রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫০
ভূমিকা অধ্যায়
‘ইবাদতে মধ্যপন্থা প্রসঙ্গ।
হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাযি.-এর ‘ইবাদত-বন্দেগী ও ভারসাম্য প্রসঙ্গ
হাদীছ নং: ১৫০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানানো হল যে, আমি বলে থাকি- আল্লাহর কসম! আমি যতকাল জীবিত থাকি, অবশ্যই দিনে রোযা রাখব এবং রাতে নামায পড়ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, তুমিই কি এমন এমন কথা বল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গিত- অবশ্যই আমি তা বলেছি। তিনি বললেন, তুমি তা পারবে না। সুতরাং তুমি রোযা রাখবে, তারপর রোযা ছেড়ে দেবে। তুমি রাতে ঘুমাবেও এবং নামাযও পড়বে। আর প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখবে। কেননা প্রত্যেক নেকী দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়। এরূপ রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার মত হবে। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশির সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন রোযা রাখবে আর দু'দিন রাখবে না। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশির সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন রোযা রাখবে, একদিন রাখবে না। এটা দাউদ 'আলাইহিস সালামের রোযা এবং এটা সর্বাপেক্ষা ভারসাম্যপূর্ণ রোযা।
অপর এক বর্ণনায় আছে, এটা সর্বোত্তম রোযা। আমি বললাম, আমি তো এর চেয়ে আরও ভালোর সামর্থ্য রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এর চেয়ে ভালো কিছু নেই। (পরবর্তীকালে) হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'আমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তিন দিনের কথা বলেছিলেন, তা গ্রহণ করে নেওয়াই আমার কাছে আমার পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ অপেক্ষা প্রিয় হত।
অপর এক বর্ণণায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে কি খবর দেওয়া হয়নি যে, তুমি (নিয়মিতভাবে) দিনে রোযা রাখ ও রাতে নামায পড়? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, এমন করো না। তুমি রোযা রাখবে এবং রোযা ছাড়াও থাকবে। নামাযও পড়বে এবং ঘুমাবেও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে এবং তোমার উপর তোমার সাক্ষাৎকারীদেরও হক আছে। তোমার জন্য প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখাই যথেষ্ট। কেননা তোমার জন্য প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে রয়েছে দশগুণ ছাওয়াব। সুতরাং এটা সারা বছর রোযা রাখার মত। কিন্তু আমি নিজের প্রতি কঠোরতা করলাম, ফলে আমার প্রতিও কঠোরতা করা হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি নিজের ভেতর বিশেষ শক্তি অনুভব করছি। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নবী দাউদ 'আলাইহিস সালামের মত রোযা রাখ, তার বেশি নয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, দাউদের রোযা কেমন ছিল? তিনি বললেন, বছরের অর্ধেক। পরে হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি. যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলেন তখন (আক্ষেপ করে) বলতেন, আহা! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া অবকাশ যদি গ্রহণ করতাম!
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে কি খবর দেওয়া হয়নি যে, তুমি সারা বছর রোযা রাখ এবং রাতভর কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে এর দ্বারা কেবল কল্যাণ লাভই আমার উদ্দেশ্য। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নবী দাউদের রোযার মত রোযা রাখ। তিনি মানুষের মধ্যে সবচে' বেশি ইবাদতগুযার ছিলেন। আর তুমি পূর্ণ মাসে (এক খতম) কুরআন পড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা রাখি। তিনি বললেন, তবে প্রতি বিশ দিনে তা পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এরচে' বেশি সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তবে প্রতি দশ দিনে তা পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এরচে' বেশি সামর্থ্য রাখি। তবে প্রতি সাত দিনে তা পড়, এরচে' বেশি নয়। এভাবে আমি নিজের প্রতি কঠোরতা করলাম, ফলে আমার প্রতিও কঠোরতা করা হল। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, তুমি জান না হয়তো তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে। হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যা বলেছিলেন, আমি সেখানে পৌঁছে গেছি। সুতরাং যখন বার্ধক্যে পৌঁছলাম, তখন আমার আক্ষেপ হল- আহা! যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করতাম! অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমার প্রতি তোমার সন্তানেরও হক আছে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি সর্বদা রোযা রাখল সে রোযাই রাখল না। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন,
অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা'আলার কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় রোযা হল দাউদের রোযা এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে বেশি প্রিয় নামায হল দাউদের নামায। তিনি রাতের অর্ধেক পর্যন্ত ঘুমাতেন, তিন ভাগের এক ভাগ নামায পড়তেন, তারপর ছয় ভাগের এক ভাগ ঘুমাতেন, তিনি একদিন পরপর রোযা রাখতেন আর (রণক্ষেত্রে) শত্রুর সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না।
অপর এক বর্ণনায় আছে, আমার পিতা আমাকে এক সম্ভ্রান্ত মহিলার সঙ্গে বিবাহ দিলেন। তিনি নিজ পুত্রবধূর খোঁজখবর নিতেন এবং তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। সে তাঁকে বলত, তিনি বেশ ভালো লোক। এমন ভালো যে, আমি তাঁর কাছে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি কখনও আমার বিছানায় পা রাখেননি এবং আমার পর্দা সরিয়ে দেখেননি। তাঁর কাছে যখন এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হল, শেষে বিষয়টা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বল। পরে আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে রোযা রাখ? বললাম, প্রতিদিন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে কুরআন খতম কর? বললাম, প্রতি রাতে এক খতম। এভাবে পূর্বের অনুরূপ বর্ণনা দিলেন।
তিনি তাঁর পরিবারের কাউকে কুরআনের এক সপ্তমাংশ শোনাতেন, যা তিনি রাতে পড়ার ইচ্ছা করতেন, যাতে তাঁর জন্য রাতে তা পড়া সহজ হয়। আর যখন তিনি শক্তি সঞ্চয় করতে চাইতেন, তখন পরপর কয়েকদিন রোযা ছেড়ে দিতেন এবং সে দিনগুলো গুণে রাখতেন। তারপর সমসংখ্যক দিন রোযা রেখে নিতেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমলের যে অবস্থায় তিনি পৃথক হয়েছেন, তার কিছুমাত্র ছেড়ে দেওয়া তাঁর অপসন্দ ছিল।
এ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিই সহীহ। এর অধিকাংশই বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উভয় গ্রন্থেই আছে। অল্পকিছু আছে দুই গ্রন্থের কোনও একখানিতে।'
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৯৭৬, ৩৪১৮, ৫০৫২: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১১৫৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ২৪২৭: জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯৪৬: সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৩৮৯, ২৩৯২, ২৩৯৪: বায়হাকী, হাদীছ নং ৮৪৫১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৭৬১, ৬৭৬৩, ৭০৯৯; বাগাবী, হাদীছ নং ১৮০৮)
হাদীছ নং: ১৫০
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানানো হল যে, আমি বলে থাকি- আল্লাহর কসম! আমি যতকাল জীবিত থাকি, অবশ্যই দিনে রোযা রাখব এবং রাতে নামায পড়ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, তুমিই কি এমন এমন কথা বল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গিত- অবশ্যই আমি তা বলেছি। তিনি বললেন, তুমি তা পারবে না। সুতরাং তুমি রোযা রাখবে, তারপর রোযা ছেড়ে দেবে। তুমি রাতে ঘুমাবেও এবং নামাযও পড়বে। আর প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখবে। কেননা প্রত্যেক নেকী দশগুণ বৃদ্ধি করা হয়। এরূপ রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার মত হবে। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশির সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন রোযা রাখবে আর দু'দিন রাখবে না। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশির সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন রোযা রাখবে, একদিন রাখবে না। এটা দাউদ 'আলাইহিস সালামের রোযা এবং এটা সর্বাপেক্ষা ভারসাম্যপূর্ণ রোযা।
অপর এক বর্ণনায় আছে, এটা সর্বোত্তম রোযা। আমি বললাম, আমি তো এর চেয়ে আরও ভালোর সামর্থ্য রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এর চেয়ে ভালো কিছু নেই। (পরবর্তীকালে) হযরত আব্দুল্লাহ ইবন 'আমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তিন দিনের কথা বলেছিলেন, তা গ্রহণ করে নেওয়াই আমার কাছে আমার পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ অপেক্ষা প্রিয় হত।
অপর এক বর্ণণায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে কি খবর দেওয়া হয়নি যে, তুমি (নিয়মিতভাবে) দিনে রোযা রাখ ও রাতে নামায পড়? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, এমন করো না। তুমি রোযা রাখবে এবং রোযা ছাড়াও থাকবে। নামাযও পড়বে এবং ঘুমাবেও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে এবং তোমার উপর তোমার সাক্ষাৎকারীদেরও হক আছে। তোমার জন্য প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখাই যথেষ্ট। কেননা তোমার জন্য প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে রয়েছে দশগুণ ছাওয়াব। সুতরাং এটা সারা বছর রোযা রাখার মত। কিন্তু আমি নিজের প্রতি কঠোরতা করলাম, ফলে আমার প্রতিও কঠোরতা করা হল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি নিজের ভেতর বিশেষ শক্তি অনুভব করছি। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নবী দাউদ 'আলাইহিস সালামের মত রোযা রাখ, তার বেশি নয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, দাউদের রোযা কেমন ছিল? তিনি বললেন, বছরের অর্ধেক। পরে হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি. যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলেন তখন (আক্ষেপ করে) বলতেন, আহা! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া অবকাশ যদি গ্রহণ করতাম!
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমাকে কি খবর দেওয়া হয়নি যে, তুমি সারা বছর রোযা রাখ এবং রাতভর কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে এর দ্বারা কেবল কল্যাণ লাভই আমার উদ্দেশ্য। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নবী দাউদের রোযার মত রোযা রাখ। তিনি মানুষের মধ্যে সবচে' বেশি ইবাদতগুযার ছিলেন। আর তুমি পূর্ণ মাসে (এক খতম) কুরআন পড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা রাখি। তিনি বললেন, তবে প্রতি বিশ দিনে তা পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এরচে' বেশি সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তবে প্রতি দশ দিনে তা পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এরচে' বেশি সামর্থ্য রাখি। তবে প্রতি সাত দিনে তা পড়, এরচে' বেশি নয়। এভাবে আমি নিজের প্রতি কঠোরতা করলাম, ফলে আমার প্রতিও কঠোরতা করা হল। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, তুমি জান না হয়তো তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে। হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যা বলেছিলেন, আমি সেখানে পৌঁছে গেছি। সুতরাং যখন বার্ধক্যে পৌঁছলাম, তখন আমার আক্ষেপ হল- আহা! যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করতাম! অপর এক বর্ণনায় আছে, তোমার প্রতি তোমার সন্তানেরও হক আছে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি সর্বদা রোযা রাখল সে রোযাই রাখল না। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন,
অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা'আলার কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় রোযা হল দাউদের রোযা এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে বেশি প্রিয় নামায হল দাউদের নামায। তিনি রাতের অর্ধেক পর্যন্ত ঘুমাতেন, তিন ভাগের এক ভাগ নামায পড়তেন, তারপর ছয় ভাগের এক ভাগ ঘুমাতেন, তিনি একদিন পরপর রোযা রাখতেন আর (রণক্ষেত্রে) শত্রুর সম্মুখীন হলে পলায়ন করতেন না।
অপর এক বর্ণনায় আছে, আমার পিতা আমাকে এক সম্ভ্রান্ত মহিলার সঙ্গে বিবাহ দিলেন। তিনি নিজ পুত্রবধূর খোঁজখবর নিতেন এবং তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। সে তাঁকে বলত, তিনি বেশ ভালো লোক। এমন ভালো যে, আমি তাঁর কাছে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনি কখনও আমার বিছানায় পা রাখেননি এবং আমার পর্দা সরিয়ে দেখেননি। তাঁর কাছে যখন এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হল, শেষে বিষয়টা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বল। পরে আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে রোযা রাখ? বললাম, প্রতিদিন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে কুরআন খতম কর? বললাম, প্রতি রাতে এক খতম। এভাবে পূর্বের অনুরূপ বর্ণনা দিলেন।
তিনি তাঁর পরিবারের কাউকে কুরআনের এক সপ্তমাংশ শোনাতেন, যা তিনি রাতে পড়ার ইচ্ছা করতেন, যাতে তাঁর জন্য রাতে তা পড়া সহজ হয়। আর যখন তিনি শক্তি সঞ্চয় করতে চাইতেন, তখন পরপর কয়েকদিন রোযা ছেড়ে দিতেন এবং সে দিনগুলো গুণে রাখতেন। তারপর সমসংখ্যক দিন রোযা রেখে নিতেন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমলের যে অবস্থায় তিনি পৃথক হয়েছেন, তার কিছুমাত্র ছেড়ে দেওয়া তাঁর অপসন্দ ছিল।
এ বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটিই সহীহ। এর অধিকাংশই বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উভয় গ্রন্থেই আছে। অল্পকিছু আছে দুই গ্রন্থের কোনও একখানিতে।'
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৯৭৬, ৩৪১৮, ৫০৫২: সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১১৫৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ২৪২৭: জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯৪৬: সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৩৮৯, ২৩৯২, ২৩৯৪: বায়হাকী, হাদীছ নং ৮৪৫১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৭৬১, ৬৭৬৩, ৭০৯৯; বাগাবী, হাদীছ নং ১৮০৮)
مقدمة الامام النووي
14 - باب في الاقتصاد في العبادة
150 - وعن أَبي محمد عبدِ اللهِ بنِ عَمْرو بن العاصِ رضي الله عنهما، قَالَ: أُخْبرَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - أنِّي أقُولُ: وَاللهِ لأَصُومَنَّ النَّهَارَ، وَلأَقُومَنَّ اللَّيلَ مَا عِشْتُ. فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أنتَ الَّذِي تَقُولُ ذلِكَ؟» فَقُلْتُ لَهُ: قَدْ قُلْتُهُ بأبي أنْتَ وأمِّي يَا رسولَ الله. قَالَ: «فَإِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذلِكَ فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاثةَ أيَّامٍ، فإنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا وَذَلكَ مِثلُ صِيامِ الدَّهْرِ»، قُلْتُ: فَإِنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَومًا
[ص:69] وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ»، قُلْتُ: فَإنِّي أُطِيقُ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَومًا وَأفْطِرْ يَومًا فَذلِكَ صِيَامُ دَاوُد - صلى الله عليه وسلم - وَهُوَ أعْدَلُ الصيامِ».
وفي رواية: «هُوَ أفْضَلُ الصِّيامِ» فَقُلْتُ: فَإِنِّي أُطيقُ أفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «لا أفضَلَ مِنْ ذلِكَ»، وَلأنْ أكُونَ قَبِلْتُ الثَّلاثَةَ الأَيّامِ الَّتي قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - أحَبُّ إليَّ مِنْ أهْلي وَمَالي.
وفي رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيلَ؟» قُلْتُ: بَلَى، يَا رَسُول الله، قَالَ: «فَلاَ تَفْعَلْ: صُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ؛ فإنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِعَيْنَيكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْرِكَ (1) عَلَيْكَ حَقًّا، وَإنَّ بِحَسْبِكَ أَنْ تَصُومَ في كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أيَّامٍ، فإنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذلِكَ صِيَامُ الدَّهْر» فَشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُول الله، إنِّي أجِدُ قُوَّةً، قَالَ: «صُمْ صِيَامَ نَبيِّ الله دَاوُد وَلاَ تَزد عَلَيهِ» قُلْتُ: وَمَا كَانَ صِيَامُ دَاوُد؟ قَالَ: «نِصْفُ الدَّهْرِ» فَكَانَ عَبدُ الله يقول بَعدَمَا كَبِرَ: يَا لَيتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَة رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم.
وفي رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ الدَّهرَ، وَتَقْرَأُ القُرآنَ كُلَّ لَيْلَة؟» فقلت: بَلَى، يَا رَسُول الله، وَلَمْ أُرِدْ بذلِكَ إلاَّ الخَيرَ، قَالَ: «فَصُمْ صَومَ نَبيِّ اللهِ دَاوُد، فَإنَّهُ كَانَ أعْبَدَ النَّاسِ، وَاقْرَأ القُرْآنَ في كُلِّ شَهْر»، قُلْتُ: يَا نَبيَّ اللهِ، إنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ؟ قَالَ: «فاقرأه في كل عشرين» قُلْتُ: يَا نبي الله، إني أطيق أفضل من ذلِكَ؟ قَالَ: «فَاقْرَأهُ في كُلِّ عَشْر» قُلْتُ: يَا نبي اللهِ، إنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ؟ قَالَ: «فاقْرَأهُ في كُلِّ سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذلِكَ» فشدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ وَقالَ لي النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم: «إنَّكَ لا تَدرِي لَعَلَّكَ يَطُولُ بِكَ عُمُرٌ» قَالَ: فَصِرْتُ إِلَى الَّذِي قَالَ لي النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم. فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ أنِّي كُنْتُ قَبِلتُ رُخْصَةَ
نَبيِّ الله - صلى الله عليه وسلم.
وفي رواية: «وَإِنَّ لِوَلَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا».
وفي رواية: «لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ» ثلاثًا.
وفي رواية: «أَحَبُّ الصِيَامِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صِيَامُ دَاوُد، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صَلاةُ دَاوُدَ: كَانَ ينام نصف الليل، ويقوم ثلثه، وينام سدسه، وكان يصوم يومًا ويفطر يومًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاقَى».
وفي رواية قال: «أنْكَحَني أَبي امرَأةً ذَاتَ حَسَبٍ وَكَانَ يَتَعَاهَدُ كنَّتَهُ - أي: امْرَأَةَ وَلَدِهِ - فَيَسْأَلُهَا عَنْ بَعْلِهَا. فَتقُولُ لَهُ: نِعْمَ الرَّجُلُ مِنْ رَجُلٍ لَمْ يَطَأْ لَنَا فِرَاشًا، وَلَمْ يُفَتِّشْ لَنَا كَنَفًا (1) مُنْذُ أتَيْنَاهُ. فَلَمَّا طَالَ ذلِكَ عَلَيهِ ذَكَرَ ذلك للنَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «القِنِي بِهِ» فَلَقيتُهُ بَعد ذلك، فَقَالَ: «كَيْفَ تَصُومُ؟» قُلْتُ: كُلَّ يَومٍ، قَالَ: «وَكَيْفَ تَخْتِمُ؟» قُلْتُ: كُلَّ لَيْلَةٍ، وَذَكَرَ نَحْوَ مَا سَبَقَ، وَكَانَ يَقْرَأُ عَلَى بَعْضِ أهْلِهِ السُّبُعَ الَّذِي يَقْرَؤُهُ، يَعْرِضُهُ مِنَ النَّهَارِ ليَكُونَ أخفّ عَلَيهِ باللَّيلِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَتَقَوَّى أفْطَرَ أيَّامًا وَأحْصَى وَصَامَ مِثْلَهُنَّ كرَاهِيَةَ أَنْ يَترُكَ شَيئًا فَارَقَ عَلَيهِ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم.
كل هذِهِ الرواياتِ صحيحةٌ، مُعظمُها في الصحيحين، وقليل مِنْهَا في أحدِهِما. (2)
[ص:69] وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ»، قُلْتُ: فَإنِّي أُطِيقُ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَومًا وَأفْطِرْ يَومًا فَذلِكَ صِيَامُ دَاوُد - صلى الله عليه وسلم - وَهُوَ أعْدَلُ الصيامِ».
وفي رواية: «هُوَ أفْضَلُ الصِّيامِ» فَقُلْتُ: فَإِنِّي أُطيقُ أفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «لا أفضَلَ مِنْ ذلِكَ»، وَلأنْ أكُونَ قَبِلْتُ الثَّلاثَةَ الأَيّامِ الَّتي قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - أحَبُّ إليَّ مِنْ أهْلي وَمَالي.
وفي رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيلَ؟» قُلْتُ: بَلَى، يَا رَسُول الله، قَالَ: «فَلاَ تَفْعَلْ: صُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ؛ فإنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِعَيْنَيكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِزَوْرِكَ (1) عَلَيْكَ حَقًّا، وَإنَّ بِحَسْبِكَ أَنْ تَصُومَ في كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أيَّامٍ، فإنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذلِكَ صِيَامُ الدَّهْر» فَشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُول الله، إنِّي أجِدُ قُوَّةً، قَالَ: «صُمْ صِيَامَ نَبيِّ الله دَاوُد وَلاَ تَزد عَلَيهِ» قُلْتُ: وَمَا كَانَ صِيَامُ دَاوُد؟ قَالَ: «نِصْفُ الدَّهْرِ» فَكَانَ عَبدُ الله يقول بَعدَمَا كَبِرَ: يَا لَيتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَة رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم.
وفي رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ الدَّهرَ، وَتَقْرَأُ القُرآنَ كُلَّ لَيْلَة؟» فقلت: بَلَى، يَا رَسُول الله، وَلَمْ أُرِدْ بذلِكَ إلاَّ الخَيرَ، قَالَ: «فَصُمْ صَومَ نَبيِّ اللهِ دَاوُد، فَإنَّهُ كَانَ أعْبَدَ النَّاسِ، وَاقْرَأ القُرْآنَ في كُلِّ شَهْر»، قُلْتُ: يَا نَبيَّ اللهِ، إنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ؟ قَالَ: «فاقرأه في كل عشرين» قُلْتُ: يَا نبي الله، إني أطيق أفضل من ذلِكَ؟ قَالَ: «فَاقْرَأهُ في كُلِّ عَشْر» قُلْتُ: يَا نبي اللهِ، إنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ؟ قَالَ: «فاقْرَأهُ في كُلِّ سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذلِكَ» فشدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ وَقالَ لي النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم: «إنَّكَ لا تَدرِي لَعَلَّكَ يَطُولُ بِكَ عُمُرٌ» قَالَ: فَصِرْتُ إِلَى الَّذِي قَالَ لي النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم. فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ أنِّي كُنْتُ قَبِلتُ رُخْصَةَ
نَبيِّ الله - صلى الله عليه وسلم.
وفي رواية: «وَإِنَّ لِوَلَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا».
وفي رواية: «لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ» ثلاثًا.
وفي رواية: «أَحَبُّ الصِيَامِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صِيَامُ دَاوُد، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صَلاةُ دَاوُدَ: كَانَ ينام نصف الليل، ويقوم ثلثه، وينام سدسه، وكان يصوم يومًا ويفطر يومًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاقَى».
وفي رواية قال: «أنْكَحَني أَبي امرَأةً ذَاتَ حَسَبٍ وَكَانَ يَتَعَاهَدُ كنَّتَهُ - أي: امْرَأَةَ وَلَدِهِ - فَيَسْأَلُهَا عَنْ بَعْلِهَا. فَتقُولُ لَهُ: نِعْمَ الرَّجُلُ مِنْ رَجُلٍ لَمْ يَطَأْ لَنَا فِرَاشًا، وَلَمْ يُفَتِّشْ لَنَا كَنَفًا (1) مُنْذُ أتَيْنَاهُ. فَلَمَّا طَالَ ذلِكَ عَلَيهِ ذَكَرَ ذلك للنَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «القِنِي بِهِ» فَلَقيتُهُ بَعد ذلك، فَقَالَ: «كَيْفَ تَصُومُ؟» قُلْتُ: كُلَّ يَومٍ، قَالَ: «وَكَيْفَ تَخْتِمُ؟» قُلْتُ: كُلَّ لَيْلَةٍ، وَذَكَرَ نَحْوَ مَا سَبَقَ، وَكَانَ يَقْرَأُ عَلَى بَعْضِ أهْلِهِ السُّبُعَ الَّذِي يَقْرَؤُهُ، يَعْرِضُهُ مِنَ النَّهَارِ ليَكُونَ أخفّ عَلَيهِ باللَّيلِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَتَقَوَّى أفْطَرَ أيَّامًا وَأحْصَى وَصَامَ مِثْلَهُنَّ كرَاهِيَةَ أَنْ يَترُكَ شَيئًا فَارَقَ عَلَيهِ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم.
كل هذِهِ الرواياتِ صحيحةٌ، مُعظمُها في الصحيحين، وقليل مِنْهَا في أحدِهِما. (2)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর রাযি. সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে যারা খুব বেশি 'ইবাদতগুযার ছিলেন এবং দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্তিতে শীর্ষপর্যায়ের ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি মনে মনে অঙ্গিকার করেছিলেন, আমি যতদিন জীবিত থাকি প্রতিদিন রোযা রাখব ও প্রতিরাত জেগে জেগে নামায পড়ব। সুতরাং তিনি একটানা রোযা রাখতেন ও সারারাত নামায পড়তেন। নামাযে প্রত্যেক রাতে কুরআন মাজীদ খতম করতেন। ঘর-সংসারের কোনও খবর রাখতেন না এবং স্ত্রীর প্রতিও নজর দিতেন না। তাঁর পিতা হযরত আমর ইবনুল আস রাযি, নিজে দেখেশুনে তাঁকে বিবাহ করিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল অভিজাত খান্দানের লোক। মাঝেমধ্যে তাঁর পিতা হযরত 'আমর ইবনুল আস রাযি. পুত্রবধূর খোঁজ নিতেন এবং তার প্রতি তার স্বামীর আচরণ কেমন জানতে চাইতেন। স্ত্রীও ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও মার্জিত স্বভাবের। শ্বশুর যখন জিজ্ঞেস করতেন, তখন তিনি স্বামীর খুব প্রশংসা করতেন এবং অত্যন্ত মার্জিত ও আলঙ্করিক ভাষায় স্ত্রীর প্রতি তাঁর নির্লিপ্ততা ও দরবেশী অবস্থার কথা শ্বশুরকে জানাতেন।
হযরত আমর ইবনুল আস রাযি. অপেক্ষা করতে থাকলেন। তিনি হয়তো ভাবছিলেন পুত্রের এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্তু তাঁর অপেক্ষার দিন কেবল লম্বাই হতে থাকল। হযরত আব্দুল্লাহ রাযি.-এর কোনও পরিবর্তন নেই। পিতার মনে পেরেশানী দেখা দিল। এভাবে তার কতদিন চলবে! দিনের পর দিন রোযা রাখা, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটানো এবং এত কঠিন মুজাহাদার ধকল সে কতদিন সইবে? এতে স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের হকই কেবল নষ্ট হবে না; শরীর-স্বাস্থ্যও তো ভেঙে পড়বে। শেষপর্যন্ত তিনি এ বিষয়টা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোচরে দিলেন। তিনি তাঁকে জানালেন যে, তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ ইবাদত-বন্দেগীতে কী কঠোর সাধনা-মুজাহাদা করছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা শুনে হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি.-এর ইসলাহের প্রয়োজন বোধ করলেন। সুতরাং তিনি হযরত 'আমর ইবনুল আস রাযি.-কে বললেন যেন তাকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
হুকুম মত হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। প্রথমে তিনি তার সম্পর্কে যা-যা শুনেছেন তার উল্লেখপূর্বক বললেন, তুমি এরকম কর নাকি? তিনি তা স্বীকার করলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তো এটা পারবে না। এর ব্যাখ্যায় হাফেজ ইব্ন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, এর দ্বারা হয়তো তাঁর বর্তমান অবস্থায়ই না পারার কথা বোঝাচ্ছিলেন। অর্থাৎ তিনি ইবাদত-বন্দেগীতে যেমন বাড়াবাড়ি করছেন এবং এতে করে তাঁর যে কষ্ট হচ্ছে, তাতে এ আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন না এবং এর ফলে এরচে' গুরুত্বপূর্ণ আমল তাঁর করা হবে না। অথবা ভবিষ্যৎকালে না পারার কথা বোঝাচ্ছিলেন। অর্থাৎ এখন কিছুদিন পারলেও যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবে তখন তো এভাবে করতে পারবে না। তখন অনেক কষ্ট হবে। বাস্তবে তাই হয়েছিল। বৃদ্ধকালে এ আমল চালিয়ে নিতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই আফসোস করে বলছিলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যে অবকাশ দিয়েছিলেন তা যদি গ্রহণ করে নিতাম!
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে তাঁকে মাসে তিন দিন রোযা রাখতে বললেন এবং জানালেন যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক নেক আমলের বিনিময়ে দশগুণ ছাওয়াব দেন। ফলে এতে করে তোমার সারা বছর রোযা রাখার ছাওয়াব অর্জিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ এক আমলে যদি দশগুণ ছাওয়াব দেওয়া হয়, তবে একদিন রোযা রাখার দ্বারা দশদিন রোযা রাখার ছাওয়াব হবে। তিন দিন রাখলে ত্রিশ দিন তথা একমাস রোযা রাখার ছাওয়াব হবে। সুতরাং প্রত্যেক মাসে যদি তিনটি করে রোযা রাখা হয় আর এভাবে বারো মাস রাখা যায়, তবে যেন সারা বছরই রোযা রাখা হবে।
হযরত ‘আব্দুল্লাহ রাযি. বললেন, আমি এরচে'ও বেশি ছাওয়াব অর্জনের ক্ষমতা রাখি। অর্থাৎ একদিন রোযা রাখলে যদি দশ দিনের ছাওয়াব হয়, তবে কেবল তিন দিনেই কেন ক্ষান্ত হব? আমার শরীরে যখন শক্তি আছে তখন তো আমি আরও বেশি বেশি রোযা রেখে অনেক বেশি ছাওয়াব অর্জন করতে পারি! তিনি এমনিতেই ছাওয়াবের জন্য পাগলপারা ছিলেন। যখন জানলেন এক রোযায় দশ রোযার ছাওয়াব হবে, তখন হয়তো ভাবলেন তাহলে তো এক মাস রোযা রাখলে দশ মাসের ছাওয়াব হবে এবং এক বছর রাখলে দশ বছরের ছাওয়াব হবে। এভাবে সারা জীবন রোযা রাখলে দশ জীবন রোযা রাখার ছাওয়াব! শক্তি যখন আছে এটা ছাড়ি কেন! তাই বিপুল উৎসাহে বললেন, আমার তো ক্ষমতা আছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে প্রতি দুই দিন পর একদিন রোযা রাখবে। কিন্তু তিনি এবারও নাছোড়। শেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, একদিন পর একদিন রোযা রাখবে। এবং এর প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য ফযীলত জানালেন যে, এটা হযরত দাউদ 'আলাইহিস সালামের রোযা এবং এটা ভারসাম্যমান রোযা আর সে হিসেবে সর্বোত্তম রোযা।
ভারসাম্যমান এ কারণে যে, একদিন রোযা রাখার কারণে শরীরে যে ক্লান্তি ও দুর্বলতা আসবে, পরদিন পানাহার দ্বারা তা দূর হয়ে যাবে এবং শরীরে নতুন শক্তি সঞ্চয় হবে। ফলে পরদিন পূর্ণ উদ্যম ও সজীব দেহমন নিয়ে রোযা রাখা সম্ভব হবে। এভাবে জীবনভর পরম আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে রোযার আমল বজায় রাখা সম্ভব হবে।
এ ভারসাম্যপূর্ণ রোযা কেন সর্বোত্তম? সর্বোত্তম এ কারণে যে, সারা বছর একটানা রোযা রাখার ভেতর অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যেমন, এর দ্বারা কোনও ফরয হক নষ্ট হতে পারে। আর যে আমলের কারণে ফরয হক আদায় করা সম্ভব হয় না, সে আমল হারাম হয়ে যায়। অথবা কোনও মুস্তাহাব ও অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমল ছুটে যেতে পারে। আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমল ছেড়ে কম গুরুত্বপূর্ণটা ধরা পছন্দনীয় নয়। তাই তা করা মাকরূহ। আর যদি কোনও হক নাও ছোটে, তখনও একটানা রোযা এ কারণে পছন্দনীয় নয় যে, এতে করে রোযার এমন অভ্যাস গড়ে ওঠে যে, শেষপর্যন্ত রোযা রাখতে আর কোনও কষ্টই বোধ হয় না। বলাবাহুল্য, যে আমলে কিছুমাত্র কষ্টবোধ হয় না, তারচে' যে আমলে সামান্য হলেও কষ্টবোধ হয় তা উত্তম, যেহেতু তাতে নফসের বিরুদ্ধে কিছু না কিছু মুজাহাদা ও সংগ্রাম করতে হয়, যা কষ্টহীন আমলে করতে হয় না। এজন্যই একদিন পর একদিন রোযা রাখাকে সর্বোত্তম রোযা বলা হয়েছে। আর এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন 'আমর রাযি. যখন আরও বেশি রোযার অনুমতি দিতে পীড়াপীড়ি করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিলেন, এরচে' উত্তম কোনও রোযা নেই।
সারা বছর রোযা রাখা কেবল অনুত্তমই নয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে বলেছেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রোযা রাখে সে কোনও রোযাই রাখে না। অর্থাৎ এরকম রোযার মধ্যে যেহেতু বিভিন্ন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং এটা সুন্নতসম্মতও নয়, তাই এর প্রতি নিজ অসন্তুষ্টি ও অপ্রসন্নতা প্রকাশের জন্য বলেছেন যে, এটা যেন কোনও রোযাই নয়। বস্তুত যে কাজ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পছন্দ ও সুন্নতসম্মত নয়, তা করা না করার মতই বটে।
একদিন পর একদিন রোযা রাখাকে হযরত দাউদ 'আলাইহিস সালামের রোযা বলার পাশাপাশি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাও বলে দিয়েছেন যে, হযরত দাউদ ‘আলাইহিস সালাম সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতগুযার ছিলেন। তিনি রোযাও রাখতেন একদিন পরপর এবং রাতের নামাযও পড়তেন পরিমাণমত ঘুম রক্ষা করে। ফলে তাঁর শারীরিক শক্তি অক্ষুণ্ণ থাকত। আর তা অক্ষুণ্ণ থাকত বলেই তিনি অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করতে পারতেন। শত্রুর সম্মুখ থেকে পলায়ন করতেন না।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালামকে শ্রেষ্ঠতম ইবাদতগুযার বলা হয়েছে অন্য সকলের তুলনায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের তুলনায় নয়। কেননা এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ইবাদতগুযার। তাঁর জীবনচরিত ও হাদীছ গ্রন্থসমূহের বর্ণনা এর সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর চরিত্রে তাওয়াযু ও বিনয় প্রবল ছিল বলে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি বিভিন্ন নবীর এমনভাবে ফযীলত বয়ান করেছেন, যা দ্বারা ধারণা জন্মায় তাঁরা বুঝি তাঁরচেও শ্রেষ্ঠ ছিলেন। প্রকৃত বিষয় তা নয়। তিনি যে সকলের শ্রেষ্ঠ, আরও বহু দলীল-প্রমাণের পাশাপাশি এই তাওয়াযু ও বিনয়ও তার এক প্রকৃষ্ট দলীল।
এ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ রাযি.-কে বোঝাতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার হকের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন শরীরের হক, চোখের হক, স্ত্রীর হক ও সাক্ষাৎকারী বা মেহমানের হক।
শরীরের হক হল তার এতটুকু শক্তি বাকি রাখা, যাতে করণীয় আমল নিয়মিতভাবে করে যাওয়া সম্ভব হয়। অতিরিক্ত শ্রমসাধনা করলে শক্তিনাশ হয় ও শরীর ভেঙে পড়ে। ফলে আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয় না। সেইসাথে অন্যের হক আদায়ও বিঘ্নিত হয়।
চোখের হক হল পরিমাণমত ঘুমানো। যতটুকু ঘুম দরকার ততটুকু না ঘুমালে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
সাক্ষাৎপ্রার্থী বা অতিথির হক হল তার সেবাযত্ন করা, তাকে সঙ্গ দেওয়া এবং পানাহারে তার সঙ্গে শরীক হওয়া। মেহমানের সঙ্গে বসে খেলে মেহমান খেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। সে হিসেবে এটাও অতিথিসেবার অংশ।
স্ত্রীর হক তাকে সঙ্গ দেওয়া, তার সঙ্গে কিছুক্ষণ ঘনিষ্ঠ সময় কাটানো এবং তার ন্যায্য খোরপোষ ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করা।
সন্তানের হক হচ্ছে তার অন্নবস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি তাকে দীনের জরুরি তা'লীম দেওয়া ও ইসলামী আদবকায়দা শেখানো।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। যখন জানতে পারলেন তিনি প্রতিরাতে কুরআন খতম করেন, তখন নিষেধ করে দিলেন এবং প্রতি মাসে এক খতম পড়তে বললেন। এ ক্ষেত্রেও পীড়াপীড়ি করতে থাকলে শেষপর্যন্ত প্রতি সপ্তায় এক খতম পড়তে বললেন, এর বেশি পড়তে নিষেধ করে দিলেন। কেননা কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের কিছু আদব আছে। আদব সহকারে তিলাওয়াত করলেই তিলাওয়াতের পরিপূর্ণ নূর ও বরকত এবং প্রতিশ্রুত ছাওয়াব হাসিল হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হল তারতীলের সাথে পড়া। অর্থাৎ বিশুদ্ধতা রক্ষার পাশাপাশি ধীরস্থিরভাবে পড়া। সেইসঙ্গে তাদাব্বুরও কাম্য। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা কোন্ আয়াতে কী বলছেন সেদিকে লক্ষ করে গভীর অভিনিবেশের সাথে পাঠ করা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও ‘ইবাদত-বন্দেগীতে ভারসাম্য রক্ষার শিক্ষা লাভ হয়।
খ. কোনও নফল ইবাদত এত বেশি করা উচিত নয়, যা দ্বারা স্বাস্থ্যহানি ঘটা ও অন্যের হক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গ. পিতার কর্তব্য ছেলে-মেয়ে বিবাহের বয়সে উপনীত হলে নিজ উদ্যোগে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করা।
ঘ. পিতার এটাও কর্তব্য যে, বিবাহের পর তার ছেলে-মেয়ে স্ত্রী বা স্বামীর হক রক্ষায় কতটুকু যত্নবান তার খোঁজখবর নেবে।
ঙ. ছেলে-মেয়ের কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি নজরে আসলে পিতা তার সংশোধনের ব্যবস্থা নেবে। নিজে পারলে নিজেই করবে, অন্যথায় উপযুক্ত ব্যক্তির শরণাপন্ন হবে।
চ. স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর বদনাম না করা। তার কোনও ত্রুটিবিচ্যুতির কথা অভিভাবককে জানাতে হলে তা আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করে জানানো উচিত।
ছ. কুরআন তিলাওয়াতে তারতীল ও আদবের প্রতি লক্ষ রাখা উচিত। তাড়াহুড়া করে খতম করার পেছনে পড়া উচিত নয়।
জ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত দাউদ 'আলাইহিস সালামের অকুণ্ঠ প্রশংসা দ্বারা সম্মানী ব্যক্তিকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়ার শিক্ষা লাভ হয়।
ঝ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাওয়াযু ও বিনয় দ্বারা বিনয় নম্রতার গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়।
ঞ. প্রত্যেকের উচিত আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি হুকুকুল ইবাদ আদায়েও যত্নবান থাকা। যেমন নিজের হক, সন্তানের হক, পিতামাতার হক, স্ত্রীর হক, আত্মীয়স্বজনের হক, মেহমানের হক, প্রতিবেশীর হক ইত্যাদি।
হযরত আমর ইবনুল আস রাযি. অপেক্ষা করতে থাকলেন। তিনি হয়তো ভাবছিলেন পুত্রের এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। কিন্তু তাঁর অপেক্ষার দিন কেবল লম্বাই হতে থাকল। হযরত আব্দুল্লাহ রাযি.-এর কোনও পরিবর্তন নেই। পিতার মনে পেরেশানী দেখা দিল। এভাবে তার কতদিন চলবে! দিনের পর দিন রোযা রাখা, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটানো এবং এত কঠিন মুজাহাদার ধকল সে কতদিন সইবে? এতে স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের হকই কেবল নষ্ট হবে না; শরীর-স্বাস্থ্যও তো ভেঙে পড়বে। শেষপর্যন্ত তিনি এ বিষয়টা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোচরে দিলেন। তিনি তাঁকে জানালেন যে, তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ ইবাদত-বন্দেগীতে কী কঠোর সাধনা-মুজাহাদা করছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা শুনে হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি.-এর ইসলাহের প্রয়োজন বোধ করলেন। সুতরাং তিনি হযরত 'আমর ইবনুল আস রাযি.-কে বললেন যেন তাকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
হুকুম মত হযরত 'আব্দুল্লাহ রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। প্রথমে তিনি তার সম্পর্কে যা-যা শুনেছেন তার উল্লেখপূর্বক বললেন, তুমি এরকম কর নাকি? তিনি তা স্বীকার করলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তো এটা পারবে না। এর ব্যাখ্যায় হাফেজ ইব্ন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, এর দ্বারা হয়তো তাঁর বর্তমান অবস্থায়ই না পারার কথা বোঝাচ্ছিলেন। অর্থাৎ তিনি ইবাদত-বন্দেগীতে যেমন বাড়াবাড়ি করছেন এবং এতে করে তাঁর যে কষ্ট হচ্ছে, তাতে এ আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন না এবং এর ফলে এরচে' গুরুত্বপূর্ণ আমল তাঁর করা হবে না। অথবা ভবিষ্যৎকালে না পারার কথা বোঝাচ্ছিলেন। অর্থাৎ এখন কিছুদিন পারলেও যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবে তখন তো এভাবে করতে পারবে না। তখন অনেক কষ্ট হবে। বাস্তবে তাই হয়েছিল। বৃদ্ধকালে এ আমল চালিয়ে নিতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই আফসোস করে বলছিলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যে অবকাশ দিয়েছিলেন তা যদি গ্রহণ করে নিতাম!
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে তাঁকে মাসে তিন দিন রোযা রাখতে বললেন এবং জানালেন যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক নেক আমলের বিনিময়ে দশগুণ ছাওয়াব দেন। ফলে এতে করে তোমার সারা বছর রোযা রাখার ছাওয়াব অর্জিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ এক আমলে যদি দশগুণ ছাওয়াব দেওয়া হয়, তবে একদিন রোযা রাখার দ্বারা দশদিন রোযা রাখার ছাওয়াব হবে। তিন দিন রাখলে ত্রিশ দিন তথা একমাস রোযা রাখার ছাওয়াব হবে। সুতরাং প্রত্যেক মাসে যদি তিনটি করে রোযা রাখা হয় আর এভাবে বারো মাস রাখা যায়, তবে যেন সারা বছরই রোযা রাখা হবে।
হযরত ‘আব্দুল্লাহ রাযি. বললেন, আমি এরচে'ও বেশি ছাওয়াব অর্জনের ক্ষমতা রাখি। অর্থাৎ একদিন রোযা রাখলে যদি দশ দিনের ছাওয়াব হয়, তবে কেবল তিন দিনেই কেন ক্ষান্ত হব? আমার শরীরে যখন শক্তি আছে তখন তো আমি আরও বেশি বেশি রোযা রেখে অনেক বেশি ছাওয়াব অর্জন করতে পারি! তিনি এমনিতেই ছাওয়াবের জন্য পাগলপারা ছিলেন। যখন জানলেন এক রোযায় দশ রোযার ছাওয়াব হবে, তখন হয়তো ভাবলেন তাহলে তো এক মাস রোযা রাখলে দশ মাসের ছাওয়াব হবে এবং এক বছর রাখলে দশ বছরের ছাওয়াব হবে। এভাবে সারা জীবন রোযা রাখলে দশ জীবন রোযা রাখার ছাওয়াব! শক্তি যখন আছে এটা ছাড়ি কেন! তাই বিপুল উৎসাহে বললেন, আমার তো ক্ষমতা আছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে প্রতি দুই দিন পর একদিন রোযা রাখবে। কিন্তু তিনি এবারও নাছোড়। শেষে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, একদিন পর একদিন রোযা রাখবে। এবং এর প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য ফযীলত জানালেন যে, এটা হযরত দাউদ 'আলাইহিস সালামের রোযা এবং এটা ভারসাম্যমান রোযা আর সে হিসেবে সর্বোত্তম রোযা।
ভারসাম্যমান এ কারণে যে, একদিন রোযা রাখার কারণে শরীরে যে ক্লান্তি ও দুর্বলতা আসবে, পরদিন পানাহার দ্বারা তা দূর হয়ে যাবে এবং শরীরে নতুন শক্তি সঞ্চয় হবে। ফলে পরদিন পূর্ণ উদ্যম ও সজীব দেহমন নিয়ে রোযা রাখা সম্ভব হবে। এভাবে জীবনভর পরম আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে রোযার আমল বজায় রাখা সম্ভব হবে।
এ ভারসাম্যপূর্ণ রোযা কেন সর্বোত্তম? সর্বোত্তম এ কারণে যে, সারা বছর একটানা রোযা রাখার ভেতর অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যেমন, এর দ্বারা কোনও ফরয হক নষ্ট হতে পারে। আর যে আমলের কারণে ফরয হক আদায় করা সম্ভব হয় না, সে আমল হারাম হয়ে যায়। অথবা কোনও মুস্তাহাব ও অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমল ছুটে যেতে পারে। আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমল ছেড়ে কম গুরুত্বপূর্ণটা ধরা পছন্দনীয় নয়। তাই তা করা মাকরূহ। আর যদি কোনও হক নাও ছোটে, তখনও একটানা রোযা এ কারণে পছন্দনীয় নয় যে, এতে করে রোযার এমন অভ্যাস গড়ে ওঠে যে, শেষপর্যন্ত রোযা রাখতে আর কোনও কষ্টই বোধ হয় না। বলাবাহুল্য, যে আমলে কিছুমাত্র কষ্টবোধ হয় না, তারচে' যে আমলে সামান্য হলেও কষ্টবোধ হয় তা উত্তম, যেহেতু তাতে নফসের বিরুদ্ধে কিছু না কিছু মুজাহাদা ও সংগ্রাম করতে হয়, যা কষ্টহীন আমলে করতে হয় না। এজন্যই একদিন পর একদিন রোযা রাখাকে সর্বোত্তম রোযা বলা হয়েছে। আর এ কারণেই হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন 'আমর রাযি. যখন আরও বেশি রোযার অনুমতি দিতে পীড়াপীড়ি করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিলেন, এরচে' উত্তম কোনও রোযা নেই।
সারা বছর রোযা রাখা কেবল অনুত্তমই নয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে বলেছেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রোযা রাখে সে কোনও রোযাই রাখে না। অর্থাৎ এরকম রোযার মধ্যে যেহেতু বিভিন্ন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এবং এটা সুন্নতসম্মতও নয়, তাই এর প্রতি নিজ অসন্তুষ্টি ও অপ্রসন্নতা প্রকাশের জন্য বলেছেন যে, এটা যেন কোনও রোযাই নয়। বস্তুত যে কাজ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের পছন্দ ও সুন্নতসম্মত নয়, তা করা না করার মতই বটে।
একদিন পর একদিন রোযা রাখাকে হযরত দাউদ 'আলাইহিস সালামের রোযা বলার পাশাপাশি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাও বলে দিয়েছেন যে, হযরত দাউদ ‘আলাইহিস সালাম সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতগুযার ছিলেন। তিনি রোযাও রাখতেন একদিন পরপর এবং রাতের নামাযও পড়তেন পরিমাণমত ঘুম রক্ষা করে। ফলে তাঁর শারীরিক শক্তি অক্ষুণ্ণ থাকত। আর তা অক্ষুণ্ণ থাকত বলেই তিনি অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করতে পারতেন। শত্রুর সম্মুখ থেকে পলায়ন করতেন না।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালামকে শ্রেষ্ঠতম ইবাদতগুযার বলা হয়েছে অন্য সকলের তুলনায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের তুলনায় নয়। কেননা এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ইবাদতগুযার। তাঁর জীবনচরিত ও হাদীছ গ্রন্থসমূহের বর্ণনা এর সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর চরিত্রে তাওয়াযু ও বিনয় প্রবল ছিল বলে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি বিভিন্ন নবীর এমনভাবে ফযীলত বয়ান করেছেন, যা দ্বারা ধারণা জন্মায় তাঁরা বুঝি তাঁরচেও শ্রেষ্ঠ ছিলেন। প্রকৃত বিষয় তা নয়। তিনি যে সকলের শ্রেষ্ঠ, আরও বহু দলীল-প্রমাণের পাশাপাশি এই তাওয়াযু ও বিনয়ও তার এক প্রকৃষ্ট দলীল।
এ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আব্দুল্লাহ রাযি.-কে বোঝাতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার হকের কথা উল্লেখ করেছেন, যেমন শরীরের হক, চোখের হক, স্ত্রীর হক ও সাক্ষাৎকারী বা মেহমানের হক।
শরীরের হক হল তার এতটুকু শক্তি বাকি রাখা, যাতে করণীয় আমল নিয়মিতভাবে করে যাওয়া সম্ভব হয়। অতিরিক্ত শ্রমসাধনা করলে শক্তিনাশ হয় ও শরীর ভেঙে পড়ে। ফলে আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয় না। সেইসাথে অন্যের হক আদায়ও বিঘ্নিত হয়।
চোখের হক হল পরিমাণমত ঘুমানো। যতটুকু ঘুম দরকার ততটুকু না ঘুমালে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়।
সাক্ষাৎপ্রার্থী বা অতিথির হক হল তার সেবাযত্ন করা, তাকে সঙ্গ দেওয়া এবং পানাহারে তার সঙ্গে শরীক হওয়া। মেহমানের সঙ্গে বসে খেলে মেহমান খেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। সে হিসেবে এটাও অতিথিসেবার অংশ।
স্ত্রীর হক তাকে সঙ্গ দেওয়া, তার সঙ্গে কিছুক্ষণ ঘনিষ্ঠ সময় কাটানো এবং তার ন্যায্য খোরপোষ ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করা।
সন্তানের হক হচ্ছে তার অন্নবস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি তাকে দীনের জরুরি তা'লীম দেওয়া ও ইসলামী আদবকায়দা শেখানো।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। যখন জানতে পারলেন তিনি প্রতিরাতে কুরআন খতম করেন, তখন নিষেধ করে দিলেন এবং প্রতি মাসে এক খতম পড়তে বললেন। এ ক্ষেত্রেও পীড়াপীড়ি করতে থাকলে শেষপর্যন্ত প্রতি সপ্তায় এক খতম পড়তে বললেন, এর বেশি পড়তে নিষেধ করে দিলেন। কেননা কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের কিছু আদব আছে। আদব সহকারে তিলাওয়াত করলেই তিলাওয়াতের পরিপূর্ণ নূর ও বরকত এবং প্রতিশ্রুত ছাওয়াব হাসিল হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হল তারতীলের সাথে পড়া। অর্থাৎ বিশুদ্ধতা রক্ষার পাশাপাশি ধীরস্থিরভাবে পড়া। সেইসঙ্গে তাদাব্বুরও কাম্য। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা কোন্ আয়াতে কী বলছেন সেদিকে লক্ষ করে গভীর অভিনিবেশের সাথে পাঠ করা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারাও ‘ইবাদত-বন্দেগীতে ভারসাম্য রক্ষার শিক্ষা লাভ হয়।
খ. কোনও নফল ইবাদত এত বেশি করা উচিত নয়, যা দ্বারা স্বাস্থ্যহানি ঘটা ও অন্যের হক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গ. পিতার কর্তব্য ছেলে-মেয়ে বিবাহের বয়সে উপনীত হলে নিজ উদ্যোগে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করা।
ঘ. পিতার এটাও কর্তব্য যে, বিবাহের পর তার ছেলে-মেয়ে স্ত্রী বা স্বামীর হক রক্ষায় কতটুকু যত্নবান তার খোঁজখবর নেবে।
ঙ. ছেলে-মেয়ের কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি নজরে আসলে পিতা তার সংশোধনের ব্যবস্থা নেবে। নিজে পারলে নিজেই করবে, অন্যথায় উপযুক্ত ব্যক্তির শরণাপন্ন হবে।
চ. স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর বদনাম না করা। তার কোনও ত্রুটিবিচ্যুতির কথা অভিভাবককে জানাতে হলে তা আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করে জানানো উচিত।
ছ. কুরআন তিলাওয়াতে তারতীল ও আদবের প্রতি লক্ষ রাখা উচিত। তাড়াহুড়া করে খতম করার পেছনে পড়া উচিত নয়।
জ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত দাউদ 'আলাইহিস সালামের অকুণ্ঠ প্রশংসা দ্বারা সম্মানী ব্যক্তিকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়ার শিক্ষা লাভ হয়।
ঝ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাওয়াযু ও বিনয় দ্বারা বিনয় নম্রতার গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়।
ঞ. প্রত্যেকের উচিত আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি হুকুকুল ইবাদ আদায়েও যত্নবান থাকা। যেমন নিজের হক, সন্তানের হক, পিতামাতার হক, স্ত্রীর হক, আত্মীয়স্বজনের হক, মেহমানের হক, প্রতিবেশীর হক ইত্যাদি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)