রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬২৫
অধ্যায় : ৭৩ উত্তম চরিত্র
মীযানে কোন জিনিসের ওজন সবচে' বেশি হবে
হাদীছ নং: ৬২৫
হযরত আবুদ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার আমলনামায় কোনওকিছুই সচ্চরিত্র অপেক্ষা বেশি ভারী হবে না। আল্লাহ তা'আলা অশ্লীল দুশ্চরিত্র লোককে ঘৃণা করেন। -তিরমিযী
(জামে তিরমিযী: ২০০২; সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৯; মুসনাদে আহমাদ: ২৭৫৫৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৮১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩২৩; আল-আদাবুল মুফরাদ: ২৭০)
হাদীছ নং: ৬২৫
হযরত আবুদ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার আমলনামায় কোনওকিছুই সচ্চরিত্র অপেক্ষা বেশি ভারী হবে না। আল্লাহ তা'আলা অশ্লীল দুশ্চরিত্র লোককে ঘৃণা করেন। -তিরমিযী
(জামে তিরমিযী: ২০০২; সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৯৯; মুসনাদে আহমাদ: ২৭৫৫৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৪৮১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩২৩; আল-আদাবুল মুফরাদ: ২৭০)
73 - باب حسن الخلق
625 - وعن أَبي الدرداءِ - رضي الله عنه: أن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَا مِنْ شَيْءٍ أثْقَلُ في مِيزَانِ العبدِ المُؤْمِنِ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ حُسْنِ الخُلُقِ، وَإنَّ الله يُبْغِضُ الفَاحِشَ البَذِيَّ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح» (1).
«البَذِيُّ»: هُوَ الَّذِي يتكلَّمُ بِالفُحْشِ ورديء الكلامِ.
«البَذِيُّ»: هُوَ الَّذِي يتكلَّمُ بِالفُحْشِ ورديء الكلامِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সচ্চরিত্র মুমিন ব্যক্তির জন্য অমূল্য সম্পদ। কিয়ামতের দিন এ সম্পদ বড় কাজ দেবে। এর ফযীলত সম্পর্কে এ হাদীছটিতে ইরশাদ হয়েছে- مَا مِنْ شَيْءٍ أَثْقَلُ فِي مِیْزَانِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ (কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার আমলনামায় কোনওকিছুই সচ্চরিত্র অপেক্ষা বেশি ভারী হবে না)। অর্থাৎ অবশ্যই একদিন কিয়ামত হবে। সেদিন সমস্ত মানুষকে আল্লাহ তা'আলার সামনে উপস্থিত হতে হবে। তখন মানুষের আমল পরিমাপ করা হবে। তা করার জন্য মীযান অর্থাৎ দাঁড়িপাল্লা দাঁড় করানো হবে। তার একদিকে মানুষের নেক আমল ও অপরদিকে মন্দ আমল তোলা হবে। যেদিক বেশি ভারী হবে, সে অনুযায়ী ফয়সালা করা হবে। নেক আমল ভারী হলে জান্নাতের ফয়সালা হবে, মন্দ আমল ভারী হলে জাহান্নামের ফয়সালা হবে। মানুষের নেক আমল আছে নানারকম। তার মধ্যে ভালো চরিত্র একটি। এটি মূলত অন্তরের আমল, যার প্রকাশ হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা। দাঁড়িপাল্লায় এ আমলটির ওজন হবে সর্বাপেক্ষা বেশি। বোঝা গেল মানুষের জান্নাতলাভে এ আমলটির অনেক বড় ভূমিকা থাকবে। আল্লাহ তা'আলা চান বান্দা জান্নাতবাসী হয়ে যাক। জান্নাতবাসী বান্দা আল্লাহর প্রিয়। এ আমলটি যখন জান্নাতলাভে ভূমিকা রাখে, তখন বোঝা যায় আল্লাহ তা'আলার কাছে বান্দার এ আমলটি খুবই পসন্দের। ভালো আখলাক-চরিত্র আল্লাহ তা'আলার কাছে পসন্দনীয় হলে নিশ্চয়ই মন্দ আখলাক-চরিত্র তাঁর কাছে ঘৃণার বস্তুই হবে। সুতরাং ভালো আখলাক-চরিত্র অর্জন ও মন্দ আখলাক-চরিত্র বর্জন করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কর্তব্য। মন্দ আখলাক-চরিত্রের মধ্যে বিশেষ একটি হল অশ্লীলতা। অশ্লীল কথা বলা ও অশ্লীল কাজ করা কোনও মুমিনের পক্ষে কিছুতেই শোভা পায় না। এটা আল্লাহর কাছে অতি ঘৃণ্য বস্তু। এ হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيَّ (আল্লাহ তা'আলা অশ্লীল দুশ্চরিত্র লোককে ঘৃণা করেন)। الْبَذِيّ শব্দটির উৎপত্তি البذاء থেকে। এর অর্থ চরিত্র মন্দ হওয়া, অশ্লীল কথা বলা, নিকৃষ্টভাষী হওয়া। এ বাক্যটিতে الْبَذِيُّ শব্দটি الْفَاحِسُ এর বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এ হিসেবে অর্থ হবে- আল্লাহ তা'আলা এমন ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, যে অশ্লীলও বটে এবং দুশ্চরিত্রও। অর্থাৎ অশ্লীলতার পাশাপাশি মন্দ চরিত্রের অন্যসব দিকও তার মধ্যে আছে। অথবা অর্থ হবে- যে ব্যক্তি অশ্লীল কথাও বলে এবং অন্যান্য মন্দ কথাও উচ্চারণ করে। এ হিসেবে হাদীছটি দ্বারা বাকশক্তির মন্দ ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বাকশক্তি আল্লাহর দান। একে কিছুতেই কোনওরূপ অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কথায় ব্যবহার করা উচিত নয়। যে ব্যক্তি তা করে, সে আল্লাহ তা'আলার কাছে ঘৃণ্য হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলার কাছে ঘৃণ্য হওয়া মানে শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলা তা থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কিয়ামত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা ঈমানের অঙ্গ।
খ. কিয়ামতে মীযান বা দাঁড়িপাল্লা স্থাপিত করার বিষয়টিও সত্য। তা অবিশ্বাস করা কুফরী।
গ. মীযানে বান্দার ভালো ও মন্দ সব আমল ওজন করা হবে।
ঘ. মুমিন বান্দার নেক আমলের মধ্যে সবচে' বেশি ওজন হবে সচ্চরিত্রের। তাই আমাদেরকে সচ্চরিত্র অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে।
ঙ. অশ্লীলতা আল্লাহর কাছে অতি ঘৃণ্য। আমাদেরকে এর থেকে বিরত থাকতে হবে।
চ. মুখের ভাষা সর্বপ্রকার অশালীনতা থেকে মুক্ত রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অতীব জরুরি।
وَإِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيَّ (আল্লাহ তা'আলা অশ্লীল দুশ্চরিত্র লোককে ঘৃণা করেন)। الْبَذِيّ শব্দটির উৎপত্তি البذاء থেকে। এর অর্থ চরিত্র মন্দ হওয়া, অশ্লীল কথা বলা, নিকৃষ্টভাষী হওয়া। এ বাক্যটিতে الْبَذِيُّ শব্দটি الْفَاحِسُ এর বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এ হিসেবে অর্থ হবে- আল্লাহ তা'আলা এমন ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, যে অশ্লীলও বটে এবং দুশ্চরিত্রও। অর্থাৎ অশ্লীলতার পাশাপাশি মন্দ চরিত্রের অন্যসব দিকও তার মধ্যে আছে। অথবা অর্থ হবে- যে ব্যক্তি অশ্লীল কথাও বলে এবং অন্যান্য মন্দ কথাও উচ্চারণ করে। এ হিসেবে হাদীছটি দ্বারা বাকশক্তির মন্দ ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বাকশক্তি আল্লাহর দান। একে কিছুতেই কোনওরূপ অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কথায় ব্যবহার করা উচিত নয়। যে ব্যক্তি তা করে, সে আল্লাহ তা'আলার কাছে ঘৃণ্য হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলার কাছে ঘৃণ্য হওয়া মানে শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাওয়া। আল্লাহ তা'আলা তা থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কিয়ামত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা ঈমানের অঙ্গ।
খ. কিয়ামতে মীযান বা দাঁড়িপাল্লা স্থাপিত করার বিষয়টিও সত্য। তা অবিশ্বাস করা কুফরী।
গ. মীযানে বান্দার ভালো ও মন্দ সব আমল ওজন করা হবে।
ঘ. মুমিন বান্দার নেক আমলের মধ্যে সবচে' বেশি ওজন হবে সচ্চরিত্রের। তাই আমাদেরকে সচ্চরিত্র অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে।
ঙ. অশ্লীলতা আল্লাহর কাছে অতি ঘৃণ্য। আমাদেরকে এর থেকে বিরত থাকতে হবে।
চ. মুখের ভাষা সর্বপ্রকার অশালীনতা থেকে মুক্ত রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অতীব জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
