রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৬৭
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৬২ অন্যের জন্য স্বার্থত্যাগ ও সহমর্মিতা
পারস্পরিক সহমর্মিতা প্রকাশের এক উত্তম পন্থা
হাদীছ নং: ৫৬৭

হযরত আবূ মূসা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আশ‘আর গোত্রীয় লোকজন যুদ্ধকালে তাদের রসদ ফুরিয়ে গেলে কিংবা মদীনায় তাদের পরিবার-পরিজনের খাদ্য কমে গেলে তাদের যার কাছে যা থাকে তা একটি কাপড়ে একত্র করে। তারপর একটি পাত্র দ্বারা মেপে তা সকলের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করে নেয়। তারা আমার এবং আমি তাদের। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ২৪৮৬; সহীহ মুসলিম: ২৫০০; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৮৭৪৭; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৩০৯: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ২০৪৩৬)
مقدمة الامام النووي
62 - باب الإيثار والمواساة
567 - وعن أَبي موسى - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ الأشْعَرِيِّينَ إِذَا أرْمَلُوا في الغَزْوِ، أَوْ قَلَّ طَعَامُ عِيَالِهِمْ بالمَديِنَةِ، جَمَعُوا مَا كَانَ عِنْدَهُمْ في ثَوْبٍ وَاحِدٍ، ثُمَّ اقْتَسَمُوهُ بَيْنَهُمْ في إنَاءٍ وَاحدٍ بالسَّوِيَّةِ، فَهُمْ مِنِّي وَأنَا مِنْهُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«أرْمَلُوا»: فَرَغَ زَادُهُمْ أَوْ قَارَبَ الفَرَاغَ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে আশ‘আর গোত্রের পারস্পরিক সহমর্মিতার গুণটি তুলে ধরা হয়েছে। এ গোত্রটি ইয়ামানে বাস করত। তাদের বহুলোক ইসলাম গ্রহণ করে মদীনা মুনাউওয়ারায় হিজরত করেছিল। হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. এ গোত্রের এক বিখ্যাত সাহাবী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পরিপক্ক ঈমান, দীনের গভীর বুঝ ও কোমল মনের প্রশংসা করেছেন। এ হাদীছটিতে তাদের আরও একটি বিশেষ গুণ- পারস্পরিক সহমর্মিতার কথা বলে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তারা বাড়িতে থাকুক বা সফরে, সর্বাবস্থায় একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাত। তারা পরস্পরের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে নিত। খাদ্যসংকট দেখা দিলে তারা একটি চমৎকার কর্মপন্থা অবলম্বন করত। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত এরকম হয়ে থাকে যে, কারও ঘরে হয়তো একদম খাবার নেই, কারও ঘরে সামান্য কিছু থাকে, আবার কারও ঘরে খানিকটা বেশি। এ অবস্থায় পারস্পরিক সহমর্মিতা না থাকলে কেউ মোটামুটি খেতে পারে, কারও কোনওরকমে ক্ষুধা মেটে, আবার কাউকে সম্পূর্ণ অভুক্ত থাকতে হয়। আশ'আর গোত্র এটা মানতে পারত না। কেউ খাবে কেউ খাবে না। এরকম স্বার্থপরতা তাদের চরিত্রে ছিল না। তারা তাদের যার কাছে যা আছে, তা বেশি হোক বা কম, সবটা একটি কাপড়ে একত্র করত। তারপর তা সমানভাবে সকলের মধ্যে ভাগ করত। যার খানিকটা বেশি থাকত, সে যে পরিমাণ খাবার পেত, যার কিছুই থাকত না, সেও তার সমপরিমাণ পেত। এভাবে সবাই একাত্ম হয়ে মিলেমিশে জীবন নির্বাহ করত। তাদের এই সহমর্মিতাপূর্ণ চরিত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুব পসন্দ ছিল। এ কারণে তিনি দিলখুলে তাদের প্রশংসা করেন এবং ঘোষণা করেন-
فَهُمْ مِنِّي وأنا منهمْ (তারা আমার এবং আমি তাদের)। অর্থাৎ চরিত্র ও কর্মপন্থায় তারা আমারই মতো। তাই তারা আমার খুব কাছের। তারা আমার বড় আপনজন। আমিও তাদের খুব কাছের। আমিও তাদের আপনজন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও ব্যক্তির বা সমষ্টির চরিত্রে কোনও ভালো গুণ থাকলে তা প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

খ. নিজ স্বার্থের উপর অন্যের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া একটি মহৎ চরিত্র।

গ. সচ্ছল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির দুর্বল ও গরীবের প্রতি সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ করা উচিত।

ঘ. সফরকালে সফরসঙ্গীদের রসদ একত্র করে মিলেমিশে ব্যবহার করা বরকতলাভের পক্ষে সহায়ক।

ঙ. কোনও এলাকায় খাদ্যের অভাব দেখা দিলে সকলের খাবার একত্র করে তা মাথাপিছু হারে ভাগাভাগি করে নেওয়া সহমর্মিতা প্রকাশের এক উত্তম পন্থা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)