রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৭২
নেককার লোকদের সঙ্গে সাক্ষাত করা, তাদের মজলিসে বসা, তাদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাদেরকে ভালোবাসা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদের কাছে দু'আ চাওয়া এবং মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহের যিয়ারত করা।
উয়ায়স কারনী রহ.-এর ঘটনা
হাদীছ নং : ৩৭২
উসায়র ইবন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত তাকে উসায়র ইবন জাবিরও বলা হয়- তিনি বলেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর কাছে ইয়ামানের সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কি উয়ায়স ইবন আমির আছে? একপর্যায়ে তিনি উয়ায়স পর্যন্ত পৌঁছলেন। বললেন, আপনি কি উয়ায়স ইবন আমির? তিনি বললেন, হাঁ। জিজ্ঞেস করলেন, মুরাদ গোত্রের শাখা কারন গোত্রের? তিনি বললেন, হাঁ। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি শ্বেতরোগ হয়েছিল, যা থেকে আপনি মুক্তিলাভ করেছেন, তবে এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? তিনি বললেন, হাঁ। জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মা কি জীবিত আছেন? তিনি বললেন, হাঁ। এবার তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামানবাসীদের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে উয়ায়স ইবন আমির তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের শাখা কারন গোত্রের লোক। তার শ্বেতরোগ ছিল, যা থেকে সে মুক্তিলাভ করেছে। তবে এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। তার মা আছেন। সে তার অনুগত। সে যদি আল্লাহর নামে কোনও বিষয়ে কসম করে তবে আল্লাহ তার সে কসম রক্ষা করেন। তুমি যদি তোমার জন্য তার দ্বারা মাগফিরাতের দু'আ করানোর সুযোগ পাও তবে তা অবশ্যই করবে। সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করুন। তিনি তাঁর জন্য মাগফিরাতের দু'আ করলেন। তারপর উমর রাযি. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথায় যেতে চান? বললেন, কূফায়। তিনি বললেন, আমি কি সেখানকার গভর্নরের কাছে আপনার পক্ষে কিছু লিখে দেব? তিনি বললেন, আমি গরীব ও অখ্যাত লোকদের একজন হয়ে থাকাই বেশি পসন্দ করি। এরপরের বছর সেখানকার গণ্যমান্য লোকদের একজন হচ্ছে এসে হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি তাকে উয়ায়স সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আমি তাকে এ অবস্থায় রেখে এসেছি যে, তার ঘর অত্যন্ত জরাজীর্ণ। আসবাবপত্র নিতান্তই কম। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামানবাসীদের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে উয়ায়স ইবন আমির তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের শাখা কারন গোত্রের লোক। তার শ্বেতরোগ ছিল, যা থেকে সে মুক্তিলাভ করেছে। তবে এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। তার মা আছেন। সে তার অনুগত। সে যদি আল্লাহর নামে কোনও বিষয়ে কসম করে তবে আল্লাহ সে কসম রক্ষা করেন। তুমি যদি তোমার জন্য তার দ্বারা মাগফিরাতের দু'আ করানোর সুযোগ পাও তবে তা অবশ্যই করবে। সুতরাং সে ব্যক্তি উয়ায়সের কাছে এসে বলল, আমার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করুন। উয়ায়স বললেন, আপনি সদ্য একটি নেক সফর থেকে ফিরেছেন। কাজেই আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করুন। তারপর বললেন, আপনি কি উমরের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন? সে বলল, হাঁ। তারপর তিনি তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করলেন। অনন্তর লোকজন তার সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠল। ফলে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন -মুসলিম।২৬০
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, উসায়র ইবন জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, কূফাবাসীগণ উমর রাযি.-এর কাছে প্রতিনিধি হয়ে আসল। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল যে উয়ায়সকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। উমর রাযি. তাদেরকে বললেন, এখানে কারন গোত্রীয় কেউ আছে? তখন সেই ব্যক্তি আসল। উমর রাযি. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইয়ামান থেকে উয়ায়স নামে কথিত এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। সে ইয়ামানে একমাত্র তার মা ছাড়া আর কাউকে রেখে আসবে না। তার শ্বেতরোগ ছিল। সে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করলে তিনি তা দূর করে দিলেন, তবে এক দিনার বা এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। তোমাদের মধ্যে কেউ তার সাক্ষাত পেলে তাকে দিয়ে তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করাবে।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তাবি'ঈদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এমন এক ব্যক্তি, যাকে উয়ায়স বলা হয়ে থাকে, তার মা জীবিত আছেন। আর তার শ্বেতরোগ ছিল। তোমরা তাকে বলবে যেন তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করে।
ইমাম নববী রহ. বলেন, غبراء الناس এর অর্থ গরীব ও নিঃস্ব লোক এবং এমন সাধারণ পর্যায়ের লোক যাকে কেউ চেনে না।
الامداد শব্দটি مدد এর বহুবচন। এর দ্বারা এমন সাহার্যকারী দলকে বোঝানো হয়, যারা জিহাদে মুসলিম বাহিনীর সাহায্যার্থে প্রেরিত হয়ে থাকে।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ৩২৩৪৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৩৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪০০৬
হাদীছ নং : ৩৭২
উসায়র ইবন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত তাকে উসায়র ইবন জাবিরও বলা হয়- তিনি বলেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.-এর কাছে ইয়ামানের সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কি উয়ায়স ইবন আমির আছে? একপর্যায়ে তিনি উয়ায়স পর্যন্ত পৌঁছলেন। বললেন, আপনি কি উয়ায়স ইবন আমির? তিনি বললেন, হাঁ। জিজ্ঞেস করলেন, মুরাদ গোত্রের শাখা কারন গোত্রের? তিনি বললেন, হাঁ। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি শ্বেতরোগ হয়েছিল, যা থেকে আপনি মুক্তিলাভ করেছেন, তবে এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? তিনি বললেন, হাঁ। জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মা কি জীবিত আছেন? তিনি বললেন, হাঁ। এবার তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামানবাসীদের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে উয়ায়স ইবন আমির তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের শাখা কারন গোত্রের লোক। তার শ্বেতরোগ ছিল, যা থেকে সে মুক্তিলাভ করেছে। তবে এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। তার মা আছেন। সে তার অনুগত। সে যদি আল্লাহর নামে কোনও বিষয়ে কসম করে তবে আল্লাহ তার সে কসম রক্ষা করেন। তুমি যদি তোমার জন্য তার দ্বারা মাগফিরাতের দু'আ করানোর সুযোগ পাও তবে তা অবশ্যই করবে। সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করুন। তিনি তাঁর জন্য মাগফিরাতের দু'আ করলেন। তারপর উমর রাযি. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথায় যেতে চান? বললেন, কূফায়। তিনি বললেন, আমি কি সেখানকার গভর্নরের কাছে আপনার পক্ষে কিছু লিখে দেব? তিনি বললেন, আমি গরীব ও অখ্যাত লোকদের একজন হয়ে থাকাই বেশি পসন্দ করি। এরপরের বছর সেখানকার গণ্যমান্য লোকদের একজন হচ্ছে এসে হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি তাকে উয়ায়স সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আমি তাকে এ অবস্থায় রেখে এসেছি যে, তার ঘর অত্যন্ত জরাজীর্ণ। আসবাবপত্র নিতান্তই কম। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামানবাসীদের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে উয়ায়স ইবন আমির তোমাদের কাছে আসবে। সে মুরাদ গোত্রের শাখা কারন গোত্রের লোক। তার শ্বেতরোগ ছিল, যা থেকে সে মুক্তিলাভ করেছে। তবে এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। তার মা আছেন। সে তার অনুগত। সে যদি আল্লাহর নামে কোনও বিষয়ে কসম করে তবে আল্লাহ সে কসম রক্ষা করেন। তুমি যদি তোমার জন্য তার দ্বারা মাগফিরাতের দু'আ করানোর সুযোগ পাও তবে তা অবশ্যই করবে। সুতরাং সে ব্যক্তি উয়ায়সের কাছে এসে বলল, আমার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করুন। উয়ায়স বললেন, আপনি সদ্য একটি নেক সফর থেকে ফিরেছেন। কাজেই আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করুন। তারপর বললেন, আপনি কি উমরের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন? সে বলল, হাঁ। তারপর তিনি তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করলেন। অনন্তর লোকজন তার সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠল। ফলে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন -মুসলিম।২৬০
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, উসায়র ইবন জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, কূফাবাসীগণ উমর রাযি.-এর কাছে প্রতিনিধি হয়ে আসল। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল যে উয়ায়সকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। উমর রাযি. তাদেরকে বললেন, এখানে কারন গোত্রীয় কেউ আছে? তখন সেই ব্যক্তি আসল। উমর রাযি. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইয়ামান থেকে উয়ায়স নামে কথিত এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। সে ইয়ামানে একমাত্র তার মা ছাড়া আর কাউকে রেখে আসবে না। তার শ্বেতরোগ ছিল। সে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করলে তিনি তা দূর করে দিলেন, তবে এক দিনার বা এক দিরহাম পরিমাণ অবশিষ্ট আছে। তোমাদের মধ্যে কেউ তার সাক্ষাত পেলে তাকে দিয়ে তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করাবে।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তাবি'ঈদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এমন এক ব্যক্তি, যাকে উয়ায়স বলা হয়ে থাকে, তার মা জীবিত আছেন। আর তার শ্বেতরোগ ছিল। তোমরা তাকে বলবে যেন তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করে।
ইমাম নববী রহ. বলেন, غبراء الناس এর অর্থ গরীব ও নিঃস্ব লোক এবং এমন সাধারণ পর্যায়ের লোক যাকে কেউ চেনে না।
الامداد শব্দটি مدد এর বহুবচন। এর দ্বারা এমন সাহার্যকারী দলকে বোঝানো হয়, যারা জিহাদে মুসলিম বাহিনীর সাহায্যার্থে প্রেরিত হয়ে থাকে।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৫৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীছ নং ৩২৩৪৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৩৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪০০৬
45 - باب زيارة أهل الخير ومجالستهم وصحبتهم ومحبتهم وطلب زيارتهم والدعاء منهم وزيارة المواضع الفاضلة
372 - وعن أُسَيْر بن عمرو، ويقال: ابن جابر وَهُوَ - بضم الهمزة وفتح السين المهملة - قَالَ: كَانَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ - رضي الله عنه - إِذَا أتَى عَلَيهِ أَمْدَادُ أهْلِ اليَمَنِ سَألَهُمْ: [ص:135] أفِيكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ؟ حَتَّى أتَى عَلَى أُوَيْسٍ - رضي الله عنه - فَقَالَ لَهُ: أَنْتَ أُوَيْسُ ابْنُ عَامِر؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَكَانَ بِكَ بَرَصٌ، فَبَرَأْتَ مِنْهُ إلاَّ مَوْضِعَ دِرْهَمٍ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: لَكَ وَالِدةٌ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُويْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادِ أَهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ كَانَ بِهِ بَرَصٌ، فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ مَوْضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالدةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى الله لأَبَرَّهُ، فإنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَل» فَاسْتَغْفِرْ لي فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: أَيْنَ تُريدُ؟ قَالَ: الكُوفَةَ، قَالَ: ألاَ أَكْتُبُ لَكَ إِلَى عَامِلِهَا؟ قَالَ: أكُونُ في غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ، فَلَمَّا كَانَ مِنَ العَامِ المُقْبِلِ حَجَّ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِهِمْ، فَوافَقَ عُمَرَ، فَسَألَهُ عَنْ أُوَيْسٍ، فَقَالَ: تَرَكْتُهُ رَثَّ (1) البَيْتِ قَليلَ المَتَاع، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقولُ: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادٍ مِنْ أَهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ مَوضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، فَإنِ اسْتَطْعتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ، فَافْعَلْ» فَأتَى أُوَيْسًا، فَقَالَ: اسْتَغْفِرْ لِي. قَالَ: أَنْتَ أحْدَثُ عَهْدًا بسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لي. قَالَ: لَقِيتَ عُمَرَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَفَطِنَ لَهُ النَّاسُ، فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ. رواه مسلم. (2)
وفي رواية لمسلم أيضًا عن أُسَيْر بن جابر - رضي الله عنه: أنَّ أهْلَ الكُوفَةِ وَفَدُوا عَلَى عُمَرَ - رضي الله عنه - وَفِيهمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ، فَقَالَ عُمَرُ: هَلْ هاهُنَا أَحَدٌ مِنَ القَرَنِيِّينَ؟ فَجَاءَ ذلِكَ الرَّجُلُ، فَقَالَ عمرُ: إنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَدْ قَالَ: «إنَّ رَجُلًا يَأتِيكُمْ مِنَ اليَمَنِ يُقَالُ لَهُ: أُوَيْسٌ، لاَ يَدَعُ باليَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ، قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا الله تَعَالَى، فَأذْهَبَهُ إلاَّ مَوضِعَ الدِّينَارِ أَو الدِّرْهَمِ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
وفي رواية لَهُ: عن عمر - رضي الله عنه - قَالَ: إنِّي سَمِعْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ: أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ، فَمُرُوهُ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
قوله: «غَبْرَاءِ النَّاسِ» بفتح الغين المعجمة، وإسكان الباءِ وبالمد: وهم فُقَرَاؤُهُمْ وَصَعَالِيكُهُمْ وَمَنْ لا يُعْرَفُ عَيْنُهُ مِنْ أخلاطِهِمْ «وَالأَمْدَادُ» جَمْعُ مَدَدٍ: وَهُمُ الأَعْوَانُ وَالنَّاصِرُونَ الَّذِينَ كَانُوا يُمدُّونَ المُسْلِمِينَ في الجهَاد.
وفي رواية لمسلم أيضًا عن أُسَيْر بن جابر - رضي الله عنه: أنَّ أهْلَ الكُوفَةِ وَفَدُوا عَلَى عُمَرَ - رضي الله عنه - وَفِيهمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ، فَقَالَ عُمَرُ: هَلْ هاهُنَا أَحَدٌ مِنَ القَرَنِيِّينَ؟ فَجَاءَ ذلِكَ الرَّجُلُ، فَقَالَ عمرُ: إنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَدْ قَالَ: «إنَّ رَجُلًا يَأتِيكُمْ مِنَ اليَمَنِ يُقَالُ لَهُ: أُوَيْسٌ، لاَ يَدَعُ باليَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ، قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا الله تَعَالَى، فَأذْهَبَهُ إلاَّ مَوضِعَ الدِّينَارِ أَو الدِّرْهَمِ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
وفي رواية لَهُ: عن عمر - رضي الله عنه - قَالَ: إنِّي سَمِعْتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «إنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ: أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ، فَمُرُوهُ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
قوله: «غَبْرَاءِ النَّاسِ» بفتح الغين المعجمة، وإسكان الباءِ وبالمد: وهم فُقَرَاؤُهُمْ وَصَعَالِيكُهُمْ وَمَنْ لا يُعْرَفُ عَيْنُهُ مِنْ أخلاطِهِمْ «وَالأَمْدَادُ» جَمْعُ مَدَدٍ: وَهُمُ الأَعْوَانُ وَالنَّاصِرُونَ الَّذِينَ كَانُوا يُمدُّونَ المُسْلِمِينَ في الجهَاد.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত উয়ায়স আল-কারনী রহ. একজন উচ্চস্তরের আল্লাহওয়ালা ছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ পেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের খেদমতে নিয়োজিত থাকায় তাঁর পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতলাভ সম্ভব হয়নি। ফলে সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য তিনি লাভ করতে পারেননি। তবে তাবি‘ঈ হিসেবে তাঁর মর্যাদা অতি উচ্চে।
এ হাদীছে স্পষ্টভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ। অবশ্য সর্বশ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ কে, এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত আছে। কারও মতে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ.। কারও মতে হযরত যায়নুল আবিদীন আলী ইবনুল হুসায়ন রহ.। তাছাড়া আবূ উছমান নাহ্দী রহ., আলকামা রহ কায়স ইবন আবী হাযিম রহ. ও হাসান বসরী রহ.-কেও শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যেহেতু স্পষ্টভাবে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-কে শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈর সনদ দেওয়া হয়েছে, তখন সাধারণভাবে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ তাবি‘ঈ গণ্য করা উচিত। অন্য যাদেরকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, তা বিশেষ বিশেষ বিবেচনায়। যেমন হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন তাফসীর, হাদীছ প্রভৃতি ইলমের বিবেচনায়। হযরত আলকামা রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ফকীহ হিসেবে। হযরত হাসান বসরী রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ইলম, যুহদ ইত্যাদির বিচারে। এভাবে একেকজন একেক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা ও নৈকট্যের দিক থেকে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-ই সবার সেরা।
উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর এত উচ্চমর্যাদার কারণ বিবিধ। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য তাঁর মাতৃভক্তি। মায়ের সেবাযত্নে নিয়োজিত থাকার কারণে এমনকি তিনি সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্যলাভকে পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন।
তাঁর একটি বিশেষ গুণ ছিল প্রচারবিমুখতা। তিনি নিভৃত, অজ্ঞাত ও অখ্যাত জীবন ভালোবাসতেন। যেমন এ হাদীছে তাঁর উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে- أَكُونُ فِي غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ (আমি গরীব ও অখ্যাত লোকদের একজন হয়ে থাকাই বেশি পসন্দ করি)। ফলে যখন তাঁর সম্পর্কে জানাজানি হয়ে গেল, তখন সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, অখ্যাত অজ্ঞাত থাকা আল্লাহ তাআলার কাছেও পসন্দ।
হযরত উয়ায়স রহ. ছিলেন অত্যন্ত দুনিয়াবিমুখ। দুনিয়ার প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র আসক্তি ও লোভ-লালসা ছিল না। খুবই গরীবানা হালে দিন কাটাতেন। হযরত উমর ফারূক রাযি. তাঁর সম্পর্কে কূফার আমীরকে কিছু লিখে দিতে চাইলে তিনি তাতে অসম্মতি জানান এবং সাধারণ জীবনযাপনের প্রতিই নিজ আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এসব গুণের প্রত্যেকটিই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের অতি বড় উপায়।
এ হাদীছে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে হুকুম দিয়েছিলেন- যদি উয়ায়সের সাক্ষাত পান, তবে তার কাছে যেন গুনাহমাফীর দুআ চান।
এর দ্বারা এ কথা বোঝার কোনও সুযোগ নেই যে, তিনি হযরত উমর রাযি.-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। উয়ায়স আল-কারনী রহ. অনেক বড় বুযুর্গ ছিলেন বটে, কিন্তু ছিলেন তিনি একজন তাবি'ঈ। যে-কোনও তাবি'ঈ অপেক্ষা যে-কোনও সাহাবীর মর্যাদা অনেক উপরে। হযরত উমর ফারূক রাযি. শুধু সাহাবীই নন; সাহাবীদের মধ্যেও সর্বোচ্চ স্তরের। তিনি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর পরেই এ উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। কাজেই তাঁর তুলনায় কোনও তাবি'ঈ বা অন্য কোনও ওলী-বুযুর্গের শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বস্তুত উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর কাছে গুনাহমাফীর দুআ চাইতে বলা হয়েছে বাড়তি ফযীলতলাভের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টির স্তর পরিক্রমার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। তাই নৈকট্যের কোনও স্তরে পৌঁছে ক্ষান্ত ও পরিতৃপ্ত হয়ে যাওয়ারও অবকাশ নেই। এ পথের অভিযাত্রীগণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের যত উচ্চতায় উপনীত হতে থাকেন, ততই তাদের আরও উচ্চতায় উন্নীত হওয়ার আগ্রহ অদম্য হয়ে ওঠে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে সে অদম্য আগ্রহে উদ্দীপিত করে তোলার প্রতি লক্ষ রাখতেন। উয়ায়স আল-কারনীর কাছে দুআ চাওয়ার উপদেশদান সেরকমই এক প্রণোদনাবিশেষ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তো একবার হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে বলেছিলেন-
لاَ تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ
(ওহে প্রিয় ভাই! তোমার দুআয় আমাদের ভুলে যেও না),
যেমন পরের হাদীছে আসছে। তিনি আমাদেরকেও উৎসাহ দিয়েছেন যেন তাঁর জন্য রহমতের দুআ করি এবং তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করি। আমাদেরকে তাঁর জন্য ওয়াসীলা ও মাকামে মাহমূদের দুআ করার শিক্ষাদান করা হয়েছে।
সুতরাং ছোট বড়'র কাছে, বড় ছোট'র কাছে, সাধারণ ব্যক্তি বুযুর্গের কাছে এবং বুযুর্গ ব্যক্তি সাধারণ লোকের কাছে, এমনিভাবে যে-কেউ যে-কারও কাছে দুআ চাইতে পারে। অবশ্য বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা বিশেষভাবে আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়ার প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের একটি উপায়।
খ. প্রচারবিমুখ থাকা আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য। এটি ইখলাস রক্ষার পক্ষে সহায়ক।
গ. তুচ্ছ বেশভূষা ও গরীবী হাল দেখে কাউকে হেলা করতে নেই, বাস্তবিকপক্ষে সে আল্লাহ তাআলার অনেক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হতে পারে।
ঘ. আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়া উচিত, বিশেষত নিজ গুনাহমাফীর জন্য।
এ হাদীছে স্পষ্টভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ। অবশ্য সর্বশ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ কে, এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত আছে। কারও মতে হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ.। কারও মতে হযরত যায়নুল আবিদীন আলী ইবনুল হুসায়ন রহ.। তাছাড়া আবূ উছমান নাহ্দী রহ., আলকামা রহ কায়স ইবন আবী হাযিম রহ. ও হাসান বসরী রহ.-কেও শ্রেষ্ঠতম তাবি'ঈ বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে যেহেতু স্পষ্টভাবে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-কে শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈর সনদ দেওয়া হয়েছে, তখন সাধারণভাবে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ তাবি‘ঈ গণ্য করা উচিত। অন্য যাদেরকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, তা বিশেষ বিশেষ বিবেচনায়। যেমন হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন তাফসীর, হাদীছ প্রভৃতি ইলমের বিবেচনায়। হযরত আলকামা রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ফকীহ হিসেবে। হযরত হাসান বসরী রহ. শ্রেষ্ঠ ছিলেন ইলম, যুহদ ইত্যাদির বিচারে। এভাবে একেকজন একেক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ তাবি'ঈ ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা ও নৈকট্যের দিক থেকে উয়ায়স আল-কারনী রহ.-ই সবার সেরা।
উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর এত উচ্চমর্যাদার কারণ বিবিধ। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য তাঁর মাতৃভক্তি। মায়ের সেবাযত্নে নিয়োজিত থাকার কারণে এমনকি তিনি সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্যলাভকে পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন।
তাঁর একটি বিশেষ গুণ ছিল প্রচারবিমুখতা। তিনি নিভৃত, অজ্ঞাত ও অখ্যাত জীবন ভালোবাসতেন। যেমন এ হাদীছে তাঁর উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে- أَكُونُ فِي غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ (আমি গরীব ও অখ্যাত লোকদের একজন হয়ে থাকাই বেশি পসন্দ করি)। ফলে যখন তাঁর সম্পর্কে জানাজানি হয়ে গেল, তখন সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, অখ্যাত অজ্ঞাত থাকা আল্লাহ তাআলার কাছেও পসন্দ।
হযরত উয়ায়স রহ. ছিলেন অত্যন্ত দুনিয়াবিমুখ। দুনিয়ার প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র আসক্তি ও লোভ-লালসা ছিল না। খুবই গরীবানা হালে দিন কাটাতেন। হযরত উমর ফারূক রাযি. তাঁর সম্পর্কে কূফার আমীরকে কিছু লিখে দিতে চাইলে তিনি তাতে অসম্মতি জানান এবং সাধারণ জীবনযাপনের প্রতিই নিজ আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এসব গুণের প্রত্যেকটিই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের অতি বড় উপায়।
এ হাদীছে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে হুকুম দিয়েছিলেন- যদি উয়ায়সের সাক্ষাত পান, তবে তার কাছে যেন গুনাহমাফীর দুআ চান।
এর দ্বারা এ কথা বোঝার কোনও সুযোগ নেই যে, তিনি হযরত উমর রাযি.-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। উয়ায়স আল-কারনী রহ. অনেক বড় বুযুর্গ ছিলেন বটে, কিন্তু ছিলেন তিনি একজন তাবি'ঈ। যে-কোনও তাবি'ঈ অপেক্ষা যে-কোনও সাহাবীর মর্যাদা অনেক উপরে। হযরত উমর ফারূক রাযি. শুধু সাহাবীই নন; সাহাবীদের মধ্যেও সর্বোচ্চ স্তরের। তিনি হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর পরেই এ উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। কাজেই তাঁর তুলনায় কোনও তাবি'ঈ বা অন্য কোনও ওলী-বুযুর্গের শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
বস্তুত উয়ায়স আল-কারনী রহ.-এর কাছে গুনাহমাফীর দুআ চাইতে বলা হয়েছে বাড়তি ফযীলতলাভের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টির স্তর পরিক্রমার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। তাই নৈকট্যের কোনও স্তরে পৌঁছে ক্ষান্ত ও পরিতৃপ্ত হয়ে যাওয়ারও অবকাশ নেই। এ পথের অভিযাত্রীগণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের যত উচ্চতায় উপনীত হতে থাকেন, ততই তাদের আরও উচ্চতায় উন্নীত হওয়ার আগ্রহ অদম্য হয়ে ওঠে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবীদেরকে সে অদম্য আগ্রহে উদ্দীপিত করে তোলার প্রতি লক্ষ রাখতেন। উয়ায়স আল-কারনীর কাছে দুআ চাওয়ার উপদেশদান সেরকমই এক প্রণোদনাবিশেষ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তো একবার হযরত উমর ফারূক রাযি.-কে বলেছিলেন-
لاَ تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ
(ওহে প্রিয় ভাই! তোমার দুআয় আমাদের ভুলে যেও না),
যেমন পরের হাদীছে আসছে। তিনি আমাদেরকেও উৎসাহ দিয়েছেন যেন তাঁর জন্য রহমতের দুআ করি এবং তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করি। আমাদেরকে তাঁর জন্য ওয়াসীলা ও মাকামে মাহমূদের দুআ করার শিক্ষাদান করা হয়েছে।
সুতরাং ছোট বড়'র কাছে, বড় ছোট'র কাছে, সাধারণ ব্যক্তি বুযুর্গের কাছে এবং বুযুর্গ ব্যক্তি সাধারণ লোকের কাছে, এমনিভাবে যে-কেউ যে-কারও কাছে দুআ চাইতে পারে। অবশ্য বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা বিশেষভাবে আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়ার প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের একটি উপায়।
খ. প্রচারবিমুখ থাকা আল্লাহওয়ালাদের বৈশিষ্ট্য। এটি ইখলাস রক্ষার পক্ষে সহায়ক।
গ. তুচ্ছ বেশভূষা ও গরীবী হাল দেখে কাউকে হেলা করতে নেই, বাস্তবিকপক্ষে সে আল্লাহ তাআলার অনেক প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হতে পারে।
ঘ. আল্লাহওয়ালা ও নেককার ব্যক্তিদের কাছে দুআ চাওয়া উচিত, বিশেষত নিজ গুনাহমাফীর জন্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
