রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১২০
ভূমিকা অধ্যায়
সৎকর্মের বহুবিধ পন্থা।
গরীবের জন্য সদাকার ছাওয়াব অর্জন এবং মুবাহ কাজকে ছাওয়াবের কাজে পরিণত করার উপায়
হাদীছ নং: ১২০
হযরত আবূ যার রাযি. থেকে আরও বর্ণিত, একদল লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিত্তশালীরা সমস্ত ছাওয়াব নিয়ে গেল। তারা নামায পড়ে, যেমন আমরা নামায পড়ি। তারা রোযা রাখে, যেমন আমরা রোযা রাখি। তদুপরি তারা তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ দান-সদাকা করে (যা আমরা করতে পারি না)। তিনি বললেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন কিছু রাখেননি, যা তোমরা সদাকা করতে পার? নিশ্চয়ই প্রতিটি তাসবীহের বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। প্রতিটি তাকবীরের বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। প্রতিটি তাহমীদের (আলহামদুলিল্লাহ বলার) বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। প্রতিটি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা)-এর বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়ার) আছে। একবার সৎকাজের আদেশ করার বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। একবার অসৎকাজে নিষেধ করার বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে এবং তোমাদের একেকজনের স্ত্রী সহবাসে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ তার যৌনচাহিদা পূরণ করলে তাতেও ছাওয়াব হবে? তিনি বললেন, আচ্ছা বল তো, যদি তা হারাম উপায়ে চরিতার্থ করত তবে তার গুনাহ হত কি না? তদ্রূপ যদি সে তা হালাল পন্থায় চরিতার্থ করে, তবে তার ছাওয়াব হবে বৈ কি।-মুসলিম'
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০৬)
হাদীছ নং: ১২০
হযরত আবূ যার রাযি. থেকে আরও বর্ণিত, একদল লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিত্তশালীরা সমস্ত ছাওয়াব নিয়ে গেল। তারা নামায পড়ে, যেমন আমরা নামায পড়ি। তারা রোযা রাখে, যেমন আমরা রোযা রাখি। তদুপরি তারা তাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ দান-সদাকা করে (যা আমরা করতে পারি না)। তিনি বললেন, আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন কিছু রাখেননি, যা তোমরা সদাকা করতে পার? নিশ্চয়ই প্রতিটি তাসবীহের বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। প্রতিটি তাকবীরের বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। প্রতিটি তাহমীদের (আলহামদুলিল্লাহ বলার) বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। প্রতিটি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা)-এর বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়ার) আছে। একবার সৎকাজের আদেশ করার বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। একবার অসৎকাজে নিষেধ করার বিনিময়ে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে এবং তোমাদের একেকজনের স্ত্রী সহবাসে তোমাদের জন্য সদাকা (-এর ছাওয়াব) আছে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ তার যৌনচাহিদা পূরণ করলে তাতেও ছাওয়াব হবে? তিনি বললেন, আচ্ছা বল তো, যদি তা হারাম উপায়ে চরিতার্থ করত তবে তার গুনাহ হত কি না? তদ্রূপ যদি সে তা হালাল পন্থায় চরিতার্থ করে, তবে তার ছাওয়াব হবে বৈ কি।-মুসলিম'
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০০৬)
مقدمة الامام النووي
13 - باب في بيان كثرة طرق الخير
120 - الرابع: عَنْهُ: أنَّ ناسًا قالوا: يَا رَسُولَ الله، ذَهَبَ أهلُ الدُّثُور بالأُجُورِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ، قَالَ: «أَوَلَيسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ مَا تَصَدَّقُونَ بِهِ: إنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقةً، وَكُلِّ تَكبيرَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَحمِيدَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةً، وَأمْرٌ بالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وفي بُضْعِ (1) أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ» قالوا: يَا رسولَ اللهِ، أيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ: «أَرَأَيتُمْ لَوْ وَضَعَهَا في حَرامٍ أَكَانَ عَلَيهِ وِزرٌ؟ فكذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا في الحَلالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ». رواه مسلم. (2)
«الدُّثُورُ» بالثاء المثلثة: الأموال وَاحِدُهَا: دثْر.
«الدُّثُورُ» بالثاء المثلثة: الأموال وَاحِدُهَا: دثْر.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা সাহাবায়ে কিরামের ছাওয়াব ও পুণ্যার্জনের কী তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তা অনুমান করা যায়। তখন গরীবগণ পুণ্যার্জনের সকল ক্ষেত্রে ধনীদের পাশাপাশি ছিল। কিন্তু ধনীগণ দান-সদাকার মাধ্যমে যে ছাওয়াব অর্জন করতেন তা করতে না পারার কারণে গরীব সাহাবীদের মনে আক্ষেপ ছিল। এ হাদীছে তাঁরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সে আক্ষেপের কথাই প্রকাশ করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন কিভাবে তাঁরা তাঁদের এ কমতিটুকু পূরণ করতে পারেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরীব সাহাবীদের সে আক্ষেপের কদর করেন এবং মমতাভরে তাদেরকে উপায় বাতলে দেন, যা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
এ হাদীছেও তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদিকে সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর পথে দানখয়রাত করলে যে ছাওয়াব পাওয়া যায়, এর মাধ্যমেও তেমনি ছাওয়াব পাওয়া যায়। কাজেই যাদের বেশি টাকাপয়সা নেই, সেই গরীবগণ বেশি বেশি তাসবীহ-তাহলীল ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে দান-সদাকার দ্বারা পুণ্য অর্জন করতে না পারার প্রতিকার করতে পারে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে গরীব সাহাবীদেরকে সে পথই দেখিয়েছেন।
বলা হয়েছে স্ত্রী সহবাসেও সদাকার ছাওয়াব হয়। এটা প্রমাণ করে সহীহ নিয়ত দ্বারা মুবাহ কাজও 'ইবাদতে পরিণত হয়। স্ত্রী সহবাসে যদি স্ত্রীর হক আদায় করা, নিজ চরিত্রের হেফাজত করা, স্ত্রীর চরিত্রের হেফাজত করা, তাদের উভয়ের নজরের হেফাজত করা এবং সুসন্তান কামনা করার নিয়ত থাকে, তবে এটা কেবল একটা পার্থিব কাজ হিসেবেই থেকে যায় না; বরং 'ইবাদতের মর্যাদা লাভ করে। এই একই কথা পানাহার করা, হাট-বাজারে যাওয়া, বেচাকেনা করা, চাষাবাদ করা এমনকি বিশ্রাম করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইখলাস ও সহীহ নিয়তের দ্বারা যে-কোনও পার্থিব কাজ, যদি তা শরী'আতসম্মত পন্থায় করা হয়, তবে ‘ইবাদতে পরিণত হয়ে যায় এবং তার বিনিময়ে প্রভূত ছাওয়াব অর্জন করা যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় সাহাবায়ে কিরামের অন্তরে ছাওয়াব হাসিলের আকাঙ্ক্ষা কত তীব্র ছিল। অনুরূপ আকাঙ্ক্ষা যাতে আমাদের অন্তরেও এসে যায়, আমাদের উচিত সে উপায় খোঁজা।
খ. গরীবদের উচিত দান-সদাকা করতে না পারার কারণে আক্ষেপ না করে যিকর ও তিলাওয়াত দ্বারা তার প্রতিকারে সচেষ্ট থাকা।
গ. যে-কোনও মুবাহ কাজ ইখলাস ও নেক নিয়তের সাথে করা উচিত। তাতেও "ইবাদতের ছাওয়াব হবে।
এ হাদীছেও তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদিকে সদাকা সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর পথে দানখয়রাত করলে যে ছাওয়াব পাওয়া যায়, এর মাধ্যমেও তেমনি ছাওয়াব পাওয়া যায়। কাজেই যাদের বেশি টাকাপয়সা নেই, সেই গরীবগণ বেশি বেশি তাসবীহ-তাহলীল ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে দান-সদাকার দ্বারা পুণ্য অর্জন করতে না পারার প্রতিকার করতে পারে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছে গরীব সাহাবীদেরকে সে পথই দেখিয়েছেন।
বলা হয়েছে স্ত্রী সহবাসেও সদাকার ছাওয়াব হয়। এটা প্রমাণ করে সহীহ নিয়ত দ্বারা মুবাহ কাজও 'ইবাদতে পরিণত হয়। স্ত্রী সহবাসে যদি স্ত্রীর হক আদায় করা, নিজ চরিত্রের হেফাজত করা, স্ত্রীর চরিত্রের হেফাজত করা, তাদের উভয়ের নজরের হেফাজত করা এবং সুসন্তান কামনা করার নিয়ত থাকে, তবে এটা কেবল একটা পার্থিব কাজ হিসেবেই থেকে যায় না; বরং 'ইবাদতের মর্যাদা লাভ করে। এই একই কথা পানাহার করা, হাট-বাজারে যাওয়া, বেচাকেনা করা, চাষাবাদ করা এমনকি বিশ্রাম করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইখলাস ও সহীহ নিয়তের দ্বারা যে-কোনও পার্থিব কাজ, যদি তা শরী'আতসম্মত পন্থায় করা হয়, তবে ‘ইবাদতে পরিণত হয়ে যায় এবং তার বিনিময়ে প্রভূত ছাওয়াব অর্জন করা যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায় সাহাবায়ে কিরামের অন্তরে ছাওয়াব হাসিলের আকাঙ্ক্ষা কত তীব্র ছিল। অনুরূপ আকাঙ্ক্ষা যাতে আমাদের অন্তরেও এসে যায়, আমাদের উচিত সে উপায় খোঁজা।
খ. গরীবদের উচিত দান-সদাকা করতে না পারার কারণে আক্ষেপ না করে যিকর ও তিলাওয়াত দ্বারা তার প্রতিকারে সচেষ্ট থাকা।
গ. যে-কোনও মুবাহ কাজ ইখলাস ও নেক নিয়তের সাথে করা উচিত। তাতেও "ইবাদতের ছাওয়াব হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
বর্ণনাকারী: