রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৩২
অধ্যায়ঃ ৫১ আল্লাহর কাছে আশাবাদী থাকা
কিয়ামতের দিন মুমিনদের মুক্তিপণ
হাদীছ নং : ৪৩২
অর্থ : হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইহুদী বা একজন খৃষ্টান দিয়ে বলবেন, এ হল জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ।
অপর এক বর্ণনায় আছে, কিয়ামতের দিন মুসলিমদের মধ্যকার কিছু লোক পাহাড় সমান গুনাহ নিয়ে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের সে গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
মুসলিম।
হাদীছ নং : ৪৩২
অর্থ : হযরত আবু মূসা আশ'আরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইহুদী বা একজন খৃষ্টান দিয়ে বলবেন, এ হল জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ।
অপর এক বর্ণনায় আছে, কিয়ামতের দিন মুসলিমদের মধ্যকার কিছু লোক পাহাড় সমান গুনাহ নিয়ে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের সে গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
মুসলিম।
51 - باب الرجاء
432 - وعن أَبي موسى الأشعري - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إِذَا كَانَ يَوْمُ القِيَامَةِ دَفَعَ اللهُ إِلَى كُلِّ مُسْلِم يَهُوديًا أَوْ نَصْرانِيًا، فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِنَ النَّارِ».
وفي رواية عَنْهُ، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يَجِيءُ يَوْمَ القِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ المُسْلِمينَ بِذُنُوبٍ أَمْثَال الجِبَالِ يَغْفِرُهَا الله لَهُمْ». رواه مسلم (1).
قوله: «دَفَعَ إِلَى كُلِّ مُسْلِم يَهُوديًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا، فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِن النَّارِ» مَعنَاهُ مَا جَاءَ في حديث أَبي هريرة - رضي الله عنه: «لِكُلِّ أَحَدٍ مَنْزلٌ في الجَنَّةِ، وَمَنْزِلٌ في النَّارِ، فَالمُؤْمِنُ إِذَا دَخَلَ الجَنَّةَ خَلَفَهُ الكَافِرُ في النَّارِ؛ لأنَّهُ مُسْتَحِقٌّ لِذَلِكَ بِكفْرِهِ» ومعنى «فِكَاكُكَ»: أنَّكَ كُنْتَ معْرَّضًا لِدُخُولِ النَّارِ، وَهَذَا فِكَاكُكَ؛ لأنَّ الله تَعَالَى، قَدَّرَ للنَّارِ عَدَدًا يَمْلَؤُهَا، فَإذَا دَخَلَهَا الكُفَّارُ بِذُنُوبِهِمْ وَكُفْرِهِمْ، صَارُوا في مَعنَى الفِكَاك للمُسْلِمِينَ، والله أعلم.
وفي رواية عَنْهُ، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «يَجِيءُ يَوْمَ القِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ المُسْلِمينَ بِذُنُوبٍ أَمْثَال الجِبَالِ يَغْفِرُهَا الله لَهُمْ». رواه مسلم (1).
قوله: «دَفَعَ إِلَى كُلِّ مُسْلِم يَهُوديًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا، فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِن النَّارِ» مَعنَاهُ مَا جَاءَ في حديث أَبي هريرة - رضي الله عنه: «لِكُلِّ أَحَدٍ مَنْزلٌ في الجَنَّةِ، وَمَنْزِلٌ في النَّارِ، فَالمُؤْمِنُ إِذَا دَخَلَ الجَنَّةَ خَلَفَهُ الكَافِرُ في النَّارِ؛ لأنَّهُ مُسْتَحِقٌّ لِذَلِكَ بِكفْرِهِ» ومعنى «فِكَاكُكَ»: أنَّكَ كُنْتَ معْرَّضًا لِدُخُولِ النَّارِ، وَهَذَا فِكَاكُكَ؛ لأنَّ الله تَعَالَى، قَدَّرَ للنَّارِ عَدَدًا يَمْلَؤُهَا، فَإذَا دَخَلَهَا الكُفَّارُ بِذُنُوبِهِمْ وَكُفْرِهِمْ، صَارُوا في مَعنَى الفِكَاك للمُسْلِمِينَ، والله أعلم.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে মুক্তিপণ হিসেবে ইহুদী ও খৃষ্টানের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বোঝানো উদ্দেশ্য অমুসলিম। যেমন এক হাদীছে আছে-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، أَعْطى الله كُلَّ رَجُلٍ مِنْ هَذِه الأمة رَجُلاً مِن الكفار، فيقال له هذَا فِداؤُكَ مِنَ النَّارِ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা এ উম্মতের প্রত্যেককে একজন করে কাফের দেবেন। তারপর বলা হবে, এ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ।
অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির বিনিময়ে সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং মুসলিম ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে জান্নাত দান করা হবে। কী এ কথার অর্থ? ইমাম নববী রহ. বলেন, প্রত্যেক মুসলিমকে যে একজন ইহুদী বা একজন খৃষ্টান দিয়ে বলা হবে এ হল জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ, এর অর্থ হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত একটি হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে-
مَا مِنكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا لَهُ مَنزِلَانِ مَنْزِل فِي الْجَنَّةِ، وَمَنْزِل فِي النَّارِ، فَإِذَا مَاتَ، فَدَخَلَ النَّارَ، وَرِثَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنْزِلَهُ، فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ)
'প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আছে দু'টি ঠিকানা। একটি ঠিকানা জান্নাতে, আরেকটি ঠিকানা জাহান্নামে। সে (কাফের ব্যক্তি) যখন মারা যায়, জাহান্নামে প্রবেশ করে আর জান্নাতবাসী তার ঠিকানার অধিকারী হয়ে যায়। এটাই আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর মর্ম যে- (তারাই হবে উত্তরাধিকারী - সুরা মুমিনূন : ১০)।
অর্থাৎ ইমাম নববী রহ. বলতে চাচ্ছেন যে, হাদীছটি দ্বারা বাহ্যত যে অর্থ বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। কেননা তাতে একজনের পাপের বোঝা আরেকজনের উপর ফেলা হয় এবং একজনের বদলে আরেকজনকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرُى
'প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না।
মূলত হাদীছটি দ্বারা রূপক অর্থ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা নিজ অনুগ্রহে মুমিন-মুসলিমদের পাপরাশি মাফ করে দেবেন এবং তাদের থেকে তা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু ইহুদী-নাসারা ও অন্যান্য কাফেরদের কৃত গুনাহ তাদের কাধে থেকে যাবে। তা মাফ করা হবে না। তাদেরকে সে গুনাহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। তাদের জন্য জান্নাতেও একটা স্থান ছিল। কুফরীর কারণে তারা তা থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তা'আলা নিজ মেহেরবানীতে জান্নাতবাসীদেরকে তা দিয়ে দেবেন।
জান্নাতবাসীদেরও একটা স্থান জাহান্নামে আছে। ঈমানের বদৌলতে তারা তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে অদল-বদল। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামের ঠিকানার পরিবর্তে চলে যাবে জান্নাতে। অপরদিকে জাহান্নামীগণ তাদের জান্নাতের ঠিকানার বদলে স্থান পাবে জাহান্নামে। প্রকৃতপক্ষে অদল-বদল নয়; প্রত্যেকেই আপন আপন কর্মফল অনুযায়ী প্রাপ্য ঠিকানায়ই যাবে।
ইমাম নববী রহ. বলেন- এ তোমার মুক্তিপণ এ কথার অর্থ জাহান্নামে প্রবেশের জন্য তুমি অর্পিত হচ্ছিলে। এ হল তা থেকে তোমার মুক্তির বদলা। কেননা আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের জন্য একটা সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যা দিয়ে তিনি জাহান্নাম ভরবেন। কাফেরগণ যখন তাদের গুনাহ ও কুফরের দরুন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা মুসলিমদের জন্য দৃশ্যত মুক্তিপণস্বরূপ হয়ে যাবে।
ইমাম নববী রহ. দ্বিতীয় হাদীছটি সংক্ষেপে এনেছেন। পূর্ণ হাদীছটি এরকম-
يجي: يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ بِذُنُوبِ أَمْثَالِ الْجِبَالِ، فَيَغْفِرُهَا اللهُ لَهُمْ يضعُها عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى.
“কিয়ামতের দিন মুসলিমদের মধ্যকার কিছু লোক পাহাড় সমান গুনাহ নিয়ে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের সে গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তা ইহুদী খৃষ্টানদের উপর ন্যস্ত করবেন।
অর্থাৎ তিনি নিজ মেহেরবানীতে মুসলিমদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন, পাহাড়ের মত বড় বা পরিমাণে পাহাড়ের মত বিপুলই হোক না কেন। তাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এ বিশেষ মেহেরবানী হবে তাদের ঈমানের বদৌলতে। কিন্তু কাফেরদের ক্ষমা করা হবে না। তারা যে সমস্ত কুফরী কর্ম ও পাপাচার করেছে, তা তাদের উপর থেকে যাবে এবং তার পরিণামে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত মুসলিমদের গুনাহ ক্ষমা করা ও তাদের গুনাহ ক্ষমা না করে যথারীতি রেখে দেওয়াকেই "তাদের উপর মুসলিমদের গুনাহ ন্যস্ত করা শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা তাদেরই গুনাহ, মুসলিমদের গুনাহ নয়। অথবা এর অর্থ- তাদের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বা তাদের উস্কানিতে মুসলিমদের দ্বারা যেসকল গুনাহ হয়ে গেছে, সেসকল গুনাহ যেহেতু তাদের কারণে হয়েছে, তাই সেগুলো তাদের উপর ন্যস্ত করা হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি আমাদের জন্য অনেক বড় আশা জাগানিয়া। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারলে আশা করি আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন।
খ. কুফরের পরিণতি অতি ভয়ংকর। কুফরের সঙ্গে মৃত্যু হলে ক্ষমার আশা নেই। তাই ইহুদী-খৃষ্টান বা অন্য কোনও কাফের সম্প্রদায়ের কুফরী আকীদা-বিশ্বাস যাতে আমাদের মধ্যে ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকা চাই।
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، أَعْطى الله كُلَّ رَجُلٍ مِنْ هَذِه الأمة رَجُلاً مِن الكفار، فيقال له هذَا فِداؤُكَ مِنَ النَّارِ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা এ উম্মতের প্রত্যেককে একজন করে কাফের দেবেন। তারপর বলা হবে, এ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ।
অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির বিনিময়ে সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং মুসলিম ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে জান্নাত দান করা হবে। কী এ কথার অর্থ? ইমাম নববী রহ. বলেন, প্রত্যেক মুসলিমকে যে একজন ইহুদী বা একজন খৃষ্টান দিয়ে বলা হবে এ হল জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ, এর অর্থ হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত একটি হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে-
مَا مِنكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا لَهُ مَنزِلَانِ مَنْزِل فِي الْجَنَّةِ، وَمَنْزِل فِي النَّارِ، فَإِذَا مَاتَ، فَدَخَلَ النَّارَ، وَرِثَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنْزِلَهُ، فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ)
'প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আছে দু'টি ঠিকানা। একটি ঠিকানা জান্নাতে, আরেকটি ঠিকানা জাহান্নামে। সে (কাফের ব্যক্তি) যখন মারা যায়, জাহান্নামে প্রবেশ করে আর জান্নাতবাসী তার ঠিকানার অধিকারী হয়ে যায়। এটাই আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর মর্ম যে- (তারাই হবে উত্তরাধিকারী - সুরা মুমিনূন : ১০)।
অর্থাৎ ইমাম নববী রহ. বলতে চাচ্ছেন যে, হাদীছটি দ্বারা বাহ্যত যে অর্থ বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। কেননা তাতে একজনের পাপের বোঝা আরেকজনের উপর ফেলা হয় এবং একজনের বদলে আরেকজনকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرُى
'প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না।
মূলত হাদীছটি দ্বারা রূপক অর্থ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা নিজ অনুগ্রহে মুমিন-মুসলিমদের পাপরাশি মাফ করে দেবেন এবং তাদের থেকে তা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু ইহুদী-নাসারা ও অন্যান্য কাফেরদের কৃত গুনাহ তাদের কাধে থেকে যাবে। তা মাফ করা হবে না। তাদেরকে সে গুনাহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। তাদের জন্য জান্নাতেও একটা স্থান ছিল। কুফরীর কারণে তারা তা থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তা'আলা নিজ মেহেরবানীতে জান্নাতবাসীদেরকে তা দিয়ে দেবেন।
জান্নাতবাসীদেরও একটা স্থান জাহান্নামে আছে। ঈমানের বদৌলতে তারা তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে অদল-বদল। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামের ঠিকানার পরিবর্তে চলে যাবে জান্নাতে। অপরদিকে জাহান্নামীগণ তাদের জান্নাতের ঠিকানার বদলে স্থান পাবে জাহান্নামে। প্রকৃতপক্ষে অদল-বদল নয়; প্রত্যেকেই আপন আপন কর্মফল অনুযায়ী প্রাপ্য ঠিকানায়ই যাবে।
ইমাম নববী রহ. বলেন- এ তোমার মুক্তিপণ এ কথার অর্থ জাহান্নামে প্রবেশের জন্য তুমি অর্পিত হচ্ছিলে। এ হল তা থেকে তোমার মুক্তির বদলা। কেননা আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের জন্য একটা সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যা দিয়ে তিনি জাহান্নাম ভরবেন। কাফেরগণ যখন তাদের গুনাহ ও কুফরের দরুন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা মুসলিমদের জন্য দৃশ্যত মুক্তিপণস্বরূপ হয়ে যাবে।
ইমাম নববী রহ. দ্বিতীয় হাদীছটি সংক্ষেপে এনেছেন। পূর্ণ হাদীছটি এরকম-
يجي: يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ بِذُنُوبِ أَمْثَالِ الْجِبَالِ، فَيَغْفِرُهَا اللهُ لَهُمْ يضعُها عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى.
“কিয়ামতের দিন মুসলিমদের মধ্যকার কিছু লোক পাহাড় সমান গুনাহ নিয়ে উপস্থিত হবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের সে গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তা ইহুদী খৃষ্টানদের উপর ন্যস্ত করবেন।
অর্থাৎ তিনি নিজ মেহেরবানীতে মুসলিমদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন, পাহাড়ের মত বড় বা পরিমাণে পাহাড়ের মত বিপুলই হোক না কেন। তাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এ বিশেষ মেহেরবানী হবে তাদের ঈমানের বদৌলতে। কিন্তু কাফেরদের ক্ষমা করা হবে না। তারা যে সমস্ত কুফরী কর্ম ও পাপাচার করেছে, তা তাদের উপর থেকে যাবে এবং তার পরিণামে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত মুসলিমদের গুনাহ ক্ষমা করা ও তাদের গুনাহ ক্ষমা না করে যথারীতি রেখে দেওয়াকেই "তাদের উপর মুসলিমদের গুনাহ ন্যস্ত করা শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা তাদেরই গুনাহ, মুসলিমদের গুনাহ নয়। অথবা এর অর্থ- তাদের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বা তাদের উস্কানিতে মুসলিমদের দ্বারা যেসকল গুনাহ হয়ে গেছে, সেসকল গুনাহ যেহেতু তাদের কারণে হয়েছে, তাই সেগুলো তাদের উপর ন্যস্ত করা হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি আমাদের জন্য অনেক বড় আশা জাগানিয়া। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারলে আশা করি আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন।
খ. কুফরের পরিণতি অতি ভয়ংকর। কুফরের সঙ্গে মৃত্যু হলে ক্ষমার আশা নেই। তাই ইহুদী-খৃষ্টান বা অন্য কোনও কাফের সম্প্রদায়ের কুফরী আকীদা-বিশ্বাস যাতে আমাদের মধ্যে ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
