রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭৭
আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ফযীলত, এর প্রতি উৎসাহদান এবং কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করা আর তাকে তা অবহিত করা হলে জবাবে সে যা বলবে।
আল্লাহর জন্য পারস্পরিক ভালোবাসার ফযীলত
হাদীছ নং: ৩৭৭

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, কোথায় সেইসকল লোক, যারা আমার গৌরব-মহিমার কারণে একে অন্যকে ভালোবাসত? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় স্থান দেব, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া আর কোনও ছায়া নেই –মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং২৫৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭২৩১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৭৪; তবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৬৪৪; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১০৬৭; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৫৭৭
46 - باب فضل الحب في الله والحث عَلَيهِ وإعلام الرجل من يحبه، أنه يحبه، وماذا يقول لَهُ إِذَا أعلمه
377 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنّ الله تَعَالَى يَقُول يَوْمَ القِيَامَةِ: أيْنَ المُتَحَابُّونَ بِجَلالِي؟ اليَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلِّي». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যারা আল্লাহ তাআলার জন্য একে অন্যকে ভালোবাসত, হাশরের ময়দানে তাদের অবস্থান কোথায় এবং কার কী অবস্থা তা সবই আল্লাহ তাআলার ভালোভাবেই জানা থাকবে। তা সত্ত্বেও ‘তারা কোথায়' এ প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হাশরের ময়দানে উপস্থিত লোকজনের সামনে তাদের মর্যাদা তুলে ধরা।

আল্লাহর গৌরব-মহিমার কারণে একে অন্যকে ভালোবাসার অর্থ সে ভালোবাসায় পার্থিব কোনও স্বার্থ না থাকা; বরং কেবলই আল্লাহ তাআলার জন্য ও তাঁরই সন্তুষ্টিলাভের জন্য ভালোবাসা।

গৌরব-মহিমার কথা উল্লেখ দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য তাদের অন্তরে আল্লাহ তাআলার ভয়-ভীতি, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহিমা জাগ্রত আছে। আর সে কারণে তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসা যায় না। কাউকে ভালোবাসতে চাইলে কেবল তাঁর জন্যই ভালোবাসা যায়। কাউকে ভালোবাসলে সে ক্ষেত্রেও ভালোবাসার সীমা রক্ষা জরুরি, যাতে আল্লাহ তাআলার কোনও হক নষ্ট না হয়। অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকলে সে সীমা রক্ষা করা সহজ হয়। ফলে ভালোবাসার দাবি আদায়ের পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার হকসমূহ যথাসাধ্য আদায় করা হয়। বান্দার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলার হকসমূহ উপেক্ষিত থেকে যায় না। পারস্পরিক যে মহব্বত ও ভালোবাসা আল্লাহ তাআলার জন্য হয় না এবং সে মহব্বতের সঙ্গে অন্তরে তাঁর ভয়-ভীতি সক্রিয় থাকে না, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার নাফরমানি হয়ে যায়, নানাভাবে শরীআতের বরখেলাফ হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলার ছায়া মানে তাঁর রহমতের ছায়া বা তাঁর আরশের ছায়া। যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, হাশরের ময়দানে তারা এ ছায়া লাভ করবে। এর আগের হাদীছেও এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এটি একটি 'হাদীছে কুদসী'। এর ভাব আল্লাহ তাআলার, ভাষা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। তবে তিনি এটি ব্যক্ত করেছেন আল্লাহ তাআলার জবানিতে। এরকম হাদীছকেই হাদীছে কুদসী বলে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও তাঁর মহত্ব অন্তরে জাগ্রত রেখে তাঁরই জন্য পরস্পরকে ভালোবাসা উচ্চতর একটি নেক আমল।

খ. যারা আল্লাহ তাআলার জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে, হাশরের ময়দানে সমস্ত মাখলুকের সামনে তাদের মর্যাদা প্রকাশ করা হবে।

গ. হাশরের ময়দানে আল্লাহর রহমত ও তাঁর আরশের ছায়ালাভের আশায় পার্থিব কোনও স্বার্থ ছাড়া কেবল তাঁরই উদ্দেশ্যে একে অন্যকে মহব্বত করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৭৭ | মুসলিম বাংলা