রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৫২
অধ্যায়ঃ ৫৪ আল্লাহ তাআলার ভয় ও তাঁর প্রতি আগ্রহ-উদ্দীপনায় ক্রন্দন করার ফযীলত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতে ওহীর ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হযরত উম্মে আয়মান রাযি.-এর কান্না
হাদীছ নং : ৪৫২
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর হযরত আবূ বকর রাযি. উমর রাযি.-কে বললেন, চলুন আমরা উম্মে আয়মানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। যখন তাঁরা তাঁর কাছে পৌঁছলেন, তিনি কেঁদে দিলেন। তাঁরা তাঁকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি জানেন না, আল্লাহর কাছে খা আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাই শ্রেয়? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আল্লাহর কাছে যা আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যে তাই শ্রেয়, তা আমার জানা নেই। বরং আমি কাঁদছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী নাযিলের ধারা ছিন্ন হয়ে গেল। তিনি এ কথা বলে তাঁদেরও কান্না উস্কে দিলেন । সুতরাং তাঁরাও তাঁর সঙ্গে কাঁদতে লাগলেন- মুসলিম।
হাদীছ নং : ৪৫২
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর হযরত আবূ বকর রাযি. উমর রাযি.-কে বললেন, চলুন আমরা উম্মে আয়মানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। যখন তাঁরা তাঁর কাছে পৌঁছলেন, তিনি কেঁদে দিলেন। তাঁরা তাঁকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি জানেন না, আল্লাহর কাছে খা আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাই শ্রেয়? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আল্লাহর কাছে যা আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যে তাই শ্রেয়, তা আমার জানা নেই। বরং আমি কাঁদছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী নাযিলের ধারা ছিন্ন হয়ে গেল। তিনি এ কথা বলে তাঁদেরও কান্না উস্কে দিলেন । সুতরাং তাঁরাও তাঁর সঙ্গে কাঁদতে লাগলেন- মুসলিম।
54 - باب فضل البكاء من خشية الله تعالى وشوقا إليه
452 - وعنه، قَالَ: قَالَ أَبو بكر لِعُمَرَ، رَضِيَ اللهُ عنهما، بعد وفاة رسول الله - صلى الله عليه وسلم: انْطَلِقْ بِنَا إِلى أُمِّ أيْمَنَ رضي الله عنها نَزورُهَا، كَمَا كَانَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - يَزُورُها، فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَيْهَا بَكَتْ، فقالا لها: مَا يُبْكِيكِ؟ أمَا تَعْلَمِينَ أنَّ مَا عِنْدَ الله تَعَالَى خَيرٌ لرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم! قالت: مَا أبْكِي أَنْ لاَ أَكُونَ أَعْلَمُ أنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - وَلكِنِّي أبكِي أَنَّ الْوَحْيَ قَد انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ؛ فَهَيَّجَتْهُما عَلَى البُكَاءِ، فَجَعَلا يَبْكِيَانِ مَعَهَا. رواه مسلم، وقد سبق في بابِ زِيارَةِ أهلِ الخَيْرِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত উম্মু আয়মান রাযি. ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শৈশবের লালন-পালনকারিণী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুব সম্মান করতেন। তিনি মাঝেমধ্যে তাঁকে দেখতে যেতেন। তার ওফাতের পর আবু বকর সিদ্দীক রাযি. তাঁর সে মর্যাদার প্রতি লক্ষ রাখতেন। তিনিও হযরত উমর ফারক রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য চলে যেতেন। প্রথম যখন তাঁরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলেন, তখন তাঁদেরকে দেখেই তিনি কেঁদে উঠলেন। তাঁদের ধারণা ছিল এ কান্নার কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহাপ্রয়াণ ও তাঁর বিরহবেদনা। তাই তাঁরা এই বলে তাঁকে সান্ত্বনা দিতে চাইলেন যে-
(আপনি জানেন না, আল্লাহর কাছে যা আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাই শ্রেয়)? নিঃসন্দেহে যে- কোনও মুমিনের জন্যই দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত শ্রেষ্ঠ। দুনিয়ার বিভিন্ন আকর্ষণীয় বস্ত্রসামগ্রীর উল্লেখ করার পর কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
قل أؤنبكُمْ بِخَيْرٍ مِن ذَلِكُمْ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّتْ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ
عَلِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللهِ وَالله بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ "
“বল, আমি কি তোমাদেরকে এসব অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জিনিসের সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে এমন বাগ-বাগিচা, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং (তাদের জন্য আছে) পবিত্র স্ত্রী ও আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি। আল্লাহ সকল বান্দাকে ভালোভাবে দেখছেন|
জান্নাতের স্থায়ী, অফুরন্ত, অতুলনীয় নিআমতরাজির সামনে দুনিয়ার বস্তুসামগ্রী নিতান্তই তুচ্ছ। কাজেই প্রত্যেক মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে রক্ষিত সেই নিআমতসমূহ ইহজীবনের সবকিছু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বৈকি। তাহলে নবী-রাসূলদের জন্য আখিরাতে কেমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? তাদের মধ্যে আবার সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহামর্যাদা অনুপাতে যে মহা আয়োজনের সমারোহ থাকবে, সে হিসেবে এ দুনিয়া তাঁর পক্ষে সিন্ধুর মধ্যে বিন্দু অপেক্ষাও তুচ্ছ নয় কি? তাই তো ওফাতের আগে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে কোনও একটা বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হলে তিনি সানন্দে আখিরাতকে বেছে নেন। ওফাতকালে বারবার এই বলে তার সন্নিধ্যে যাত্রার ব্যাকুলতা ব্যক্ত করছিলেন যে, হে আল্লাহ! হে মহান বন্ধু!
হযরত উম্মু আয়মান রাযি.-এর চিন্তার গভীরতা
হযরত উম্মু আয়মান রাযি.-এরও ঢের জানা ছিল যে, আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যা সংরক্ষিত আছে তা ইহজীবনের সবকিছু অপেক্ষা অনেক অনেক শ্রেয়। তাই কান্নার যে কারণ তারা উল্লেখ করেছেন তা তিনি নাকচ করে দেন। তাহলে কেন তিনি কাঁদছিলেন? তিনি তার কারণ ব্যাখ্যা করেন- (বরং আমি কাঁদছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী নাযিলের ধারা ছিন্ন হয়ে গেল)। এ সংক্ষিপ্ত কথাটি দ্বারা ওহীর মর্ম ও ঐশ্বর্য, তার কল্যাণ ও বরকত, তার আলোকময়তা ও শক্তি-ক্ষমতা এবং তার প্রভাব মাধুর্য সম্পর্কে হযরত উম্মু আয়মান রাযি.-এর গভীর উপলব্ধির পরিচয় মেলে। তাঁর এ অভিব্যক্তি মহান সিদ্দীক ও ফারুকের অন্তর্দেশে ভাবাবেগের কলরোল তুলল। ভূবন উদ্ভাসী ওহীর ধারাবিচ্ছেদ-বেদনার যে শোক তাঁরা এতদিন পাথরচাপা দিয়ে রেখেছিলেন, সহসাই তা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। তাঁরাও তাঁর সঙ্গে কাঁদতে থাকলেন।
প্রকাশ থাকে যে, যদিও দীনের পরিপূর্ণতার জন্য যে পরিমাণ ওহী নাযিলের প্রয়োজন ছিল তা নাযিল করা হয়ে গেছে, দীনের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, ফলে দীনের চাহিদা ও জরুরত পূরণের জন্য আর কোনও ওহী নাযিলের প্রয়োজন নেই, তবুও এতে তো কোনও সন্দেহ নেই যে, ওহী শুধু কল্যাণই কল্যাণ, জ্ঞানই জ্ঞান ও বরকতই বরকত। এর মাধুর্য ও স্নিগ্ধতা প্রকৃত মুমিনের প্রাণের খোরাক। মুমিনদের এ খোরাকের চাহিদা অফুরন্ত। ঠিক ধনাসক্ত ব্যক্তির ধনসম্পদের চাহিদার মত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْهُومَانِ لا يَشبَعَانِ، مَنْهُومٌ فِي الْعِلْم لا يشبعُ مِنْهُ، وَمَنْهوم في الدُّنْيا لا يشبع منها
'দুই ক্ষুধার্ত কখনও পরিতৃপ্ত হয় না। এক হল ইলমের ক্ষুধার্ত, (যতই ইলম অর্জন হোক) তাতে তার পরিতৃপ্তি আসে না। আরেক হল দুনিয়ার অর্থ-সম্পদে আসক্ত ব্যক্তি, তারও তাতে কখনও পরিতৃপ্তি লাভ হয় না।”
তবে সংক্ষিপ্ত ও সীমিত ইহজগতের সবকিছুই সীমিত ও পরিমিত। এ জগতে জাহিরী ও বাতিনী, প্রকাশ্য ও গুপ্ত, মূর্ত ও বিমূর্ত এবং ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক সবকিছুই সীমিত আকারে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু সীমিত রাখাই এ জগতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ জগতে তাতেই কল্যাণ। সে নিয়মের অধীনেই ওহী নাযিলের ধারাও সীমিতই রাখা হয়েছে। একপর্যায়ে সে ধারা তার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। আর অমনি সর্বশেষ যাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল, সেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও দুনিয়া থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর কোনও নবীও আসবে না, নতুন কোনও ওহীও নাযিল হবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছে অনেক মূল্যবান শিক্ষা আছে। তার মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা গেল।
ক. দীনদার ও নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া চাই।
খ. নিজ মুরুব্বী ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি জীবিতকালে যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতেন, তার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয়।
গ. কোনও বুযুর্গ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় কোনও প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো।
ঘ. প্রিয় ব্যক্তি ও প্রিয় বস্তুর বিরহ-বিচ্ছেদে শোকার্ত হওয়া ও কান্না করা দোষের বরং এটা ব্যক্তির গুণগ্রাহিতা ও সংবেদনশীলতার পরিচায়ক।
ঙ. খাঁটি মানুষেরা সামাজিক অবস্থা ও অবস্থানগত দিক থেকে নিজেদের তুলনায় নিম্নস্তরের লোকের সঙ্গেও সাক্ষাত করতে লজ্জাবোধ করে না।
(আপনি জানেন না, আল্লাহর কাছে যা আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাই শ্রেয়)? নিঃসন্দেহে যে- কোনও মুমিনের জন্যই দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত শ্রেষ্ঠ। দুনিয়ার বিভিন্ন আকর্ষণীয় বস্ত্রসামগ্রীর উল্লেখ করার পর কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
قل أؤنبكُمْ بِخَيْرٍ مِن ذَلِكُمْ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّتْ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ
عَلِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللهِ وَالله بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ "
“বল, আমি কি তোমাদেরকে এসব অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জিনিসের সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে এমন বাগ-বাগিচা, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং (তাদের জন্য আছে) পবিত্র স্ত্রী ও আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি। আল্লাহ সকল বান্দাকে ভালোভাবে দেখছেন|
জান্নাতের স্থায়ী, অফুরন্ত, অতুলনীয় নিআমতরাজির সামনে দুনিয়ার বস্তুসামগ্রী নিতান্তই তুচ্ছ। কাজেই প্রত্যেক মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে রক্ষিত সেই নিআমতসমূহ ইহজীবনের সবকিছু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বৈকি। তাহলে নবী-রাসূলদের জন্য আখিরাতে কেমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? তাদের মধ্যে আবার সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহামর্যাদা অনুপাতে যে মহা আয়োজনের সমারোহ থাকবে, সে হিসেবে এ দুনিয়া তাঁর পক্ষে সিন্ধুর মধ্যে বিন্দু অপেক্ষাও তুচ্ছ নয় কি? তাই তো ওফাতের আগে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে কোনও একটা বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হলে তিনি সানন্দে আখিরাতকে বেছে নেন। ওফাতকালে বারবার এই বলে তার সন্নিধ্যে যাত্রার ব্যাকুলতা ব্যক্ত করছিলেন যে, হে আল্লাহ! হে মহান বন্ধু!
হযরত উম্মু আয়মান রাযি.-এর চিন্তার গভীরতা
হযরত উম্মু আয়মান রাযি.-এরও ঢের জানা ছিল যে, আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যা সংরক্ষিত আছে তা ইহজীবনের সবকিছু অপেক্ষা অনেক অনেক শ্রেয়। তাই কান্নার যে কারণ তারা উল্লেখ করেছেন তা তিনি নাকচ করে দেন। তাহলে কেন তিনি কাঁদছিলেন? তিনি তার কারণ ব্যাখ্যা করেন- (বরং আমি কাঁদছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী নাযিলের ধারা ছিন্ন হয়ে গেল)। এ সংক্ষিপ্ত কথাটি দ্বারা ওহীর মর্ম ও ঐশ্বর্য, তার কল্যাণ ও বরকত, তার আলোকময়তা ও শক্তি-ক্ষমতা এবং তার প্রভাব মাধুর্য সম্পর্কে হযরত উম্মু আয়মান রাযি.-এর গভীর উপলব্ধির পরিচয় মেলে। তাঁর এ অভিব্যক্তি মহান সিদ্দীক ও ফারুকের অন্তর্দেশে ভাবাবেগের কলরোল তুলল। ভূবন উদ্ভাসী ওহীর ধারাবিচ্ছেদ-বেদনার যে শোক তাঁরা এতদিন পাথরচাপা দিয়ে রেখেছিলেন, সহসাই তা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। তাঁরাও তাঁর সঙ্গে কাঁদতে থাকলেন।
প্রকাশ থাকে যে, যদিও দীনের পরিপূর্ণতার জন্য যে পরিমাণ ওহী নাযিলের প্রয়োজন ছিল তা নাযিল করা হয়ে গেছে, দীনের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, ফলে দীনের চাহিদা ও জরুরত পূরণের জন্য আর কোনও ওহী নাযিলের প্রয়োজন নেই, তবুও এতে তো কোনও সন্দেহ নেই যে, ওহী শুধু কল্যাণই কল্যাণ, জ্ঞানই জ্ঞান ও বরকতই বরকত। এর মাধুর্য ও স্নিগ্ধতা প্রকৃত মুমিনের প্রাণের খোরাক। মুমিনদের এ খোরাকের চাহিদা অফুরন্ত। ঠিক ধনাসক্ত ব্যক্তির ধনসম্পদের চাহিদার মত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْهُومَانِ لا يَشبَعَانِ، مَنْهُومٌ فِي الْعِلْم لا يشبعُ مِنْهُ، وَمَنْهوم في الدُّنْيا لا يشبع منها
'দুই ক্ষুধার্ত কখনও পরিতৃপ্ত হয় না। এক হল ইলমের ক্ষুধার্ত, (যতই ইলম অর্জন হোক) তাতে তার পরিতৃপ্তি আসে না। আরেক হল দুনিয়ার অর্থ-সম্পদে আসক্ত ব্যক্তি, তারও তাতে কখনও পরিতৃপ্তি লাভ হয় না।”
তবে সংক্ষিপ্ত ও সীমিত ইহজগতের সবকিছুই সীমিত ও পরিমিত। এ জগতে জাহিরী ও বাতিনী, প্রকাশ্য ও গুপ্ত, মূর্ত ও বিমূর্ত এবং ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক সবকিছুই সীমিত আকারে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু সীমিত রাখাই এ জগতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ জগতে তাতেই কল্যাণ। সে নিয়মের অধীনেই ওহী নাযিলের ধারাও সীমিতই রাখা হয়েছে। একপর্যায়ে সে ধারা তার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। আর অমনি সর্বশেষ যাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল, সেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও দুনিয়া থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর কোনও নবীও আসবে না, নতুন কোনও ওহীও নাযিল হবে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছে অনেক মূল্যবান শিক্ষা আছে। তার মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা গেল।
ক. দীনদার ও নেককার ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া চাই।
খ. নিজ মুরুব্বী ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি জীবিতকালে যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতেন, তার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয়।
গ. কোনও বুযুর্গ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় কোনও প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ভালো।
ঘ. প্রিয় ব্যক্তি ও প্রিয় বস্তুর বিরহ-বিচ্ছেদে শোকার্ত হওয়া ও কান্না করা দোষের বরং এটা ব্যক্তির গুণগ্রাহিতা ও সংবেদনশীলতার পরিচায়ক।
ঙ. খাঁটি মানুষেরা সামাজিক অবস্থা ও অবস্থানগত দিক থেকে নিজেদের তুলনায় নিম্নস্তরের লোকের সঙ্গেও সাক্ষাত করতে লজ্জাবোধ করে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
