রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২৯৪
পরিবার-পরিজনের ওপর অর্থব্যয়
পোষ্যবর্গের মৌলিক চাহিদা পূরণে অবহেলা করা গুনাহ
হাদীছ নং : ২৯৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রায. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তির গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, যার খাবার তার দায়িত্বে, সে তার খাবার যোগানো হতে বিরত থাকবে।
এটি একটি সহীহ হাদীছ, যা আবূ দাউদ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।৩৮২ ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ গ্রন্থে একই অর্থের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তা নিম্নরূপ : যে ব্যক্তি কারও খাদ্য যোগানোর যিম্মাদার, তার গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার খাবার আটকে দেবে।৩৮৩
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ - (٣٨١) - এ বাক্যে كَفَى শব্দটি فعل, যার فاعل হচ্ছে أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ মাঝখানে بِالْمَرْءِ শব্দটি مفعول به, যার সাথে অতিরিক্ত ب যুক্ত হয়েছে। إِثْمًا শব্দটি تمييز। কিন্তু এটি মূলত فاعل ছিল। বাক্যটির বিশ্লিষ্ট রূপ এরকম- كفي المرء في عظم الإثم اثم تضييع من يقوت
৩৮২. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৯১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৯৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ২৪৩৫৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৩৪১৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৬৯৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৩৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪০৪
৩৮৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪১; বায়হাকী, আস্সুনানুস সগীর, হাদীছ নং ২৯১৭
হাদীছ নং : ২৯৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রায. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও ব্যক্তির গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, যার খাবার তার দায়িত্বে, সে তার খাবার যোগানো হতে বিরত থাকবে।
এটি একটি সহীহ হাদীছ, যা আবূ দাউদ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।৩৮২ ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ গ্রন্থে একই অর্থের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তা নিম্নরূপ : যে ব্যক্তি কারও খাদ্য যোগানোর যিম্মাদার, তার গুনাহগার হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার খাবার আটকে দেবে।৩৮৩
كَفَى بِالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ - (٣٨١) - এ বাক্যে كَفَى শব্দটি فعل, যার فاعل হচ্ছে أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ মাঝখানে بِالْمَرْءِ শব্দটি مفعول به, যার সাথে অতিরিক্ত ب যুক্ত হয়েছে। إِثْمًا শব্দটি تمييز। কিন্তু এটি মূলত فاعل ছিল। বাক্যটির বিশ্লিষ্ট রূপ এরকম- كفي المرء في عظم الإثم اثم تضييع من يقوت
৩৮২. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৯১৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৯৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ২৪৩৫৪; তাবারানী, আল-মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৩৪১৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৫৬৯৪; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৩৬; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪০৪
৩৮৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪২৪১; বায়হাকী, আস্সুনানুস সগীর, হাদীছ নং ২৯১৭
36 - باب النفقة عَلَى العيال
294 - وعن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمًا أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ٣٨١» حديث صحيح رواه أَبُو داود وغيره.
ورواه مسلم في صحيحه بمعناه، قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمًا أَنْ يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ». (1)
ورواه مسلم في صحيحه بمعناه، قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمًا أَنْ يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ». (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির অর্থ হচ্ছে, কারও যদি অন্য কোনও গুনাহ নাও থাকে, কিন্তু এই একটি গুনাহ করে যে, সে তার পোষ্যবর্গের খোরপোশ ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করে না, তবে আল্লাহ তাআলার কাছে তার কঠিন গুনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। কেননা এটা সাধারণ কোনও গুনাহ নয়, গুরুতর পাপ।
أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ এর মূল অর্থ হচ্ছে, যার খাবার তার দায়িত্বে, সে তাদেরকে ধ্বংস করবে। বোঝানো উদ্দেশ্য তার খাবার যোগানো হতে বিরত থাকা। মুসলিম শরীফের বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাতে বলা হয়েছে- أن يحبس عمن يملك قوته (সে তার খাবার আটকে দেবে)। আবূ দাউদের বর্ণনায় এটাকে ‘ধ্বংস করা' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এ কারণে যে, কারও খাবার বন্ধ করার পরিণাম তার মৃত্যু ঘটা ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
এমনকিছু লোকও আছে, যারা স্ত্রী, সন্তান, পিতামাতা এবং আরও যারা তার যিম্মাদারীতে আছে তাদের পেছনে খরচ না করে অন্যান্য জায়গায় দান-খয়রাত করে বেড়ায়। এমনিতে দান-খয়রাত করা ছাওয়াবের কাজ বটে, কিন্তু মূলত তা নফল কাজ। আর পরিবারবর্গের পেছনে খরচ করা ওয়াজির ও অবশ্যকর্তব্য। অবশ্যকরণীয় কাজ ছেড়ে দিয়ে বেশি বেশি নফল করাটা প্রশংসনীয় কিছু নয়। শরীআতে এটা কাম্যও নয়। নফল দ্বারা যত ছাওয়াবই অর্জন করুক না কেন, তা দ্বারা ওয়াজিব তরকের গুনাহের প্রতিকার হতে পারে না।
মুসলিম শরীফের বর্ণনাটির শুরুতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি.-এর একটি বক্তব্য আছে, যা এখানে আসেনি। তাতে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. তাঁর খাজাঞ্চীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কি গোলামদেরকে খাবার দিয়েছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, ওঠ, তাদেরকে তাদের খাবার দাও। এরপর তিনি তাকে আলোচ্য হাদীছটি শোনান।
উল্লেখ্য, পরিবার-পরিজনের খাবার বন্ধ করার দ্বারা বড়জোর তারা মারা যাবে। তাদের দুনিয়াবী সীমিত জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। নিঃসন্দেহে এটা অনেক বড় ক্ষতি। কিন্তু যদি তাদের দীনী জরুরত পূরণ করা না হয়, তাদের দীনী তালীমের ব্যবস্থা করা না হয় এবং তারা দীনের উপর কতটুকু চলছে তার তত্ত্বাবধান করা না হয়, তবে তার পরিণাম তাদের পরকালীন জীবনের বরবাদী। এ ক্ষতির কি কোনও সীমা আছে? যা দ্বারা ইহজীবন রক্ষা হয়, সেই খাবার-দাবার বন্ধ রাখা যদি কঠিন পাপ হয়, তবে যা দ্বারা পরকালীন জীবনের মুক্তি লাভ হয়, তার ব্যবস্থা না করা কত কঠিন গুনাহ হবে? আমাদের এটা উপলব্ধি করা দরকার।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা পরিবার-পরিজনের খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গুরুত্ব জানা গেল এবং আরও জানা গেল যে, এ ব্যাপারে অবহেলা করা কঠিন গুনাহ। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি।
খ. গৃহকর্তার কর্তব্য পরিবার-পরিজনের দীনী জরুরতও পূরণ করা। এ ব্যাপারে অবহেলা করাও কঠিন পাপ। তাই এদিকেও আমাদের লক্ষ রাখা একান্ত কর্তব্য।
أَنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ এর মূল অর্থ হচ্ছে, যার খাবার তার দায়িত্বে, সে তাদেরকে ধ্বংস করবে। বোঝানো উদ্দেশ্য তার খাবার যোগানো হতে বিরত থাকা। মুসলিম শরীফের বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাতে বলা হয়েছে- أن يحبس عمن يملك قوته (সে তার খাবার আটকে দেবে)। আবূ দাউদের বর্ণনায় এটাকে ‘ধ্বংস করা' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এ কারণে যে, কারও খাবার বন্ধ করার পরিণাম তার মৃত্যু ঘটা ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
এমনকিছু লোকও আছে, যারা স্ত্রী, সন্তান, পিতামাতা এবং আরও যারা তার যিম্মাদারীতে আছে তাদের পেছনে খরচ না করে অন্যান্য জায়গায় দান-খয়রাত করে বেড়ায়। এমনিতে দান-খয়রাত করা ছাওয়াবের কাজ বটে, কিন্তু মূলত তা নফল কাজ। আর পরিবারবর্গের পেছনে খরচ করা ওয়াজির ও অবশ্যকর্তব্য। অবশ্যকরণীয় কাজ ছেড়ে দিয়ে বেশি বেশি নফল করাটা প্রশংসনীয় কিছু নয়। শরীআতে এটা কাম্যও নয়। নফল দ্বারা যত ছাওয়াবই অর্জন করুক না কেন, তা দ্বারা ওয়াজিব তরকের গুনাহের প্রতিকার হতে পারে না।
মুসলিম শরীফের বর্ণনাটির শুরুতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাযি.-এর একটি বক্তব্য আছে, যা এখানে আসেনি। তাতে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. তাঁর খাজাঞ্চীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি কি গোলামদেরকে খাবার দিয়েছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, ওঠ, তাদেরকে তাদের খাবার দাও। এরপর তিনি তাকে আলোচ্য হাদীছটি শোনান।
উল্লেখ্য, পরিবার-পরিজনের খাবার বন্ধ করার দ্বারা বড়জোর তারা মারা যাবে। তাদের দুনিয়াবী সীমিত জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। নিঃসন্দেহে এটা অনেক বড় ক্ষতি। কিন্তু যদি তাদের দীনী জরুরত পূরণ করা না হয়, তাদের দীনী তালীমের ব্যবস্থা করা না হয় এবং তারা দীনের উপর কতটুকু চলছে তার তত্ত্বাবধান করা না হয়, তবে তার পরিণাম তাদের পরকালীন জীবনের বরবাদী। এ ক্ষতির কি কোনও সীমা আছে? যা দ্বারা ইহজীবন রক্ষা হয়, সেই খাবার-দাবার বন্ধ রাখা যদি কঠিন পাপ হয়, তবে যা দ্বারা পরকালীন জীবনের মুক্তি লাভ হয়, তার ব্যবস্থা না করা কত কঠিন গুনাহ হবে? আমাদের এটা উপলব্ধি করা দরকার।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা পরিবার-পরিজনের খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গুরুত্ব জানা গেল এবং আরও জানা গেল যে, এ ব্যাপারে অবহেলা করা কঠিন গুনাহ। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি।
খ. গৃহকর্তার কর্তব্য পরিবার-পরিজনের দীনী জরুরতও পূরণ করা। এ ব্যাপারে অবহেলা করাও কঠিন পাপ। তাই এদিকেও আমাদের লক্ষ রাখা একান্ত কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
