রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ২৫
সবরের ব্যাখ্যা ও তার প্রকারভেদ
'সবর'-এর আভিধানিক অর্থ আবদ্ধ করা ও সংযত করা। শরী'আত নির্দেশিত পথ ও পন্থার উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে সবর বলা হয়। এ হিসেবে সবর তিন প্রকার-
ক. আল্লাহ তা'আলা যা কিছু করার আদেশ করেছেন তা পালন করার উপর তথা আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উপর নিজেকে আবদ্ধ রাখা।
খ. আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু নিষেধ করেছেন, তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে আটকে রাখা ও সংযত করা
গ. বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা।
আল্লাহর আদেশ পালনে সবর আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন ও ইবাদত-আনুগত্যে যত্নবান থাকতে কিছু না কিছু কষ্ট হয়ই। কখনও সে কষ্ট হয় মানসিক, কখনও দৈহিক এবং কখনও উভয় রকমের। উদাহরণত: পরনারী বা পরপুরুষ থেকে পর্দা রক্ষা করে চলায় কোনও দৈহিক কষ্ট নেই। এতে যা কষ্ট তা কেবলই মানসিক। কেননা এ কারণে নানা লোকে নানা কথা বলে। তাতে মনের উপর চাপ পড়ে। সেই চাপ উপেক্ষা করে পর্দা রক্ষা করে যাওয়া সবরের মাধ্যমেই সম্ভব। বেপর্দা হওয়ার প্রতি মনেরও কিছু আগ্রহ থাকে। মনকে তা থেকে সংযত রাখতে হয়। তো লোকের কথায় কান না দিয়ে এবং মনের আগ্রহকে প্রশ্রয় না দিয়ে পর্দা রক্ষা করে চলতে যে কষ্ট হয় তা কেবল মানসিক কষ্ট। কিন্তু শরী'আত যেহেতু পর্দা রক্ষার আদেশ করেছে, তাই সে আদেশ পালনার্থে ওই কষ্ট স্বীকার করে নেওয়াই হচ্ছে সবর।
রোযা রাখা ও হজ্জ পালনে হয় দৈহিক কষ্ট। নামায আদায়েও কিছু না কিছু দৈহিক কষ্ট আছে। সেই কষ্ট সত্ত্বেও এসব বিধান পালন করে যাওয়া সবরের পরিচায়কই বটে। লোভনীয় খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও তা খাওয়া হতে বিরত থেকে রোযা পালন করতে দৈহিক কষ্টের সংগে কিছু না কিছু মানসিক কষ্টও হয়। এ অবস্থায় রোযা রাখার দ্বারা সবরের পরীক্ষা হয়ে যায়।

নিষেধাজ্ঞা পালনে সবর
শরী'আত যা-কিছু নিষেধ করেছে তার প্রতি মানুষের কুপ্রবৃত্তির লোভ থাকে, যেমন সুদ-ঘুষ খাওয়া, মদপান করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা ইত্যাদি। সেই লোভ দমন করে এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকার জন্য মনকে শাসন করতে হয়। এতেও কিছু না কিছু কষ্ট আছেই। সেই কষ্ট স্বীকার করে শরীআতের সমস্ত নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বেঁচে থাকাটাও এক প্রকার সবর। কেননা এতে মনকে কঠিন বাঁধনে বাঁধতে হয়, যাতে সে লোভের শিকার হয়ে নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত না হয়ে পড়ে।

মুসিবতে সবর
বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণের যে সবর, তাতেও এক প্রকারের বাঁধন আছে। কেননা বিপদ-আপদে পড়লে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। সেই অস্থিরতায় নানা রকমের অবৈধ কাজ করে ফেলে ও নাজায়েয কথাবার্তা বলে ফেলে। সেই নাজায়েয কাজ ও কথা যাতে না হয়ে যায়, সেজন্য যে-কোনও বিপদে নিজেকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখতে হয়।
বস্তুত বিপদ-আপদ পার্থিব জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ইহজীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এই জীবনের পথে পথে কাঁটা। আছে ঝড়-ঝঞ্ঝা, আছে নানা দুঃখ-কষ্ট। কখনও ফসলহানি হয়, কখনও প্রিয়জনের মৃত্যু ঘটে। সম্মুখীন হতে হয় অন্যের অপ্রীতিকর আচরণের। কখনও ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত আসে। সম্পূর্ণ বাধা-বিপত্তিহীন নিরোগ নির্ঝঞ্ঝাট জীবন ইহলোকে অসম্ভব। তা যখন অসম্ভব তখন এসব মেনে নেওয়ার ভেতরেই জীবনের সচলতা রক্ষা সম্ভব।
এই যে মেনে নেওয়া অর্থাৎ প্রতিকূল প্রতিটি অবস্থাকে ইহজীবনের স্বাভাবিকতা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া, এটাই সবর। এই সবর অবলম্বন করতে পারলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। তখন যেকোনও ভাঙন ও পতনের পর আবার উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। জীবনকে সফল করে তুলতে হলে উঠে তো দাঁড়াতেই হবে। নিজেকে চলমান রাখতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত।
মৃত্যুর পরই শুরু হয় আসল জীবন। সেই জীবনের সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজন ইহজীবনকে কর্মময় করে রাখা। অর্থাৎ যখনকার যেই কাজ তা করে যাওয়া। কোনও মুহূর্তকেই নষ্ট হতে না দেওয়া।
কাজ তো বিস্তর। প্রসিদ্ধ চার ইবাদতের বাইরেও আল্লাহ ও বান্দার হকের আছে সুদীর্ঘ তালিকা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সংগে সম্পৃক্ত সেই তালিকার সবগুলো কাজ যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়ার ভেতরেই পরকালীন জীবনের সার্থকতা নিহিত। বিপদ-আপদ ও ঝড় ঝাপটায় যে ব্যক্তি ভেঙে পড়বে, তার পক্ষে তো এই যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। করণীয় অনেক কাজই তার করা হয় না। ফলে জীবন হয়ে যাবে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা থেকে রক্ষার জন্যই দরকার কঠিন ধৈর্য। তাই কুরআন ও হাদীছ মানুষকে পদে পদে ধৈর্য রক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেছে। এবং এর অপরিসীম গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা করেছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আসুন মনোযোগ সহকারে সেগুলো পাঠ করি।

ধৈর্য সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (200)} [آل عمران: 200]
অর্থ : হে মুমিনগণ! সবর অবলম্বন কর, মুকাবিলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন কর এবং সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত থাক।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে তিনটি বিষয়ের হুকুম দেওয়া হয়েছে। (ক) সবর; (খ) মুসাবারা এবং (গ) মুরাবাতা ।
প্রথমে বলা হয়েছে, তোমরা সবর ও ধৈর্যধারণ কর। অর্থাৎ দীনের অনুসরণ, শরী'আতের বিধানাবলী পালন, খেয়ালখুশির বিরোধিতা এবং আল্লাহর মহব্বত ও আনুগত্যে অটল-অবিচল থাক। যত অভাব অনটন ও দুঃখ-কষ্টই হোক না কেন, এর ব্যতিক্রম করো না এবং সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দেও সীমালঙ্ঘন করো না। বালা-মুসিবত ও শান্তি- স্বস্তি সর্বাবস্থায় ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখাও। হযরত জুনায়দ রহ. বলেন, কোনওরূপ বিচলতা ছাড়া নফসকে তার অপসন্দের বিষয়ে ধরে রাখার নামই সবর।
দ্বিতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুসাবারা অর্থাৎ মোকাবেলার সময় অবিচলতা প্রদর্শনের। তার মানে যুদ্ধকালে শত্রু অপেক্ষা নিজেদের ধৈর্য বলিষ্ঠ রাখ। কেননা তোমাদের মত তারাও দুঃখ-কষ্ট পায় এবং জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু তার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তাদের কোনও প্রাপ্তির আশা নেই। কিন্তু তোমাদের পুরস্কার লাভের আশা আছে। তাই ধৈর্যও তোমাদের বেশি থাকা উচিত।
মুসাবারা অর্থাৎ ধৈর্যের প্রতিযোগিতা যেমন কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, যাকে 'জিহাদে আসগার' বলা হয়ে থাকে, তেমনি এর প্রয়োজন 'জিহাদে আকবার' অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে। কেননা নফস বা কুপ্রবৃত্তি সর্বদা দুনিয়া ও এর ভোগ্যবস্তুর প্রতি আকৃষ্ট থাকে। নিজেকে সে আকর্ষণ থেকে ফিরিয়ে আখিরাতের অভিমুখী করা ও আল্লাহপ্রেমে আবদ্ধ রাখার জন্য কঠোর সাধনা ও মুজাহাদার প্রয়োজন। সেই মুজাহাদা ও সাধনায় উত্তীর্ণ হওয়া কেবল সবরের মাধ্যমেই সম্ভব। প্রকাশ থাকে যে, নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিষয়টা কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যেও থাকে। এ হিসেবে তাকে জিহাদে আসগার বলা হয় কেবল বাহ্যিক দিকের প্রতি লক্ষ করে । না হয় অভ্যন্তরীণ দিক থেকে সেটিও জিহাদে আকবার।
তৃতীয়ত হুকুম দেওয়া হয়েছে মুরাবাতা অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকার। শব্দটি ربط মূলধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ বেঁধে রাখা। অর্থাৎ সীমান্তে ঘোড়া বেঁধে রাখা। পরে শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থ পরিগ্রহ করে। ফলে এর অর্থ হয় সীমান্ত পাহারায় নিযুক্ত থাকা, তাতে ঘোড়া থাক বা না থাক। আরও পরে শব্দটি অধিকতর ব্যাপকতা লাভ করে। ফলে যেকোনও কাজে অন্তরায় সৃষ্টিকারীর প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকাকে মুরাবাতা বলা হতে থাকে, সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকাও যার অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষার ফযীলত
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষায় প্রস্তুত থাকা খুবই ফযীলতের কাজ। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে –
رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَ ما عَلَيْهَا، وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرُ مِنَ الدُّنْيَا وَ مَا عَلَيْهَا، وَالرَّوْحَةُ يَرُوْحُهَا الْعَبْدُ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوِ الْعَدْوَة خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا
"আল্লাহর পথে একদিনের সীমান্ত পাহারা দুনিয়া ও এর অন্তর্গত সবকিছু থেকে উত্তম। তোমাদের একটি চাবুক পরিমাণ জান্নাতের স্থান দুনিয়া ও এর অন্তর্গত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহর পথে এক সকাল বা এক বিকালের মেহনত দুনিয়া ও এর অন্তৰ্গত সবকিছু অপেক্ষা উত্তম।”
অপর এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ربَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامٍ شَهرٍ وَ قِيَامِهِ وإن مات جرى عَلَيْهِ عَمَلهُ الذي كان يعملة وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ وَ أَمِنَ الْفَتَانَ .
“একদিন ও একরাতের সীমান্ত পাহারা একমাস দিনে রোযা রাখা ও রাতে ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম। এ অবস্থায় মারা গেলে তার ছওয়াব জারি থাকবে। সে শহীদের মত রিযিকপ্রাপ্ত হবে এবং কবরের সওয়ালকারীদের পক্ষ হতে সে নিরাপদ থাকবে। (অর্থাৎ তাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে।)

অন্যরকম সীমান্ত পাহারা
বাগাবী রহ. বলেন যে, আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে 'রিবাত' বা সীমান্ত পাহারার কোনও ব্যাপার ছিল না। তখনকার রিবাত ছিল এক নামাযের পর অন্য নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এক হাদীস দ্বারাও তা সমর্থিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَلا أُخبِرُكُمْ بِمَا يُمْحُو الله به الخطايا ويَرْفَعُ به الدرجات إسباغ الوضوء على المكاره و كثرة الخط إلى المساجد والنظارُ الصَّلاةِ بَعْدَ الصَّلاة، فالكُمُ الرباط فذالكم الرياض قدالِكُمُ الرباط.
"আমি কি তোমাদেরকে সেই জিনিস সম্পর্কে অবগত করব না, যার সাহায্যে আল্লাহ গুনাহ মুছে ফেলেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? তা হচ্ছে, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। এটিই রিবাত (সীমান্ত পাহারা)। এটিই রিবাত। এটিই রিবাত।

দুই নং আয়াত
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَاتِ وَبَشَرِ الضَّبِرِينَ )
অর্থ : আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব (কখনও) কিছুটা ভয়-ভীতি দ্বারা, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদেরকে, যারা (এরূপ অবস্থায়) সবরের পরিচয় দেয়।

ব্যাখ্যা
ভয়-ভীতি দ্বারা পরীক্ষা : এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে একটা হচ্ছে কিছুটা ভয়-ভীতি। ভয় বলতে শত্রুর ভয় বোঝানো হয়েছে, যাতে প্রাণে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পূর্ণাঙ্গ ভয়ের কথা বলা হয়নি, যাতে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যায়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার নিতান্তই মেহেরবানী যে, তিনি পরিপূর্ণ ভয় নয়; বরং সামান্য ভয়ের দ্বারা পরীক্ষা করেন। অবশ্য বান্দা যেহেতু দুর্বল, তাই সামান্য ভয়ও অনেক সময় তার পক্ষে অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার প্রতি যার পূর্ণ আস্থা এবং অন্তরে তাকওয়া-পরহেযগারী থাকে, আল্লাহ তা'আলা তাকে সেই অগ্নিপরীক্ষায়ও পাশ করিয়ে দেন। খন্দকের যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামকে শত্রুভীতি দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় তারা শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কুরআন মাজীদে সে সম্পর্কেই ইরশাদ হয়েছে –
{ إِذْ جَاءُوكُمْ مِنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِاللَّهِ الظُّنُونَا (10) هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُونَ وَزُلْزِلُوا زِلْزَالًا شَدِيدًا (11)} [الأحزاب: 10، 11]
স্মরণ কর, যখন তারা তোমাদের উপর চড়াও হয়েছিল উপর এবং নিচের দিক থেকেও এবং যখন চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং প্রাণ মুখের কাছে এসে পড়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকমের ভাবনা ভাবতে শুরু করেছিলে। তখন মু'মিনগণ কঠিনভাবে পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তাদেরকে তীব্র প্রকম্পনে কাঁপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ক্ষুধার দ্বারা পরীক্ষা : দ্বিতীয়ত পরীক্ষা করা হয় কিছুটা ক্ষুধার দ্বারা। এমন ক্ষুধা নয়, যাতে বিলকুল খাদ্য জোটে না। ফলে অনাহারে মৃত্যু ঘটে। কখনও খাদ্যাভাব হয় ব্যক্তিবিশেষের এবং কখনও হয় এলাকাবিশেষে। অর্থাৎ কোনও এলাকা দুর্ভিক্ষ কবলিত হয়ে পড়ে। ফলে সেই এলাকায় তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। কিন্তু সে অভাব বিশ্বব্যাপী হয় না যে, কোনওভাবেই মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হয় না। ব্যক্তিবিশেষ বা এলাকাবিশেষে অভাব দেখা দেওয়ায় অন্য ব্যক্তি বা অন্য স্থান থেকে খাদ্য আমদানি করে অভাব মেটানোর চেষ্টা করা যায়। যাহোক চূড়ান্ত পর্যায়ের খাদ্যাভাব দ্বারা পরীক্ষা না করা বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ দয়া। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষা নেওয়া উদ্দেশ্য, তাই জানে না মারা হলেও একটা পর্যায়ের খাদ্যকষ্টের সম্মুখীন তো করা হয়ই। সে কষ্ট ব্যক্তিভেদে বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। ব্যক্তি উচ্চপর্যায়ের হলে পরীক্ষাও একটু বেশি কঠিনই হয় বৈকি। তাই সাহাবায়ে কিরামকে ক্ষুধার কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছিল। ওই খন্দকের যুদ্ধেই এমন তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন তাদের হতে হয়েছিল যে, খাদ্যাভাবে তাদের পেটে পাথর পর্যন্ত বাঁধতে হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এ সম্পর্কে কোনও অভিযোগ করেননি। সেই অবর্ণনীয় ক্ষুধার কষ্ট নিয়েই তারা কর্তব্যকর্মে অবিচল থেকেছিলেন। তারা আমাদের আদর্শ। সুতরাং ভয়-ভীতি বা ক্ষুধাকষ্ট দেখা দিলে আমাদেরও কর্তব্য তাদের মত ধৈর্যধারণ করা।
সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা : তৃতীয়ত পরীক্ষা নেওয়া হয় অর্থ-সম্পদের ক্ষতি দ্বারা। অর্থাৎ বান্দাকে অভাব-অনটনে ফেলে পরীক্ষা করা হয় সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, নাকি ধৈর্যহারা হয়ে অন্যের প্রতি ঈর্ষাতুর হয় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। আল্লাহ তা'আলা এ পরীক্ষাও সহনীয় পর্যায়েই নিয়ে থাকেন। এমন কঠিন অভাবে বান্দাকে ফেলেন না, যদ্দরুণ সে সম্পূর্ণরূপে নিরুপায় হয়ে যায় এবং সবরকম প্রয়োজন পূরনে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। হ্যাঁ, বিষয়টা যেহেতু পরীক্ষা, তাই অভাব-অনটনের একটা পর্যায়ের কষ্ট তো হবেই। কিন্তু সেই কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারলে আল্লাহ তাআলা খুশী হন এবং অভাবের স্থলে স্বাচ্ছন্দ্য দান করেন। সাহাবায়ে কিরামের জীবন তো দীর্ঘকাল যাবত অভাব-অনটনের ভেতরেই কেটেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় অধিকাংশ সাহাবারই অবস্থা এমন ছিল যে, তাদের নিম্নাংশে ও ঊর্ধ্বাংশে পরার মত একজোড়া কাপড় ছিল না। হয় কেবল লুঙ্গি ছিল, নয়তো কেবল একটি চাঁদর। কিন্তু এই সুদীর্ঘ জীবনে এ বিষয়ে তাদের মুখে অভিযোগের একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। তারা ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে তাদের সেই অর্থাভাব থাকেনি। ইসলামের দিগ্বিজয় শুরু হয়ে গেলে তাদের জীবনে প্রাচুর্য চলে এসেছিল। অবশ্য তারা তো সাহাবীই ছিলেন। প্রাচুর্যকালে তারা বিলাসী হয়ে পড়েননি। আল্লাহর পথে দু'হাতে খরচ করতেন এবং শোকরগুযার হয়ে থাকতেন। বস্তুত কষ্টে সবর এবং স্বাচ্ছন্দ্যে শোকর, এ-ই ছিল তাদের শান।
প্রাণহানি দ্বারা পরীক্ষা:
চতুর্থত পরীক্ষা করা হয় জানের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। হয়তো চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় সন্তানের মৃত্যু ঘটল কিংবা স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু হয়ে গেল। এরকম পরীক্ষা দ্বারাও আল্লাহ তাআলা বান্দার সবরের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। সমস্ত জানের মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি তাঁর মালিকানাধীন যেকোনও বস্তু যখন ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারেন। সেই নিয়ে যাওয়াকে মেনে নেওয়াই বান্দা হিসেবে প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। শোক প্রকাশ এক জিনিস আর আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া আরেক জিনিস। প্রিয়জনের বিয়োগে শোকার্ত হওয়া আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া ও সবরের পরিপন্থী নয়। প্রতিটি মানুষের অন্তরে আল্লাহ তা'আলা দয়া-মায়া রেখেছেন। কাজেই প্রিয় কারও মৃত্যুতে তার শোকাহত হওয়াই স্বাভাবিক। সবরের পরিপন্থী হচ্ছে বেসামাল হয়ে পড়া, যার আলামত বুক চাপড়ানো, কপাল থাপড়ানো, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা, মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া, ভাগ্যকে নিন্দা করা, আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা, ফিরিশতাকে দোষারোপ করা ইত্যাদি। এসব করার অর্থ সে মনেপ্রাণে আল্লাহর ফয়সালা মেনে নিতে পারেনি। এটাই সবরহীনতা। মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য এসব থেকে বেঁচে থাকা। তবেই সে সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
ফসলহানি দ্বারা পরীক্ষা :
পঞ্চমত পরীক্ষা নেওয়া হয় ফল ও ফসলহানির দ্বারা। হয়তো ঘূর্ণিঝড়ে ফসলের মাঠ তছনছ হয়ে গেল বা বানের পানিতে ক্ষেত-খামার ডুবে গেল কিংবা খরার উত্তাপে ফলের বাগান পুড়ে গেল ইত্যাদি। ফসলহানির একটা দিক এও যে, ক্ষেতের ফসল বা বাগানের ফল যখন পেকে গেল এবং তা ঘরে তোলার সময় হল, ঠিক সেই সময়ে আমীরের পক্ষ থেকে জিহাদের ডাক পড়ল আর ফল ও ফসল সেই অবস্থায় রেখেই বের হয়ে যেতে হল। হয়তো ফিরে আসার পর দেখা গেল
সব নষ্ট হয়ে গেছে বা সামান্যই ঘরে তোলা গেছে। এই যাবতীয় অবস্থাকে আল্লাহর ফয়সালায় মেনে নিয়ে মনেপ্রাণে সন্তুষ্ট থাকা গেলে সবরের পরীক্ষায় পাশ বলে গণ্য হয়। পক্ষান্তরে এ অবস্থায় যদি ভাগ্যকে দোষারোপ করা হয় বা মুখে অসমীচীন কথাবার্তা বলা হয়, তা হবে সবরের পরিপন্থী।
প্রকাশ থাকে যে, কোনও কোনও ব্যাখ্যাতা وَالثَّمَراتِ (ফল ও ফসল)-এর দ্বারা সন্তান-সন্তুতি বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা সন্তান-সন্ততির মৃত্যু দ্বারাও পিতামাতাকে পরীক্ষা করে থাকেন। সন্দেহ নেই পিতামাতার পক্ষে তাদের সন্তান- সন্তুতি শ্রেষ্ঠতম ফলই বটে। এই ফল নিয়ে যাওয়া হলে তাদের পক্ষে সেই বিয়োগ বেদনা অত্যন্ত কঠিন হয়। কঠিন হওয়া সত্ত্বেও যারা ধৈর্যের পরিচয় দেয়, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অপরিমিত পুরস্কার দান করেন। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
سنن الترمذي ت شاكر (3/ 332)
" إذا مات ولد العبد قال الله لملائكته: قبضتم ولد عبدي، فيقولون: نعم، فيقول: قبضتم ثمرة فؤاده، فيقولون: نعم، فيقول: ماذا قال عبدي؟ فيقولون: حمدك واسترجع، فيقول الله: ابنوا لعبدي بيتا في الجنة، وسموه بيت الحمد "
"যখন কোনও বান্দার সন্তান মারা যায় আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তান কবজা করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা কি তার হৃদয়ের ফল নিয়ে এসেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তা'আলা জিজ্ঞেস করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ পড়েছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর। তার নাম দাও বায়তুল হামদ (প্রশংসার ঘর)।
যারা আল্লাহ তা'আলার যতবেশি প্রিয়, তাদের পরীক্ষাও তত কঠিন হয়ে থাকে। সুতরাং সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল নবী-রাসূলগণের। তারপর সাহাবায়ে কিরামের। তারপর নবী-রাসূলগণের আদর্শ অনুসরণে যারা তাদের যতবেশি ঘনিষ্ঠ, তাদের পরীক্ষাও সেই অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এরকম পরীক্ষার বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। সেই অনুযায়ী আমরা যারা সাধারণ, তাদের পরীক্ষা অনেক সহজ। আমাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এটাও এক মেহেরবানী যে, তাদের মত কঠিন পরীক্ষায় আমাদের ফেলেন না। এজন্য আমাদের অনেক বেশি শোকর আদায় করা দরকার। সেইসংগে দরকার তাদের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়ে সবরের পরীক্ষায় যাতে উত্তীর্ণ হতে পারি সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা আছে। আলোচ্য আয়াতেরই শেষে ইরশাদ হয়েছে-
{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ (155)} [البقرة: 155]
অর্থ : যারা সবর অবলম্বন করে তাদেরকে সুসংবাদ শোনাও।' বাকারাঃ ১৫৫

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এর তাৎপর্য ও ফযীলত
সবরকারী কারা, আল্লাহ তা'আলা পরের আয়াতে তাদের পরিচয় প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
{الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ (156)} [البقرة: 156]
অর্থ : যারা তাদের কোনও মুসিবত দেখা দিলে বলে ওঠে, 'আমরা সকলে আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। বাকারাঃ ১৫৬
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছ থেকে যা-কিছুই নিয়ে নেন, তা অর্থ-সম্পদ হোক বা সন্তান-সন্ততি, তারা আল্লাহ তাআলার ফয়সালা হিসেবে তা মনেপ্রাণে মেনে নেয় এবং বলে, সমস্ত জানমালের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলাই এবং আল্লাহ তাআলা আমার নিজেরও মালিক। তিনি যাকে যা ইচ্ছা দান করেন আবার যখন ইচ্ছা নিয়ে নেন। মালিকের তার নিজ দেওয়া সম্পদ এবং সৃষ্টিকর্তার পক্ষে তাঁর নিজ সৃষ্টি যে-কোনও সময় নিয়ে নেওয়ার অধিকার আছে। সে নিয়ে যাওয়াটা কোনোক্রমেই অন্যায় নয়; বরং তাতে আপত্তি করাই অন্যায়। তাঁর দানের মধ্যেও হিকমত থাকে এবং হিকমত থাকে নিয়ে নেওয়ার মধ্যেও। একটা বড় হিকমত তো পরীক্ষা করা। আল্লাহ তা'আলা এর মাধ্যমে পরীক্ষা করেন বান্দা কতটুকু ধৈর্যধারণ করছে। ধৈর্যধারণ করতে পারলে তিনি যা নেন তারচে' অনেক বেশি দান করেন। তিনি দান করেন দুনিয়ায়ও এবং আখিরাতেও। আখিরাতের দানই শ্রেষ্ঠতম দান। সেই শ্রেষ্ঠতম দান লাভের আশায় আমি তাঁর এ নিয়ে যাওয়াকে সর্বান্তকরণে মেনে নিলাম। তিনি চাইলে যে-কোনও সময় আমাকেও নিয়ে যেতে পারেন। আর একদিন তো আমাকে তাঁর কাছে চলে যেতেই হবে। কাজেই যারা চলে গেছে তাদের জন্য আক্ষেপ না করে আমার কর্তব্য নিজের চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সক্ষম হলে আল্লাহর কাছে চলে যাওয়া নেককারদের সংগে আমি গিয়ে মিলিত হতে পারব। এটাই إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ এর তাৎপর্য। এ বাক্যটি অত্যন্ত মূল্যবান। এটা সবরকারীর সবরের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে এ উম্মতকে এ বাক্যটি দান করেছেন। এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَعْطِبَتْ أُمَّتِي شَيْئًا لَمْ يُعْطَهُ أَحَدٌ مِنَ الْأُمَمِ عِنْدَ الْمُصِيبَةِ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
'আমার উম্মতকে একটা জিনিস দেওয়া হয়েছে, যা আর কোনও উম্মতকে দেওয়া হয়নি। তা হল, বিপদ ও মুসিবতের সময় বলা- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি'উন।

সবরকারীর পুরস্কার
বস্তুত কথায় ও কর্মে যারা “ইন্না লিল্লাহ'-এর পাঠ ও শিক্ষা অবলম্বন করতে পারে। তারাই প্রকৃত সবরকারী । এরকম সবরকারীর জন্যে উপরে যে সুসংবাদের কথা বলা হয়েছে, সামনের আয়াতে সেই সুসংবাদের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে যে-
{أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ (157)} [البقرة: 157]
অর্থ : এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ করুণা ও দয়া রয়েছে এবং এরাই আছে হিদায়াতের উপর। বাকারাঃ ১৫৭
এদের তিনটি পুরস্কারের কথা এখানে ঘোষিত হয়েছে। হযরত উমর ফারূক রাঃ এর ভাষায়- “কতই না চমৎকার পাশাপাশি দুই দান। (ক) বিশেষ করুণা ও (খ) দয়া। এবং কতই না চমৎকার অতিরিক্ত দান হিদায়াতপ্রাপ্তি।”

তিন নং আয়াত
{إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ (10) } [الزمر: 10]
অর্থ : যারা সবর অবলম্বন করে, তাদেরকে তাদের ছওয়াব দেওয়া হবে অপরিমিত। যুমারঃ ১০

ব্যাখ্যা
কুরআন ও হাদীছে বিভিন্ন আমলের বিভিন্ন ছওয়াবের কথা ঘোষিত হয়েছে, যেমন আল্লাহ তা'আলার পথে দান করলে তার ছওয়াব সাতগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত কিংবা তারও বেশি বৃদ্ধি করা হয়। কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করলে প্রত্যেক হরফে এক নেকী দেওয়া হয়, যা বৃদ্ধি করে দশ নেকীতে পরিণত করা হয়। আলোচ্য আয়াতে সবর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা তার ছওয়াব দান করেন বিনা হিসাবে, সাতশ' বা সাত হাজার গুণ নয়, কোনও পাত্র দ্বারা মেপে নয় কিংবা দাড়িপাল্লা দ্বারা ওজন করেও নয়। বিনা হিসাবে যখন, তখন কী দেওয়া হবে তা কেবল আল্লাহ তাআলা জানেন। কোনও মানুষের পক্ষে তা কল্পনা করা সম্ভব নয়। এজন্যই আবু উছমান মাগরিবী রহ. বলেন, সবরের বদলার উপর আর কোনও বদলা নেই।

চার নং আয়াত
{ وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (43)} [الشورى: 43
অর্থ : প্রকৃতপক্ষে যে সবর অবলম্বন করে ও ক্ষমা প্রদর্শন করে, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। শুরাঃ ৪৩

ব্যাখ্যা
কারও উপর যদি জুলুম করা হয় আর তার প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয় ও ধৈর্যধারণ করে, তবে তা অতি বড় পুণ্যের কাজ। এরূপ করা কেবল উঁচু হিম্মত ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ ও মনকে সংযত করার মত ক্ষমতা রাখে না, তার পক্ষে সহজে ক্ষমা করা সম্ভব হয় না। সে উত্তেজনাবশে প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে এবং সেই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক সময়ই তার দ্বারা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। ফলে মজলুম ব্যক্তি উল্টো জালিমে পরিণত হয়। জালিম হওয়া অপেক্ষা মজলুম হয়ে থাকা ঢের ভালো। কারণ মজলুম ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হয় আর জালিমের প্রতি আল্লাহর ক্রোধ নিপতিত হয়। সেই ক্রোধ থেকে বাঁচা ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রত্যেকের কর্তব্য ক্ষমাপ্রবণ হওয়া ও ধৈর্যধারণ করা। এটা যেহেতু দৃঢ় হিম্মত ও মনোবলের উপর নির্ভর করে, তাই অন্তরে এ গুণ পয়দা করার জন্যে সম্ভাব্য সকল পন্থা অবলম্বন করা উচিত, যেমন ক্ষমাপ্রবণ ও মনোবলসম্পন্ন ব্যক্তির সাহচর্য অবলম্বন করা, তাদের ঘটনাবলী পাঠ করা, ধৈর্যধারণ ও ক্ষমার ফযীলত সম্পর্কে অবহিত হওয়া ইত্যাদি।
প্রকাশ থাকে যে, ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে জালিম ও অপরাধী ব্যক্তির স্পর্ধা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ক্ষমা না করে প্রতিশোধ গ্রহণও জায়েয; বরং ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিশোধ নেওয়া উত্তম, যেমন এর আগের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
{وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ (39) وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ (40)} [الشورى: 39، 40]
অর্থ : এবং যখন তাদের প্রতি কোনও জুলুম করা হয়, তখন তারা তা প্রতিহত করে। মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। শুরাঃ ৩৯-৪০
তবে মন্দের বদলা যেহেতু অনুরূপ মন্দ অর্থাৎ জালিম যে পরিমাণ জুলুম ও কষ্টদান করে, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাকেও সমপরিমাণ কষ্টই দেওয়া যাবে, এর বেশি নয়। তাই প্রতিশোধ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, যাতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে জুলুম না হয়ে যায়। সেজন্যই সাধারণ অবস্থায় প্রতিশোধগ্রহণ অপেক্ষা ক্ষমা করাই শ্রেয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য উলামায়ে কিরামের শরণাপন্ন হওয়া কর্তব্য।

পাঁচ নং আয়াত
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ (153) } [البقرة: 153]
অর্থ : হে মুমিনগণ! সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য লাভ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন। বাকারাঃ ১৫৩

ব্যাখ্যা
এ আয়াতে মানুষকে তার যাবতীয় বিষয়ে দু'টি কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। একটি হল সবর, দ্বিতীয়টি নামায। সবর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার হুকুম-আহকাম পালন, নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিহার ও বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারে সাহায্য লাভ হয়। এক তো তাতে অন্তরে দৃঢ়তা আসে ও সাহস সঞ্চার হয়। ফলে কষ্টের ভেতরেও ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ হয়, শত প্রলোভনেও গুনাহ থেকে বাঁচা যায় এবং বিপদ-আপদে নিজেকে সংযত রাখা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত সবর করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন। ফলে উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই তিনি বান্দাকে সাহায্য করেন। তিনি তো বলেই দিয়েছেন- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সংগে আছেন। আল্লাহ যার সংগে, তার আর কিসের প্রয়োজন? যিনি আসমান-যমীনের মালিক, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তিনি সংগে থাকলে আর কিসের ভয়? জগতে এমন কোন শক্তি আছে, আল্লাহ সংগে থাকলে যার পরওয়া করতে হবে? এমন কোন শত্রু আছে, আল্লাহর মোকাবেলায় যে কোনও কিছু করার ক্ষমতা রাখে? কিংবা এমন কী বিপদ আছে, আল্লাহর সাহায্যে যা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব নয়? সুতরাং "আল্লাহ সবরকারীর সংগে", একজন বান্দার পক্ষে এরচে' বড় কোনও সুসংবাদ হতে পারে না এবং এরচেয়ে বড় আশ্বাসবাণীও আর কিছু থাকতে পারে না। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
وَاعْلَمْ أَنَّ النَّضْرَ مَعَ الصَّبْرِ وَ أَنَّ الْفَرَحْ مَعَ الْكَرْبِ وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسرًا ‘
জেনে রেখ, আল্লাহর সাহায্য সবরের সাথে, স্বস্তি-সাবলীলতা কষ্ট-ক্লেশের সাথে এবং সহজতা কাঠিন্যের সাথে। মুসনাদে আহমদঃ ২৮০৪
নামায আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভের প্রকৃষ্ট উপায়। নামাযে বান্দা আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়। তাঁর সামনে নতিস্বীকার করে। তার কাছে নিজ ক্ষুদ্রতা ও বন্দেগীভাব প্রকাশ করে। আর এভাবে আল্লাহর সংগে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ অবস্থায় সে তার সর্বাপেক্ষা বেশি কাছে চলে যায়। তখন সে আল্লাহর কাছে যা-ই প্রার্থনা করে তা অতি সহজে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং দুনিয়াবী ও দীনী যে-কোনও প্রয়োজনই দেখা দেয় তা পুরণের জন্য বান্দার উচিত নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের নীতিও এ রকমই ছিল। হাদীছে এসেছে,
إِذا حَرْبَهُ أَمْرُ صَلَّى
যখনই কোনও বিষয় তাঁকে বিচলিত করে তুলত, তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন।- আবু দাউদঃ ১২১৩

ছয় নং আয়াত

{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ (31)} [محمد: 31]
অর্থ : (হে মুসলিমগণ!) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যাতে দেখে নিতে পারি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল। মুহাম্মদঃ ৩১

ব্যাখ্যা
আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে দীনের জন্য জিহাদ ও সংগ্রাম করার এবং জান-মাল খরচের যে হুকুম দিয়েছেন, এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তার কারণ বর্ণনা করেছেন যে, এর মাধ্যমে তিনি বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা করেন যে, কে কঠিন কষ্ট-ক্লেশ সত্ত্বেও আল্লাহর হুকুম পালনে রত থাকে, অর্থব্যয়ে কোনও কার্পণ্য করে না এবং প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করে না, আর কে অধৈর্য হয়ে পড়ে, ফলে এসব হুকুম পালনে গড়িমসি করে ও পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে?
প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ তা'আলা তো 'আলিমুল গায়ব', তিনি প্রকাশ্য-গুপ্ত যাবতীয় বিষয় জানেন, সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল, তা সত্ত্বেও এ আয়াতে এ কথা বলার অর্থ কী যে, যাতে আমি জানতে পারি, কে তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ এবং ধৈর্যশীল?
এর উত্তর এই যে, এখানে জানা অর্থ জ্ঞাত বিষয়কে প্রকাশ করা। অর্থাৎ তিনি তো জানেনই কোন ব্যক্তি কালক্ষেপণ না করে এবং কোনওরকম গড়িমসিতে লিপ্ত না হয়ে পূর্ণোদ্যমে দীনের পথে জিহাদ ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং অকাতরে জান-মাল কুরবান করবে, আর কে গা বাঁচানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মানুষের তা জানা না থাকায় অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং মুনাফিক শ্রেণীর লোক সেই সুযোগ গ্রহণ করে। তাই অনেক সময় পরিবেশ-পরিস্থিতির দাবি হয়, আল্লাহর জানা বিষয়কে মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া। তা প্রকাশ করার ভেতর এ ছাড়া আরও বহুবিধ হিকমত নিহিত আছে। তো এই প্রকাশ করে দেওয়াকেই আয়াতে 'জানা' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইমাম নববী রহ. সবরের ফযীলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে এই ছয়টি আয়াত এখানে উল্লেখ করেছেন। কুরআন মাজীদে এ বিষয়ে আরও বহু আয়াত আছে। মনোযোগী তিলাওয়াতকারীর নজরে মাঝেমধ্যেই এ রকমের আয়াত পড়ে যায়, যা দ্বারা তার ক্ষণে- ক্ষণে সবরের শিক্ষালাভের সুযোগ হয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সেই শিক্ষা অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। এবার আমরা সবর সংক্রান্ত হাদীছসমূহ পাঠ করছি।
২৫। ধৈর্য সম্পর্কে কয়েকটি হাদীছ ; সবর, নামায, রোযা ইত্যাদির ফযীলতঃ

হযরত আবু মালিক আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। "আলহামদুলিল্লাহ" মীযান ভরে ফেলে। “সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ" আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান ভরে ফেলে। 'সালাত' নূর। 'সদাকা' প্রমাণ। 'সবর' আলো। কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ সকালবেলা বের হয়, অতঃপর নিজেকে বিক্রি করে, যাতে সে হয়তো নিজেকে মুক্ত করে, নয়তো নিজেকে ধ্বংস করে- মুসলিম। (মুসলিম হাদীস নং ২২৩)
3 - باب الصبر
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا} [آل عمران: 200]، وقال تعالى: {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الأَمْوَالِ وَالأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ} [ص:24][البقرة: 155]، وَقالَ تَعَالَى: {إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَاب} [الزمر:10]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الأُمُورِ} [الشورى: 43]، وَقالَ تَعَالَى: {اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِينَ} [البقرة: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ} [محمد: 31]، وَالآياتُ في الأمر بالصَّبْر وَبَيانِ فَضْلهِ كَثيرةٌ مَعْرُوفةٌ.
25 - وعن أبي مالكٍ الحارث بن عاصم الأشعريِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمان، والحَمدُ لله تَمْلأُ الميزَانَ، وَسُبْحَانَ الله والحَمدُ لله تَملآن - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَينَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ، والصَّلاةُ نُورٌ، والصَّدقةُ بُرهَانٌ، والصَّبْرُ ضِياءٌ، والقُرْآنُ حُجةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ (1). كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائعٌ نَفسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُها». رواه مسلم. (2)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। সর্বপ্রথম তুলে ধরা হয়েছে ' ত্বহারাত' (পবিত্রতা)-এর গুরুত্ব। বলা হয়েছে ত্বহারাত ঈমানের অর্ধেক। কি হিসেবে ত্বহারাত ঈমানের অর্ধেক, তার বিভিন্ন ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন-

পাক-পবিত্রতার ফযীলত
ক. ত্বহারাত ছাড়া ঈমানের আর যত শাখা-প্রশাখা আছে, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকর তিলাওয়াত, দান-খয়রাত ইত্যাদি, তা মানুষের আত্মাকে পবিত্র করে। আর ত্বহারাত দ্বারা পবিত্র হয় মানুষের দেহ। দেহ ও আত্মার সমষ্টিই হল মানুষ । তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষের অর্ধাংশ পবিত্র হয় ত্বহারাত দ্বারা আর বাকি অর্ধেক অন্যান্য ইবাদত দ্বারা। এই হিসেবে ঈমান তথা ঈমানের কার্যাবলী দুই ভাগে বিভক্ত হল। একভাগ দ্বারা মানুষের জাহের পবিত্র হয়, অন্যভাগ দ্বারা পবিত্র হয় মানুষের বাতেন। তাই বলা হয়েছে 'ত্বহারাত ঈমানের অর্ধেক'।

খ. ঈমান দ্বারা নামায বোঝানো হয়েছে, যেমন সুরা বাকারার আয়াত-

وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيْمَانَكُمْ

*আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের ঈমান নিষ্ফল করে দেবেন। - এর ঈমান শব্দ দ্বারা নামায বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কিবলা পরিবর্তনের আগে তোমর বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে যেসব নামায পড়েছ, আল্লাহ তা নিষ্ফল করবেন না তদ্রূপ এ হাদীছেও ঈমান দ্বারা নামায বোঝানো হয়েছে। অর্থ দাঁড়ায়- ত্বহারাত নামাযের অর্ধেক, যেহেতু ত্বহারাত ছাড়া নামায হয় না।

গ. এক হাদীছে আছে, যে-কোনও মুসলিম পরিপূর্ণ ত্বহারাতের সাথে পাঁচ ওয়া নামায পড়ে, তার ওইসকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়, যা এর ওয়াক্তসমূহের মাঝখানে হ যায়। দেখা যাচ্ছে গুনাহ মাফ হয় ত্বহারাত ও নামায- এ দুইয়ের সমষ্টি দ্বারা। সুতর গুনাহ হতে ক্ষমাপ্রাপ্তির দিক থেকে ত্বহারাত ঈমানের তথা নামাযের অর্ধেক।

ঘ. নামায বেহেশতের চাবি। আবার ওযু নামাযের চাবি। তাহলে ওষু ও নামায এ দুইয়ের সমষ্টি দ্বারা জান্নাতের দুয়ার খোলা হয়, যা কিনা ঈমানের লক্ষবস্ত্র। সেই হিসেবে ত্বহারাত ঈমানের অর্ধেক হল।

ঙ. ত্বহারাত তথা ওযু, গোসল ও তায়াম্মুম দ্বারা যে ছওয়াব লাভ হয়, সে ছওয়াব বৃদ্ধি পেতে পেতে ঈমান দ্বারা অর্জিত ছওয়াবের অর্ধেক বরাবর হয়ে যায়।

চ. পবিত্রতাকে ব্যাপক অর্থেও ধরা যেতে পারে। তার মানে জাহিরী ও বাহিনী উভয় প্রকার পবিত্রতা। জাহিরী পবিত্রতা অর্জিত হয় ওযু, গোসল ও তায়াম্মুম দ্বারা। আর বাতিনী তথা আত্মিক পবিত্রতা অর্জিত হয় শিরক ও পাপাচার পরিহার দ্বারা। এই উভয়বিধ পবিত্রতা দ্বারা মানুষের পূর্ণাঙ্গ পরিশুদ্ধি লাভ হয়। বাকি থাকল শোভা ও সৌন্দর্যবিধানের ব্যাপার। তা সম্পন্ন হয় নামায, রোযা, যিকর, তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা। এভাবে মানব-জীবনে ঈমানের পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

ছ. আবার এমনও বলা যায়, মানুষের করণীয় কাজ দু'প্রকার। একটা অর্জনমূলক, আরেকটা বর্জনমূলক। এ দুইয়ের সমন্বিত রূপই ঈমান। আল্লাহ তা'আলা যা করার আদেশ করেছেন সেগুলো করাই হল অর্জনমূলক কাজ। আর আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন সেগুলো হতে বিরত থাকা হচ্ছে বর্জনমূলক কাজ। সেই বর্জনমূলক কাজসমূহ দ্বারা মানুষের শরীর ও মন পবিত্র হয়। এই হিসেবেই বলা হয়েছে, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

জ. ত্বহারাত দ্বারা ইখলাসও বোঝানো যেতে পারে। অর্থাৎ ঈমানের এক হল। মৌখিক স্বীকৃতি- নিজেকে মু'মিন ও মুসলিমরূপে প্রকাশ করা। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে একজন ব্যক্তি মু'মিনরূপে বিবেচিত হয়, তাতে তার অন্তরে বিশ্বাস থাকুক বা নাই থাকুক। কিন্তু আল্লাহর কাছে মু'মিন সাব্যস্ত হওয়ার জন্যে ইখলাস ও মনের বিশ্বাস ও জরুরি। অন্যথায় সে আখিরাতে মুক্তি পাবে না। তাহলে পরিপূর্ণ ঈমান অর্থাৎ যেই ঈমান দ্বারা আখিরাতে মুক্তিলাভ হবে, তার অর্ধেক হচ্ছে ইখলাস, যাকে 'ত্বহারাত' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ত্বহারাত শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এ কথা বোঝানোর জন্য যে, তার মুখের স্বীকারোক্তি মুখের কথামাত্র নয়; বরং তার প্রকৃত ঈমান, যা লোকদেখানোর মনোভাব ও মুনাফিকীর আবিলতা থেকে পবিত্র।

‘আলহামদুলিল্লাহ' বলার ফযীলত
হাদীছের দ্বিতীয় বাক্যে বলা হয়েছে, 'আলহামদুলিল্লাহ' মীযান ভরে ফেলে। আলহামদুলিল্লাহ অর্থ 'সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর'। একথা বলে আল্লাহ তা'আলার যাবতীয় গুণাবলীর প্রতি ঈমানের স্বীকারোক্তিদান, তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তাঁর প্রদত্ত নি'আমতসমূহের জন্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। সমস্ত প্রশংসা বলতে ফিরিশতা, মানুষ ও জিন্নসহ কুল মাখলুকের মুখে আদায়কৃত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমুদয় প্রশংসা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর যে প্রশংসা করা হয় তা তো আল্লাহরই, আর যে সকল প্রশংসা কোনও সৃষ্টিকে লক্ষ্য করে করা হয়ে থাকে তাও মূলত আল্লাহরই প্রশংসা। কেননা মানবজগত, জড়জগত ও উদ্ভিতজগত থেকে শুরু করে নভোমণ্ডল, নক্ষত্রমণ্ডল ও ফিরিশতা জগত পর্যন্ত ও প্রতিপালন আল্লাহ তা'আলারই কাজ। সমস্ত মাখলুক আল্লাহরই সৃষ্টি আর তাদের যাবতীয় গুণ তাঁরই প্রদত্ত। কাজেই এর কোনওটির প্রশংসা করলে তাতে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলারই প্রশংসা করা হয়। বস্তুত আল্লাহ তা'আলার যথার্থ প্রশংসা কোনও সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়, যেহেতু আল্লাহ তাআলার যাবতীয় গুণ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান আয়ত্ত করা আমাদের সাধ্যাতীত এবং তাঁর সৃষ্টির বিপুলতা সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ ধারণালাভ অসম্ভব। এ জন্যেই নবী কারীম সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

اللهم لا تحصي ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك

হে আল্লাহ! আমরা তোমার পুরোপুরি প্রশংসা করতে সক্ষম নই। তুমি নিজে নিজের যেমন প্রশংসা করেছ, তুমি তেমনই।
আল্লাহ তা'আলার যে-কোনও নি'আমত ভোগের পর তাঁর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন হাদীছে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যেমন এক হাদীছে আছে- “ যে ব্যক্তি এক লোকমা খাবার খায় বা এক ঢোক পানি পান করে, তারপর আলহামদুলিল্লাহ বলে, তার অতীতের সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
আর এ হাদীছে তো বলাই হয়েছে যে, আলহামদুলিল্লাহ মীযান ভরে ফেলে। মীযান বলতে ওই তুলাদণ্ড বোঝানো হয়েছে, যা দ্বারা বান্দার আমল পরিমাপ করা হবে। সেটি কেমন, কী তার রূপ, ইহজগতে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। কুরআন ও হাদীছে আমাদেরকে মীযান দ্বারা পরিমাপ করার কথা অবগত করা হয়েছে। আমরা তাতে বিশ্বাস রাখি। এর বেশি খোঁড়াখুঁড়ি করার কোনও প্রয়োজন আমাদের নেই।
বান্দার আমল বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোনও আমল হয় অন্তর দ্বারা, যেমন অন্তরের বিশ্বাস। কোনওটি মুখের দ্বারা, যেমন যিকর ও তিলাওয়াত। কোনওটি অন্যান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা, যেমন পা দিয়ে মসজিদের দিকে চলা, হাত দ্বারা এতিমের মাধ্য হাত বুলানো, কান দ্বারা কুরআন তিলাওয়াত শোনা ইত্যাদি। এসব আমল কিভাবে পরিমাপ করা হবে তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। আমরা এর সত্যতায় বিশ্বাস রাখি বিশেষত বর্তমানকালে যখন বাতাসের ওজন মাপা হচ্ছে, শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা যায় এবং শীত ও তাপ পরিমাপের ব্যাপারটাও আমরা সবাই জানি, তখন বান্দার যাবতীয় আমল পরিমাপ করা যায় এমন কোনও যন্ত্র সৃষ্টি করা আল্লাহর পক্ষে কঠিন হবে কেন? 'আলহামদুলিল্লাহ' কিভাবে মীযান ভরে ফেলবে তার স্বরূপও আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। হতে পারে এর ছওয়াব এত বেশি, যা মীযান ভরে ফেলবে। অথবা আলহামদুলিল্লাহকে বিশেষ কোনও রূপ দান করা হবে, যা দ্বারা মীযান ভরে যাবে।

'সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ' বলার ফযীলত
তৃতীয় বাক্যে বলা হয়েছে- "সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ' আসমান-যমীনের মধ্যবর্তী স্থান ভরে ফেলে। সুবহানাল্লাহ অর্থ 'আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। অর্থাৎ তিনি যাবতীয় নাম ও গুণাবলী এবং সমস্ত কাজ ও বিধানাবলীতে সর্বপ্রকার দোষ- ত্রুটি থেকে মুক্ত। আর আলহামদুলিল্লাহ দ্বারা জানানো হয় যে, তিনি সমস্ত সৎগুনের অধিকারী। এই উভয়টি দ্বারা আল্লাহ তা'আলার যিকর ও স্মরণ পরিপূর্ণতা লাভ করে। সে কারণেই এর ছওয়াব এত বেশি। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা জানা যায়। আল্লাহ তা'আলার প্রত্যেকটি সৃষ্টি এ যিকর করে থাকে, যেমন ইরশাদ হয়েছে-

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ

‘সাত আসমান ও যমীন এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত সৃষ্টি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে, এমন কোনও জিনিস নেই, যা তাঁর সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বুঝতে পার না।' বনী ইস্রাইল-৪৪

নামায দুনিয়া ও আখিরাতের নূর
তারপর বলা হয়েছে 'নামায নূর'। ইবনে মাজাহ শরীফে আছে, নামায মুমিনের নূর। তার পক্ষে এ নূর যেমন আখিরাতে তেমনি দুনিয়ায়ও। নামায দ্বারা দুনিয়ায় মু'মিনদের আত্মা আলোকিত হয় ও তার অন্তর্দৃষ্টি হয় উদ্ভাসিত। এ কারণেই মুমিন মুত্তাকীগণ সর্বদা নামায আদায়ে যত্নবান থাকতেন। নামাযে তাদের প্রাণ জুড়াত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-

جُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ

"নামাযের ভেতর আমার নয়নপ্রীতি রাখা হয়েছে (অর্থাৎ নামায দ্বারা চোখ জুড়ায়)।”

তাছাড়া নামায এই হিসেবেও মু'মিনের নূর যে, নূর বা আলো দ্বারা যেমন পথ দেখা ফলে পথের খানাখন্দ থেকে আত্মরক্ষা করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছা যায়, তেমনি মা দ্বারাও অন্যায়-অশ্লীল কাজ থেকে হেফাজত করে নিজেকে তাকওয়ার উচ্চস্তরে পৌছানো যায়। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ-

أقم الصلوة إِنَّ الصَّلوةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَ الْمُنكَرِ

অর্থ : নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।

আখিরাতে যে নামায নূর ও আলো হিসেবে উপকারে আসবে, বিভিন্ন হাদীছে তা বর্ণিত হয়েছে। অন্ধকার কবরে নামায মু'মিনদের আলো দান করবে। কিয়ামতের ময়দানে মুমিন ব্যক্তি নামাযের আলো পাবে। নামাযী ব্যক্তি বিদ্যুতের মত পুলসিরাত পার হবে। বিশেষত অন্ধকার রাতে যে ব্যক্তি যতবেশি নামাযে যাবে, কিয়ামতে সে ততবেশি আলোর অধিকারী হবে। এক হাদীছে ইরশাদ-

بشرِّ المشائينَ في الظلمِ إلى المساجدِ، بالنورِ التامِّ يومَ القيامةِ

"যারা গভীর অন্ধকারেও বেশি বেশি মসজিদে যায়, তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ আলোর সুসংবাদ দাও।

সদাকা যাকাত ঈমানের দলীল
তারপরে বলা হয়েছে ‘সদাকা (যাকাত) প্রমাণ' অর্থাৎ ঈমানের দলীল। প্রকৃত মুমিনই তার সম্পদের যাকাত দিয়ে থাকে। যার অন্তরে ঈমানের দুর্বলতা আছে, সে যাকাত দিতে গড়িমসি করে। কেননা অর্থ-সম্পদের প্রতি মানুষের আসক্তি স্বভাবগত। তাই সে অর্থব্যয়ে কার্পণ্য করে। কিন্তু যার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান আছে, যে তাঁর পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির সতর্কবাণীতে বিশ্বাস রাখে, সে স্বেচ্ছায় খুশিমনে যাকাত আদায় করে। সুতরাং যাকাত আদায় করাটা তার ঈমানের প্রমাণ বহন করে। কেউ বলেন , কিয়ামতে যখন জিজ্ঞেস করা হবে সে তার মালের যাকাত আদায় করেছে কি না আর সে উত্তরে যাকাত আদায় করার কথা বলবে, তখন তার প্রদত্ত যাকাত তার কথার সত্যতা প্রমাণ করবে। কারও মতে কিয়ামতে যাকাত আদায়কারী ব্যক্তির এমন কোনও নিদর্শন থাকবে, যা তার যাকাত আদায়ের প্রমাণ বহন করবে। ফলে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেসই করা হবে না, যেমন হযরত উকবা ইবন আমির রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

كُلِّ امْرِي فِي ظِلٍّ صَدَقَتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقْضى بَيْنَ النَّاسِ

'প্রত্যেক ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার সদাকার (যাকাতের) ছায়াতলে থাকবে, যাবত না মানুষের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন হয়।” তো ওই ছায়া সে ব্যক্তির ঈমান ও ইখলাসের পক্ষে দলীল হবে।

সবর জীবনের আলো
তারপর বলা হয়েছে 'সবর আলো'। এখানে সবর শব্দটি বিশেষ অর্থেও হতে পারে এবং সাধারণ অর্থেও। সাধারণ অর্থে হলে (ক) আল্লাহর ইবাদতে যত্নবান থাকা, (খ) গুনাহ হতে বিরত থাকা এবং (গ) বিপদ-আপদ ও কষ্ট-ক্লেশে আত্মনিয়ন্ত্রণ করায় ধৈর্যধারণ বোঝাবে। এই হিসেবে অর্থ হবে- ধৈর্য ধারণের পরিণতি উত্তম ও আলোময় হয়ে থাকে। বিপদ-আপদ ও কষ্ট-ক্লেশকে অন্ধকারের সংগে তুলনা করা হয়। ঘোর বিপদে বলা হয়ে থাকে চোখে অন্ধকার দেখছি। ধৈর্যধারণ করলে এক পর্যায়ে বিপদ দূর হয়ে অন্ধকার ঘুচে যায়। ধৈর্যের যে তিনটি ক্ষেত্র বলা হল, এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু কষ্ট অবশ্যই আছে। ধৈর্যধারণ করতে থাকলে এক পর্যায়ে তিনওটি বিষয় আসান হয়ে যায় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে এর সুফল লাভ হয়। সেই আসান ও সুফলকেই হাদীছে 'আলো' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিশেষ অর্থে সবর দ্বারা রোযাও বোঝানো হয়ে থাকে। কারও মতে এখানে সেই অর্থ বোঝানোই উদ্দেশ্য। তার একটা ইঙ্গিত এর দ্বারাও পাওয়া যায় যে, এর আগে নামায ও যাকাতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তার পাশাপাশি এস্থলে যে রোযার ফযীলত বর্ণিত হয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। রোযার ভেতরে সবরের অর্থও পুরোপুরি বিদ্যমান। সবর মানে আটকে রাখা। রোযায় নিজেকে পানাহার করা ও যৌনচাহিদা পূরণ থেকে আটকে রাখা হয়। এসব কাজের সর্বরকম প্রলোভন সত্ত্বেও নিজেকে সংযত রাখা হয়। সুতরাং রোযা সবরই বটে। রোযায় মনের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। তাই যথাযথ রোযা রাখার জন্যে কঠোর মুজাহাদা ও সাধনা দরকার হয়। সেই হিসেবে রোযার ভেতর সবরের তিনও প্রকারই উপস্থিত থাকে। এক তো ইবাদতের সবর, দ্বিতীয়ত গুনাহ থেকে বাঁচার সবর, তৃতীয়ত কষ্ট-ক্লেশের সবর। সুতরাং রোযা সবরের পূর্ণাঙ্গ রূপ। তাই এর পুরস্কার হচ্ছে আলো। অর্থাৎ রোযার ফলে অন্তরে আলো জন্ম নেয়। এর দ্বারা অন্তদৃষ্টি জ্যোতির্ময় হয়। আর আখিরাতেও রোযা আলো হয়ে বান্দার প্রভূত উপকারে আসবে।
প্রকাশ থাকে যে, নামায দ্বারা যে আলো লাভ হয়, এ হাদীছে তাকে 'নূর' (نُور) বলা হয়েছে। আর সবরের আলোকে বলা হয়েছে 'যিয়া' (ضِيَاء)। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এই যে, নূর অপেক্ষা যিয়ার আলো বেশি তীব্র ও উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এ জন্যেই কুরআন মাজীদে সূর্যের আলোকে 'যিয়া' এবং চাঁদের আলোকে 'নূর' বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

هو الذي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاء وَ الْقَمَرَ نُورًا

“তিনিই আল্লাহ, যিনি সূর্যকে রশ্মিময় ও চন্দ্রকে জ্যোতিপূর্ণ করেছেন। -ইউনুসঃ ০৫

সবর শব্দটি যদি ব্যাপকার্থে হয়ে থাকে, তবে এর আলো যে নূর হবে সেটাই স্বাভাবিক। কারণ সে ক্ষেত্রে গোটা শরী'আতই সবরের আওতায় এসে পড়ে, রোযাও যার অন্তর্ভুক্ত। আর যদি বিশেষ অর্থে হয় অর্থাৎ এর দ্বারা কেবল রোযা বোঝানো হয়, তবে রোযায় যেহেতু মানুষের স্বভাবগত প্রয়োজন ও চাহিদা বর্জন করা হয়, সেহেতু অন্যান্য ইবাদত অপেক্ষা এতে অধিকতর সাধনা-মুজাহাদা দরকার হয়, ফলে অন্যান্য ইবাদত অপেক্ষা এতে কষ্ট-ক্লেশও বেশি হয়, তাই এর আলোও বেশি উজ্জ্বল হবে। সেই হিসেবে এর জন্যে ‘যিয়া” শব্দের ব্যবহারই বেশি যুক্তিযুক্ত। নামাযে সেই তুলনায় কষ্ট কম। ফলে এর দ্বারা অর্জিত আলোর উজ্জ্বলতাও রোযার আলো অপেক্ষা কম হবে । তাই এর আলোকে নূর বলা হয়েছে।
উলামায়ে কিরাম এ পার্থক্যের আরও বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, নূর ও যিয়া সমার্থবোধক শব্দ। আরবী ভাষায় এর একটির স্থলে অন্যটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং এস্থলে কেবলই শব্দ ব্যবহারের বৈচিত্র্য। মূল উদ্দেশ্য একথা বোঝানো যে, নামায দ্বারা যেমন আলো অর্জিত হয়, তেমনি সবর বা রোযার দ্বারাও তা অর্জিত হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে নামায-রোযার পরিপূর্ণ আলো দান করুন- আমীন।

কুরআন দীনের প্রধানতম দলীল
তারপর ইরশাদ হয়েছে 'কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল'। অর্থাৎ তুমি যদি কুরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে চল, তবে কবরে, মীযানে ও পুলসিরাতে যেখানেই তুমি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে সেখানেই তুমি কুরআন দ্বারা প্রমাণ পেশ করতে পারবে; বরং কুরআনই তোমার পক্ষে প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে এবং সাক্ষ্য দেবে যে, তুমি তার নির্দেশনা মেনে চলেছ। পক্ষান্তরে তুমি যদি তার আদেশ-নিষেধ অমান্য কর, তবে কুরআন তোমার বিপক্ষে প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে। হযরত ইবন মাস'উদ রাযি. বলেন, কুরআন সুপারিশকারী হবে এবং তার সুপারিশ গৃহীত হবে। যে ব্যক্তি কুরআনকে তার সামনে রেখেছে (অর্থাৎ সে কুরআনের অনুসরণ করেছে), কুরআন তাকে জান্নাতে টেনে নিয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কুরআনকে তার পেছনে রেখেছে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
অথবা এর ব্যাখ্যা এই হতে পারে যে, দীনী বিষয়ে যদি কারও সংগে তোমার বিতর্ক হয়, তুমি একরকম দাবি কর আর সে তোমার বিপরীত দাবি করে, তবে বিষয়টিকে কুরআনের সামনে পেশ করবে। কুরআন যার দাবি সমর্থন করবে, তার দাবিই সত্য- সঠিক বলে সাব্যস্ত হবে। সে ক্ষেত্রে কুরআনের ফয়সালা তোমার পক্ষেও হতে পারে, তোমার বিপক্ষেও হতে পারে। তা পক্ষে হোক বা বিপক্ষে, সর্বাবস্থায় কুরআনের ফয়সালা মেনে নেওয়াই জরুরি, যেমন ইরশাদ হয়েছে-

فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ

অর্থ : অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা আল্লাহ ও পরকালে সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়ে থাকলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের উপর ন্যস্ত কর।- নিসাঃ৫৯

প্রতিদিন জীবনের বেচাকেনা ও তার লাভ-লোকসান
সবশেষে বলা হয়েছে 'প্রতিটি মানুষ ভোরবেলা বের হয়ে নিজেকে বিক্রি করে, তারপর নিজেকে হয় মুক্ত করে নয়তো ধ্বংস করে। অর্থাৎ ঘুম থেকে জাগার পর মানুষের অবস্থা দু'রকম হয়। হয় সে সারাদিনের কাজকর্ম আল্লাহর হুকুম মোতাবেক করে, নয়তো নাফরমানী করে দিন কাটায়। দিনটা কেটে যায় উভয় ব্যক্তিরই। তার মানে উভয়েরই জীবনের একটা অংশ চলে যায়। কাজের বিপরীতে জীবনের একটা অংশ সে দিয়ে দেয়। এভাবে একেকটা দিন যায় আর জীবনের একেকটা অংশ ক্ষয় হতে থাকে। এই করে করে এমন একটা সময় আসবে, যখন সবটা আয়ুই শেষ হয়ে যাবে। গোটা জীবন বিকিয়ে যাবে। এই যে জীবন বিকিয়ে গেল, তার বিপরীতে অর্জন কী হল? যে ব্যক্তি মু'মিন, তার অর্জন হয় জীবনের মুক্তি। অর্থাৎ সে ঘুম থেকে জাগার পরে প্রথমে ওযূ করে, তারপর ফজরের নামায পড়ে, তারপর সারাদিন আল্লাহর যখন যেই হুকুম সামনে আসে তা পালন করে, তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকে। সারাটা দিন আল্লাহর আনুগত্যের ভেতরে কাটিয়ে রাতের বেলা শয্যা গ্রহণ করে। এভাবে প্রতিটি দিন আল্লাহর আনুগত্যের ভেতর অতিবাহিত করার মাধ্যমে সে প্রভৃত ছওয়াবের অধিকারী হয়। জীবন যখন ফুরিয়ে যায়, তার আমলনামায় সঞ্চিত হয় রাশি রাশি ছওয়াব ও পুণ্য, যার বিনিময়ে আল্লাহর গযব ও জাহান্নাম থেকে তার মুক্তি ও জান্নাত লাভ হয়। জান্নাত লাভই হয় তার জীবন বিক্রির মূল্য, যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

{إن الله اشترى من المؤمنين أنفسهم وأموالهم، بأن لهم الجنة يقاتلون في سبيل الله فيقتلون ويقتلون، وعدا عليه حقا في التوراة والإنجيل والقرآن، ومن أوفى بعهده من الله فاستبشروا ببيعكم الذي بايعتم به} [التوبة: 111]

অর্থ : বস্তুত আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও তাদের সম্পদ খরিদ করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে এর বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। ফলে হত্যা করে ও নিহতও হয়। এটা এক সত্য প্রতিশ্রুতি, যার দায়িত্ব আল্লাহ তাওরাত ও ইনজীলেও নিয়েছেন এবং কুরআনেও। আল্লাহ অপেক্ষা বেশি প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যে সওদা করেছ, সেই সওদার জন্য তোমরা আনন্দিত হও এবং এটাই মহা সাফল্য। '
হযরত মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রহ. বলেন, আল্লাহ তা'আলা জান্নাতকে তোমাদের নিজ জীবনের মূল্য বানিয়েছেন। সুতরাং তোমরা অন্যকিছুর বিনিময়ে তা বিক্রি করো না। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তির কাছে তার নিজের মূল্য আছে, তার কাছে দুনিয়ার কোনও মূল্য নেই ।
পক্ষান্তরে একদল লোক আল্লাহর নাফরমানীর ভেতর দিন কাটায়। আল্লাহর কোনও আদেশ মান্য করে না। তিনি যা নিষেধ করেছেন তা হতেও বেঁচে থাকে না। নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে। মনের চাহিদা পূরণেই ব্যস্ত থাকে। তাদেরও জীবন বিকিয়ে যায়। কিন্তু এর বিপরীতে যে মূল্য তার অর্জিত হয় তা ধ্বংস ছাড়া কিছুই নয়। কেননা তার পরিণাম আল্লাহর ক্রোধ ও জাহান্নাম। তাদের প্রতিটি কাজের বিনিময়ে আমলনামায় পাপ লেখা হতে থাকে। যখন জীবন ফুরিয়ে যায়, আমলনামায় জমা হয় একরাশ পাপ, যা দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ ও জাহান্নামের আযাব ছাড়া আর কিছু অর্জিত হয় না। কতই না নিকৃষ্ট সে অর্জন! ইরশাদ হয়েছে—

وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

অর্থ : বস্তুত তারা যার বিনিময়ে নিজেদেরকে বিক্রি করেছে তা অতি মন্দ। যদি তাদের (এ বিষয়ের প্রকৃত) জ্ঞান থাকত!

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পবিত্রতা যেহেতু ঈমানের অর্ধেক, তাই সর্বদা এ ব্যাপারে যত্নবান থাকা উচিত । উভয় রকমের পবিত্রতা। অর্থাৎ ওযূ-গোসলের মাধ্যমে শারীরিক পবিত্রতা এবং পাপাচার বর্জনের মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা।

খ. এ হাদীছ দ্বারা হামদ ও তাসবীহের যে ফযীলত জানা গেল, তা অর্জনের লক্ষ্যে অবসর সময়ে এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব যিকরে রত থাকা উচিত।

গ. নামাযকে নূর, যাকাতকে ঈমানের প্রমাণ এবং সবরকে যে আলো বলা হয়েছে, দুনিয়া ও আখিরাতে তা পুরোপুরি অর্জনের লক্ষ্যে ঈমানদারের কর্তব্য এ সকল ইবাদতের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

ঘ. কুরআন পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ হবে। অতি বড় আশা এবং অনেক বড় ভয়ের কথা। কাজেই আখিরাতে যাতে কুরআনের সুপারিশ লাভ করতে পারি, কুরআন আমাদের বিপক্ষে সাক্ষী হয়ে না দাঁড়ায়, সে লক্ষ্যে কর্তব্য নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআনের হিদায়াত শক্তভাবে আকড়ে ধরা।

ঙ. আমরা চাই বা না চাই, জীবন তো বিকিয়ে যাচ্ছেই। কারওই সময় থেমে থাকে না। সুতরাং লক্ষ রাখা দরকার জীবনবিক্রি যাতে এমন মূল্যের বিনিময়েই হয়, যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ হবে। অর্থাৎ প্রতিটি দিন আল্লাহর আনুগত্যের ভেতরে কাটানোই প্রকৃত মু'মিনের কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
rabi
বর্ণনাকারী: