রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ২৫৭
দুর্বল, গরীব ও অখ্যাত–গুরুত্বহীন মুসলিমদের মর্যাদা।
আল্লাহর কাছে কোনও কোনও হতদারদের মাকবূলিয়াত
হাদীছ নং : ২৫৭

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও কোনও উশকোখুশকো চুলবিশিষ্ট ধুলো-ধূসরিত লোক আছে, যাদেরকে মানুষের দরজাসমূহ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়; তারা যদি আল্লাহর নামে কসম করে তবে আল্লাহ তাদের কসম রক্ষা করেন -মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬২২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৬৪৮৩; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৯৯৯৯; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৭৯৩২; বাগাবী, শারহুস-সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪০৬৯
32 - باب فضل ضعفة المسلمين والفقراء والخاملين
257 - وعنه، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «رُبَّ أشْعَثَ أغبرَ مَدْفُوعٍ بِالأبْوابِ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উশকোখুশকো চুলবিশিষ্ট ধুলো-ধূসরিত লোক বলে গরীব ও অতি সাধারণ স্তরের লোক বোঝানো হয়েছে, যাদের বেশভূষা পরিষ্কার ও পরিপাটি করে রাখার সঙ্গতি নেই। তেলের অভাবে মাথার চুলও উশকোখুশকো হয়ে থাকে। সামাজিক অবস্থান না থাকার কারণে কোনও বাড়িতে গেলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। মলিন বেশভূষা ও অভাবক্লিষ্ট লোককে বিত্তবান শ্রেণীর লোক সাধারণত ভেতরে ঢুকতে দেয় না, দরজা থেকেই তাড়িয়ে দেয়। তা লোকে তাদেরকে যতই তাড়িয়ে দিক না কেন, আল্লাহর দুয়ার থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয় না। আল্লাহ তাআলার কাছে তাদের অনেক মর্যাদা। নবী সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাচ্ছেন- لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ (তারা যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তবে আল্লাহ তাদের কসম রক্ষা করেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার দয়া ও মহানুভবতার প্রতি আস্থা রেখে কোনও বস্তু অর্জিত হবে বলে যদি তাঁর নামে কসম করে, তবে আল্লাহ তার সে কসমের মর্যাদা রক্ষা করেন, তার মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন এবং কসম ভঙ্গের অবমাননা থেকে তাকে রক্ষা করেন। তার প্রতি আল্লাহ তা'আলা এরূপ আচরণ করেন এ কারণে যে, তাঁর কাছে এরূপ লোকের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, লোকে তাদেরকে যতই তুচ্ছ মনে করুক না কেন।
কেউ বলেন, এ হাদীছে কসম করার অর্থ দু'আ করা। সে হিসেবে বাক্যটির অর্থ হবে, সে আল্লাহর কাছে দৃঢ় আস্থার সঙ্গে দুআ করলে আল্লাহ তার দুআ কবুল করেন। জরাজীর্ণ ও বিপর্যস্ত অবস্থা দুআ কবুলের পক্ষে অনেক বড় সহায়ক। এ কারণেই ইস্তিস্কা'র নামাযে এরকম অবস্থা অবলম্বনের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই এ অর্থ হিসেবেও আল্লাহ তা'আলার কাছে এরূপ লোকের বিশেষ মর্যাদা বোঝা যায়।
সুতরাং আল্লাহ তা'আলার কাছে যাদের বিশেষ মর্যাদা, কেবল বেশভূষা মলিন হওয়া এবং গরীব ও সাধারণ স্তরের লোক বলে তাদেরকে অবহেলা করা উচিত নয়। এমন বহু তুচ্ছ লোক আছে, আল্লাহ তাআলার কাছে যাদের মর্যাদা দুনিয়ার হাজারও গণ্যমান্য লোকের উপরে। মানুষ তো বাহ্যিক অবস্থাটাই দেখে, মনের গোপন তাকওয়া সম্পর্কে তারা কোনও খবর রাখে না। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে তারই মূল্য। কাজেই বাহ্যিক অবস্থা দেখে কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে নেই। আখেরে তাতে নিজেরই ক্ষতি। আল্লাহর প্রিয় বান্দাকে অবহেলা করার পরিণামে তাঁর কাছে নিজেরই অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং হে বন্ধু! তুমি আল্লাহর কোনও সৃষ্টিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করো না। তাকে এরকম বানিয়েছেন তো আল্লাহ তাআলাই । এরকম বানানোর পেছনে নিশ্চয়ই আল্লাহর বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য আছে। এ অবস্থায় তুমি তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে সেটা তার সৃষ্টিকর্তার উপরই পড়ে। এটা তো অতি ভয়ানক! প্রকৃত আল্লাহভীরুগণ এটাকে ভয়ানকই মনে করে।
আমর ইবন শুরাহবীল রহ. বলেন, আমি কাউকে বকরীর ওলান চুষে দুধ খেতে দেখলে তা নিয়ে হাসতে ভয় পাই। নাজানি সে হাসির পরিণামে কোনও একদিন আমাকেও ওরকম করতে হয়!

হাদীছটির শিক্ষা

ক. পোশাক দিয়ে কাউকে বিচার করতে নেই। মানুষের প্রকৃত মর্যাদা তাকওয়া ও পরহেযগারীর মধ্যেই নিহিত।

খ. গরীব বলে কাউকে দরজা থেকে তাড়িয়ে দিতে নেই। আল্লাহর কাছে যখন তার দরজা খোলা তখন বান্দা কেন তার জন্য দরজা খুলে দেবে না?

গ. তুমি ধনী বলে অহংকার করো না। অসম্ভব নয় যে, যার উপর অহংকার করছ সেই গরীব আল্লাহর কাছে তোমার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে আছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ২৫৭ | মুসলিম বাংলা