রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ১১৭
ভূমিকা অধ্যায়
সৎকর্মের বহুবিধ পন্থা

ইসলামে মৌলিক ও অবশ্যপালনীয় বিধানাবলি ছাড়াও ঐচ্ছিক এমন বহু কাজ আছে, যা করার দ্বারা বিপুল ছাওয়াব অর্জন করা যায়। বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলা বড়ই মেহেরবান। তিনি তার জন্য ছাওয়াব অর্জনের বহুবিধ পন্থা খোলা রেখেছেন। আখিরাতে মুক্তি ও সফলতা লাভ করতে হলে বান্দার অনেক অনেক ছাওয়াব দরকার। পাপের বিপরীতে যার পুণ্য বেশি হবে, মুক্তি কেবল সেই পাবে। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমাদের অনেক পাপ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বেশি বেশি পুণ্যার্জনের পথ যদি খোলা না থাকে, তবে মুক্তি কিভাবে সম্ভব? তাই দয়াময় আল্লাহ হাজারও রকম সৎকাজের নির্দেশনা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন। কুরআন ও হাদীছে আছে তার সুদীর্ঘ তালিকা। ছাওয়াব অর্জন করা যায় ঘরে-বাইরে সর্বাবস্থায়। ওঠাবসা ও চলাফেরাকালেও অতি সহজে পুণ্যার্জন সম্ভব। কথায় ও কাজে পুণ্যার্জনের কত বিচিত্র ব্যবস্থাই না ইসলাম আমাদের দিয়েছে!
এতসব বিচিত্র ব্যবস্থা আমাদের পক্ষে কত বড়ই না রহমত। একটি কাজ কঠিন। বোধ হলে আরেকটি কর। এ কাজের ক্ষমতা তোমার না থাকলে ওই কাজ কর। অর্থব্যয়ের সামর্থ্য না থাকলে শ্রম ব্যয় কর। কাজ করতে না চাইলে কথা বল- মুখে যিকর কর। কোনওরকম সংকীর্ণতা তোমার সামনে নেই। তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই পুণ্যার্জনের পথ তোমার সামনে খোলা রয়েছে। তোমার চাওয়াটাই শুধু দরকার। দরকার একটুখানি ইচ্ছা। একটুখানি ইচ্ছা কর আর মুঠোয় মুঠোয় ছাওয়াব কামাই করে নাও।
মুঠোয় মুঠোয় ছাওয়াব কামাই করার উপায় সম্পর্কে পবিত্র হাদীছের সুদীর্ঘ তালিকা আছে। তা থেকে ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে কয়েকটি হাদীছ চয়ন করেছেন। তার আগে উদ্ধৃত করেছেন পুণ্যার্জনের উৎসাহদায়ী কয়েকটি আয়াত। আমরা প্রথমে আয়াতসমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দান করব। তারপর মনোযোগের সাথে হাদীছসমূহ পড়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

সৎকর্মের প্রতি উৎসাহদায়ী কয়েকটি আয়াত

এক নং আয়াত

وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيْمٌ

অর্থ : আর তোমরা কল্যাণকর যে কাজই কর না কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ
অবগত।সূরা বাকারা, আয়াত ২১৫

দুই নং আয়াত

وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمهُ اللَّهُ

অর্থ : তোমরা যা-কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ তা জানেন।সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৭

ব্যাখ্যা

এ আয়াত দু'টিতে আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে নেক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন যে, তোমরা যা-কিছুই ভালো কাজ কর, তা আল্লাহর পথে দান-সদাকা হোক বা শারীরিক ইবাদত-বন্দেগী, সবই আল্লাহ তা'আলা জানেন। এর কোনও কিছুই বৃথা যাবে না। আখিরাতে তিনি তোমাদেরকে এর পুরোপুরি প্রতিদান দেবেন। সুতরাং তোমরা কেবল ফরয আদায় করেই ক্ষান্ত হয়ো না, যতটা সম্ভব নফল ইবাদত-বন্দেগীও করতে থাক।
আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এ আয়াত এক উৎসাহ বাণী। এতে আল্লাহ তা'আলা আমাদের ইঙ্গিত করছেন যে, নেক কাজ নির্দিষ্ট কয়েকটি মাত্র নয়। শরী'আতসম্মত পন্থায় আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য যা-কিছুই করা হবে তা-ই নেক কাজ বলে গণ্য। এরকম কাজ আছে হাজারও। তুমি তার মধ্য থেকে যা-ই কর না কেন তা আল্লাহর অগোচর থাকে না। আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন। কাজেই তার কোনওটি বৃথা যাবে না। তিনি তার পুরোপুরি পুরস্কার তোমাদের অবশ্যই দেবেন। কাজেই কোনও সৎকর্মকে তুচ্ছ মনে করো না। আল্লাহ তা'আলাকে রাজিখুশি করার জন্য করলে ছোট্ট একটি কাজেরও অপরিমিত প্রতিদান তুমি পেতে পার। কাজেই মনভরা আশা রেখে যখন যে সৎকর্ম করার সুযোগ হয় করতে থাক। আখিরাতে তার পূর্ণ প্রতিদান অবশ্যই পাবে।
পরোক্ষভাবে এ আয়াত দু'টিতে একটা সতর্কবাণীও আছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ জানেন বান্দা কী নেক কাজ করছে। আল্লাহ যেমন কাজের প্রকাশ্য দিক জানেন, তেমনি জানেন গোপন অবস্থাও। সুতরাং আমল করতে হবে কেবলই আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য, দুনিয়াবী কোনও উদ্দেশ্যে নয়। এমনিভাবে আমল করতে হবে সুন্দরভাবে ও সুচারুরূপে। দানখয়রাতও করতে হবে নিজের পক্ষে যা সম্ভব সেই পরিমাণ, কোনওরূপে দায়সারাভাবে নয়। এবং দান করতে হবে উৎকৃষ্ট বস্তু, নিকৃষ্ট ও নিম্নমানের জিনিস নয়।

তিন নং আয়াত

فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ

অর্থ : সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে।সূরা যিলযাল, আয়াত ৭

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে বান্দাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে- সে যেন সদাসর্বদা নেক কাজে যত্নবান থাকে। কেননা তার কোনও নেক কাজ বৃথা যাবে না। সে ছোট-বড় যে-কোনও নেক কাজ করবে, আখিরাতে আল্লাহ তা'আলার কাছে তার প্রতিদান অবশ্যই পাবে। তার একেকটি কাজের জন্য আল্লাহ তা'আলা নয়নপ্রীতিকর কী কী পুরস্কার নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, বান্দা নিজ চোখে তা দেখতে পাবে। কাজেই কোনও নেক কাজকেই অবহেলা করা উচিত নয়। আখিরাতে উপকারে আসবে কেবল নেক কাজই। এর বদৌলতে সে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে এর ছাওয়াব ও পুরস্কারই সে ভোগ করবে। তাই তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে এই বলে উৎসাহ দান করেন যে-

لَا تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوْفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهِ طَلْقٍ

“কোনও নেক কাজকেই তুচ্ছ মনে করো না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারটাও হয়। সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬২৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৬৩৫

চার নং আয়াত

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ

অর্থ : কেউ কোনও সৎকর্ম করলে তা তার নিজ কল্যাণার্থেই।সূরা জাছিয়া, আয়াত ১৫
ব্যাখ্যা

অর্থাৎ বান্দার নেক কাজ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার কোনও উপকার হয় না। তার উপকার বান্দা নিজেই পায়। আল্লাহ তা'আলার কোনও কিছুর কিছুমাত্র অভাব নেই। তিনি সবদিক থেকে পরিপূর্ণ। তিনি বান্দাকে যে 'ইবাদত-বন্দেগীর আদেশ করেছেন তার উদ্দেশ্য বান্দার কল্যাণসাধন করা। বান্দা আল্লাহ তা'আলার হুকুম পালন ও সৎকর্ম করলে তিনি খুশি হন এবং তাকে পুরস্কৃত করেন। এটা বান্দার প্রতি তাঁর দয়া ও মেহেরবানী। পক্ষান্তরে বান্দা যদি তাঁর হুকুম অমান্য করে ও নাফরমানীতে লিপ্ত হয়, তবে তিনি নাখোশ হন ও তাকে শাস্তি দান করেন। তিনি চান বান্দা নাফরমানীতে লিপ্ত হয়ে তাঁর শাস্তি ভোগ না করুক; বরং তাঁর ইবাদত-আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করুক ও পুরস্কৃত হোক। এজন্যই তিনি পাপ কাজের ক্ষেত্রে শাস্তির সতর্কবাণী শুনিয়েছেন এবং পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন নেক কাজের প্রতি উৎসাহ দান করেছেন। এ আয়াতসমূহের মাধ্যমে আমরা সে উৎসাহই লাভ করে থাকি। কুরআন মাজীদে এরকম উৎসাহদায়ী আয়াত আছে বহু। আমাদের কর্তব্য এসব আয়াত দ্বারা নেক কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত হওয়া এবং ছোট-বড় প্রতিটি নেক কাজে পূর্ণোদ্যমে অংশগ্রহণ করা।
সর্বশ্রেষ্ঠ আমল ও বিভিন্ন পর্যায়ের সৎকর্ম
হাদীছ নং: ১১৭

হযরত আবূ যার রাযি. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন্ আমল শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাঁর পথে জিহাদ। বললাম, কোন্ প্রকারের গোলাম (মুক্তিদান করা) উত্তম? তিনি বললেন, যে গোলাম তার মালিকের নিকট সবচে' প্রিয় ও সবচে' দামী। আমি বললাম, যদি তা করতে না পারি? তিনি বললেন, কোনও কারিগরকে (তার কাজে) সাহায্য করবে অথবা অদক্ষ ব্যক্তির কাজ করে দেবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন তো, আমি যদি এর কোনওটি করতে না পারি? তিনি বললেন, তুমি মানুষের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকবে। এটাও হবে তোমার পক্ষ হতে তোমার নিজের প্রতি একটি সদাকা। -বুখারী ও মুসলিম' সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৫১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩১২৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৫২৩
الصانع -প্রসিদ্ধ বর্ণনানুযায়ী এ শব্দটি এরকমই এবং এর অর্থ কারিগর।
এক বর্ণনায় আছে ضائعا - যার অর্থ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত। অর্থাৎ তুমি দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করবে।
الأخرق বলে এমন কর্মীকে, যে তার সংশ্লিষ্ট কাজ উত্তমরূপে করতে পারে না।
مقدمة الامام النووي
13 - باب في بيان كثرة طرق الخير

قَالَ الله تَعَالَى: {وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ} [البقرة: 215]، وَقالَ تَعَالَى: {وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ الله} [البقرة: 197]، وَقالَ تَعَالَى: {فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ} [الزلزلة: 7]، وَقالَ تَعَالَى: {مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ} [الجاثية: 15] والآيات في الباب كثيرة.
وأما الأحاديث فكثيرة جدًا، وهي غيرُ منحصرةٍ فنذكُرُ طرفًا مِنْهَا:
117 - الأول: عن أبي ذر جُنْدبِ بنِ جُنَادَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قُلْتُ: يَا رسولَ الله، أيُّ الأعمالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ باللهِ وَالجِهادُ فِي سَبيلِهِ». قُلْتُ: أيُّ الرِّقَابِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «أنْفَسُهَا (1) عِنْدَ أَهلِهَا وَأَكثَرهَا ثَمَنًا». قُلْتُ: فإنْ لَمْ أفْعَلْ؟ قَالَ: «تُعِينُ صَانِعًا أَوْ تَصْنَعُ لأَخْرَقَ». قُلْتُ: يَا رَسُول الله، أرأيْتَ إنْ ضَعُفْتُ عَنْ بَعْضِ العَمَلِ؟ قَالَ: «تَكُفُّ شَرَّكَ عَنِ النَّاسِ؛ فإنَّهَا صَدَقَةٌ مِنْكَ عَلَى نَفْسِكَ». مُتَّفَقٌ عليه. (2)
«الصَّانِعُ» بالصاد المهملة هَذَا هُوَ المشهور، وروي «ضائعًا» بالمعجمة: أي ذا ضِياع مِنْ فقرٍ أَوْ عيالٍ ونحوَ ذلِكَ، «وَالأَخْرَقُ»: الَّذِي لا يُتقِنُ مَا يُحَاوِل فِعلهُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সাহাবায়ে কিরাম সৎকর্মের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এমনিতে তো তাঁরা কোনও নেক কাজকে অবহেলা করতেন না, তা সত্ত্বেও ইসলামে যে কাজ যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার প্রতি বেশি গুরুত্বদান বাঞ্ছনীয় হওয়ায় তাঁরা সে জাতীয় কাজে বেশি আগ্রহী থাকতেন। তাই জানার প্রয়োজন ছিল ইসলাম তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্ব দেয় কোন্ কোন্ কাজে। এজন্যই তাঁরা বিভিন্ন সময় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেন এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও পরম মমতায় সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতেন। আলোচ্য হাদীছটি সেরকমই প্রশ্ন ও উত্তর সম্বলিত অতি মূলবান এক হাদীছ।

এ হাদীছে হযরত আবূ যার রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চারটি প্রশ্ন করেছেন। তার মধ্যে প্রথম প্রশ্ন হল, কোন্ আমল সর্বোত্তম? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তরে দু'টি আমলের কথা বলেছেন। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান।

সর্বশ্রেষ্ঠ আমল আল্লাহর প্রতি ঈমান

বলা হয়েছে, সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হল আল্লাহর প্রতি ঈমান। কেননা এটাই সমগ্র দীন ও শরী'আতের মূল ভিত্তি। আল্লাহর প্রতি ঈমান বলতে আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর একত্ব ও তাঁর গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকে বোঝায়। তাঁর প্রতি ঈমানের একটা অংশ নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসও। আর নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ হল মানুষের সামনে তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে যা-কিছু পেশ করেছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা। এভাবে কিতাব, আখিরাত, হিসাবনিকাশ, ফিরিশতা, তাকদীর, জান্নাত-জাহান্নাম প্রভৃতি বিষয় সত্য বলে বিশ্বাস করাও আল্লাহর প্রতি ঈমানের মধ্যে পড়ে যায়। সুতরাং হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মু'মিন বলতে এমন ব্যক্তিকেই বোঝাবে, যে ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনীত যাবতীয় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস রাখে।
ঈমান যাবতীয় আমলের ভিত্তি। ঈমান ছাড়া কোনও আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু যাবতীয় আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ঈমান শর্ত, সেহেতু ঈমানই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল বৈ কি।
ঈমানও এক আমল। এটা অন্তরের আমল। অন্তরের আরও অনেক আমল আছে, যেমন ইখলাস, তাকওয়া, আল্লাহর প্রতি সুধারণা, মানুষের কল্যাণকামনা ইত্যাদি। অন্তর এবং বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কিত যত প্রকার আমল আছে, সে সমুদয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে ঈমান। ঈমান যেহেতু শ্রেষ্ঠ আমল, তাই এর প্রতিদানও সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তা হচ্ছে স্থায়ী জান্নাত এবং দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি। এরচে' বড় আর কোনও প্রতিদান হতে পারে না।

জিহাদের ফযীলত

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম আমল হিসেবে জিহাদের কথাও উল্লেখ করেছেন। আভিধানিক অর্থে জিহাদ বলতে আল্লাহর পথে যে কোনও মেহনতকে বোঝায়। তবে শরী'আতে সাধারণত জিহাদ বলে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শত্রুর বিরুদ্ধে সসস্ত্র সংগ্রামকে। এর জন্য বিশেষ নিয়মনীতি ও শর্ত আছে। কুরআন ও হাদীছে জিহাদের অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদঃ-

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ

অর্থ : বস্তুত আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা শিশাঢালা প্রাচীর।সূরা সাফ, আয়াত ৪
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেঃ-

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থ : বস্তুত আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও তাদের সম্পদ খরিদ করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে-এর বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। ফলে হত্যা করে ও নিহতও হয়। এটা এক সত্য প্ৰতিশ্ৰুতি, যার দায়িত্ব আল্লাহ তাওরাত ও ইনজীলেও নিয়েছেন এবং কুরআনেও। আল্লাহ অপেক্ষা বেশি প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যে সওদা করেছ, সেই সওদার জন্য তোমরা আনন্দিত হও এবং এটাই মহা সাফল্য।সূরা তাওবা, আয়াত ১১১
জিহাদের ময়দানে কেউ নিহত হলে সে শহীদ বলে গণ্য হয়। শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছেঃ-

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থ : এবং (হে নবী!) যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে কখনওই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত। তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের কাছে রিযিক দেওয়া হয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তারা তাতে প্রফুল্ল। আর তাদের পরে এখনও যারা (শাহাদাতের মাধ্যমে) তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি, তাদের ব্যাপারে এ কারণে তারা আনন্দ বোধ করে যে, (তারা যখন তাদের সঙ্গে এসে মিলিত হবে, তখন) তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা আল্লাহর নি'আমত ও অনুগ্রহের কারণে আনন্দ উদযাপন করে এবং এ কারণেও যে, আল্লাহ মুমিনদের কর্মফল নষ্ট করেন না। সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ১৬৯-১৭১ ২.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-

والذي نفسي بيده! لولا أن رجالا من المؤمنين لا تطيب أنفسهم أن يتخلّفوا عنّي، ولا أجد ما أحملهم عليه، ما تخلفت عن سرية تغزو في سبيل الله والذي نفسي بيده! لوددت أني أقتل في سبيل الله، ثم أحيا ثم أقتل، ثم أحيا ثم أقتل، ثم أحيا ثم أقتل

“যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! যদি ওইসকল মু'মিন না থাকত, যাদের পক্ষে আমার সঙ্গে যোগদান না করাটা অপ্রীতিকর বোধ হত, আবার আমার কাছে এমন বাহনও নেই, যা তাদেরকে দেব (যাতে তারা আমার সঙ্গে যেতে পারে), তবে আল্লাহর পথে যে সকল যুদ্ধাভিযান চালানো হয়, আমি তার প্রতিটিতে অবশ্যই যোগদান করতাম। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! আমার তো আকাঙ্ক্ষা হয় আমি আল্লাহর পথে নিহত হয়ে যাই, তারপর আবার আমাকে জীবিত করা হোক। তারপর আবার নিহত হই, তারপর আবার আমাকে জীবিত করা হোক। তারপর আবার নিহত হই, তারপর আবার আমাকে জীবিত করা হোক, তারপর আবার নিহত হই।”সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৭৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৭৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৭৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৪৮১
জিহাদের ফযীলত ও শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন মাজীদে বহু আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছও আছে প্রচুর। জিহাদ সম্পর্কিত বইপুস্তকে তা দেখা যেতে পারে।

দাসমুক্তির ফযীলত

হযরত আবূ যার রাযি.-এর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল দাসমুক্তি সম্পর্কে যে, কী রকম গোলাম আযাদ করা উত্তম? গোলাম বা দাস-দাসী রাখার প্রথাটি অনেক পুরোনো। জাহিলী যুগে দাস-দাসীর প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ করা হত। নিকট অতীতেও দুনিয়ার শক্তিশালী জাতিসমূহ তাদের প্রতি মানবেতর প্রাণীর মতই আচরণ করত। কিন্তু মুসলিম জাতি শুরু থেকেই তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করে আসছে। কেননা ইসলামে দাস-দাসীর প্রতি সদাচরণের জোর তাগিদ রয়েছে। সদাচরণের সর্বোচ্চ ধাপ হচ্ছে আযাদ করে দেওয়া। বিভিন্ন হাদীছে গোলাম আযাদের প্রচুর ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যে কারণে সাহাবায়ে কিরাম বিপুল উৎসাহে দাস-দাসীকে মুক্তি দান করতেন। তাঁদের অন্তরে আল্লাহর কাছে পুরস্কার লাভের আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল। যে কাজে যত বেশি পুরস্কার পাওয়া যায় সেটাই তাঁরা বেশি বেশি করতে চাইতেন, তাতে পার্থিব যতই ক্ষতি হোক না কেন। দাসমুক্তি আল্লাহর পথে এক প্রকার খরচ। আর আল্লাহর পথে খরচ করার ক্ষেত্রে প্রিয়বস্তু দানের নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনা দাস-দাসীকে মুক্তিদানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুতরাং হযরত আবূ যার রাযি. যখন জানতে চাইলেন কোন্ দাসমুক্তি সর্বোত্তম, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে দাস-দাসী তার মালিকের কাছে বেশি প্রিয় এবং যার দাম তুলনামূলক বেশি, তাকে আযাদ করাই উত্তম।

হযরত আবূ যার রাযি.-এর তৃতীয় প্রশ্ন

হযরত আবূ যার রাযি. তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলেন, আমি যদি তা করতে না পারি? তার মানে জিহাদ করার অবকাশ যদি না আসে এবং কোনও কারণে যদি দাস-দাসীকে মুক্তি দিতেও না পারি, তখন পুণ্যার্জনের জন্য আমি কী কাজ করব?
উল্লেখ্য, তাঁর এ প্রশ্নের মধ্যে ঈমানের বিষয়টা আসবে না। কেননা এটা অন্তরের কাজ। এটা না পারার কোনও কারণ নেই। আর ঈমান ছাড়া কোনও নেক কাজ গ্রহণযোগ্যও নয়। তাই সর্বাবস্থায় এটা অন্তরে লালন করতেই হবে।
যাহোক জিহাদ ও দাসমুক্তির কাজ করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে পুণ্যার্জনের উপায় কী? এ প্রশ্নের উত্তরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তখন তুমি কারিগরকে সাহায্য করবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি উপার্জনের জন্য বিশেষ কোনও পেশা অবলম্বন করেছে আর সে পেশায় তার দক্ষতাও আছে, তুমি তাকে সাহায্য করবে, যাতে তার কষ্ট খানিকটা লাঘব হয়। অন্যের কষ্ট লাঘব করাও একটি সৎকাজ। কাজেই তুমি যদি তা কর, তাতেও দান-সদাকার ছাওয়াব পাবে।
তারপর তিনি ইরশাদ করেছেন, অদক্ষ ব্যক্তিকে সাহায্য করবে। অনেক লোক আছে, যারা কোনও কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে না। ফলে উপার্জনও ভালো হয় না। তাদের জীবননির্বাহ কঠিন হয়ে যায়। তাই যাদের পক্ষে তাদের সাহায্য করা সম্ভব তাদের উচিত এরূপ লোকদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। সাহায্যের একটা দিক এইও যে, তারা যে কাজ করে সে কাজটি উত্তমরূপে করে দেওয়া। এভাবে অন্যের কাজ করে দিলে তাতে সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়।
প্রকাশ থাকে যে, সরাসরি আর্থিক সাহায্য অপেক্ষা এটাই শ্রেয়। কেননা এতে খেটে খাওয়ার অভ্যাস বজায় থাকে; অন্যের কাছে হাত পাতার মানসিকতা তৈরি হয় না।

চতুর্থ প্রশ্ন ও তার উত্তর

চতুর্থবারে হযরত আবূ যার রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এতক্ষণ আপনি যে কাজগুলোর কথা বললেন, আমি যদি তার কোনওটিই করতে না পারি? অর্থাৎ তখন আমি কোন উপায়ে পুণ্যার্জন করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ক্ষেত্রে তুমি তোমার অনিষ্ট থেকে লোকজনকে রক্ষা করবে। অর্থাৎ‍ সতর্ক থাকবে যাতে কোনওভাবেই তোমার দ্বারা কেউ কোনও কষ্ট না পায়। এটাও তোমার পক্ষ থেকে একটি সদাকা হবে, যার ছাওয়াব তোমার আমলনামায় লেখা হবে। এটা পুণ্যার্জনের সর্বনিম্ন পন্থা।
একজন মানুষের দ্বারা অপর মানুষ কষ্ট পেতে পারে নানা কারণে। অনেক সময় কষ্ট দেওয়া হয় কথা দিয়ে, কখনও কষ্ট দেওয়া হয় হাত দিয়ে এবং কখনও পা দিয়ে। বাকশক্তির অসংযত ব্যবহারে মানুষ বিভিন্ন রকম কষ্ট পেয়ে থাকে। এমনিভাবে হাত-পা দিয়ে কষ্ট দেওয়ারও নানান ধরন আছে। এছাড়াও আমরা অসতর্ক আচার-আচরণ দ্বারা বিভিন্ন মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। অন্যকে কষ্ট দেওয়া কঠিন গুনাহ। কষ্ট দেওয়া যখন গুনাহ, তখন এর থেকে বিরত থাকাটাও অবশ্যই ছাওয়াবের কাজ হবে। তাই এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাওয়াব অর্জনের একটা উপায় হিসেবে কষ্টদান থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন।
আমাদের দীনে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কত যে গুরুত্বপূর্ণ তা একটি হাদীছ দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। সে হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-

المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده، والمؤمن من أمنه الناس على دمائهم وأموالهم

“মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অপরাপর মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। আর মু'মিন সেই ব্যক্তি, যার অনিষ্ট থেকে মানুষ তাদের জান-মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা বোধ করে। মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৯৬৭; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬২৭; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ১৮০। প্রথম অংশটুকুর জন্য দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১০, ৬৪৮৪, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৪১; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪৯৯৬ সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৪৮১: মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৮৮, ৬৫১৫, ৬৮০৭, ৬৮৩৪

প্রকাশ থাকে যে, মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহার এবং প্রতিটি কাজকর্মের বিশেষ আদবকায়দা আছে, যা বিভিন্ন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। সেসব আদাবকায়দা মেনে চললে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক ব্যবহার হয় এবং আচার-আচরণও সুষ্ঠু ও পরিশিলিত হয়। যার আচার-আচরণ সুষ্ঠু ও পরিশিলিত হয় তার দ্বারা অন্য মানুষ সাধারণত কষ্ট পায় না। কাজেই অন্যকে কষ্টদান থেকে বিরত থাকার জন্য জরুরি- ইসলাম যে সকল আদবকায়দা শিক্ষা দিয়েছে তা শিখে নেওয়া এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করা।

হাদীছ গ্রন্থসমূহে ‘কিতাবুল আদাব' বা আদব অধ্যায়ের অধীনে আদব সংক্রান্ত হাদীছসমূহ উদ্ধৃত রয়েছে। ‘উলামায়ে কিরাম তার আলোকে বিভিন্ন কিতাবও রচনা করেছেন। এ বিষয়ে হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর রচনাবলি অত্যন্ত উপকারী।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ঈমান যেহেতু সর্বশ্রেষ্ঠ আমল, তাই নিজ ঈমানের হেফাজতে সর্বাপেক্ষা বেশি যত্নবান থাকা চাই।

খ. জিহাদের ব্যাপারে মনে মনে এই আশা রাখা জরুরি যে, যখনই যথাযথ শর্তানুযায়ী এর অবকাশ আসবে তাতে জানমাল দিয়ে শরীক থাকব ইনশাআল্লাহ।

গ. বর্তমানে দাসমুক্তির সুযোগ না থাকলেও তার বিকল্পস্বরূপ আল্লাহর পথে অর্থব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। কাজেই সুযোগ অনুযায়ী আল্লাহর পথে যথাসম্ভব অর্থ ব্যয় করা উচিত।

ঘ. শারীরিক শ্রম দিয়ে মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করাও অনেক বড় নেক আমল।সুতরাং সুযোগমত এ নেক আমলে সক্রিয় থাকা উচিত।

ঙ. অন্যকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকাও যেহেতু একটি নেক কাজ এবং এতে সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়, তাই এ ক্ষেত্রে তো কিছুতেই পিছিয়ে থাকা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ১১৭ | মুসলিম বাংলা