আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে কালেমায়ে তায়্যিবা পাঠকারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ হাদীছ নং : ৪২৪
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বসা ছিলাম। আমাদের সঙ্গে একদল লোকের ভেতর আবু বকর ও উমরও ছিলেন। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্য থেকে উঠে গেলেন। তারপর ফিরে আসতে বিলম্ব করলেন। আমরা আশঙ্কা করলাম, না জানি আমাদের থেকে তাঁকে ছিন্ন করে ফেলা হয়। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। তারপর আমরা উঠে পড়লাম। আমি সবার আগে আতঙ্কিত হয়ে উঠে পড়েছিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বের হয়ে পড়লাম। খুঁজতে খুঁজতে আনসারদের একটি বাগানে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি দীর্ঘ হাদীছটি বর্ণনা করেন....... তার শেষে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যাও। এ বাগানের বাইরে এমন যারই সাক্ষাত পাবে, যে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেবে– মুসলিম।
51 - باب الرجاء
424 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: كُنَّا قُعُودًا مَعَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - مَعَنَا أَبُو بَكْرٍ وَعُمْرُ رضي الله عنهما، في نَفَرٍ فَقَامَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - مِنْ بَيْنِ أظْهُرِنَا، فَأبْطَأَ عَلَيْنَا فَخَشِينَا أَنْ يُقتطَعَ دُونَنَا، فَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنْتُ أوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ أبْتَغِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى أتَيْتُ حَائِطًا لِلأَنْصَارِ ... وَذَكَرَ الحَدِيثَ بِطُولِهِ إِلَى قوله: فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «اذهَبْ فَمَن لَقِيتَ وَرَاءَ هَذَا الحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لا إله إلاَّ الله، مُسْتَيقِنًا بِهَا قَلبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ». رواه مسلم. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এটি একটি দীর্ঘ হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এস্থলে হাদীছটির অংশবিশেষ উল্লেখ করেছেন। হাদীছটির সারসংক্ষেপ এরকম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে উঠে চলে যাওয়ার পর তাঁর ফিরে আসতে দেরি হচ্ছিল। তাতে তারা খুব উদ্বেগ বোধ করছিলেন। না জানি তিনি কোনও বিপদে পড়েছেন। বাগানে অবিলম্বে তারা তাঁর সন্ধানে বের হয়ে পড়েন। সবার আগে বের হয়েছিলেন হযরত আবু হুরায়রা রাযি.। তিনি তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে বনু নাজ্জারের প্রাচীরঘেরা একটি বাগানে পৌঁছান। বাগানটির কোনও দরজা খোলা না পাওয়ায় তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একটি নালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেয়ে যান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে তাঁর আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি সাহাবায়ে কেরামের গভীর উদ্বেগের কথা তাঁকে জানান এবং তিনি যেভাবে তাঁকে খুঁজে পেয়েছেন তাও বর্ণনা করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পাদুকা জোড়া তাঁর হাতে দিয়ে বললেন- اذْهَبْ فَمَنْ لَقِيتَ وراء هذا الحائط يَشْهَدُ أن لا إله إلا الله، مستيقنا بها قلبه قشرة بالجنة (তুমি যাও। এ বাগানের বাইরে এমন যারই সাক্ষাত পাবে যে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেবে)।
"আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই' কথাটি কালেমায়ে তায়্যিবার প্রথম অংশ। দ্বিতীয় অংশ হল 'মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। বাক্যদু'টি পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। তাই মাঝখানে সংযোজক অব্যয় 'ও' (এবং) ব্যবহৃত হয়নি। একইসঙ্গে মিলিয়ে বলা হয়েছে - (আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)। কাজেই হাদীছটিতে যে বলা হয়েছে- "যে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বূদ নেই, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেবে", এব মধ্যে কালেমার দ্বিতীয় অংশও শামিল রয়েছে। জান্নাত লাভ করতে হলে পূর্ণ কালেমার সাক্ষ্যই দেওয়া জরুরি।
পূর্ণ কালেমার সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্যে আকীদা-বিশ্বাসের সবগুলো বিষয়ই বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং হাদীছটির অর্থ দাঁড়ায় যে ব্যক্তি ঈমানের যাবতীয় বিষয় অন্তরে পোষণ করবে, সেইসঙ্গে তার দাবি অনুযায়ী শরী'আতের অনুসরণ করবে আর এ অবস্থায়ই তার মৃত্যু হবে, সে শুরুতেই জান্নাত লাভ করবে। তার যদি কবীরা গুনাহ থাকে, তবে তা আল্লাহর এখতিয়ারাধীন থাকবে। আল্লাহ তা'আলা চাইলে মাফ করতে পারেন, তখন সে শুরুতেই জান্নাত লাভ করবে। মাফ না করা হলে গুনাহ পরিমাণ শাস্তিভোগ করবে, তারপর সে জান্নাতে যাবে। বোঝা গেল মুমিন ছাড়া কোনও কাফের-মুশরিক জান্নাতে যেতে পারবে না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-কে এ সুসংবাদ দেওয়ার জন্য নিজ পাদুকা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন বাড়তি আস্থা যোগানোর লক্ষ্যে, লোকে যাতে নিশ্চিত বুঝতে পারে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেই এ সুসংবাদ প্রচার করছেন।
বিস্তারিত বর্ণনায় হাদীছটিতে এর পরে আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বাগানের বাইরে এসে সর্বপ্রথম যাকে পেয়েছিলেন তিনি ছিলেন হযরত উমর ফারূক রাযি.। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. তাঁকে এ সুসংবাদ দিতেই তিনি খুশি হওয়ার বদলে খুব রেগে যান। তিনি হযরত আবু হুরায়রা রাযি.-এর সঙ্গে খুব কঠোর আচরণ করেন। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. ভগ্নহৃদয়ে ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হযরত উমর রাযি.-এর আচরণ সম্পর্কে অভিযোগ করেন। পেছনে পেছনে হযরত উমর রাযি.-ও হাজির হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর রাযি.-এর কাছে তাঁর আচরণের কৈফিয়ত চাইলে তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা, এ সুসংবাদ শুনলে লোকে এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে, তারা আমল করবে না । তারচে' তাদেরকে আমল করতে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি আসাল্লাম বললেন, ঠিক আছে, তাদেরকে আমল করতে দাও।