রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৮৯
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ৬৮ পরহেযগারী অবলম্বন ও সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলি পরিহার
সচ্চরিত্রের গুরুত্ব ও পাপকর্মের আলামত
হাদীছ নং: ৫৮৯

হযরত নাউওয়াস ইবন সাম‘আন রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পুণ্য তো উত্তম চরিত্রই। আর পাপ তাই, যে সম্পর্কে তোমার অন্তরে খটকা লাগে এবং তুমি পসন্দ কর না মানুষ তা জেনে ফেলুক।-মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ২৫৫৩: জামে' তিরমিযী: ২৩৮৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৩৩৫: সুনানে দারিমী: ২৮৩১; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ২৯৫; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ২১৩৮)
مقدمة الامام النووي
68 - باب الورع وترك الشبهات
589 - وعن النَّواسِ بن سمعان - رضي الله عنه - عن النبيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «البِرُّ: حُسْنُ الخُلُقِ، وَالإِثْمُ: مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ، وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ». رواه مسلم. (1)
«حَاكَ» بِالحاءِ المهملةِ والكافِ: أيْ تَرَدَّدَ فِيهِ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

البر -এর অর্থ সৎকর্ম। এর বিপরীত হল الْفجُورُ। মানে পাপকর্ম। শরী'আত যেসকল কাজ আবশ্যিক করেছে, সাধারণত সেগুলোকে البر বলা হয়। কখনও কখনও 'পিতা-মাতার আনুগত্য' অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কারও প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করলে সে ক্ষেত্রেও শব্দটির ব্যবহার আছে। এছাড়াও বিভিন্ন অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সবগুলোর ব্যবহার সামনে রাখলে বোঝা যায় প্রকাশ্য ও গুপ্ত যত ইবাদত- আনুগত্য ও সৎকর্ম আছে, সবই البر -এর অন্তর্ভুক্ত। এ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম البر-এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-
الْبر حُسنُ الْخُلقِ (পুণ্য তো উত্তম চরিত্রই)। অর্থাৎ বেশিরভাগ পুণ্য ও সৎকর্ম উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা; কাউকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা; ক্ষুধার্তকে অন্নদান করা: নিজের জন্য যা পসন্দ, অন্যের জন্যও তা পসন্দ করা; সকলের প্রতি ন্যায় ও ইনসাফসম্মত আচরণ করা; নম্র-কোমল ব্যবহার করা: ন্যায়বিচার করা; নিজ স্বার্থের উপর অন্যের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া ইত্যাদি। এসব কাজের প্রতিটিই উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং এর প্রত্যেকটিই একেকটি সৎকর্ম। এবার জানার বিষয় হল পাপকর্ম কী? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ، وَكَرِهْتَ أَنْ يَطلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ ( আর পাপ তাই, যে সম্পর্কে তোমার অন্তরে খটকা লাগে এবং তুমি পসন্দ কর না মানুষ তা জেনে ফেলুক)। এখানে পাপকর্মের দু'টি বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে। এক হল অন্তরে খটকা লাগা। অর্থাৎ যে কাজ সম্পর্কে অন্তরে খটকা বা সন্দেহ জাগে যে, সেটি জায়েয না নাজায়েয, হারাম না হালাল, শরী'আতে অনুমোদিত না অনুমোদিত নয়, সেটি পাপকর্ম। কাজেই তা করা যাবে না। আর দ্বিতীয় হল মানুষের কাছে তা অপসন্দ হওয়া। ফলে তা মানুষ থেকে লুকিয়ে করার চেষ্টা করা হয়, সতর্ক থাকা হয় যাতে কেউ তা জানতে না পারে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাযি. বলেন-
مَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللهِ حَسَنٌ، وَمَا رَآهُ الْمُؤْمِنُوْنَ قَبِيْحًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ قَبِيحٌ
‘মুমিনগণ যে কাজকে ভালো মনে করে, আল্লাহ তা'আলার কাছেও সেটি ভালো। এবং মুমিনগণ যাকে মন্দ মনে করে, আল্লাহ তা'আলার কাছেও তা মন্দ।’(তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮৫৮৩; মুসনাদুল বাযযার: ১৮১৬: শারহুস সুন্নাহ: ১০৫)

মোটকথা এ দু'টি হল পাপকর্মের আলামত। কোনও কাজ সম্পর্কে যখন সন্দেহ লাগে যে, তা করব কি করব না, তখন এ দু'টি আলামতের প্রতি লক্ষ করতে হবে। যে কাজে এ দু'টি আলামত পাওয়া যায়, বুঝতে হবে তা আল্লাহর পসন্দ নয় এবং তা করলে পাপ হবে। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকা চাই।

এ হাদীছ দ্বারা বোঝা গেল স্বভাবগতভাবেই মানুষকে পাপ-পুণ্যের অনুভূতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন কাজ প্রশংসনীয় ও বৈধ এবং কোন কাজ নিন্দনীয় ও অবৈধ, মন থেকেই তার সাক্ষ্য পাওয়া যায়। তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ সে সাক্ষ্যের পরোয়া করে না। তা না করার কারণ ইন্দ্রিয়পরবশতা। অধিকাংশ মানুষ নিজ খেয়াল-খুশির কাছে পরাভূত। তাই পাপ-পুণ্যের উপলব্ধি থাকা সত্ত্বেও তারা সে উপলব্ধিকে কাজে লাগায় না। পুণ্যের বদলে পাপেই লিপ্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ইন্দ্রিয়পরবশতা থেকে রক্ষা করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সচ্চরিত্র শ্রেষ্ঠতম পুণ্য।

খ. সৃষ্টিগতভাবেই মানবমনে সৎকর্ম ও অসৎকর্মের উপলব্ধি থাকে।

গ. পাপকর্ম মানবমনে অস্থিরতা আনে।

ঘ. যে কাজ সম্পর্কে অন্যের জেনে ফেলাটা পসন্দ নয়, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তা কাজটি পাপকর্ম হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)