রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬৬
ইয়াতীম, কন্যাসন্তান, সর্বপ্রকার দুর্বল, গরীব-মিসকীন ও দুস্থ লোকদের প্রতি সদয় আচরণ, তাদের প্রতি অনুগ্রহ ও মায়া-মমতা প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে নম্র-কোমল আচরণ প্রসঙ্গ
যে ওলীমার খাবার নিকৃষ্টতম
হাদীছ নং : ২৬৬

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ওই ওলীমার খাবার সবচে' নিকৃষ্ট খাবার, যাতে আগত (গরীব)-দেরকে বাধা দেওয়া হয় এবং যারা আসতে চায় না তাদেরকে (অর্থাৎ ধনীদেরকে) দাওয়াত দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি (শরীআতসম্মত) দাওয়াত কবুল করল না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করল -মুসলিম।২৯৩
বুখারী ও মুসলিমের এক বর্ণনায় হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে তাঁর উক্তি বর্ণিত আছে যে, ওই ওলীমার খাবার সবচে' নিকৃষ্ট খাবার, যাতে ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয় এবং গরীবদের পরিত্যাগ করা হয়।২৯৪
(২৯৩. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৩২; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৪২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯১৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৩০৪; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ২৫৮৪; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ১২০৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৫

২৯৪. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৩২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৩০৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭২৭৯; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৫২০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৪)
33 - باب ملاطفة اليتيم والبنات وسائر الضعفة والمساكين والمنكسرين والإحسان إليهم والشفقة عليهم والتواضع معهم وخفض الجناح لهم
266 - وعنه، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الوَلِيمَةِ، يُمْنَعُهَا مَنْ يَأتِيهَا، وَيُدْعَى إِلَيْهَا مَنْ يَأْبَاهَا، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ». رواه مسلم. (1)
[ص:108] وفي رواية في الصحيحين، عن أَبي هريرة من قوله: «بئْسَ الطَّعَامُ طَعَامُ الوَلِيمَةِ يُدْعَى إِلَيْهَا الأغْنِيَاءُ ويُتْرَكُ الفُقَراءُ».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ওলীমা বলা হয় ওই দাওয়াতের অনুষ্ঠানকে, যা বিবাহের পর ছেলের বাড়িতে করা হয়ে থাকে। এটা করা সুন্নত। হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বিবাহ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে হুকুম করেছিলেন أولم ولو بشاة “তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি ছাগল দ্বারা হয়।২৯৫
ওলীমার অনুষ্ঠান যখন সুন্নত, তখন সামর্থ্য অনুযায়ী এটা করা উচিত। আর এটা যেহেতু সুন্নত, তখন করাও উচিত সুন্নতের মর্যাদা রক্ষা করে শরীআতবিরোধী কোনও কর্মকাণ্ড তাতে যুক্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। ওলীমার অনুষ্ঠান যদি শরীআতবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়, তবে তার দাওয়াত কবুল করা চাই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها ‘তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তাতে আসে।২৯৬
ওলীমা দোষমুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তা গ্রহণ না করা অন্যায়। এ হাদীছে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি (শরীআতসম্মত) দাওয়াত কবুল করল না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাফরমানি হওয়ার বিষয়টা তো স্পষ্ট যে, তিনি কবুল করার আদেশ করা সত্ত্বেও কবুল করা হল না। আর আল্লাহর নাফরমানি এ কারণে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাফরমানি তাঁরও নাফরমানি বটে।
ওলীমার অনুষ্ঠানে ইদানীং নানারকম বিপত্তি লক্ষ করা যায়। তার মধ্যে একটা বেছে বেছে ধনীদেরকে দাওয়াত দেওয়া। মূলত এটা জাহিলী যুগের প্রবণতা। যে ওলীমায় ধনীদের প্রতি এরূপ পক্ষপাত করা হয়, আলোচ্য হাদীছে তার খাবারকে নিকৃষ্টতম খাবার বলা হয়েছে। কাজেই কোনও মুমিন-মুসলিমের এ জাহিলী রীতি অবলম্বন করা উচিত নয়। ইসলাম ধনী-গরীবের বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের শিক্ষায় সকল মুমিন ভাই ভাই।
ধনী-গরীবের বৈষম্য ঈমানী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। যে ওলীমা একটি সুন্নত আমল, তা অবশ্যই ভ্রাতৃত্ববিরোধী নীতি থেকে মুক্ত থাকা চাই। তবেই এর দীনী ও দুনিয়াবী সুফল অর্জিত হবে। দীনী সুফল তো হচ্ছে খানার বরকত ও ছাওয়াব আর দুনিয়াবী সুফল হল পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি এবং দম্পতি থেকে শুরু করে বিবাহসম্পর্কিত সকল আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সম্ভাব। পক্ষান্তরে ওলীমায় যদি ধনী গরীবের বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে তা যেমন সম্পর্ক বিনষ্টের কারণ হয়, তেমনি তা গুনাহেরও কারণ।
একবার উপস্থিত লোকজনকে লক্ষ্য করে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, তোমরা দাওয়াত দিয়ে বরং গুনাহগার হচ্ছ। কারণ যারা আসতে চায় না, তোমরা তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে থাক আর যারা আসবে তাদেরকে দাওয়াত দাও না। অর্থাৎ গরীবদের ছেড়ে ধনীদেরকে দাওয়াত দাও।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওলীমা সুন্নত হওয়া সত্ত্বেও বেছে বেছে ধনীদেরকে দাওয়াত দেওয়ার কারণে যখন তার খাবার নিকৃষ্ট খাবারে পরিণত হয়, তখন বোঝা গেল পদ্ধতিগত ভুলের কারণে ভালো কাজও মন্দ কাজে পরিণত হয়ে যায়।

খ. গরীবদের অবহেলা করে ধনীদেরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। কেননা ধন সম্পদ বেশি হওয়ার কারণে ধনীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দীন ও ঈমানের জন্য ক্ষতিকর।

গ. দোষমুক্ত ওলীমায় দাওয়াত দেওয়া হলে তা অবশ্যই কবুল করা চাই।

২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২০৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১০৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৩৫১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬৮৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১০৪১০; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৫৯

২৯৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৩৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৫১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ২৬৬ | মুসলিম বাংলা