রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১৮৮
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ প্রসঙ্গ।
অন্যায়-অনাচারকারী শাসকদের অধীনে করণীয়
হাদীছ নং: ১৮৮
উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের ওপর এমন এমন শাসক নিযুক্ত হবে, যাদের কোনও কোনও কাজ তোমরা চিনতে পারবে এবং কোনও কোনও কাজ তোমাদের অপরিচিত মনে হবে (অর্থাৎ তাদের কিছু কাজ হবে সৎ এবং কিছু কাজ অসৎ)। সুতরাং যে ব্যক্তি (অসৎকর্ম) ঘৃণা করবে, সে (গুনাহ থেকে) মুক্ত থাকবে। যে ব্যক্তি তার প্রতিবাদ করবে, সে (আখিরাতের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে) নিরাপদ থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুগামী হবে, তার কথা আলাদা (অর্থাৎ সে মুক্ত ও নিরাপদ থাকবে না)। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম করবে মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৫৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৭৬০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৫৭১)
হাদীছ নং: ১৮৮
উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের ওপর এমন এমন শাসক নিযুক্ত হবে, যাদের কোনও কোনও কাজ তোমরা চিনতে পারবে এবং কোনও কোনও কাজ তোমাদের অপরিচিত মনে হবে (অর্থাৎ তাদের কিছু কাজ হবে সৎ এবং কিছু কাজ অসৎ)। সুতরাং যে ব্যক্তি (অসৎকর্ম) ঘৃণা করবে, সে (গুনাহ থেকে) মুক্ত থাকবে। যে ব্যক্তি তার প্রতিবাদ করবে, সে (আখিরাতের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে) নিরাপদ থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুগামী হবে, তার কথা আলাদা (অর্থাৎ সে মুক্ত ও নিরাপদ থাকবে না)। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম করবে মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৫৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৭৬০; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৬৫৭১)
23 - باب في الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر
188 - الخامس: عن أُمِّ المؤمنين أم سلمة هند بنت أَبي أمية حذيفة رضي الله عنها، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - أنه قَالَ: «إنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعرِفُونَ وتُنْكِرُونَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ» قَالوا: يَا رَسُول اللهِ، ألا نُقَاتِلهم؟ قَالَ: «لا، مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ». رواه مسلم. (1) [ص:84]
معناه: مَنْ كَرِهَ بِقَلْبهِ وَلَمْ يَسْتَطِعْ إنْكَارًا بِيَدٍ وَلا لِسَانٍ فقَدْ بَرِىءَ مِنَ الإِثْمِ، وَأَدَّى وَظيفَتَهُ، وَمَنْ أَنْكَرَ بحَسَبِ طَاقَتِهِ فَقَدْ سَلِمَ مِنْ هذِهِ المَعْصِيَةِ وَمَنْ رَضِيَ بِفِعْلِهِمْ وَتَابَعَهُمْ فَهُوَ العَاصِي.
معناه: مَنْ كَرِهَ بِقَلْبهِ وَلَمْ يَسْتَطِعْ إنْكَارًا بِيَدٍ وَلا لِسَانٍ فقَدْ بَرِىءَ مِنَ الإِثْمِ، وَأَدَّى وَظيفَتَهُ، وَمَنْ أَنْكَرَ بحَسَبِ طَاقَتِهِ فَقَدْ سَلِمَ مِنْ هذِهِ المَعْصِيَةِ وَمَنْ رَضِيَ بِفِعْلِهِمْ وَتَابَعَهُمْ فَهُوَ العَاصِي.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন, "যে ব্যক্তি হাতে বা মুখে প্রতিবাদ করতে অক্ষম হওয়ায় কেবল অন্তরে ঘৃণা পোষণ করল, সে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকল এবং আপন দায়িত্ব আদায় করল। আর যে ব্যক্তি আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ করল সে এ গুনাহ থেকে নিরাপদ থাকল। অপরদিকে যে ব্যক্তি তাদের কাজে সন্তুষ্ট থাকল এবং তাতে অনুগমন করল সে গুনাহগার সাব্যস্ত হল"।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি গায়েব জানতেন না। ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত এ কথাটি তাঁকে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতেই তিনি এটি বলেছিলেন, যা পরবর্তীকালে সত্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এটি একটি মু'জিযা বা অলৌকিক বিষয়। তাঁর বিভিন্ন রকম মু'জিযা আছে, তার মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে সংবাদ দেওয়াও একটি। তিনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেসকল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তার অনেকগুলো ইতোমধ্যে ঘটে গেছে আর অনেকগুলো কিয়ামতের আগে ঘটবে। তাঁর সব ভবিষ্যদ্বাণীই মু'জিযা, এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, তোমাদের ওপর এমন আমীর ও শাসক নিযুক্ত করা হবে, যারা সৎকর্ম ও অসৎকর্ম উভয়ই করবে। নিযুক্ত করা হবে মানে খলিফা ও রাজা-বাদশাগণ তাদেরকে আঞ্চলিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করবে।
এ হাদীছে সৎকর্ম অসৎকর্ম বোঝানোর জন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- تعرفون وتنكرون, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, তোমরা চিনবে ও চিনবে না। চিনবে বলে সৎকর্ম বোঝানো হয়েছে। কেননা মুমিনগণ কুরআন-সুন্নাহ ও তার মূলনীতির আলোকে সৎকর্ম চিনতে পারে। আর চিনবেনা বলে অসৎকর্ম বোঝানো হয়েছে। কেননা কুরআন- সুন্নাহর মূলনীতির মধ্যে তা পড়ে না বলে মুমিনদের কাছে তা অপরিচিত। এ হিসেবেই সৎকর্মকে মা'রূফ (পরিচিত) ও অসৎকর্মকে মুনকার (অপরিচিত) বলা হয়।
এ হাদীছে অসৎকর্মের প্রতিবাদ করার তিনটি স্তর বলা হয়েছে। হাত দিয়ে বাধা দেওয়া, মুখের কথা দ্বারা বাধা দেওয়া এবং কেবল অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা। তৃতীয়টি অবলম্বন করা হবে প্রথম দু'টির সামর্থ্য না থাকলে।
যে শাসকগণ ন্যায়-অন্যায় দু'রকম কাজই করে, তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, না, যতক্ষণ তারা সালাত কায়েম করবে, ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা যাবে না।
সালাত কায়েম করা ইসলামের সর্বপ্রধান আমল। এর দ্বারা ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। কাজেই এর দ্বারা মূলত বোঝানো উদ্দেশ্য যতক্ষণ তারা ইসলামের ওপর কায়েম থাকবে। তারা যদি ইসলাম পরিত্যাগ করে মুরতাদ না হয়ে যায়, তবে কেবল অসৎকর্মের কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি নেই। কেননা সে ক্ষেত্রে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাসীন থাকায় রাষ্ট্রশক্তি তাদের হাতে থাকার পাশাপাশি তাদের অনেক সমর্থক ও সাহায্য-সহযোগীও থাকাটা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে তা গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হয়। পরিণামে তা জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়। সেই বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট ক্ষতিকে মেনে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া বিপুল জ্ঞানরাশির একটি অংশ ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত সংবাদ।
খ. নবাদের মু'জিযা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
গ. শাসকবর্গ অসৎকর্ম করলে সামর্থ্য অনুযায়ী তার প্রতিবাদ করা জরুরি।
ঘ. সামর্থ্য অনুযায়ী অসৎকর্মের প্রতিবাদ না করা নিজে সে অসৎকর্মে লিপ্ত হওয়ার শামিল।
ঙ. শাসকবর্গ যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি গায়েব জানতেন না। ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত এ কথাটি তাঁকে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতেই তিনি এটি বলেছিলেন, যা পরবর্তীকালে সত্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এটি একটি মু'জিযা বা অলৌকিক বিষয়। তাঁর বিভিন্ন রকম মু'জিযা আছে, তার মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত কোনও বিষয়ে সংবাদ দেওয়াও একটি। তিনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেসকল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তার অনেকগুলো ইতোমধ্যে ঘটে গেছে আর অনেকগুলো কিয়ামতের আগে ঘটবে। তাঁর সব ভবিষ্যদ্বাণীই মু'জিযা, এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, তোমাদের ওপর এমন আমীর ও শাসক নিযুক্ত করা হবে, যারা সৎকর্ম ও অসৎকর্ম উভয়ই করবে। নিযুক্ত করা হবে মানে খলিফা ও রাজা-বাদশাগণ তাদেরকে আঞ্চলিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করবে।
এ হাদীছে সৎকর্ম অসৎকর্ম বোঝানোর জন্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে- تعرفون وتنكرون, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, তোমরা চিনবে ও চিনবে না। চিনবে বলে সৎকর্ম বোঝানো হয়েছে। কেননা মুমিনগণ কুরআন-সুন্নাহ ও তার মূলনীতির আলোকে সৎকর্ম চিনতে পারে। আর চিনবেনা বলে অসৎকর্ম বোঝানো হয়েছে। কেননা কুরআন- সুন্নাহর মূলনীতির মধ্যে তা পড়ে না বলে মুমিনদের কাছে তা অপরিচিত। এ হিসেবেই সৎকর্মকে মা'রূফ (পরিচিত) ও অসৎকর্মকে মুনকার (অপরিচিত) বলা হয়।
এ হাদীছে অসৎকর্মের প্রতিবাদ করার তিনটি স্তর বলা হয়েছে। হাত দিয়ে বাধা দেওয়া, মুখের কথা দ্বারা বাধা দেওয়া এবং কেবল অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা। তৃতীয়টি অবলম্বন করা হবে প্রথম দু'টির সামর্থ্য না থাকলে।
যে শাসকগণ ন্যায়-অন্যায় দু'রকম কাজই করে, তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা হবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, না, যতক্ষণ তারা সালাত কায়েম করবে, ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা যাবে না।
সালাত কায়েম করা ইসলামের সর্বপ্রধান আমল। এর দ্বারা ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। কাজেই এর দ্বারা মূলত বোঝানো উদ্দেশ্য যতক্ষণ তারা ইসলামের ওপর কায়েম থাকবে। তারা যদি ইসলাম পরিত্যাগ করে মুরতাদ না হয়ে যায়, তবে কেবল অসৎকর্মের কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি নেই। কেননা সে ক্ষেত্রে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাসীন থাকায় রাষ্ট্রশক্তি তাদের হাতে থাকার পাশাপাশি তাদের অনেক সমর্থক ও সাহায্য-সহযোগীও থাকাটা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে তা গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হয়। পরিণামে তা জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের কারণ হয়ে যায়। সেই বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট ক্ষতিকে মেনে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া বিপুল জ্ঞানরাশির একটি অংশ ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত সংবাদ।
খ. নবাদের মু'জিযা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
গ. শাসকবর্গ অসৎকর্ম করলে সামর্থ্য অনুযায়ী তার প্রতিবাদ করা জরুরি।
ঘ. সামর্থ্য অনুযায়ী অসৎকর্মের প্রতিবাদ না করা নিজে সে অসৎকর্মে লিপ্ত হওয়ার শামিল।
ঙ. শাসকবর্গ যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
