রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং:
অধ্যায় : ৩ সবর।
৩২। প্রিয়জনের বিয়োগ-বেদনায় সবরের প্রতিদানঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার মু'মিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ছাড়া আর কোনও প্রতিদান নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয়জনকে তুলে নেই আর সে তাতে ছওয়াবের আশা করে - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৬৪২৪)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার মু'মিন বান্দার জন্য আমার কাছে জান্নাত ছাড়া আর কোনও প্রতিদান নেই, যখন আমি দুনিয়া থেকে তার প্রিয়জনকে তুলে নেই আর সে তাতে ছওয়াবের আশা করে - বুখারী। (বুখারী হাদীস নং ৬৪২৪)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে আল্লাহ তা'আলার যে বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা কুরআন মাজীদে নেই। বোঝা গেল আল্লাহ তা'আলার বক্তব্য কুরআন মাজীদ ছাড়া হাদিসেও থাকতে পারে। এরূপ হাদীছকে 'হাদীছে কুদসী বলা হয়ে থাকে। এরকম হাদীছের সংখ্যা শতাধিক। কুরআন ও হাদীছে কুদসীর মধ্যে পার্থক্য হল, কুরআন মাজীদের ভাষ সরাসরি আল্লাহ তা'আলার, যা অলৌকিক। পক্ষান্তরে 'হাদীছে কুদসী'-এর বক্তব্য আল্লাহ তা'আলার, কিন্তু তার ভাষা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের। তাই তা অলৌকিক নয়। এজন্যই কুরআন মাজীদ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান যেমন বিনা ওযূতে স্পর্শ করার অবৈধতা, জুনূবী ব্যক্তির জন্যে স্পর্শ করা ও পড়া উভয়ই নাজায়েয হওয়া, নামাযে তিলাওয়াত করা ফরয হওয়া এবং প্রত্যেক হরফ পাঠে দশ নেকী লাভ হওয়া, এসব বিধান হাদীছে কুদসীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এ হাদীছে জানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর বান্দার কোনও প্রিয়জনকে তুলে নেন অর্থাৎ তার মৃত্যু দান করেন, তখন বান্দার পক্ষে তা মোটেই অমঙ্গলজনক হয় না; বরং এর ভেতরও প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকে। এ হাদীছে একটি অভাবনীয় কল্যাণের কথা এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বান্দা যদি সবর করে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ছওয়াবের আশা রাখে, তবে তার প্রিয়জনকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিদান হিসেবে তাকে জান্নাত দান করা হয়। সুবহানাল্লাহ, বান্দার পক্ষে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। কিন্তু দুর্বলচিত্ত বান্দা অনেক সময়ই অধৈর্য হয়ে পড়ে। তার একমাত্র পুত্র বা একমাত্র কন্যা কিংবা পুত্র-কন্যাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয়জনের মৃত্যুতে সে সবর করতে পারে না। সে নিজেও একে নিজের জন্যে আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির প্রকাশ মনে করে, অন্যেও ভাবে তার উপর আল্লাহ তা'আলার বুঝি গযব পড়েছে। নাঊযুবিল্লাহ। কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ-
وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (216)
অর্থ : এটা তো খুবই সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে মন্দ মনে কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মঙ্গলজনক। আর এটাও সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে পছন্দ কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মন্দ। আর (প্রকৃত বিষয় তো) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।- বাকারাঃ ২১৬
বিষয়টা কেবল প্রিয়জনের মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যে-কোনও রকমের ক্ষতি, তা অর্থ-সম্পদের ক্ষতি হোক, কোনও অঙ্গহানি ঘটুক বা সম্মানহানি, তাতে সবর করতে পারলে আল্লাহ তা'আলার কাছে অকল্পনীয় প্রতিদানের আশা রয়েছে। বস্তুত এসব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে পরীক্ষা। আল্লাহ তা'আলা চান বান্দা সবর অবলম্বনের মাধ্যমে এসকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক এবং আখিরাতের অমূল্য প্রতিদান লাভ করুক। সেজন্যেই বিভিন্ন আয়াত ও হাদীছে আখিরাতের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করে বান্দাকে সবর অবলম্বনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সবরের ফযীলত জানা গেল যে, প্রিয়জনের মৃত্যুশোকে সবর অবলম্বন করলে তার বিনিময়ে আখিরাতে জান্নাত লাভের আশা থাকে।
খ. জানা গেল যে, আল্লাহ তা'আলা কত বড় দয়ালু। আমরা নিজেরা এবং আমাদের সকল প্রিয়জন আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। তিনি যখন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টিকে তুলে নিতে পারেন। তাতে আমাদের আপত্তির কোনও অবকাশ নেই। কারণ আমাদের কোনও অধিকার তাতে নেই। তা সত্ত্বেও সবর করলে আমাদেরকে তার অকল্পনীয় বদলা দান করেন। বলাই বাহুল্য সে বদলা আমাদের অধিকার নয়, একান্তই তাঁর দান। সেজন্য আমাদের শোকরগুযার হওয়া উচিত।
গ. জান-মালসহ যে-কোনও ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাকে অমঙ্গল মনে করা উচিত নয়। কোনও না কোনও দিক থেকে তা অবশ্যই কল্যাণজনক। সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণ তো এই যে, তাতে সবর করলে আখিরাতের প্রতিদান লাভ হয়।
এ হাদীছে জানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর বান্দার কোনও প্রিয়জনকে তুলে নেন অর্থাৎ তার মৃত্যু দান করেন, তখন বান্দার পক্ষে তা মোটেই অমঙ্গলজনক হয় না; বরং এর ভেতরও প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকে। এ হাদীছে একটি অভাবনীয় কল্যাণের কথা এই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বান্দা যদি সবর করে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ছওয়াবের আশা রাখে, তবে তার প্রিয়জনকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিদান হিসেবে তাকে জান্নাত দান করা হয়। সুবহানাল্লাহ, বান্দার পক্ষে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। কিন্তু দুর্বলচিত্ত বান্দা অনেক সময়ই অধৈর্য হয়ে পড়ে। তার একমাত্র পুত্র বা একমাত্র কন্যা কিংবা পুত্র-কন্যাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয়জনের মৃত্যুতে সে সবর করতে পারে না। সে নিজেও একে নিজের জন্যে আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির প্রকাশ মনে করে, অন্যেও ভাবে তার উপর আল্লাহ তা'আলার বুঝি গযব পড়েছে। নাঊযুবিল্লাহ। কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ-
وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (216)
অর্থ : এটা তো খুবই সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে মন্দ মনে কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মঙ্গলজনক। আর এটাও সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে পছন্দ কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মন্দ। আর (প্রকৃত বিষয় তো) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।- বাকারাঃ ২১৬
বিষয়টা কেবল প্রিয়জনের মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যে-কোনও রকমের ক্ষতি, তা অর্থ-সম্পদের ক্ষতি হোক, কোনও অঙ্গহানি ঘটুক বা সম্মানহানি, তাতে সবর করতে পারলে আল্লাহ তা'আলার কাছে অকল্পনীয় প্রতিদানের আশা রয়েছে। বস্তুত এসব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে পরীক্ষা। আল্লাহ তা'আলা চান বান্দা সবর অবলম্বনের মাধ্যমে এসকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক এবং আখিরাতের অমূল্য প্রতিদান লাভ করুক। সেজন্যেই বিভিন্ন আয়াত ও হাদীছে আখিরাতের পুরস্কারের কথা উল্লেখ করে বান্দাকে সবর অবলম্বনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা সবরের ফযীলত জানা গেল যে, প্রিয়জনের মৃত্যুশোকে সবর অবলম্বন করলে তার বিনিময়ে আখিরাতে জান্নাত লাভের আশা থাকে।
খ. জানা গেল যে, আল্লাহ তা'আলা কত বড় দয়ালু। আমরা নিজেরা এবং আমাদের সকল প্রিয়জন আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। তিনি যখন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টিকে তুলে নিতে পারেন। তাতে আমাদের আপত্তির কোনও অবকাশ নেই। কারণ আমাদের কোনও অধিকার তাতে নেই। তা সত্ত্বেও সবর করলে আমাদেরকে তার অকল্পনীয় বদলা দান করেন। বলাই বাহুল্য সে বদলা আমাদের অধিকার নয়, একান্তই তাঁর দান। সেজন্য আমাদের শোকরগুযার হওয়া উচিত।
গ. জান-মালসহ যে-কোনও ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাকে অমঙ্গল মনে করা উচিত নয়। কোনও না কোনও দিক থেকে তা অবশ্যই কল্যাণজনক। সর্বাপেক্ষা বড় কল্যাণ তো এই যে, তাতে সবর করলে আখিরাতের প্রতিদান লাভ হয়।
