রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২৩৯
ভূমিকা অধ্যায়
মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
সাতটি বিষয়ের আদেশ ও সাতটি বিষয়ে নিষেধ
হাদীছ নং : ২৩৯
হযরত বারা ইবন আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয় করতে আদেশ করেছেন ও সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- রোগীর খোঁজখবর নিতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, হাঁচিদাতার জবাব দিতে, কসমকারীর কসম রক্ষায় সহযোগিতা করতে, মজলুমের সাহায্য করতে, দাওয়াতদাতার দাওয়াত কবুল করতে এবং সালামের প্রসার ঘটাতে। আর তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি ব্যবহার করতে, রুপার পাত্রে পান করতে, লাল রঙের রেশমী গদিতে বসতে, কাসসী (রেশম ও তুলার সুতায় তৈরি কাপড়) ব্যবহার করতে, (খালেস) রেশমী পোশাক, ইসতাবরাক ও দীবাজ ব্যবহার করতে -বুখারী ও মুসলিম।
এক বর্ণনায় প্রথম সাতটির মধ্যে ‘হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা’-এর উল্লেখ আছে।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১২৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৮০৯; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৯৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৬৪৪; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৯২৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৫৮৪৬)
হাদীছ নং : ২৩৯
হযরত বারা ইবন আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয় করতে আদেশ করেছেন ও সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- রোগীর খোঁজখবর নিতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, হাঁচিদাতার জবাব দিতে, কসমকারীর কসম রক্ষায় সহযোগিতা করতে, মজলুমের সাহায্য করতে, দাওয়াতদাতার দাওয়াত কবুল করতে এবং সালামের প্রসার ঘটাতে। আর তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি ব্যবহার করতে, রুপার পাত্রে পান করতে, লাল রঙের রেশমী গদিতে বসতে, কাসসী (রেশম ও তুলার সুতায় তৈরি কাপড়) ব্যবহার করতে, (খালেস) রেশমী পোশাক, ইসতাবরাক ও দীবাজ ব্যবহার করতে -বুখারী ও মুসলিম।
এক বর্ণনায় প্রথম সাতটির মধ্যে ‘হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা’-এর উল্লেখ আছে।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১২৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৮০৯; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৯৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৬৪৪; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৯২৪; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৫৮৪৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
239 - وعن أَبي عُمَارة البراءِ بن عازب رضي الله عنهما، قَالَ: أمرنا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بسبع، ونهانا عن سبع: أمَرَنَا بعيَادَة المَرِيض، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ، وَإبْرار المُقْسِم، ونَصْرِ المَظْلُوم، وَإجَابَةِ الدَّاعِي، وَإِفْشَاءِ السَّلامِ، ونَهَانَا عَنْ خَواتِيمٍ أَوْ تَخَتُّمٍ بالذَّهَبِ، وَعَنْ شُرْبٍ بالفِضَّةِ، وَعَن الميَاثِرِ الحُمْرِ، وَعَن القَسِّيِّ، وَعَنْ لُبْسِ الحَريرِ والإسْتبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ (1).
وفي رواية: وَإنْشَادِ الضَّالَّةِ في السَّبْعِ الأُوَل.
«المَيَاثِرُ» بياء مثَنَّاة قبل الألفِ، وثاء مُثَلَّثَة بعدها: وهي جَمْعُ ميثَرة، وهي شيء يُتَّخَذُ مِنْ حرير وَيُحْشَى قطنًا أَوْ غيره، وَيُجْعَلُ في السَّرْجِ وَكُور البَعير يجلس عَلَيهِ الراكب. «القَسِّيُّ» بفتح القاف وكسر السين المهملة المشددة: وهي ثياب تنسج مِنْ حرير وَكتَّانٍ مختلِطينِ. «وَإنْشَادُ الضَّالَّةِ»: تعريفها.
وفي رواية: وَإنْشَادِ الضَّالَّةِ في السَّبْعِ الأُوَل.
«المَيَاثِرُ» بياء مثَنَّاة قبل الألفِ، وثاء مُثَلَّثَة بعدها: وهي جَمْعُ ميثَرة، وهي شيء يُتَّخَذُ مِنْ حرير وَيُحْشَى قطنًا أَوْ غيره، وَيُجْعَلُ في السَّرْجِ وَكُور البَعير يجلس عَلَيهِ الراكب. «القَسِّيُّ» بفتح القاف وكسر السين المهملة المشددة: وهي ثياب تنسج مِنْ حرير وَكتَّانٍ مختلِطينِ. «وَإنْشَادُ الضَّالَّةِ»: تعريفها.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সাতটি বিষয়ের আদেশ করেছেন, তার অধিকাংশই পেছনের হাদীছসমূহে গত হয়েছে। তার মোটামুটি ব্যাখ্যাও চলে গেছে। এখানে নতুন হুকুম আছে দু'টি তার একটি হচ্ছে ابرار المقسم (কসমকারীর কসম রক্ষায় সহযোগিতা করা)।
কসমকারীর কসম রক্ষায় সহযোগিতা
কেউ যদি আল্লাহর নামে কসম দিয়ে কাউকে কোনও কাজ করতে বলে, যেমন বলল- আল্লাহর কসম, তুমি এ কাজ অবশ্যই করবে, তবে সেই ব্যক্তির কর্তব্য কাজটি বৈধ হলে এবং তার পক্ষে তা করা সম্ভবপর হলে অবশ্যই তা করা, যাতে কসম ভঙ্গের অপরাধ হতে সে বেঁচে যায়। এটা আল্লাহ তাআলার নামের মর্যাদা রক্ষারও দাবি।আল্লাহ তাআলার নামে কসম করে কিছু করতে বলা হবে আর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করা হবে না, এটা কোনও মুমিন ব্যক্তির শান হতে পারে না। বর্ণিত আছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখে পাকড়াও করেছিলেন। সে আল্লাহর নামে কসম করে চুরির কথা অস্বীকার করে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখি। কাজেই ধরে নিচ্ছি আমার দেখাটাই ভুল। এভাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তার কসমের মর্যাদা দিয়েছিলেন।
অন্যের কসমের মর্যাদা রক্ষা না করা একরকম অপরাধ। অন্য হাদীছ দ্বারাও এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من خلف على أحد بيمين، وهو يرى أنه سيبره، فلم يفعل، فإنما إثمه على الذي لم يبره “যে ব্যক্তি কারও প্রতি কোনও বিষয়ে কসম করে আর সে ব্যক্তি মনে করে যে, সে (কাজটি করে) তার কসম রক্ষা করাতে পারবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তা না করে, তবে এর গুনাহ হবে ওই ব্যক্তির উপর, যে তার কসম রক্ষা করতে দিল না।[১]
একবার এক মহিলা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-কে কিছু খেজুর হাদিয়া দিলে তিনি তা থেকে কিছু খেলেন এবং কিছু রেখে দিলেন। তখন সেই মহিলা বলল, আমি কসম করে বলছি সবগুলোই খান। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তার কসম পূর্ণ করো। কেননা যে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গায়, গুনাহ তারই হয়।[২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এরকমই করতেন। কেউ তাঁকে আল্লাহর নামে কসম দিয়ে কিছু করার অনুরোধ জানালে তিনি সেই অনুরোধ রক্ষা করতেন। একবার চাচা আব্বাস রাযি, আল্লাহর নামে কসম করে তাঁর কাছে এক ব্যক্তির পক্ষে বাইআতের সুপারিশ করলে তিনি বলেছিলেন, হাঁ, আমি আমার চাচার কসম পূর্ণ করলাম।[৩]
তবে কথায় কথায় কসম করা ভালো না। এটা আল্লাহ তাআলার নামের মর্যাদা রক্ষার পরিপন্থী। তাছাড়া কসম দিয়ে কাউকে কিছু বলা একরকম চাপসৃষ্টিও বটে। তাই যথাসম্ভব এর থেকে বিরত থাকা চাই। তারপরও কেউ কাউকে কসম দিয়ে কিছু বললে তারও উচিত সে কসমের মর্যাদা রক্ষা করা। সেইসঙ্গে এটাও চিন্তা করা উচিত যে, এক মুসলিম ভাই এতটা জোরের সঙ্গে যখন অনুরোধ জানাচ্ছে, তখন তা রক্ষা করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। রক্ষা না করাটা যেমন আল্লাহ তাআলার নামের অবমাননা, তেমনি সেই ব্যক্তিকেও খাটো করা। কোনও মুমিন ব্যক্তিকে খাটো করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। পেছনে এক হাদীছে বলা হয়েছে যে, মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে হেয়প্রতিপন্ন করে না।
সালামের রেওয়াজদান
এ হাদীছে আরেকটি নতুন বিষয় হচ্ছে সালাম সম্পর্কিত। পেছনে এক হাদীছে সালাম দেওয়াকে মুসলিম ব্যক্তির হক বলা হয়েছে। আরেক হাদীছে সালামের জবাব দেওয়াকেও হক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীছে যে সাতটি বিষয়ের আদেশ করা হয়েছে, তার একটি হল- افشاء السلام (সালামের প্রসার ঘটানো)।
সালামের প্রসার ঘটানোর অর্থ বেশি বেশি সালাম দেওয়া। এমনভাবে এর প্রচার ও চর্চা করা, যাতে সালাম দেওয়া-নেওয়া সামাজিক রেওয়াজে পরিণত হয়ে যায়। সালামের রেওয়াজ সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক। এর দ্বারা পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা জান্নাতলাভের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। এর হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أولا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم “তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না মুমিন হও। তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাস। তোমাদেরকে কি এমন কাজের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।[৪]
যেসকল আমল জান্নাতে যাওয়ার পক্ষে সহায়ক, সালামের প্রসার ঘটানোও তার একটি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- يا أيها الناس، أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصلوا والناس نيام تدخلون الجنة بسلام 'হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাবার খাওয়াও, মানুষ যখন ঘুমে থাকে তখন নামায পড়, নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।[৫]
সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসার জবাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে উত্তম আমলের যে তালিকা দিয়েছেন তার মধ্যে সালামের প্রসার ঘটানোও একটি। যেমন এক বর্ণনায় আছেঃ- عن عبد الله بن عمرو ، أن رجلا سأل النبي صلى الله عليه وسلم: أي الإسلام خير؟ قال: تطعم الطعام، وتقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন আমল উত্তম? তিনি বললেন, তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে এবং চেনা ও অচেনা সকল (মুসলিম) কে সালাম দেবে (এ দুটি উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত)।[৬]
সালামের রেওয়াজদান সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার এক শ্রেষ্ঠ উপায়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أفشوا السلام تسلموا “তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, নিরাপদ থাকবে।[৭]
বর্তমানকালে যে ঘরে-বাইরে সর্বত্র অশান্তি, মানুষ জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ, এর এক অন্যতম কারণ কি এইও নয় যে, আমরা সালাম দেওয়া-নেওয়ার রেওয়াজ নষ্ট করে ফেলেছি? না ঘরের ভেতর সালামের ব্যাপক চর্চা আছে, না ঘরের বাইরে। শান্তিবাহী সালামের স্থানে অন্যদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ব্যাপকতা লাভ করেছে। এরই ভোগান্তি পোহাচ্ছি আমরা সর্বত্র। এ ভোগান্তি থেকে মুক্তির উপায় একটাই। সবক্ষেত্রে ইসলামী তাহযীব ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাদান। সালামের রেওয়াজ দানও তার একটি প্রধান অঙ্গ।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি বিষয় নিষেধ করেছেন। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাদান করা যাচ্ছে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
হযরত বারা ইব্ন আযিব রাযি. বলেন- (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন)। এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষের জন্য, নারীর জন্য নয়। পুরুষের জন্য কোনওরূপ স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয নয়, তার পরিমাণ যত অল্পই হোক না কেন। স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয কেবল নারীর জন্য, তাও যদি অহংকার ও প্রদর্শনের জন্য না হয়। অন্যান্য হাদীছ দ্বারা জানা যায়, পুরুষের জন্য জান্নাতে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কাজেই যেসকল পুরুষ দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করবে, জান্নাতে তারা তা পাবে না। এটা তাদের জন্য জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সতর্কবাণী। কাজেই জান্নাতকামী পুরুষদের কর্তব্য দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। তা থাকতে পারলে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে তাদেরকে নানারকম স্বর্ণালঙ্কার ও সাজসজ্জায় ভূষিত করা হবে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا “তাদেরকে সেখানে স্বর্ণকঙ্কনে অলংকৃত করা হবে। আর তারা উচ্চ আসনে হেলান দেওয়া অবস্থায় মিহি ও পুরু রেশমী কাপড় পরিহিত থাকবে। কতইনা উৎকৃষ্ট প্রতিদান এবং কত সুন্দর বিশ্রামস্থল। সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ৩১
অপর এক আয়াতে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদেরকে সজ্জিত করা হবে সোনার কাঁকন ও মণি-মুক্তা দ্বারা। আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ২৩
সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
وعن شرب بآنية الفضة এবং (নিষেধ করেছেন) রুপার পাত্রে পান করতে'। রুপার পাত্রে পানি পান করা পুরুষ ও নারী কারও জন্যই জায়েয নয়। সোনারুপার অন্যকোনও পাত্রও ব্যবহারের অনুমতি নেই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تشربوا في إناء الذهب والفضة، ولا تلبسوا الديباج والحرير، فإنه لهم في الدنيا وهو لكم في الآخرة يوم القيامة 'তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পান করো না এবং রেশম ও দীবাজ (এক ধরনের রেশমী কাপড়) পরিধান করো না। কেননা এটা দুনিয়ায় তাদের (কাফেরদের) জন্য এবং তোমাদের জন্য আখেরাতে।[৮]
এক বর্ণনায় অতিরিক্ত আছেঃ- ولا تأكلوا في صحافها এবং তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে আহার করো না'।[৯]
এক হাদীছে এ নিষেধাজ্ঞার কারণ বলা হয়েছে যে, জান্নাতে পানাহারের পাত্র হবে সোনারুপার। কাজেই এটা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই নিষেধ। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে- من شرب في إناء من ذهب، أو فضة، فإنما يجرجر في بطنه نارا من جهنم “যে ব্যক্তি সোনা-রূপার পাত্রে পান করে, সে তার পেটে কেবল জাহান্নামের আগুনই ঢোকায়।[১০]
মোটকথা, সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও কঠিন পাপ। কাজেই ঈমানদারদেরকে অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জাতীয় বিলাসিতা ঈমানদারদের জন্য শোভা পায় না।
এ নিষেধাজ্ঞা পানাহারের পাত্র ছাড়া অন্য আসবাবপত্রেও প্রযোজ্য, যেমন সুরমাদানি, কলম, চশমার ফ্রেম, আতরদানি ইত্যাদি।
বিভিন্ন রেশমী পোশাকের নিষেধাজ্ঞা
وعن المياثر الحمر এবং (তিনি নিষেধ করেছেন) লাল মায়াছির ব্যবহার করতে”। ইমাম নববী রহ. "المياثر -এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এ শব্দটি ميثرة এর বহুবচন। এটা একরকম গদি। রেশম দ্বারা তৈরি করা হয়। ভেতরে তুলা বা অন্যকিছুর পুর দেওয়া হয়। এটা উট, গাধা ইত্যাদি বাহনের পিঠে রেখে আরোহী তার উপর বসে।
হাদীছে বিশেষভাবে লাল মায়াছির নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, অনারব জাতির বিভিন্ন লোক বিলাসিতা হিসেবে সাধারণত লাল মায়াছির ব্যবহার করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে রেশমের তৈরি সব মায়াছিরই হারাম, তা যে রঙেরই হোক।
وعن القسي এবং (নিষেধ করেছেন) কাস্সী ব্যবহার করতে'। ইমাম নববী রহ. বলেন, এটা রেশম ও তুলার সুতায় বোনা একরকম কাপড়। এরূপ কাপড়ও ব্যবহার করা নাজায়েয, যদি রেশমের পরিমাণ সুতা অপেক্ষা বেশি হয়। 'কাস্স' মিসরের একটি জায়গার নাম। এ কাপড় বেশিরভাগ সেখানে তৈরি হত। তাই একে 'কাস্সী' বলা হয়। কেউ বলেছেন, قس (কাস্স) মূলত قز (কাযয)-এর পরিবর্তিত রূপ। কাযয মানে নিম্নমানের রেশম।
وعن لبس الحرير এবং (নিষেধ করেছেন) রেশম ব্যবহার করতে। অর্থাৎ, রেশমি পোশাক ব্যবহার করতে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে - من لبس الحرير في الدنيا لم يلبسه في الآخرة 'যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখেরাতে তা পরতে পারবে না।[১১]
তবে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষের জন্য। নারীর জন্য রেশমী পোশাক পরা জায়েয, যেমন তাদের জন্য স্বর্ণালঙ্কারও জায়েয। হযরত উকবা ইবন আমির রাযি থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الذهب والحرير حل لإناث أمتي وحرام على ذكورها সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম।[১২]
হযরত আলী রাযি. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাম হাতে রেশম এবং ডান হাতে স্বর্ণ ধরলেন। তারপর দু'হাত তুলে বললেনঃ- إن هذين حرام على ذكور أمتي، حل لإناثهم ‘এ দুটি আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম, মহিলাদের জন্য হালাল।[১৩]
শায়খ আবূ মুহাম্মাদ রহ. এ নিষেধাজ্ঞার হিকমত বর্ণনা করেন যে, সাজসজ্জার ব্যাপারে নারীদের সংযম কম। তাই এটা তাদের জন্য হালাল করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষত এ কারণেও যে, তাদের সাজসজ্জা হবে কেবল স্বামীদের জন্য। এর দ্বারা বোঝা যায় পুরুষদের জন্য বেশি সাজসজ্জা ও উপভোগের বস্তু ব্যবহার করা ভালো নয়। কেননা এটা নারীর বৈশিষ্ট্য।
والإستبرق والديباج ‘এবং (তিনি নিষেধ করেছেন) ইসতাবরাক ও দীবাজ ব্যবহার করতে। ইসতাবরাক বলা হয় মোটা রেশমী কাপড়কে। আর দীবাজ হচ্ছে চিকন রেশমী কাপড়।
হারানো প্রাপ্তির ঘোষণাদানের আদেশ
وإنشاد الضالة 'হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা'। এটি একটি আদিষ্ট বিষয়। অর্থাৎ হাদীছটির প্রথম অংশে যে সাতটি বিষয়ের আদেশ করা হয়েছে, কোনও কোনও বর্ণনায় তাতে কসমের পরিবর্তে এটির উল্লেখ আছে। কেউ যদি কোনও হারানো বস্তু পায়, তবে তার কর্তব্য জনসম্মুখে তা ঘোষণা করা। এটা মুসলিম ব্যক্তির হক। যে ব্যক্তি তার কোনও বস্তু হারায়, সে পেরেশান হয়ে পড়ে। বস্তুটি যত দামী বা যতবেশি প্রয়োজনীয় হয়, পেরেশানিও ততবেশি হয়। মুসলিম ভাইয়ের পেরেশানি দূর করা অপর মুসলিম ভাইয়ের কর্তব্য। পেছনে মুসলিম ব্যক্তির হকসমূহের বর্ণনায় এটিরও উল্লেখ আছে। কাজেই এ ব্যাপারে কোনওরকম অবহেলা করা উচিত নয়।
কারও কোনও হারানো বস্তু দেখতে পেলে যদি আশঙ্কা হয় সেটি পড়ে থাকলে কোনও দুষ্ট লোকের হাতে পড়বে বা অন্য কোনওভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে প্রকৃত মালিক সেটি আর ফিরে পাবে না, তবে তার উচিত হবে মালিকের হাতে পৌঁছানোর নিয়তে সেটি তুলে নেওয়া, তারপর যতদিন মালিককে না পাওয়া যায় ততদিন সেটি সংরক্ষণ করা এবং ঘোষণা দিতে থাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন তা এভাবে সংরক্ষণ করতে হবে? এটা একেক মালের জন্য একেকরকম। কোনওটির জন্য হয়তো তিনদিনই যথেষ্ট, আবার কোনওটির জন্য মাস কি বছরকালও হেফাজতের প্রয়োজন হতে পারে। একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে পড়ে পাওয়া টাকার থলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল । তিনি বলেন- إعرف عفاصها ووكاءها، ثم عرفها سنة، فإن جاء صاحبها وإلا فشأنك بها 'তুমি থলি ও তার বাঁধন-রশিটি চিনে রাখ। তারপর এক বছর সেটি প্রচার কর। এর মধ্যে তার মালিক আসলে তো ভালো, অন্যথায় তোমার যা ভালো মনে হয় করো।[১৪]
এক বছর সংরক্ষণ ও প্রচার করতে হবে অর্থের পরিমাণ বেশি হলে বা খুব দামী মাল হলে। অন্যথায় মালিককে পাওয়ার সম্ভাব্য সময় চিন্তাভাবনা করে দেখবে। যখন মনে করবে তাকে আর পাওয়া যাবে না, তখন তার উদ্দেশ্যে সেটি সদাকা করে দেবে। নেহাত গরীব হলে নিজেও ভোগ করতে পারে। পরে যদি মালিককে পাওয়া যায়, তখন হয় সেটি তাকে ফেরত দেবে, নয়তো তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেবে।
কারও হারানো মাল পেয়ে গেলে তা লুকানো ও নিজে নিয়ে নেওয়া কঠিন পাপ। এটা আত্মসাতের মধ্যে পড়ে। বেশি দামী বস্তু হলে অনেকে লোভে পড়ে যায়। এরকম লোভ অবশ্যই সামলাতে হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا يأوي الضالة إلا ضال হারিয়ে যাওয়া বস্তু (নিজে ভোগের জন্য) তুলে নেয় কেবল পথভ্রষ্ট লোক।[১৫]
কারও হারানো বস্তু পেলে তার মালিক সন্ধান করা কর্তব্য বটে, তবে এ কাজে মসজিদ ব্যবহার করা উচিত নয়। ইদানীং মসজিদে হারানো বস্তু ও হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা দেওয়াটা ব্যাপক হয়ে গেছে। অথচ মসজিদে এটা করা নিষেধ। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من سمع رجلا ينشد ضالة في المسجد، فليقل: لا أداها الله إليك فإن المساجد لم تبن لهذا “যে ব্যক্তি কাউকে মসজিদে তার হারিয়ে যাওয়া বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনে সে যেন তাকে বলে দেয়, আল্লাহ করুন তুমি যেন এটা না-ই পাও। মসজিদ তো এজন্য বানানো হয়নি।[১৬]
অবশ্য মসজিদের ভেতরে ঘোষণা না করে যদি মসজিদের দরজার সামনে ঘোষণা করে, তবে অসুবিধা নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া কর্তব্য।
খ. কোনও মুসলিম ভাই মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা চাই।
গ. কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলতে হবে।
ঘ. কেউ কসম দিয়ে কোনও কাজের অনুরোধ করলে সে কাজটি করা চাই, যদি তা বৈধ কাজ হয় এবং করার সামর্থ্য থাকে।
ঙ. মজলুম ব্যক্তিকে যথাসম্ভব সাহায্য করা উচিত।
চ. কেউ যদি দাওয়াত করে, তবে শর'ঈ কোনও বাধা না থাকলে তা কবুল করা উচিত।
ছ. সালাম দেওয়া ও নেওয়ার ব্যাপক চর্চা করা উচিত। এটা পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টির পক্ষে সহায়ক।
জ. কোনও মুসলিম পুরুষের স্বর্ণালঙ্কার পরা জায়েয নয়।
ঝ. নারী-পুরুষ কারও জন্যই সোনা-রুপার পাত্র ও আসবাবপত্র ব্যবহার বৈধ নয়।
ঞ. পুরুষের জন্য সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক নাজায়েয। মহিলাগণ ব্যবহার করতে পারে।
ট. কারও হারানো বস্তু পেলে তা মালিকের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই।
[১] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৯৮৯১; সুনানে দারা কুতনী, হাদীছ নং ৪২৭০
[২] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৯৮৯২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৮৩৫
[৩] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৯৮৮৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২১১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৫১
[৪] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৯৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৮৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪১২; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬১৮৯
[৫] জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪৮৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৩৩৩৪ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৭৮৪; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৫৩৮৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৯০; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ১৫০১
[৬] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৩৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫০০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৫৮১; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১০১৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৫; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৪৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮৮
[৭] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৫৩০; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৭৮৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৯১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৮২; মুসনাদ আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ১৬৮৭
[৮] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৬৩৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭২৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৭৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৩০১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৩৭৪
[৯] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৭; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৯৭; সুনানে দারা কুতনী, হাদীছ নং ৪৭৯৫
[১০] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৬৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৪১৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৬৬২; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪১৩৫; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১২০৪৬; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৫৮৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৯৬৫
[১১] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৭৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৮১৭; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৩০৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩৫৮৮ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৬৪৪৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৩৫; তবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৯৭৭৯
[১২] তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫১২৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫১৪৮, বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪২২০; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯৩৮৭
[১৩] সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৫৯৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৫৭; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫১৪৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৩৪; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪৬৫৯; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১২৬; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৫৫৮; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৬৮১
[১৪] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭২২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৫০৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৭০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭০৫০;বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২০৫০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২০৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৮৮৯
[১৫] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৭২০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২০৬৯; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২১৬৩২; তহাবী, শারহু মাআনিল আছার, হাদীছ নং ৬০৬১
[১৬] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৭৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৭৬৬; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৩৪৩
কসমকারীর কসম রক্ষায় সহযোগিতা
কেউ যদি আল্লাহর নামে কসম দিয়ে কাউকে কোনও কাজ করতে বলে, যেমন বলল- আল্লাহর কসম, তুমি এ কাজ অবশ্যই করবে, তবে সেই ব্যক্তির কর্তব্য কাজটি বৈধ হলে এবং তার পক্ষে তা করা সম্ভবপর হলে অবশ্যই তা করা, যাতে কসম ভঙ্গের অপরাধ হতে সে বেঁচে যায়। এটা আল্লাহ তাআলার নামের মর্যাদা রক্ষারও দাবি।আল্লাহ তাআলার নামে কসম করে কিছু করতে বলা হবে আর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা করা হবে না, এটা কোনও মুমিন ব্যক্তির শান হতে পারে না। বর্ণিত আছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখে পাকড়াও করেছিলেন। সে আল্লাহর নামে কসম করে চুরির কথা অস্বীকার করে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখি। কাজেই ধরে নিচ্ছি আমার দেখাটাই ভুল। এভাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তার কসমের মর্যাদা দিয়েছিলেন।
অন্যের কসমের মর্যাদা রক্ষা না করা একরকম অপরাধ। অন্য হাদীছ দ্বারাও এর সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من خلف على أحد بيمين، وهو يرى أنه سيبره، فلم يفعل، فإنما إثمه على الذي لم يبره “যে ব্যক্তি কারও প্রতি কোনও বিষয়ে কসম করে আর সে ব্যক্তি মনে করে যে, সে (কাজটি করে) তার কসম রক্ষা করাতে পারবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তা না করে, তবে এর গুনাহ হবে ওই ব্যক্তির উপর, যে তার কসম রক্ষা করতে দিল না।[১]
একবার এক মহিলা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-কে কিছু খেজুর হাদিয়া দিলে তিনি তা থেকে কিছু খেলেন এবং কিছু রেখে দিলেন। তখন সেই মহিলা বলল, আমি কসম করে বলছি সবগুলোই খান। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তার কসম পূর্ণ করো। কেননা যে ব্যক্তি কসম ভাঙ্গায়, গুনাহ তারই হয়।[২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এরকমই করতেন। কেউ তাঁকে আল্লাহর নামে কসম দিয়ে কিছু করার অনুরোধ জানালে তিনি সেই অনুরোধ রক্ষা করতেন। একবার চাচা আব্বাস রাযি, আল্লাহর নামে কসম করে তাঁর কাছে এক ব্যক্তির পক্ষে বাইআতের সুপারিশ করলে তিনি বলেছিলেন, হাঁ, আমি আমার চাচার কসম পূর্ণ করলাম।[৩]
তবে কথায় কথায় কসম করা ভালো না। এটা আল্লাহ তাআলার নামের মর্যাদা রক্ষার পরিপন্থী। তাছাড়া কসম দিয়ে কাউকে কিছু বলা একরকম চাপসৃষ্টিও বটে। তাই যথাসম্ভব এর থেকে বিরত থাকা চাই। তারপরও কেউ কাউকে কসম দিয়ে কিছু বললে তারও উচিত সে কসমের মর্যাদা রক্ষা করা। সেইসঙ্গে এটাও চিন্তা করা উচিত যে, এক মুসলিম ভাই এতটা জোরের সঙ্গে যখন অনুরোধ জানাচ্ছে, তখন তা রক্ষা করা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি। রক্ষা না করাটা যেমন আল্লাহ তাআলার নামের অবমাননা, তেমনি সেই ব্যক্তিকেও খাটো করা। কোনও মুমিন ব্যক্তিকে খাটো করা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। পেছনে এক হাদীছে বলা হয়েছে যে, মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে হেয়প্রতিপন্ন করে না।
সালামের রেওয়াজদান
এ হাদীছে আরেকটি নতুন বিষয় হচ্ছে সালাম সম্পর্কিত। পেছনে এক হাদীছে সালাম দেওয়াকে মুসলিম ব্যক্তির হক বলা হয়েছে। আরেক হাদীছে সালামের জবাব দেওয়াকেও হক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীছে যে সাতটি বিষয়ের আদেশ করা হয়েছে, তার একটি হল- افشاء السلام (সালামের প্রসার ঘটানো)।
সালামের প্রসার ঘটানোর অর্থ বেশি বেশি সালাম দেওয়া। এমনভাবে এর প্রচার ও চর্চা করা, যাতে সালাম দেওয়া-নেওয়া সামাজিক রেওয়াজে পরিণত হয়ে যায়। সালামের রেওয়াজ সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক। এর দ্বারা পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা জান্নাতলাভের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। এর হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أولا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم “তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না মুমিন হও। তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাস। তোমাদেরকে কি এমন কাজের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।[৪]
যেসকল আমল জান্নাতে যাওয়ার পক্ষে সহায়ক, সালামের প্রসার ঘটানোও তার একটি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- يا أيها الناس، أفشوا السلام، وأطعموا الطعام، وصلوا والناس نيام تدخلون الجنة بسلام 'হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাবার খাওয়াও, মানুষ যখন ঘুমে থাকে তখন নামায পড়, নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।[৫]
সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসার জবাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে উত্তম আমলের যে তালিকা দিয়েছেন তার মধ্যে সালামের প্রসার ঘটানোও একটি। যেমন এক বর্ণনায় আছেঃ- عن عبد الله بن عمرو ، أن رجلا سأل النبي صلى الله عليه وسلم: أي الإسلام خير؟ قال: تطعم الطعام، وتقرأ السلام على من عرفت ومن لم تعرف ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন আমল উত্তম? তিনি বললেন, তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে এবং চেনা ও অচেনা সকল (মুসলিম) কে সালাম দেবে (এ দুটি উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত)।[৬]
সালামের রেওয়াজদান সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার এক শ্রেষ্ঠ উপায়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- أفشوا السلام تسلموا “তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, নিরাপদ থাকবে।[৭]
বর্তমানকালে যে ঘরে-বাইরে সর্বত্র অশান্তি, মানুষ জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, পারস্পরিক ঐক্য ও সম্প্রীতি ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ, এর এক অন্যতম কারণ কি এইও নয় যে, আমরা সালাম দেওয়া-নেওয়ার রেওয়াজ নষ্ট করে ফেলেছি? না ঘরের ভেতর সালামের ব্যাপক চর্চা আছে, না ঘরের বাইরে। শান্তিবাহী সালামের স্থানে অন্যদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ব্যাপকতা লাভ করেছে। এরই ভোগান্তি পোহাচ্ছি আমরা সর্বত্র। এ ভোগান্তি থেকে মুক্তির উপায় একটাই। সবক্ষেত্রে ইসলামী তাহযীব ও সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাদান। সালামের রেওয়াজ দানও তার একটি প্রধান অঙ্গ।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি বিষয় নিষেধ করেছেন। নিচে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাদান করা যাচ্ছে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
হযরত বারা ইব্ন আযিব রাযি. বলেন- (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সোনার আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন)। এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষের জন্য, নারীর জন্য নয়। পুরুষের জন্য কোনওরূপ স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয নয়, তার পরিমাণ যত অল্পই হোক না কেন। স্বর্ণালংকার ব্যবহার করা জায়েয কেবল নারীর জন্য, তাও যদি অহংকার ও প্রদর্শনের জন্য না হয়। অন্যান্য হাদীছ দ্বারা জানা যায়, পুরুষের জন্য জান্নাতে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কাজেই যেসকল পুরুষ দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করবে, জান্নাতে তারা তা পাবে না। এটা তাদের জন্য জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সতর্কবাণী। কাজেই জান্নাতকামী পুরুষদের কর্তব্য দুনিয়ায় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। তা থাকতে পারলে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতে তাদেরকে নানারকম স্বর্ণালঙ্কার ও সাজসজ্জায় ভূষিত করা হবে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا “তাদেরকে সেখানে স্বর্ণকঙ্কনে অলংকৃত করা হবে। আর তারা উচ্চ আসনে হেলান দেওয়া অবস্থায় মিহি ও পুরু রেশমী কাপড় পরিহিত থাকবে। কতইনা উৎকৃষ্ট প্রতিদান এবং কত সুন্দর বিশ্রামস্থল। সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ৩১
অপর এক আয়াতে ইরশাদঃ- يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদেরকে সজ্জিত করা হবে সোনার কাঁকন ও মণি-মুক্তা দ্বারা। আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। সূরা হজ্জ (২২), আয়াত ২৩
সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
وعن شرب بآنية الفضة এবং (নিষেধ করেছেন) রুপার পাত্রে পান করতে'। রুপার পাত্রে পানি পান করা পুরুষ ও নারী কারও জন্যই জায়েয নয়। সোনারুপার অন্যকোনও পাত্রও ব্যবহারের অনুমতি নেই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تشربوا في إناء الذهب والفضة، ولا تلبسوا الديباج والحرير، فإنه لهم في الدنيا وهو لكم في الآخرة يوم القيامة 'তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পান করো না এবং রেশম ও দীবাজ (এক ধরনের রেশমী কাপড়) পরিধান করো না। কেননা এটা দুনিয়ায় তাদের (কাফেরদের) জন্য এবং তোমাদের জন্য আখেরাতে।[৮]
এক বর্ণনায় অতিরিক্ত আছেঃ- ولا تأكلوا في صحافها এবং তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে আহার করো না'।[৯]
এক হাদীছে এ নিষেধাজ্ঞার কারণ বলা হয়েছে যে, জান্নাতে পানাহারের পাত্র হবে সোনারুপার। কাজেই এটা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই নিষেধ। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে- من شرب في إناء من ذهب، أو فضة، فإنما يجرجر في بطنه نارا من جهنم “যে ব্যক্তি সোনা-রূপার পাত্রে পান করে, সে তার পেটে কেবল জাহান্নামের আগুনই ঢোকায়।[১০]
মোটকথা, সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও কঠিন পাপ। কাজেই ঈমানদারদেরকে অবশ্যই এর থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জাতীয় বিলাসিতা ঈমানদারদের জন্য শোভা পায় না।
এ নিষেধাজ্ঞা পানাহারের পাত্র ছাড়া অন্য আসবাবপত্রেও প্রযোজ্য, যেমন সুরমাদানি, কলম, চশমার ফ্রেম, আতরদানি ইত্যাদি।
বিভিন্ন রেশমী পোশাকের নিষেধাজ্ঞা
وعن المياثر الحمر এবং (তিনি নিষেধ করেছেন) লাল মায়াছির ব্যবহার করতে”। ইমাম নববী রহ. "المياثر -এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এ শব্দটি ميثرة এর বহুবচন। এটা একরকম গদি। রেশম দ্বারা তৈরি করা হয়। ভেতরে তুলা বা অন্যকিছুর পুর দেওয়া হয়। এটা উট, গাধা ইত্যাদি বাহনের পিঠে রেখে আরোহী তার উপর বসে।
হাদীছে বিশেষভাবে লাল মায়াছির নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, অনারব জাতির বিভিন্ন লোক বিলাসিতা হিসেবে সাধারণত লাল মায়াছির ব্যবহার করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে রেশমের তৈরি সব মায়াছিরই হারাম, তা যে রঙেরই হোক।
وعن القسي এবং (নিষেধ করেছেন) কাস্সী ব্যবহার করতে'। ইমাম নববী রহ. বলেন, এটা রেশম ও তুলার সুতায় বোনা একরকম কাপড়। এরূপ কাপড়ও ব্যবহার করা নাজায়েয, যদি রেশমের পরিমাণ সুতা অপেক্ষা বেশি হয়। 'কাস্স' মিসরের একটি জায়গার নাম। এ কাপড় বেশিরভাগ সেখানে তৈরি হত। তাই একে 'কাস্সী' বলা হয়। কেউ বলেছেন, قس (কাস্স) মূলত قز (কাযয)-এর পরিবর্তিত রূপ। কাযয মানে নিম্নমানের রেশম।
وعن لبس الحرير এবং (নিষেধ করেছেন) রেশম ব্যবহার করতে। অর্থাৎ, রেশমি পোশাক ব্যবহার করতে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে - من لبس الحرير في الدنيا لم يلبسه في الآخرة 'যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখেরাতে তা পরতে পারবে না।[১১]
তবে এ নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষের জন্য। নারীর জন্য রেশমী পোশাক পরা জায়েয, যেমন তাদের জন্য স্বর্ণালঙ্কারও জায়েয। হযরত উকবা ইবন আমির রাযি থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الذهب والحرير حل لإناث أمتي وحرام على ذكورها সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম।[১২]
হযরত আলী রাযি. বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাম হাতে রেশম এবং ডান হাতে স্বর্ণ ধরলেন। তারপর দু'হাত তুলে বললেনঃ- إن هذين حرام على ذكور أمتي، حل لإناثهم ‘এ দুটি আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম, মহিলাদের জন্য হালাল।[১৩]
শায়খ আবূ মুহাম্মাদ রহ. এ নিষেধাজ্ঞার হিকমত বর্ণনা করেন যে, সাজসজ্জার ব্যাপারে নারীদের সংযম কম। তাই এটা তাদের জন্য হালাল করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষত এ কারণেও যে, তাদের সাজসজ্জা হবে কেবল স্বামীদের জন্য। এর দ্বারা বোঝা যায় পুরুষদের জন্য বেশি সাজসজ্জা ও উপভোগের বস্তু ব্যবহার করা ভালো নয়। কেননা এটা নারীর বৈশিষ্ট্য।
والإستبرق والديباج ‘এবং (তিনি নিষেধ করেছেন) ইসতাবরাক ও দীবাজ ব্যবহার করতে। ইসতাবরাক বলা হয় মোটা রেশমী কাপড়কে। আর দীবাজ হচ্ছে চিকন রেশমী কাপড়।
হারানো প্রাপ্তির ঘোষণাদানের আদেশ
وإنشاد الضالة 'হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা'। এটি একটি আদিষ্ট বিষয়। অর্থাৎ হাদীছটির প্রথম অংশে যে সাতটি বিষয়ের আদেশ করা হয়েছে, কোনও কোনও বর্ণনায় তাতে কসমের পরিবর্তে এটির উল্লেখ আছে। কেউ যদি কোনও হারানো বস্তু পায়, তবে তার কর্তব্য জনসম্মুখে তা ঘোষণা করা। এটা মুসলিম ব্যক্তির হক। যে ব্যক্তি তার কোনও বস্তু হারায়, সে পেরেশান হয়ে পড়ে। বস্তুটি যত দামী বা যতবেশি প্রয়োজনীয় হয়, পেরেশানিও ততবেশি হয়। মুসলিম ভাইয়ের পেরেশানি দূর করা অপর মুসলিম ভাইয়ের কর্তব্য। পেছনে মুসলিম ব্যক্তির হকসমূহের বর্ণনায় এটিরও উল্লেখ আছে। কাজেই এ ব্যাপারে কোনওরকম অবহেলা করা উচিত নয়।
কারও কোনও হারানো বস্তু দেখতে পেলে যদি আশঙ্কা হয় সেটি পড়ে থাকলে কোনও দুষ্ট লোকের হাতে পড়বে বা অন্য কোনওভাবে নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে প্রকৃত মালিক সেটি আর ফিরে পাবে না, তবে তার উচিত হবে মালিকের হাতে পৌঁছানোর নিয়তে সেটি তুলে নেওয়া, তারপর যতদিন মালিককে না পাওয়া যায় ততদিন সেটি সংরক্ষণ করা এবং ঘোষণা দিতে থাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন তা এভাবে সংরক্ষণ করতে হবে? এটা একেক মালের জন্য একেকরকম। কোনওটির জন্য হয়তো তিনদিনই যথেষ্ট, আবার কোনওটির জন্য মাস কি বছরকালও হেফাজতের প্রয়োজন হতে পারে। একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে পড়ে পাওয়া টাকার থলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল । তিনি বলেন- إعرف عفاصها ووكاءها، ثم عرفها سنة، فإن جاء صاحبها وإلا فشأنك بها 'তুমি থলি ও তার বাঁধন-রশিটি চিনে রাখ। তারপর এক বছর সেটি প্রচার কর। এর মধ্যে তার মালিক আসলে তো ভালো, অন্যথায় তোমার যা ভালো মনে হয় করো।[১৪]
এক বছর সংরক্ষণ ও প্রচার করতে হবে অর্থের পরিমাণ বেশি হলে বা খুব দামী মাল হলে। অন্যথায় মালিককে পাওয়ার সম্ভাব্য সময় চিন্তাভাবনা করে দেখবে। যখন মনে করবে তাকে আর পাওয়া যাবে না, তখন তার উদ্দেশ্যে সেটি সদাকা করে দেবে। নেহাত গরীব হলে নিজেও ভোগ করতে পারে। পরে যদি মালিককে পাওয়া যায়, তখন হয় সেটি তাকে ফেরত দেবে, নয়তো তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেবে।
কারও হারানো মাল পেয়ে গেলে তা লুকানো ও নিজে নিয়ে নেওয়া কঠিন পাপ। এটা আত্মসাতের মধ্যে পড়ে। বেশি দামী বস্তু হলে অনেকে লোভে পড়ে যায়। এরকম লোভ অবশ্যই সামলাতে হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا يأوي الضالة إلا ضال হারিয়ে যাওয়া বস্তু (নিজে ভোগের জন্য) তুলে নেয় কেবল পথভ্রষ্ট লোক।[১৫]
কারও হারানো বস্তু পেলে তার মালিক সন্ধান করা কর্তব্য বটে, তবে এ কাজে মসজিদ ব্যবহার করা উচিত নয়। ইদানীং মসজিদে হারানো বস্তু ও হারানো প্রাপ্তির ঘোষণা দেওয়াটা ব্যাপক হয়ে গেছে। অথচ মসজিদে এটা করা নিষেধ। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- من سمع رجلا ينشد ضالة في المسجد، فليقل: لا أداها الله إليك فإن المساجد لم تبن لهذا “যে ব্যক্তি কাউকে মসজিদে তার হারিয়ে যাওয়া বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনে সে যেন তাকে বলে দেয়, আল্লাহ করুন তুমি যেন এটা না-ই পাও। মসজিদ তো এজন্য বানানো হয়নি।[১৬]
অবশ্য মসজিদের ভেতরে ঘোষণা না করে যদি মসজিদের দরজার সামনে ঘোষণা করে, তবে অসুবিধা নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া কর্তব্য।
খ. কোনও মুসলিম ভাই মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা চাই।
গ. কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলতে হবে।
ঘ. কেউ কসম দিয়ে কোনও কাজের অনুরোধ করলে সে কাজটি করা চাই, যদি তা বৈধ কাজ হয় এবং করার সামর্থ্য থাকে।
ঙ. মজলুম ব্যক্তিকে যথাসম্ভব সাহায্য করা উচিত।
চ. কেউ যদি দাওয়াত করে, তবে শর'ঈ কোনও বাধা না থাকলে তা কবুল করা উচিত।
ছ. সালাম দেওয়া ও নেওয়ার ব্যাপক চর্চা করা উচিত। এটা পারস্পরিক মহব্বত সৃষ্টির পক্ষে সহায়ক।
জ. কোনও মুসলিম পুরুষের স্বর্ণালঙ্কার পরা জায়েয নয়।
ঝ. নারী-পুরুষ কারও জন্যই সোনা-রুপার পাত্র ও আসবাবপত্র ব্যবহার বৈধ নয়।
ঞ. পুরুষের জন্য সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক নাজায়েয। মহিলাগণ ব্যবহার করতে পারে।
ট. কারও হারানো বস্তু পেলে তা মালিকের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই।
[১] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৯৮৯১; সুনানে দারা কুতনী, হাদীছ নং ৪২৭০
[২] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৯৮৯২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৮৩৫
[৩] বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৯৮৮৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২১১৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৫১
[৪] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৯৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৮৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৪১২; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬১৮৯
[৫] জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৪৮৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৩৩৩৪ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৭৮৪; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৫৩৮৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৯০; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ১৫০১
[৬] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৩৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫১৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫০০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৫৮১; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১০১৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫০৫; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৪৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৩০৮৮
[৭] মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৫৩০; আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৭৮৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৯১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৮২; মুসনাদ আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ১৬৮৭
[৮] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৬৩৩; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭২৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৭৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৩০১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৩৭৪
[৯] সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৭; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৯৭; সুনানে দারা কুতনী, হাদীছ নং ৪৭৯৫
[১০] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৬৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৬৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৪১৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৬৬২; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪১৩৫; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১২০৪৬; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৫৮৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৯৬৫
[১১] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০৭৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৮১৭; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৩০৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩৫৮৮ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৬৪৪৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৩৫; তবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৯৭৭৯
[১২] তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৫১২৫; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫১৪৮, বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪২২০; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯৩৮৭
[১৩] সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৫৯৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪০৫৭; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫১৪৪; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫৪৩৪; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪৬৫৯; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১২৬; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৭৫৫৮; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৬৮১
[১৪] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭২২; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৫০৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৭০৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭০৫০;বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২০৫০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২০৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৮৮৯
[১৫] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৭২০; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২০৬৯; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২১৬৩২; তহাবী, শারহু মাআনিল আছার, হাদীছ নং ৬০৬১
[১৬] সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৭৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৭৬৬; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৩৪৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)