রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৬৫
নেককার লোকদের সঙ্গে সাক্ষাত করা, তাদের মজলিসে বসা, তাদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাদেরকে ভালোবাসা, তাদের সাক্ষাত প্রার্থনা করা, তাদের কাছে দু'আ চাওয়া এবং মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহের যিয়ারত করা।
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের অধিকতর সাক্ষাতলাভের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগ্রহপ্রকাশ
হাদীছ নং : ৩৬৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে যে পরিমাণ সাক্ষাত করেন তার চেয়ে আরও বেশি সাক্ষাত করতে আপনার বাধা কিসে? এরই পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হয়-
وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلَّا بِأَمْرِ رَبِّكَ لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذَلِكَ
(এবং ফিরিশতাগণ তোমাকে বলে) আমরা আপনার প্রতিপালকের হুকুম ছাড়া অবতরণ করি না। যা-কিছু আমাদের সামনে, যা-কিছু আমাদের পেছনে এবং যা-কিছু এ দু'য়ের মাঝখানে আছে, তা সব তাঁরই মালিকানাধীন) -সূরা মারইয়াম, আয়াত ৬৪। -বুখারী।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৭৩১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩১৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৪৩; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১২৩৮৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৭৪০
45 - باب زيارة أهل الخير ومجالستهم وصحبتهم ومحبتهم وطلب زيارتهم والدعاء منهم وزيارة المواضع الفاضلة
365 - وعن ابن عباس رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - لِجبريل: «مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَزُورنَا أكثَر مِمَّا تَزُورَنَا؟» فَنَزَلَتْ: {وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلاَّ بِأَمْرِ رَبِّكَ لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذَلِكَ} [مريم: 64]. رواه البخاري. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ফিরিশতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত বিভিন্ন দায়িত্ব তিনি আঞ্জাম দিতেন। তাঁর আগমন ছিল তাঁর পক্ষে স্বস্তি ও প্রশান্তিদায়ক। তাই তিনি তাঁর বেশি বেশি আগমনের অপেক্ষায় থাকতেন। একবার তাঁর আগমন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বিলম্বে হলে তিনি তাঁর সে আগ্রহের কথা ব্যক্তই করে ফেলেন, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। এক বর্ণনায় আছে-

قَالَ أَبْطَأَ جِبْرِيلُ فِي النُّزُولِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا جِبْرِيلُ مَا نَزَلْتَ حَتَّى اشْتَقْتُ إِلَيْكَ قَالَ أَنَا كُنْتُ أَشْوَقَ إِلَيْكَ وَلَكِنِّي مَأْمُورٌ وَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى جِبْرِيلَ قُلْ لَهُ وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلَّا بِأَمْر رَبك ...

‘একবার জিবরীল আলাইহিস সালাম আসতে চল্লিশ দিন দেরি করলে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে জিবরীল! যতক্ষণ না আমি আপনার আগমনের জন্য অধীর হয়ে উঠেছি, ততক্ষণ আপনি আসেননি। তিনি বললেন, আপনার প্রতি আমি আরও বেশি আগ্রহী ছিলাম। তবে আমি তো আদিষ্ট। তখন আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে প্রত্যাদেশ করেন যে, আপনি তাকে বলুন, আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ছাড়া অবতরণ করি না।২৪৪

বোঝা গেল নবী-রাসূলগণ চাইলেই ফিরিশতার আগমন হয় না। ফিরিশতাগণ আল্লাহর আদেশের অধীন। তিনি আদেশ করলেই তারা আসতে পারেন।

আলোচ্য হাদীছ দ্বারা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপুল আগ্রহের পরিচয় পাওয়া যায়। এর দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সঙ্গে সাক্ষাতলাভের আগ্রহ থাকা একটি প্রশংসনীয় গুণ। তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করা ও তাদের সাহচর্যে কিছুক্ষণ কাটানোর দ্বারা বিশেষ কল্যাণ ও বরকত লাভ হয়ে থাকে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহর নেক বান্দাদের সাহচর্যলাভের আশাবাদী থাকা চাই।

খ. ফিরিশতাগণ আল্লাহর আদেশের অধীন। আল্লাহর আদেশ ছাড়া তারা নিজেদের পক্ষ থেকে কিছু করতে পারেন না। নবী-রাসূলগণের কাছে আসতে হলেও তাদের জন্য আল্লাহর অনুমতি প্রয়োজন হয়।

২৪৪. ফাতহুল বারী, ৮ম খণ্ড, ৫৪৫ নং পৃষ্ঠা। (হযরত ইকরিমা থেকে মুরসালরূপে)
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৬৫ | মুসলিম বাংলা