রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২৩২
ভূমিকা অধ্যায়
মুসলিম ব্যক্তিবর্গের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের অধিকারসমূহ ও তাদের প্রতি স্নেহ-মমতার বর্ণনা।
ফজরের নামায আদায়কারীকে আল্লাহপ্রদত্ত নিরাপত্তা এবং তা রক্ষায় মুমিনদের বাধ্যবাধকতা
হাদীছ নং : ২৩২
হযরত জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল। সুতরাং আল্লাহ যেন তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তোমাদেরকে তলব না করেন। কেননা আল্লাহ তাঁর যিম্মার ব্যাপারে যাকে তলব করবেন, তাকে অবশ্যই পাকড়াও করবেন, তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন - মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৬৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৮০৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৯৪৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১৮০; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৫৮১; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৬৫৬)
হাদীছ নং : ২৩২
হযরত জুনদুব ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল। সুতরাং আল্লাহ যেন তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তোমাদেরকে তলব না করেন। কেননা আল্লাহ তাঁর যিম্মার ব্যাপারে যাকে তলব করবেন, তাকে অবশ্যই পাকড়াও করবেন, তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন - মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৬৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৮০৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৯৪৫; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২১৮০; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৫৮১; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ১৬৫৬)
مقدمة الامام النووي
27 - باب تعظيم حرمات المسلمين وبيان حقوقهم والشفقة عليهم ورحمتهم
232 - وعن جندب بن عبد الله - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ صَلَّى صَلاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ في ذِمَّةِ (1) الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته بشَيءٍ، فَإنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ في نَارِ جَهَنَّمَ». رواه مسلم. (2)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে ফজরের নামায আদায়কারীর মর্যাদা এবং তার সে মর্যাদা অবমাননাকারীর পরিণাম বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে- فَهُوَ فِي ذِمةِ اللَّه অর্থাৎ ফজরের নামায আদায়কারী আল্লাহ তাআলার যিম্মায় চলে যায়। আল্লাহর যিম্মায় চলে যাওয়ার অর্থ- আল্লাহ তাআলা তাকে নিরাপত্তা দান করেন। আল্লাহ তাআলা যাকে নিরাপত্তা দান করেন, প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে নিরাপত্তার মর্যাদা দেওয়া অর্থাৎ তার জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রক্ষা করা, কোনওভাবে তার কোনও ক্ষতি না করা। হাদীছটির পরবর্তী বাক্যে সে কথাই বলা হয়েছে যে- فَلا يطْلُبنَّكُمْ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ ‘সুতরাং আল্লাহ যেন তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তোমাদেরকে তলব না করেন'। অর্থাৎ তোমরা সে যিম্মাদারী ও নিরাপত্তা দানের অমর্যাদা করো না। যদি কর, তবে আল্লাহ তোমাদের তলব করবেন এবং তোমাদেরকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় আছে- فَلاَ تُخْفِرُوا اللهَ فِي ذِمَّتِهِ 'তোমরা আল্লাহপ্রদত্ত নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।[১]
এ হাদীছে যিম্মাদারী দ্বারা রূপকার্থে নামাযও বোঝানো হতে পারে, যেহেতু যিম্মাদারী তথা নিরাপত্তা নামায আদায়ের ফলস্বরূপ। এ হিসেবে হাদীছটির অর্থ হবে-তোমরা ফজরের নামায ত্যাগ করো না এবং এ নামায আদায়ের ব্যাপারে কোনওরকম শিথিলতা প্রদর্শন করো না। কেননা তা করলে আল্লাহ ও তোমাদের মধ্যকার প্রতিশ্রুতি ভেঙে যাবে। পরিণামে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তলব করবেন । আর আল্লাহ তাআলা যাকে তলব করবেন এবং যাকে তাঁর প্রদত্ত দায়িত্বে অবহেলার কারণে পাকড়াও করবেন, তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
ফজরের নামাযের এ গুরুত্বের কারণ- তুলনামূলকভাবে এ নামায আদায় করা বেশি কঠিন। ঘুম থেকে উঠে এ নামায আদায় করতে অলসতা লাগে। তা সত্ত্বেও যারা এ নামায আদায় করে, বলা যায় তারা কেবল ইখলাসের কারণেই তা আদায় করে। আর যারা মুখলিস তারা আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে।
অথবা এ গুরুত্বের কারণ হচ্ছে, ফজরের নামায আদায় করা হয় দিনের শুরুতে। এ সময় মানুষ তাদের নিত্যদিনের নানা প্রয়োজনে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যতিব্যস্ততার মধ্যেও যারা আগে নামায পড়ে নেয়, তারা যেন দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েই তা করে। স্বাভাবিকভাবেই যারা ফজরের নামাযে এরূপ যত্নবান থাকে, তারা অন্যান্য নামায আদায়েও কোনওরূপ অবহেলা করবে না। সুতরাং তারা যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সবটা সময় নির্বিঘ্নে নামায পড়তে পারে, তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেন, যা রক্ষা করা সকলের কর্তব্য।
ইমাম তীবী রহ. فَلا يطْلُبنَّكُمْ -এর ব্যাকরণ ও অলঙ্কারগত বিশ্লেষণ করে বলেন, সুতরাং এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে গেল। সুতরাং তোমরা কোনওকিছু দিয়ে তার ক্ষতি করো না, তা যত তুচ্ছই হোক না কেন। কেননা তোমরা তার কোনও ক্ষতি করলে আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন । তিনি পাকড়াও করলে তোমরা তাঁর কাছ থেকে পালাতে পারবে না। তিনি চারদিক থেকে তোমাদের বেষ্টন করে ফেলবেন।
ইবন হাজার হাইতামী রহ. মিশকাত শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে বলেন, যারা ফজরের নামায আদায় করে, যা কিনা অবশিষ্ট চার ওয়াক্ত নামায যথাযথ আদায়ের পক্ষে সহায়ক, কেউ যাতে তাদের কোনওরকম ক্ষতি না করে সেজন্য এ হাদীছটি একটি কঠোর সতর্কবাণী। এতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ তাদের কোনও ক্ষতি করলে পরিণামে তাকে কঠিন লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ইমাম শা‘রানী রহ. ‘আল-হাউযুল মাওরূদ' গ্রন্থে বলেন, হাজ্জাজ ইবন ইয়ূসুফ অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসক হওয়া সত্ত্বেও কাউকে যখন তার কাছে ধরে আনা হত তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি ফজরের নামায পড়েছ? যদি সে পড়েছে বলে জানাত, তখন এ হাদীছের সতর্কবাণীর প্রতি লক্ষ করে তাকে নিরাপদে মুক্তি দিয়ে দিতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ফজরের নামাযের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। কাজেই এ নামা আদায়ে বিন্দুমাত্র গড়িমসি করা উচিত নয়।
খ. যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করে সে যেহেতু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পেয়ে যায়, তাই তার যে-কোনওরকম ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
[১] জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৫৮৯৮
তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় আছে- فَلاَ تُخْفِرُوا اللهَ فِي ذِمَّتِهِ 'তোমরা আল্লাহপ্রদত্ত নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।[১]
এ হাদীছে যিম্মাদারী দ্বারা রূপকার্থে নামাযও বোঝানো হতে পারে, যেহেতু যিম্মাদারী তথা নিরাপত্তা নামায আদায়ের ফলস্বরূপ। এ হিসেবে হাদীছটির অর্থ হবে-তোমরা ফজরের নামায ত্যাগ করো না এবং এ নামায আদায়ের ব্যাপারে কোনওরকম শিথিলতা প্রদর্শন করো না। কেননা তা করলে আল্লাহ ও তোমাদের মধ্যকার প্রতিশ্রুতি ভেঙে যাবে। পরিণামে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তলব করবেন । আর আল্লাহ তাআলা যাকে তলব করবেন এবং যাকে তাঁর প্রদত্ত দায়িত্বে অবহেলার কারণে পাকড়াও করবেন, তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
ফজরের নামাযের এ গুরুত্বের কারণ- তুলনামূলকভাবে এ নামায আদায় করা বেশি কঠিন। ঘুম থেকে উঠে এ নামায আদায় করতে অলসতা লাগে। তা সত্ত্বেও যারা এ নামায আদায় করে, বলা যায় তারা কেবল ইখলাসের কারণেই তা আদায় করে। আর যারা মুখলিস তারা আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকে।
অথবা এ গুরুত্বের কারণ হচ্ছে, ফজরের নামায আদায় করা হয় দিনের শুরুতে। এ সময় মানুষ তাদের নিত্যদিনের নানা প্রয়োজনে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যতিব্যস্ততার মধ্যেও যারা আগে নামায পড়ে নেয়, তারা যেন দুনিয়ার উপর আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েই তা করে। স্বাভাবিকভাবেই যারা ফজরের নামাযে এরূপ যত্নবান থাকে, তারা অন্যান্য নামায আদায়েও কোনওরূপ অবহেলা করবে না। সুতরাং তারা যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সবটা সময় নির্বিঘ্নে নামায পড়তে পারে, তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেন, যা রক্ষা করা সকলের কর্তব্য।
ইমাম তীবী রহ. فَلا يطْلُبنَّكُمْ -এর ব্যাকরণ ও অলঙ্কারগত বিশ্লেষণ করে বলেন, সুতরাং এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে গেল। সুতরাং তোমরা কোনওকিছু দিয়ে তার ক্ষতি করো না, তা যত তুচ্ছই হোক না কেন। কেননা তোমরা তার কোনও ক্ষতি করলে আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন । তিনি পাকড়াও করলে তোমরা তাঁর কাছ থেকে পালাতে পারবে না। তিনি চারদিক থেকে তোমাদের বেষ্টন করে ফেলবেন।
ইবন হাজার হাইতামী রহ. মিশকাত শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে বলেন, যারা ফজরের নামায আদায় করে, যা কিনা অবশিষ্ট চার ওয়াক্ত নামায যথাযথ আদায়ের পক্ষে সহায়ক, কেউ যাতে তাদের কোনওরকম ক্ষতি না করে সেজন্য এ হাদীছটি একটি কঠোর সতর্কবাণী। এতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ তাদের কোনও ক্ষতি করলে পরিণামে তাকে কঠিন লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
ইমাম শা‘রানী রহ. ‘আল-হাউযুল মাওরূদ' গ্রন্থে বলেন, হাজ্জাজ ইবন ইয়ূসুফ অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসক হওয়া সত্ত্বেও কাউকে যখন তার কাছে ধরে আনা হত তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করতেন, তুমি ফজরের নামায পড়েছ? যদি সে পড়েছে বলে জানাত, তখন এ হাদীছের সতর্কবাণীর প্রতি লক্ষ করে তাকে নিরাপদে মুক্তি দিয়ে দিতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা ফজরের নামাযের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। কাজেই এ নামা আদায়ে বিন্দুমাত্র গড়িমসি করা উচিত নয়।
খ. যে ব্যক্তি ফজরের নামায আদায় করে সে যেহেতু আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পেয়ে যায়, তাই তার যে-কোনওরকম ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যকর্তব্য।
[১] জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৫৮৯৮
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)