রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৭৪
নেককার লোকদের সঙ্গে সাক্ষাত করা, তাদের মজলিসে বসা, তাদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাদেরকে ভালোবাসা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদের কাছে দু'আ চাওয়া এবং মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহের যিয়ারত করা।
হজ্জ ও উমরাকারীর কুবায় গমন
হাদীছ নং : ৩৭৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে এবং পায়ে হেঁটে কুবায় যেতেন এবং সেখানে দু'রাকাত নামায পড়তেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবার সওয়ার হয়ে এবং পায়ে হেঁটে কুবার মসজিদে আসতেন। হযরত ইবন উমরও তাই করতেন -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১১৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩৯৯; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৬৭৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১৬৩২; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১০৯২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪৫৭
45 - باب زيارة أهل الخير ومجالستهم وصحبتهم ومحبتهم وطلب زيارتهم والدعاء منهم وزيارة المواضع الفاضلة
374 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما، قَالَ: كَانَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - يزور قُبَاءَ رَاكِبًا وَمَاشِيًا، فَيُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: كَانَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - يَأتي مَسْجِد قُبَاءَ كُلَّ سَبْتٍ رَاكبًا، وَمَاشِيًا وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কুবা মদীনা মুনাউওয়ারা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি শহর। এক কালে এখানে একটি কুয়া ছিল। কুয়াটির নাম ছিল কুবা। সে নামেই জনপদটির নামকরণ করা হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা মুকারামা থেকে হিজরত করে প্রথমে ১৪ দিন এ জনপদেই অবস্থান করেন। তিনি এখানে পৌঁছেছিলেন ১৩ নববী বর্ষের ৮ রবীউল আউওয়াল সোমবার মোতাবেক ২৩ ডিসেম্বর ৬২২ খ্রীষ্টাব্দে। তিনি আমর ইবন আওফ গোত্রের নেতা কুলছুম ইবন হাদম রাযি.-এর বাড়িতে উঠেছিলেন।

যেসকল সাহাবী প্রথমে হিজরত করে এসেছিলেন, তারা কুবায় অবস্থানকালে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। পরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কুবায় পৌঁছে এ মসজিদেই নামায আদায় করতে থাকেন। এ মসজিদটির অপর নাম মাসজিদুত্‌-তাকওয়া। এ মসজিদ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيهِ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার দাঁড়ানোর বেশি উপযুক্ত। তাতে এমন লোক আছে, যারা পাক-পবিত্রতাকে বেশি পসন্দ করে। আল্লাহ পাক-পবিত্র লোকদের পসন্দ করেন।'২৬৫

হযরত উছমান রাযি., হযরত উমর ইবন আব্দুল আযীয রহ., উছমানী খলীফা সুলতান মাহমূদ খান ও বাদশা ফয়সাল যথাক্রমে মসজিদটির সম্প্রসারণের কাজ করেন। ১৫ হাজার বর্গমিটারের বিশাল এ মসজিদে বর্তমানে একসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লী নামায পড়তে পারে।

এ হাদীছে জানানো হয়েছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবারে এ মসজিদে এসে দু'রাকআত নামায পড়তেন। কখনও পায়ে হেঁটে আসতেন এবং কখনও সওয়ার হয়ে।
এ মসজিদের অনেক ফযীলত। প্রতি শনিবারে এ মসজিদে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনই এর ফযীলতের জন্য যথেষ্ট। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন الصلاة في مسجد قباء كعمرة ‘কুবার মসজিদে নামায পড়া উমরাহর সমতুল্য।২৬৬

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

খ. কুবা মসজিদে প্রতি শনিবার সকাল বেলা যাওয়া ও নফল নামায পড়া মুস্তাহাব।

খ. এ হাদীছ দ্বারা মুবারক ও পবিত্র স্থানসমূহ যিয়ারতের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।

২৬৫. সূরা তাওবা (৯), আয়াত ১০৮

২৬৬. জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩২৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪১১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ৭৫২৯; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪৫৯
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৭৪ | মুসলিম বাংলা