রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৮৮
অধ্যায়ঃ ৫৫ দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তির ফযীলত, অল্পেতুষ্টির প্রতি উৎসাহদান ও দারিদ্র্যের মাহাত্ম্য।
হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশের জন্য ধনীদের আটকে যাওয়া
হাদীছ নং : ৪৮৮

হযরত উসামা ইবনে যায়দ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। তার অধিকাংশ প্রবেশকারীই ছিল মিসকীন। আর সম্পদশালীদের আটকে রাখা হয়েছে। তবে যারা জাহান্নামী, তাদেরকে ইতোমধ্যেই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার হুকুম করা হয়েছে - বুখারী ও মুসলিম।
55 - باب فضل الزهد في الدنيا والحث على التقلل منها وفضل الفقر
488 - وعن أسامة بن زيد رضي الله عنهما، عن النبي - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَكَانَ عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ، وَأصْحَابُ الجَدِّ مَحبُوسُونَ، غَيْرَ أنَّ أصْحَابِ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِم إِلَى النَّارِ». متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وَ «الجَدُّ»: الحَظُّ والغِنَى. وقد سبق بيان هَذَا الحديث في باب فَضْلِ الضَّعفَة.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির প্রথম অংশে আগের হাদীছটির মতোই বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতবাসীদের মধ্যে গরীবদেরকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দেখেছেন। এর ব্যাখ্যা ওই হাদীছে দেওয়া হয়েছে। এখানে তার পুনরাবৃত্তি করা যাচ্ছে না। এখানে হাদীছটির দ্বিতীয় অংশের ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে। এ অংশে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখিরাতে ধনীদের কী অবস্থা হবে এবং তিনি তাদেরকে কী অবস্থায় দেখেছেন তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন-
واصحاب الجد محبوسون (আর বিত্তবানদের আটকে রাখা হয়েছে)। অর্থাৎ তাদেরকে হিসাব-নিকাশের স্থানে হিসাব গ্রহণের জন্য আটকে রাখা হয়েছে। এর দ্বারা ওই সকল ধনীকে বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহ তা'আলার হক আদায় করেনি। হয়তো ঠিকভাবে যাকাত আদায় করেনি, ক্ষুধার্তকে অনুদান করেনি কিংবা অন্যান্য যেসকল ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা খরচ করা জরুরি ছিল সেসব ক্ষেত্রে খরচ করেনি। এ কারণেই তাদেরকে অর্থ-সম্পদের হিসাব দিতে হবে আর সেজন্যই তাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে যেসকল ধনী আল্লাহ তা'আলার হক আদায় করে এবং যাকাতসহ মালের অন্যান্য হক আদায় করে তাদেরকে আটকে রাখা হবে না। তারা সহজেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে। কিন্তু এরকম ধনীর সংখ্যা বড় কম। মানুষের স্বভাবই হল যত বেশি ধন-সম্পদ অর্জিত হয়, ততই অহংকারী ও অবাধ্য-স্পর্ধিত হয়ে ওঠে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
كَلَّا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَى أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَى 'বস্তুত মানুষ প্রকাশ্য অবাধ্যতা করে, যখন সে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেখে।

তাছাড়া সম্পদ বৃদ্ধির সাথে অন্তরে লোভ ও কৃপণতাও বাড়তে থাকে। ফলে এক তো কৃপণতার কারণে যথাযথভাবে যাকাতও আদায় করে না এবং মালের অন্যান্য হকও আদায় করতে পারে না। দ্বিতীয়ত লোভের বশবর্তীতে হালাল হারাম নির্বিচারে সম্পদ অর্জনের চেষ্টা করে। কাজেই তাদেরকে আয়েরও হিসাব দিতে হবে এবং ব্যয়েরও। এক হাদীছে আছে, বান্দা পাঁচটি বিষয়ের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত আপন জায়গা থেকে সরতে পারবে না। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- সে কোন পথে সম্পদ অর্জন করেছিল, আরেকটি হচ্ছে সে কোন কোন খাতে তা ব্যয় করেছিল। সুতরাং যতবেশি সম্পদ এ হিসাবও ততবেশি কঠিনই হবে। ফলে দীর্ঘ সময় তাদেরকে আটকা পড়ে থাকতে হবে। আর এ অবকাশে গরীবগণ জান্নাতে চলে যাবে।

কেউ কেউ বলেন, ধনীদেরকে আটকে রাখা হবে তাদের আগে গরীবদেরকে জান্নাতে যেতে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। যেমন এক হাদীছে আছে-
يدخل الفقراء الجنة قبل الأغنياء بخمسمائة عام نصف يوم
গরীবগণ ধনীদের পাঁচশ বছর আগে জান্নাতে যাবে, যা (আখিরাতের হিসেবে) আধা দিন পরিমাণ।

অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- غير أن أصحاب النار قد أمر بهم إلى النار (অবশ্য যারা জাহান্নামী তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দিয়ে দেওয়া হয়েছে)। অর্থাৎ যারা ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারেনি বেঈমান অবস্থায়ই মারা গেছে তাদের না আছে হিসাব-নিকাশ, না আছে আমলের ওজন করার কোনও ব্যাপার। কাজেই তাদেরকে আটকে রাখার কোনও প্রয়োজন হবে না। বিনা হিসাবেই জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, দীনদার গরীবগণ ধনীদের আগে জান্নাতে যাবে। সুতরাং গরীব দেখে কাউকে হেলা করতে নেই।

খ. আল্লাহ তাআলা যাদেরকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তাদের অবশ্যকর্তব্য তার হক আদায় করা, অন্যথায় আখিরাতে কঠিন হিসাব-নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)