রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৩
ভূমিকা অধ্যায়
আমলে যত্নবান থাকা ও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা প্রসঙ্গ

এর আগের অধ্যায়ের আলোচনা ছিল আমলে ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা রক্ষা সম্পর্কে। ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা রক্ষার সুফল হচ্ছে আমলের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা। আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা জরুরি। আল্লাহ তা'আলার কাছে ওই আমলই বেশি পছন্দ, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। কোনও আমল শুরু করার পর তা কিছুতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কেননা সেটা হয় আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার পর সরে যাওয়ার মত। যে-কোনও বড় ব্যক্তির মজলিসে কিছুদিন আসা-যাওয়া করার পর যদি তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে সেই বড় ব্যক্তির কাছে তা প্রীতিকর হয় না। কাজেই কোনও আমল শুরু করার পর ছেড়ে দেওয়া, যা কিনা আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়ার পর ফের গরহাজির থাকার মত কাজ, কী করে পছন্দনীয় হতে পারে?
এজন্যই যাতে গরহাজির হতে না হয়, অর্থাৎ আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়, তাই এর আগের অধ্যায়ে মধ্যপন্থা রক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যখন মধ্যপন্থা রক্ষার গুরুত্ব জানা গেল, তখন প্রত্যেকের কর্তব্য সে অনুযায়ী আমল শুরু করা। অতঃপর যখন ভারসাম্য রক্ষার সাথে আমল শুরু করা হবে, তখন কর্তব্য হবে কোনও অলসতাকে প্রশ্রয় না দেওয়া। নফস ও শয়তান অলসতা সৃষ্টি করতে চায়। শয়তান চায় না মানুষ ইবাদত-বন্দেগী করে আল্লাহ তা'আলার রহমত ও সন্তুষ্টির উপযুক্ত হোক। ইন্দ্রিয়সুখ হাসিল হয় না বলে নফসও তা করতে প্রস্তুত হয় না। তাই ‘ইবাদত যত আসান ও যত অল্পই হোক না কেন, তা করতে আলস্য বোধ হয়। কিন্তু সে আলস্য ঝেড়ে ফেলতে হবে। এখনই 'ইবাদত-বন্দেগীতে লেগে যেতে হবে। তারপর সর্বাবস্থায় তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পরিমাণমত আমল নিয়মিতভাবে করতে থাকলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর পথে উন্নতি লাভ হতে থাকবে এবং একপর্যায়ে তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি হাসিল হয়ে যাবে।
মানুষ যাতে সব অলসতা ঝেড়ে ফেলে শরী'আতের বিধানাবলি পালনে যত্নবান থাকে এবং ভারসাম্যের সাথে আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, সে লক্ষ্যে কুরআন ও হাদীছে তাকে নানাভাবে উৎসাহ দান করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে তার অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন, আমীন।

আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় উৎসাহদান সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত

أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ

অর্থ : যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনও সেই সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে? এবং তারা তাদের মত হবে না, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল অতঃপর যখন তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, তখন তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেল।' সূরা হাদীদ, আয়াত ১৬

ব্যাখ্যা

আল্লাহ তা'আলা চান মু'মিনগণ কামেল ঈমানদার হয়ে যাক। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদেরকে যে শরী'আত দেওয়া হয়েছে তার পুরোপুরি অনুসরণ করুক। এমন যেন না হয় যে, তারা দুনিয়ার ভোগবিলাসিতা ও এর আনন্দ-ফুর্তিতে মজে গিয়ে আখিরাতকে ভুলে বসবে এবং শরী'আতের কোনও বিধান পালনে গড়িমসি করবে। মানুষের মনে দুনিয়ার আসক্তি তো আছেই, হরেক রকমের মনভোলানো উপকরণ প্রতিক্ষণ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। ফলে অনেক সময় সে সংযম হারিয়ে গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে কিংবা সংযম হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়। তখন গুনাহ না করলেও কেমন এক উদাসীনতা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। কিন্তু সে উদাসীনতাও কাম্য নয়। জীবনের অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। আর কতদিন বাকি আছে জানা নেই। যে-কোনও সময় মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। তার আগে কবর ও আখিরাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে ফেলা দরকার। তাই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে সজাগ করছেন- মুমিনদের কি সে সময় আসেনি যে, তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্যদীন নাযিল হয়েছে তার সামনে ঝুঁকে পড়বে, অর্থাৎ শরী'আতের অনুসরণ ও পাপাচার বর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবে?
মূলত এর দ্বারা মু'মিনদেরকে তাওবা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যার সারকথা- বিগত ভুল-ত্রুটির জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে ভবিষ্যতে শরী'আতের পুরোপুরি পাবন্দী ও গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের জন্য অঙ্গীকার করে ফেলা এবং একমুহূর্তও দেরি না করে সে অঙ্গীকার এখনই করে ফেলা।
বান্দা যাতে তাওবা করতে ও আখিরাতমুখী হয়ে যেতে এখনই প্রস্তুত হয়ে যায়,সেজন্য আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী জাতিসমূহের কার্যকলাপ তুলে ধরেছেন, যারা অনেক দীর্ঘ আয়ু পেয়েছিল আর সে কারণে তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গিয়েছিল, ফলে আল্লাহর কিতাব তাদের অন্তরে আছর করত না, কিতাবের উপদেশ উপেক্ষা করে দুনিয়াদারীতে মগ্ন হয়ে থাকত এবং হালাল-হারাম নির্বিচারে ভোগবিলাসিতার ভেতর জীবন কাটাত।
এর দ্বারা বিশেষভাবে ইহুদী ও খ্রিষ্টান জাতির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তারা তাদের কিতাবের উপদেশ উপেক্ষা করে শরীর ও মনের চাহিদাপূরণে ব্যস্ত থাকে। এভাবে তাদের দিন গড়াতে থাকে। কোনওক্রমেই তাওবায় লিপ্ত হয় না। ফলে অন্তর শক্ত হয়ে যায়। অন্তর শক্ত হয়ে যাওয়ার দরুণ তারা শিরক ও কুফরকে এমন মজবুতভাবে ধরে রাখে যে, সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত পাওয়া সত্ত্বেও এবং তাঁর সত্যতা তাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরও তারা ঈমান আনতে রাজি হয়নি।
সুতরাং হে মু'মিনগণ! তোমরা যদি অলসতা কর এবং গুনাহে গা ভাসিয়ে দাও, আর এভাবে তোমাদের সময় গড়াতে থাকে কিন্তু তাওবায় লিপ্ত না হও, তবে অসম্ভব নয় যে, তোমাদের অন্তর তাদের মত শক্ত হয়ে যাবে। ফলে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া ও নেক আমলে অবতীর্ণ হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। কাজেই আর দেরি নয়, তোমরা এখনই সব অলসতা ঝেড়ে ফেল এবং তাওবা করে শরী'আতের পূর্ণাঙ্গ পাবন্দী শুরু করে দাও।
কুরআন মাজীদের এ আয়াতটির তাছীর অত্যন্ত গভীর ও শক্তিশালী। এর প্রভাবে অনেক সময় কঠিন কঠিন পাপী জীবন বদলে ফেলেছে। তারপর যুহদ ও তাকওয়ার পথে চলে রূহানী উন্নতির এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে যে, আজ সর্বস্তরের মানুষ গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাদের নাম স্মরণ করে। এ ক্ষেত্রে ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. ও ফুযায়ল ইবন ইয়ায রহ.-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুরাবক রহ.-এর জীবনের রোখ বদল

বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম কুরতুবী রহ.-সহ বহু মুফাসসির ও ঐতিহাসিক উল্লেখ করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহ. একদিন তাঁর বাগানে আনন্দ-ফুর্তিতে মাতোয়ারা ছিলেন। এভাবে সারাদিন কেটে যাওয়ার পর যখন রাত হল, তখন গানবাদ্যের আসর জমালেন। নিজ হাতেও বাদ্যযন্ত্র নিলেন। তারপর বরাবরের মত বাজাতে শুরু করলেন। কিন্তু কেন যেন আজ বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝঙ্কার ওঠে না। অনেক কসরত করলেন। কিন্তু সে যন্ত্র কিছুতেই সাড়া দেয় না। বেশ কিছু সময় গড়িয়ে গেল। তারপর সহসাই নতুন এক সুরের মূর্ছনা উঠল। কেউ যেন আবৃত্তি করছে-

الَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِ

“যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনও সেই সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে?”
অমনি আব্দুল্লাহ চিৎকার করে উঠলেন। বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহ! সময় এসে গেছে। এই বলে তিনি বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেললেন এবং আসর ছেড়ে উঠে গেলেন। তারপর শুরু হল তাঁর সাধনা ও মুজাহাদার জীবন। সে জীবনে তিনি কোথা হতে কোথায় পৌঁছে গেছেন, দীনদার মহলের তা অজানা নয়।

আরেকটি জীবনের গতিমোড়

এমনিভাবে ফুযায়ল ইবন ইয়ায রহ.-এর প্রথম জীবনও ছিল ছন্নছাড়া ধরনের। ছিলেন এক মস্ত ডাকাতও। সে জীবনে তিনি একটি মেয়ের ভালোবাসায় মত্ত হয়ে পড়েছিলেন। কোনও এক রাতে ওই মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে বের হয়েছিলেন। রাস্তায় হঠাৎ তার কানে আসে কেউ একজন তিলাওয়াত করছে-

الَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ

“যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনও সেই সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে?” অমনি তাঁরও ভাবান্তর ঘটে যায়। চিৎকার করে বলে ওঠেন, নিশ্চয়ই হে আল্লাহ! সময় এসে গেছে। আবেগের উত্তেজনায় তিনি দৌড়ে একটা পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়েন। তখন এক পথিকদল আত্মগোপন করে সেখানে অবস্থান করছিল। তিনি শুনতে পেলেন তারা নিজেরা বলাবলি করছে, সাবধান! এ পথে কিন্তু ফুযায়ল ডাকাত আছে। এ কথা শুনে ফুযায়ল বলে উঠলেন, উহ্, কেমন রাত পার করছি! এক পাপের চেষ্টায় বের হয়েছি, আবার একদল মুসলিম আমার জন্য আতঙ্কিত। হে আল্লাহ! আমি তাওবা করলাম। আমি এখন থেকে তোমার ঘরেই পড়ে থাকব। ব্যস, ফুযায়ল রহ.-এর জীবন বদলে গেল। একপর্যায়ে তিনি আধ্যাত্মিক উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেলেন। তিনি আজ সকলের পরম শ্রদ্ধার পাত্র।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের জীবনকেও এভাবে বদলে ফেলার তাওফীক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

দুই নং আয়াত

وَقَفَّيْنَا بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَآتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ وَجَعَلْنَا فِي قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَأْفَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا

অর্থ : এবং তাদের পেছনে পাঠালাম ঈসা ইবনে মারয়ামকে আর তাকে দান করলাম ইনজীল। যারা তার অনুসরণ করল, আমি তাদের অন্তরে দিলাম মমতা ও দয়া। আর রাহবানিয়্যাতের যে বিষয়টা, তা তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছিল। আমি তাদের উপর তা বাধ্যতামূলক করিনি। বস্তুত তারা (এর মাধ্যমে) আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানই করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা যথাযথভাবে পালন করেনি।সূরা হাদীদ, আয়াত ২৭

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের দু'টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার একটি প্রশংসনীয়, অন্যটি নিন্দনীয়। প্রশংসনীয় বিষয়টি হল তাদের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বলা হয়েছে যে, তাদের অন্তরে মমতা ও দয়ার গুণ দেওয়া হয়েছিল। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ গুণ।
এমনিতে তো মমতা ও করুণার বিষয়টা সমস্ত নবীর শিক্ষায়ই ছিল, কিন্তু হযরত “ঈসা 'আলাইহিস সালামের শিক্ষায় এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তাঁর শরী'আতে যেহেতু যুদ্ধ-বিগ্রহের বিধান ছিল না, তাই তাঁর অনুসারীদের মধ্যে দয়া- মায়ার দিকটি বেশি প্রতীয়মান ছিল।
এর দ্বারা এই উম্মতকে উৎসাহ দেওয়া উদ্দেশ্য যে, তারাও যেন মমতা ও দয়ার গুণ অর্জনের চেষ্টা করে। কেননা এ গুণ অর্জন দ্বারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মায়া-মহব্বত সৃষ্টি হয়। তাতে একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে। পরস্পরে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। আর এভাবে পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা কেবল দুনিয়ার শান্তির জন্যই প্রয়োজন নয়; বরং আখিরাতের কল্যাণ ও নাজাতের জন্যও জরুরি।
আর যে বিষয়টি দ্বারা তাদের নিন্দা করা হয়েছে তা হচ্ছে বৈরাগ্যবাদ। ‘রাহবানিয়্যাত’ অর্থ বৈরাগ্য। তথা দুনিয়ার সব আনন্দ ও বিষয়ভোগ পরিহার করা। হযরত ঈসা 'আলাইহিস সালামকে আসমানে তুলে নেওয়ার বহুকাল পরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এমন এক আশ্রমিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল, যাতে কোনও ব্যক্তি আশ্রমে ঢুকে পড়ার পর সংসারজীবন সম্পূর্ণরূপে বর্জন করত। বিয়েশাদি করত না এবং পার্থিব কোনও রকমের স্বাদ ও আনন্দে অংশগ্রহণ করত না। তাদের এই আশ্রমিক ব্যবস্থাকেই ‘রাহবানিয়্যাত’ বলে। এ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল এভাবে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের উপর বিভিন্ন রাজা-বাদশাহ জুলুমনির্যাতন চালাতে থাকলে তারা নিজেদের দ্বীন রক্ষার তাগিদে শহরের বাইরে গিয়ে বসবাস শুরু করল, যেখানে জীবনযাপনের সাধারণ সুবিধাসমূহ পাওয়া যেত না। কালক্রমে তাদের কাছে জীবনযাপনের এই কঠিন ব্যবস্থাই এক স্বতন্ত্র ইবাদতের রূপ পরিগ্রহ করে। পরবর্তীকালের লোকেরা জীবনযাপনের উপকরণাদি হস্তগত হওয়া সত্ত্বেও এই মনগড়া 'ইবাদতের জন্য তা পরিহার করতে থাকল। আল্লাহ তা'আলা বলছেন, আমি তাদেরকে এরূপ কঠিন জীবনযাত্রার নির্দেশ দেইনি। তারা নিজেরাই এর প্রবর্তন করেছে।
বৈরাগ্যবাদের এ প্রথা প্রথম দিকে তো তারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই অবলম্বন করেছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে তারা এটা পুরোপুরিভাবে রক্ষা করতে পারেনি। রক্ষা করতে না পারার দুটো দিক আছে। (এক) আল্লাহ তাআলার নির্দেশের অনুবর্তী না থাকা। আর এভাবে আল্লাহ তা'আলা যে জিনিসকে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেননি, তারা সেটাকে নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক করে নিল। মনে করল, এরূপ না করলে তাদের একটা মহা ইবাদত ছুটে যাবে। অথচ দ্বীনের মাঝে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনও জিনিসকে এ রকম জরুরি মনে করা যে, তা না করলে অপরাধ হবে, সম্পূর্ণ নাজায়েয।(তাওযীহুল কুরআন, সূরা হাদীদ-এর ২৭ নং আয়াতের টাকা হতে গৃহীত।)
প্রকৃতপক্ষে 'ইবাদত হিসেবে কেবল এমন আমলই গ্রহণযোগ্য, যা নবী-রাসূলগণ শিক্ষা দিয়েছেন। এর বাইরে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনও রীতিনীতি বা কোনও প্রথা চালু করলে আপাতদৃষ্টিতে তা যতই সুন্দর মনে হোক না কেন, তা 'ইবাদত' নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত কিছুতেই নয়। বরং তার পারিভাষিক নাম হচ্ছে বিদ'আত। এ জাতীয় কাজ দ্বারা কোনও ছাওয়াব পাওয়া যায় না; বরং তাতে অর্থহীন কষ্টভোগ হয় এবং কোনও ক্ষেত্রে হয় অর্থের অপচয়, সেইসঙ্গে গুনাহ তো আছেই। কাজেই এর থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ ও ছাওয়াব হাসিলের পথ একটাই, আর তা হচ্ছে শরী'আতের অনুসরণ তথা নবী-রাসূলগণের দেখানো পথে চলা। আমাদের জন্য তা হচ্ছে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপন করা।

তিন নং আয়াত

وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا

অর্থ : যে নারী তার সুতা মজবুত করে পাকানোর পর পাক খুলে তা রোয়া রোয়া করে ফেলেছিল, তোমরা তার মত হয়ো না।সূরা নাহল, আয়াত ৯২

ব্যাখ্যা

বর্ণিত আছে, মক্কা মুকাররমায় খারকা নাম্নী এক উন্মাদিনী ছিল। সে দিনভর পরিশ্রম করে সুতা কাটত আবার সন্ধ্যা হলে তা খুলে খুলে নষ্ট করে ফেলত। কালক্রমে তার এ কাজটি একটি দৃষ্টান্তে পরিণত হয়। যেমন কেউ যখন কোনও ভালো কাজ সম্পন্ন করার পর নিজেই তা নষ্ট করে ফেলে তখন ওই নারীর সাথে তাকে উপমিত করা হয়। এখানে তার সাথে তুলনা করা হয়েছে সেইসব লোককে, যারা কোনও বিষয়ে জোরদারভাবে কসম করার পর তা ভেঙ্গে ফেলে।
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ওই নারীর মত হতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আমরা যদি কোনও বিষয়ে কসম করি বা প্রতিশ্রুতি দিই, তবে সে কসম পূর্ণ করা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, কোনওক্রমেই তার বরখেলাফ করা যাবে না। আমরা তো কালেমা পড়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে গেছি যে, সর্বদা আল্লাহর হুকুম মেনে চলব এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ করব। সুতরাং কখনও যদি এর ব্যতিক্রম হয়, তবে তা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল হয়ে যাবে এবং তা ওই মহিলার মতই নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে।
কোনও আমল শুরু করার পর তা পূর্ণ না করাও এরকমই নির্বুদ্ধিতা। এমনিভাবে কোনও আমল শুরু করে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা না করাও এর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ কিছুতেই উচিত নয়। শুরুতেই নফল আমল এতটুকু পরিমাণ ধরা উচিত, যার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হবে। তারপর সে আমল শুরু করার পর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে কোনওক্রমেই যাতে তা ছুটে না যায়। পরিমাণ যদি অল্পও হয় এবং তা নিয়মিত চালু রাখা যায়, তবে আশা রাখা যায় সে অল্প আমলের বদৌলতেই আল্লাহ তা'আলার কাছে অশেষ ছাওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে, এমনকি তা আখিরাতে নাজাতের অসিলাও হয়ে যেতে পারে।

চার নং আয়াত

وَاعْبُدُ رَبِّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ

অর্থ : এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাক যাবৎ না যার আগমন সুনিশ্চিত তোমার কাছে তা এসে যায়।সূরা হিজর, আয়াত ৯৯

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে ইয়াকীন ও সুনিশ্চিত বিষয় দ্বারা মৃত্যু বোঝানো হয়েছে। বোঝানো হচ্ছে যে, মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগীতে লেগে থাক। যে সকল “ইবাদত ফরয ও ওয়াজিব পর্যায়ের তা তো মৃত্যু পর্যন্ত করে যেতেই হবে, সেইসঙ্গে ওইসব নফলও নিয়মিত চালু রাখতে হবে, যা নিয়মিত করার উদ্দেশ্যে শুরু করে দেওয়া হয়েছে। যদি এই নিয়তে তাহাজ্জুদ শুরু করা হয় যে, আমি নিয়মিত এ নামায পড়ব, তবে অব্যাহতভাবে তা পড়া বাঞ্ছনীয়। মাঝেমধ্যে কখনও ছুটে গেলে ভিন্ন কথা, কিন্তু এমনভাবে ছেড়ে দেওয়া যে, আর পড়াই হচ্ছে না, এটা কিছুতেই উচিত নয়। রাতের নির্জনতায় যখন আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজিরা দেওয়ার আমল শুরু করে ফেলা হয়েছে, তখন এক আশেক বান্দার জন্য সে হাজিরা ছেড়ে দেওয়া কিছুতেই শোভন হতে পারে না। এটা এক প্রকার অনিহা প্রদর্শন, যা আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বেশি বেশি নেক আমলের তাওফীক দিন এবং তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করুন, আমীন।

আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় উৎসাহদান সংক্রান্ত হাদীছ

এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদীছ আছে। তার মধ্যে একটা হাদীছ উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. থেকে বর্ণিত। তাতে আছে-

وكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ صَاحِبُهُ عَلَيْهِ

“তাঁর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল তাই, যা তার আমলকারী নিয়মিতভাবে করে।”-বুখারী ও মুসলিম. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৫
এ হাদীছটি পূর্ববর্তী অধ্যায়ের হাদীছ নং ১৪২-এ গত হয়েছে।
কখনও কোনও ওযিফা ছুটে গেলে করণীয়
হাদীছ নং : ১৫৩

হযরত 'উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার রাতের ওযিফা বা তার অংশবিশেষ আদায় না করেই ঘুমিয়ে যায়, তারপর ফজরের নামায ও যোহরের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়, তার জন্য লিখে দেওয়া হয় (এ পরিমাণ ছাওয়াব) যেন সে তা রাতেই পড়েছে। -মুসলিম.
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৪৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৩১৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৫৮১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৩৪৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৯৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২০; বায়হাকী, হাদীছ নং ৪২৩২)
مقدمة الامام النووي
15 - باب في المحافظة عَلَى الأعمال
قَالَ الله تَعَالَى: {أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ} [الحديد: 16]، وَقالَ تَعَالَى: {وَقَفَّيْنَا بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَآتَيْنَاهُ الأِنْجِيلَ وَجَعَلْنَا فِي قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَأْفَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلاَّ ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا} [الحديد: 27]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا} [النحل: 92]، وَقالَ تَعَالَى: {وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ} [الحجر: 99].
153 - وعن عمر بن الخطاب - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبهِ (2) مِنَ اللَّيلِ، أَوْ عَنْ شَيءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ مَا بَيْنَ صَلاةِ الفَجْرِ وَصَلاةِ الظُّهْرِ، كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيلِ». رواه مسلم. (3)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

نَامَ عَنْ حِزْبِهِ ঘুমিয়ে পড়ে হিয্ব আদায় না করে'। হিয্ব حِزْبِ অর্থ অংশ। পরিভাষায় হিয্ব বলা হয় কোনও ব্যক্তির ওই আমলকে, যা সে নিয়মিত করার জন্য নিজের উপর ধার্য করে নেয়। তা যিকর, তিলাওয়াত, নামায ইত্যাদি যে-কোনও আমলই হতে পারে। এরূপ আমলকে আমরা সাধারণত ওযিফা বলে থাকি। সে হিসেবেই আমরা হাদীছটির অর্থে 'ওযিফা' শব্দ ব্যবহার করেছি।

এ হাদীছে বোঝানো উদ্দেশ্য, কোনও ব্যক্তি রাতের বেলা নিয়মিতভাবে করার জন্য যে আমল নির্দিষ্ট করে নেয়, তার তো উচিত নিয়মিতভাবেই তা করা। অলসতার কারণে যাতে কখনও ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। এতে করে নিয়মিতভাবে তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা হতে থাকবে। কিন্তু কখনও যদি এমন হয়ে যায় যে, ওযরবশত সে তার ওযিফা আদায় করতে পারেনি, তখন কী করণীয়? ঘুমও একটি ওযর বটে। কাজেই কেউ যদি ঘুম থেকে জাগতে না পারে, ফলে ওযিফা আদায় করা না হয়, সে ওযিফা তাহাজ্জুদ বা তিলাওয়াত যা-ই হোক, তবে কি সে ছাওয়াব থেকে বঞ্চিত থাকবে? এ হাদীছ বলছে যে, এরূপ ক্ষেত্রেও ছাওয়াব হাসিলের উপায় আছে। সে যদি ফজরের নামাযের পর যোহরের নামাযের আগ পর্যন্ত যে-কোনও সময় তার ছুটে যাওয়া ওযিফা আদায় করে নেয়, তবে রাতের বেলা আদায় করলে যে ছাওয়াব লেখা হত সে পরিমাণ ছাওয়াবই তার আমলনামায় লেখা হবে। ধরে নেওয়া হবে যেন সে রাতেই তা আদায় করেছে।

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা কতই না মেহেরবান! রাতের নির্জন পরিবেশে বান্দার "ইবাদত-বন্দেগী তাঁর খুবই প্রিয়। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তা'আলার অকল্পনীয় নৈকট্য হাসিলে সক্ষম হয়। তাই তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাছে এ সময়ের ইবাদত- বন্দেগী প্রিয় করে তোলেন। ফলে তারা শেষরাতে আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে উঠে পড়ে এবং নামায ও তিলাওয়াতে রত হয়ে যায়। প্রতি রাতেই এটা তাদের সাধারণ নিয়ম। কিন্তু মানুষ বড় দুর্বল। কখনও কখনও ঘুমের চাপ বা অন্য কোনও ওযরবশত এ আমল ছুটে যায়। তখন তাদের বড় আফসোস হয়। আহা, আজকের ওযিফা ছুটে গেল! আজ আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়া গেল না। আমলনামায় নিয়মিত যে ছাওয়াব হত, আজ তো তা লেখা হবে না। মেহেরবান আল্লাহ বান্দার মনের এ কষ্ট নিবারণের জন্য দিনের বেলা কাযার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সমপরিমাণ আমল দিনের বেলা করলে ওই ক্ষতির প্রতিকার হয়ে যায়। কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, আক্ষেপের কারণে দ্বিগুণ ছাওয়াব দেওয়া হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মু'মিন বান্দার উচিত রাতের জন্য কোনও ওযিফা নির্ধারণ করে নেওয়া।

খ. কোনও ওযিফা নির্ধারণের পর তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অবশ্যকর্তব্য।

অলসতাবশত কখনও যাতে ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।

গ. কখনও কোনও ওযিফা ছুটে গেলে দিনের বেলা তার কাযা করে নেওয়া চাই, যদিও কাযা করা ওয়াজিব নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ১৫৩ | মুসলিম বাংলা