রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২৭
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৫৭ অল্পেতুষ্টি, অন্যের কাছে চাওয়া বা আশা করা হতে নিজেকে রক্ষা করা, জীবনযাত্রায় মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়ের প্রতি উৎসাহদান এবং অপ্রয়োজনে মানুষের কাছে চাওয়ার নিন্দা
পীড়াপীড়ি করে চাওয়ার ক্ষতি
হাদীছ নং: ৫২৭

হযরত আবূ আব্দুর রহমান মু'আবিয়া ইবন আবূ সুফয়ান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা (মানুষের কাছে) চাওয়ায় পীড়াপীড়ি করো না। আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে যে- কেউ আমার কাছে কিছু চায় এবং তার চাওয়া আমার কাছ থেকে কিছু এ অবস্থায় বের করে নেয় যে, আমি তার প্রতি অসন্তুষ্ট, তবে আমি তাকে যা দিলাম তাতে তার বরকত হবে না। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম: ১০৩৮; সুনানে নাসাঈ ২৫৯৩; মুসনাদুল হুমায়দী: ৬১৫; মুসনাদে আহমাদ : ১৬১৯৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৩৩৮৯; সুনানে দারিমী: ১৬৮৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৮০৮)
مقدمة الامام النووي
57 - باب القناعة والعَفاف والاقتصاد في المعيشة والإنفاق وذم السؤال من غير ضرورة
527 - وعن أَبي عبد الرحمان معاوية بن أبي سفيان - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «لاَ تُلْحِفُوا في الْمَسْأَلَةِ، فَوَاللهِ لاَ يَسْأَلُنِي أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا، فَتُخْرِجَ لَهُ مَسْأَلَتُهُ مِنِّي شَيْئًا وَأنَا لَهُ كَارهٌ، فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أعْطَيْتُهُ». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের কাছে পীড়াপীড়ি করে কোনওকিছু চাইতে নিষেধ করেছেন। পীড়াপীড়ি করে চাওয়া মানে বারবার চাইতে থাকা এবং যতক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দাতার পেছনে লেগে থাকা। একবার চাওয়ার পর যদি না দেয়, তবে পুনরায় আর তার কাছে চাওয়া উচিত নয়। কারণ পীড়াপীড়ি করে চাইলে মানুষ বিরক্ত হয়। এ অবস্থায় কিছু দিলে সে দেওয়াটা সন্তুষ্টির সঙ্গে হয় না। তাই তাতে বরকত হয় না। বিশেষত সে মাল যদি ব্যক্তিমালিকানার হয়, তবে তার সন্তুষ্টি ছাড়া তার মাল ভোগ করা বৈধও হয় না। পীড়াপীড়ি করে চাওয়ার পর সে যদি দেয়, তবে পুরোপুরি সন্তুষ্টির সঙ্গে দেয় না; বিরক্ত হয়েই দেয়। আর কারও জন্য অন্যের মাল হালাল হওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির সঙ্গে দেওয়া শর্ত। যেমন এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِطِيْب نَفْسٍ مِنْهُ
কোনও মুসলিম ব্যক্তির মাল তার মনের সন্তুষ্টি ছাড়া কারও জন্য হালাল হয় না।(মুসনাদে আহমাদ: ২১০৮২; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ৬৬৩৩; শারহু মুশকিলিল আছার: ২৮২৩; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা: ১১৫৪৫; শু'আবুল ঈমান : ৫১০৫)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, পীড়াপীড়ি করার পর দাতা যখন বিরক্ত হয়ে কিছু দেয়, তখন গ্রহীতার পক্ষে তা বরকতপূর্ণ হয় না। তা না হওয়ার কারণ এক তো হল পীড়াপীড়ি করে চাওয়া। এমনিতে চাওয়াটাই নিন্দনীয় কাজ। এতে ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। তদুপরি চাওয়াটা যদি হয় পীড়াপীড়ির সঙ্গে, তবে তা লোভ ও নির্লজ্জতারও বহিঃপ্রকাশ। উভয়টাই আল্লাহ তা'আলার কাছে ঘৃণ্য। মালে বরকত আল্লাহ তা'আলাই দান করেন। যে গ্রহণটা হয় আল্লাহ তা'আলার অপসন্দ পন্থায়, তাতে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বরকতের আশা করা যায় কীভাবে? দ্বিতীয়ত পীড়াপীড়ি করে চাওয়ার দ্বারা দাতাকে কষ্ট দেওয়া হয়। সে কিছু দিলে তা সন্তুষ্টির সঙ্গে নয়; বরং মনের কষ্ট ও বিরক্তির সঙ্গেই দেয়, যা মালের বরকতের জন্য বাধা।

সারকথা নিতান্ত ঠেকা অবস্থায় কারও কাছে যদি কিছু চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সে ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়াপীড়ির সঙ্গে চাইতে নিষেধ করেছেন এবং তার কারণ হিসেবে বরকত না হওয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিশেষ প্রয়োজনে কারও কাছে কিছু চাইতে হলেও তা কিছুতেই পীড়াপীড়ি করে চাওয়া উচিত নয়।

খ. মালের ভেতর বরকতও একটা কাম্য বিষয়। যা-কিছু দ্বারা বরকত বাধাগ্রস্ত হয়, তা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৫২৭ | মুসলিম বাংলা