদীছে ঘুমকে মৃত্যুর ভাই বলা হয়েছে। নিদ্রাবস্থায়ও মানুষের রূহ এক পর্যায়ের কবজ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ের নয়। সাময়িক কালের জন্য। তাই ঘুম থেকে জাগরণকালে সে রূহ আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছায় আবার ফিরে আসে। আর যার মৃত্যুক্ষণ এসে যায়, তার রূহ পরিপূর্ণভাবে কবজ করা হয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَى إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
'আল্লাহ রূহসমূহকে কবজ করেন তাদের মৃত্যুকালে আর এখনও যার মৃত্যু আসেনি তাকেও (কবজ করেন) তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার সম্পর্কে তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেছেন, তাকে রেখে দেন আর অন্যান্য রূহকে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ছেড়ে দেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে বহু নিদর্শন আছে সেইসকল লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে’
(সূরা যুমার, আয়াত ৪২)
ঘুমের এছাড়া আরও দু'আ আছে। যেমন-
اللَّهُمَّ قنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
'হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ওইদিন আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে (কবর থেকে হাশরের ময়দানে জমা করার জন্য) ওঠাবেন।
(সুনানে আবূ দাউদ: ৫০৪৫; জামে তিরমিযী: ৩৯৮; মুসনাদে আহমাদ: ৪২২৫; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৭৪৪; মুসনাদুল হুমায়দী: ৪৪৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৩১২; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৮৭৭; মুসনাদুল বাযযার ৭২৭৫; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১০৫২১: সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫২২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০২৮২)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগার পর যে দু'আ পড়তেন তা হলো-
الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَحْيَانا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النشْوْرُ
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর। আর তাঁরই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন’।
এখানে জীবন দেওয়ার অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত করা আর মৃত্যু দেওয়ার অর্থ ঘুম দেওয়া। ঘুম একটি বড় নি'আমত। এ নি'আমত আল্লাহ তা'আলাই দিয়ে থাকেন। তবে ঘুম থেকে জাগ্রত করা অধিকতর বড় নি'আমত। কেননা জাগ্রত অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগী ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় কোনও আমল করা যায় না। তা মৃত্যুতুল্য। কাজেই ঘুম থেকে জাগতে পারার কারণে শোকর আদায় করা দরকার অধিকতর। তাই এ দু'আয় সরাসরি শোকর আদায় করা হয়েছে জাগ্রত হতে পারার জন্য। এর ভেতর দিয়ে ঘুমাতে পারার জন্যও শোকর আদায় হয়ে গেছে, যেহেতু ঘুম দেওয়াটাকে আল্লাহ তা'আলার কাজরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
দু'আটির শেষে বলা হয়েছে- وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ (তাঁরই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন)। এটি দু'আর বক্তব্যের সঙ্গে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ। যদিও শোকর আদায় করা হয়েছে ঘুমের পর জাগ্রত হতে পারার কারণে, কিন্তু সেজন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- মৃত্যুর পর জীবিত করা। আর সত্যিকারের মৃত্যুর পর যখন জীবিত করা হবে, তখন তো সকলের প্রত্যাবর্তন আল্লাহ তা'আলার কাছেই হবে। তখন আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেককে তার আমলের প্রতিদান দেবেন। বলাবাহুল্য, আমল করা হয় জাগ্রত অবস্থায়, ঘুমন্ত অবস্থায় নয়। তাহলে দু'আটির সারমর্ম দাঁড়াল- আল্লাহর শোকর যে, তিনি আমাদেরকে ঘুম দেওয়ার পর ঘুম থেকে জাগ্রত করেছেন। জাগ্রত অবস্থাটা কাজের জন্য। তিনি আমাদেরকে জাগ্রত করে আমল বা কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন আমরা যদি এ অবস্থায় সৎকর্ম করি, তবে মৃত্যুর পর যখন তিনি আমাদেরকে জীবিত করে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেবেন,তখন এ সৎকর্মের জন্য তাঁর কাছে প্রতিদান ও পুরস্কার লাভ করব। এর ভেতর দিয়ে যেন আল্লাহ তা'আলার কাছে এই দু'আও করা হচ্ছে যে হে আল্লাহ। জাগ্রত অবস্থায় আমরা যেন আপনার ইবাদত-বন্দেগী ও সৎকর্মে নিয়োজিত থাকি, সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন।
উল্লেখ্য, ঘুম থেকে জাগার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এছাড়া অন্য দু'আও পড়তেন। যেমন হাদীছে একটি দু'আ বর্ণিত হয়েছে এরূপ-
سبحان الذي يحيي الموتى وهو على كل شيء قدير، اللهم اغفر لي ذنوبي يوم تبعثني من قبري، اللهم قني عذابك يوم تبعث عبادك
'মহান ও পবিত্র সেই সত্তা, যিনি মৃতদের জীবিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আপনি সেদিন আমার পাপরাশি ক্ষমা করুন, যেদিন আমাকে আমার কবর থেকে উঠাবেন। হে আল্লাহ! যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে। উঠাবেন, সেদিন আমাকে আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন।'
এ দু'আটি সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে ওঠে এটি পড়ে, আল্লাহ তা'আলা তার সম্পর্কে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করেছে। (মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ২০৩৭; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা: ১১; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক: ৯৭৫)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ঘুমের সময় ডান হাত ডান গালের নিচে রেখে শোওয়া সুন্নত।
খ. ঘুম দেওয়া ও ঘুম থেকে জাগ্রত করা আল্লাহ তা'আলারই কাজ। অন্য কেউ এ ক্ষমতা রাখে না।
গ. ঘুমানো ও ঘুম থেকে জাগা যেহেতু আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত, তাই এর জন্য শোকর আদায় করা কর্তব্য।
ঘ. ঘুমের আগের ও পরের দু'আ যেমন আল্লাহ তা'আলার কাছে কল্যাণের প্রার্থনা,তেমনি তা শোকর আদায়ের ভাষাও বটে। তাই ঘুমের আগের ও পরের দু'আ পড়ার আমল নিয়মিতভাবে করা চাই।
ঙ. আমাদেরকে অবশ্যই একদিন আল্লাহ তা'আলার কাছে ফিরে যেতে হবে। এ কথা কখনও ভুলতে নেই।
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أخذ مضجعه جعل كفه اليمنى تحت خده الأيمن
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন ডান হাত ডান গালের নিচে রাখতেন।
(সুনানে নাসাঈ: ২৩৬৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬৫৩৫; মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৩১;সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪৫; মুসনাদে আবু ইয়া'লা ১৬৮২; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ৪৬১৮; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫২২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০০৮৪; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লায়লা: ৭৩০)
বোঝা গেল ঘুমের একটি আদব হল ডান হাত ডান গালের নিচে রেখে শোওয়া। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের দু'আ পড়তেন। ঘুমের বিভিন্ন দু'আ আছে। এ হাদীছে বর্ণিত দু'আটি হল- اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا.(হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি ও বাঁচি)। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জীবন ও মৃত্যু আপনারই হাতে। তাই আমি আপনার নামেই মৃত্যুবরণ করছি অর্থাৎ ঘুমাচ্ছি। আর আপনার নামেই আমি জীবিত হব। অর্থাৎ আমি যদি এ ঘুম থেকে জাগি, তবে সে জাগাটা হবে আপনার ইচ্ছায় এবং আপনারই কুদরতে।
এ দু'আয় ঘুমকে 'মৃত্যু' এবং ঘুম থেকে জাগাকে 'জীবনলাভ' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। অপর এক হাদীছে ঘুমকে মৃত্যুর ভাই বলা হয়েছে। নিদ্রাবস্থায়ও মানুষের রূহ এক পর্যায়ের কবজ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ের নয়। সাময়িক কালের জন্য। তাই ঘুম থেকে জাগরণকালে সে রূহ আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছায় আবার ফিরে আসে। আর যার মৃত্যুক্ষণ এসে যায়, তার রূহ পরিপূর্ণভাবে কবজ করা হয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنْفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَى إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
'আল্লাহ রূহসমূহকে কবজ করেন তাদের মৃত্যুকালে আর এখনও যার মৃত্যু আসেনি তাকেও (কবজ করেন) তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার সম্পর্কে তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেছেন, তাকে রেখে দেন আর অন্যান্য রূহকে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ছেড়ে দেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে বহু নিদর্শন আছে সেইসকল লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে’
(সূরা যুমার, আয়াত ৪২)
ঘুমের এছাড়া আরও দু'আ আছে। যেমন-
اللَّهُمَّ قنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
'হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ওইদিন আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে (কবর থেকে হাশরের ময়দানে জমা করার জন্য) ওঠাবেন।
(সুনানে আবূ দাউদ: ৫০৪৫; জামে তিরমিযী: ৩৯৮; মুসনাদে আহমাদ: ৪২২৫; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৭৪৪; মুসনাদুল হুমায়দী: ৪৪৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৯৩১২; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৮৭৭; মুসনাদুল বাযযার ৭২৭৫; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ১০৫২১: সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫২২; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১০২৮২)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগার পর যে দু'আ পড়তেন তা হলো-
الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَحْيَانا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النشْوْرُ
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর। আর তাঁরই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন’।
এখানে জীবন দেওয়ার অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত করা আর মৃত্যু দেওয়ার অর্থ ঘুম দেওয়া। ঘুম একটি বড় নি'আমত। এ নি'আমত আল্লাহ তা'আলাই দিয়ে থাকেন। তবে ঘুম থেকে জাগ্রত করা অধিকতর বড় নি'আমত। কেননা জাগ্রত অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগী ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় কোনও আমল করা যায় না। তা মৃত্যুতুল্য। কাজেই ঘুম থেকে জাগতে পারার কারণে শোকর আদায় করা দরকার অধিকতর। তাই এ দু'আয় সরাসরি শোকর আদায় করা হয়েছে জাগ্রত হতে পারার জন্য। এর ভেতর দিয়ে ঘুমাতে পারার জন্যও শোকর আদায় হয়ে গেছে, যেহেতু ঘুম দেওয়াটাকে আল্লাহ তা'আলার কাজরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
দু'আটির শেষে বলা হয়েছে- وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ (তাঁরই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন)। এটি দু'আর বক্তব্যের সঙ্গে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ। যদিও শোকর আদায় করা হয়েছে ঘুমের পর জাগ্রত হতে পারার কারণে, কিন্তু সেজন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- মৃত্যুর পর জীবিত করা। আর সত্যিকারের মৃত্যুর পর যখন জীবিত করা হবে, তখন তো সকলের প্রত্যাবর্তন আল্লাহ তা'আলার কাছেই হবে। তখন আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেককে তার আমলের প্রতিদান দেবেন। বলাবাহুল্য, আমল করা হয় জাগ্রত অবস্থায়, ঘুমন্ত অবস্থায় নয়। তাহলে দু'আটির সারমর্ম দাঁড়াল- আল্লাহর শোকর যে, তিনি আমাদেরকে ঘুম দেওয়ার পর ঘুম থেকে জাগ্রত করেছেন। জাগ্রত অবস্থাটা কাজের জন্য। তিনি আমাদেরকে জাগ্রত করে আমল বা কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এখন আমরা যদি এ অবস্থায় সৎকর্ম করি, তবে মৃত্যুর পর যখন তিনি আমাদেরকে জীবিত করে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেবেন,তখন এ সৎকর্মের জন্য তাঁর কাছে প্রতিদান ও পুরস্কার লাভ করব। এর ভেতর দিয়ে যেন আল্লাহ তা'আলার কাছে এই দু'আও করা হচ্ছে যে হে আল্লাহ। জাগ্রত অবস্থায় আমরা যেন আপনার ইবাদত-বন্দেগী ও সৎকর্মে নিয়োজিত থাকি, সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন।
উল্লেখ্য, ঘুম থেকে জাগার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এছাড়া অন্য দু'আও পড়তেন। যেমন হাদীছে একটি দু'আ বর্ণিত হয়েছে এরূপ-
سبحان الذي يحيي الموتى وهو على كل شيء قدير، اللهم اغفر لي ذنوبي يوم تبعثني من قبري، اللهم قني عذابك يوم تبعث عبادك
'মহান ও পবিত্র সেই সত্তা, যিনি মৃতদের জীবিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আপনি সেদিন আমার পাপরাশি ক্ষমা করুন, যেদিন আমাকে আমার কবর থেকে উঠাবেন। হে আল্লাহ! যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে। উঠাবেন, সেদিন আমাকে আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন।'
এ দু'আটি সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঘুম থেকে ওঠে এটি পড়ে, আল্লাহ তা'আলা তার সম্পর্কে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে এবং সে কৃতজ্ঞতা আদায় করেছে। (মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ২০৩৭; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা: ১১; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক: ৯৭৫)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ঘুমের সময় ডান হাত ডান গালের নিচে রেখে শোওয়া সুন্নত।
খ. ঘুম দেওয়া ও ঘুম থেকে জাগ্রত করা আল্লাহ তা'আলারই কাজ। অন্য কেউ এ ক্ষমতা রাখে না।
গ. ঘুমানো ও ঘুম থেকে জাগা যেহেতু আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত, তাই এর জন্য শোকর আদায় করা কর্তব্য।
ঘ. ঘুমের আগের ও পরের দু'আ যেমন আল্লাহ তা'আলার কাছে কল্যাণের প্রার্থনা,তেমনি তা শোকর আদায়ের ভাষাও বটে। তাই ঘুমের আগের ও পরের দু'আ পড়ার আমল নিয়মিতভাবে করা চাই।
ঙ. আমাদেরকে অবশ্যই একদিন আল্লাহ তা'আলার কাছে ফিরে যেতে হবে। এ কথা কখনও ভুলতে নেই।


বর্ণনাকারী: