রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৪২৮
অধ্যায়ঃ ৫১ আল্লাহর কাছে আশাবাদী থাকা
কাফের ও মুমিনের সৎকর্মের প্রতিদান যেভাবে দেওয়া হয়।
হাদীছ নং : ৪২৮

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাফের ব্যক্তি কোনও সৎকর্ম করলে তাকে তার বিনিময়ে দুনিয়ার কোনও খাদ্য ভোগ করিয়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে মুমিন ব্যক্তির কথা হল এই যে, আল্লাহ তা'আলা তার সৎকর্মসমূহ তার কল্যাণার্থে আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন এবং তার আনুগত্যের কারণে দুনিয়ায়ও তাকে রিযিক দান করেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা মুমিন ব্যক্তির কোনও সৎকর্ম নিষ্ফল করেন না। তাকে দুনিয়ায়ও তার বিনিময়ে কিছু দেওয়া হয় এবং আখিরাতে তার পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে কাফের ব্যক্তির অবস্থা হল, সে আল্লাহর জন্য কোনও সৎকর্ম করে থাকলে দুনিয়াতেই তার বিনিময় ভোগ করিয়ে দেওয়া হয়। পরিশেষে যখন আখিরাতে পৌঁছাবে, তখন তার এমন কোনও সৎকর্ম থাকবে না, যার বিনিময়ে কোনও প্রতিদান দেওয়া যাবে - মুসলিম।
51 - باب الرجاء
428 - وعن أنس - رضي الله عنه - عن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «إنّ الكَافِرَ إِذَا عَمِلَ حَسَنَةً، أُطعِمَ بِهَا طُعْمَةً مِنَ الدُّنْيَا، وَأَمَّا المُؤْمِنُ فَإنَّ الله تَعَالَى يَدَّخِرُ لَهُ حَسَنَاتِهِ في الآخِرَةِ، وَيُعْقِبُهُ رِزْقًا في الدُّنْيَا عَلَى طَاعَتِهِ».
وفي رواية: «إنَّ الله لاَ يَظْلِمُ مُؤْمِنًا حَسنَةً يُعْطَى بِهَا في الدُّنْيَا، وَيُجْزَى بِهَا في الآخِرَةِ. وَأَمَّا الكَافِرُ فَيُطْعَمُ بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ للهِ تَعَالَى في الدُّنْيَا، حَتَّى إِذَا أفْضَى إِلَى الآخرَةِ، لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَةٌ يُجْزَى بِهَا». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা'আলা ন্যায়বিচারক। তিনি কারওই সৎকর্ম নিষ্ফল করেন না। ঈমানদার ব্যক্তিকে তার ঈমান অনুসারে কর্মফল দিয়ে থাকেন। কাফের ব্যক্তিকেও তার অবস্থান অনুযায়ী সৎকর্মের ফল দেন। কাফের যেহেতু পরকালে বিশ্বাস করে না, তাই পরকালে পাওয়ার আশায় কোনও কাজ করেও না। ইহজীবনই তার সব। সে ভালোমন্দ যাই করে, ইহজীবনে পাওয়ার জন্যই করে। তাই আল্লাহ তা'আলা ইহজীবনেই তাকে তার সৎকাজের বদলা দিয়ে দেন। এ হাদীছে বলা হয়েছে- (কাফের ব্যক্তি কোনও সৎকর্ম করলে তাকে তার বিনিময়ে দুনিয়ার কোনও খাদ্য ভোগ করিয়ে দেওয়া হয়)। খাদ্যভোগ দ্বারা পার্থিব ভোগ্যবস্তু বোঝানো হয়েছে। কাজেই কাফের ব্যক্তি যদি কোনও সৎকর্ম করে, যেমন অন্নদান করা, রোগীর সেবা করা, দুঃস্থ ও বিপন্নের সাহায্য করা, গোলাম আযাদ করা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেওয়া ইত্যাদি, তবে তাকে তার বিনিময়ে পানাহার সামগ্রী পোশাক-আশাক ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উপকরণ দেওয়া হয়। এমনিভাবে তাকে দেওয়া হয় সুস্বাস্থ্য, আত্মপ্রতিষ্ঠা, ক্ষমতা ও সুনাম-সুখ্যাতি। সে আখিরাতে কিছুই পাবে না।

মুমিন ব্যক্তিও যদি পার্থিব প্রতিদান লাভের ইচ্ছায় কোনও সৎকর্ম করে, তবে তাকেও পার্থিব প্রতিদান দিয়ে দেওয়া হয়। তার জন্যও আখিরাতের কোনও প্রতিদান থাকবে না।

অপরদিকে মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে-
فَإِنَّ اللهَ تَعَالى يَدَّخِرُ لَهُ حَسَنَاتِهِ فِي الآخِرَةِ، وَيُعْقِبُهُ رِزْقًا فِي الدُّنْيَا عَلى طَاعَتِهِ
(আল্লাহ তা'আলা তার সৎকর্মসমূহ তার কল্যাণার্থে আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন এবং তার আনুগত্যের কারণে দুনিয়ায়ও তাকে রিযিক দান করেন)। যদি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে কোনও সৎকর্ম করে, তবে তার বিনিময়ে আখিরাতে যা দেওয়া হবে তা তো আছেই, দুনিয়ায়ও তাকে পুরস্কৃত করা হয়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
منْ عَمِلَ صَالِحًا مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلتَحْيِيَنَّهُ حَيُوةٌ طَيِّبَةً وَلَتَجْرِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ
بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযারী, তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।

উত্তম জীবনযাপন হল হালাল জীবিকা লাভ করা, প্রাপ্ত সম্পদে মনের পরিভুক্তি থাকা, সর্বাবস্থায় অন্তরে ঐশ্বর্য লালন করা ও স্বস্তির সঙ্গে দিন কাটানো। লক্ষ করলে দেখা যায়, যারা প্রকৃত মুমিন তাদের পার্থিব জীবন এভাবেই কাটে। কাফের-মুশরিকগণ যত সম্পদশালী ও যত ক্ষমতারই মালিক হোক না কেন, পরিতুষ্টি ও স্বস্তিকর জীবনভোগের সৌভাগ্য তাদের কখনওই হয় না। আখিরাতে তাদের মুক্তিলাভের তো কোনও উপায় নেই-ই, দুনিয়ায়ও প্রকৃত সুখ-শান্তির দেখা তারা কখনও পায় না। যা পায় তা কেবলই বাহ্যিক আড়ম্বর ও ডাটফাট। সাধারণত বাহ্যিক আড়ম্বর কাফেরদেরই শোভা হয়ে থাকে। তাই প্রকৃত ঈমানদারদেরকে তার আশা করা তো নয়ই, বরং সেদিকে চোখ তুলে তাকাতেও নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلى مَا مَتَعْنَا بِةٍ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ زَهْرَةَ الحَياةِ الدُّنْيَا لِتَفْتِتَهُمْ فِيهِ وَرِزْقُ
رَبِّكَ خَيْرٌ وَ ابْقَى
“তুমি পার্থিব জীবনের ওই চাকচিক্যের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ো না, যা আমি তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) বিভিন্ন শ্রেণীকে মজা লোটার জন্য দিয়ে রেখেছি, তা দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। বস্তুত তোমার রব্বের রিযিক সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সর্বাধিক স্থায়ী।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সৎকর্মের পরকালীন প্রতিদান পাওয়ার জন্য ইখলাস জরুরি।

খ. ইখলাসের সঙ্গে সৎকর্ম করলে পরকালীন পুরস্কারের পাশাপাশি পার্থিব কল্যাণও লাভ হয়।

গ. যে সৎকর্মে পরকালীন প্রাপ্তির আশা থাকে না, তার বদলা দুনিয়ায়ই দিয়ে দেওয়া হয়।

ঘ. আল্লাহ তা'আলা ন্যায়পরায়ণ। তিনি কারও সৎকর্ম নিষ্ফল করেন না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)