রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ২১
অধ্যায়: ২ তাওবা।
২১। হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি.-এর তাওবা ও তাঁর সত্যবাদিতা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন কা'ব ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, –হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি. যখন অন্ধ হয়ে যান, তখন তার পুত্রদের মধ্যে ইনিই ছিলেন তার পরিচালক– তিনি বলেন, আমি (আমার পিতা) কা'ব ইবন মালিক রাযি.-কে বর্ণনা করতে শুনেছি- তিনি তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে যাওয়া থেকে তার পিছিয়ে থাকার বৃত্তান্ত বর্ণনা করছিলেন। হযরত কা'ব রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসকল যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে এক তাবুকের যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও যুদ্ধে আমি তাঁর সংগে যাত্রা হতে বিরত থাকিনি। অবশ্য আমি বদরের যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করিনি। তবে সেই যুদ্ধে যারা অংশ নেয়নি, তাদের কেউ তিরষ্কৃত হয়নি। কেননা তখন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমগণ বের হয়েছিলেন কুরায়শের বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা (উভয়পক্ষের) পূর্বপ্রতিশ্রুতি ছাড়াই তাদের ও তাদের শত্রুদের (রণক্ষেত্রে) মুখোমুখি করে দেন। আমি তো আকাবার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম, যখন আমরা ইসলামের উপর (অটল থাকতে) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। তার বিপরীতে (অর্থাৎ আকাবার অঙ্গীকারের বিপরীতে) বদর যুদ্ধের উপস্থিতিকে আমি পছন্দ করব না, যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে 'আকাবা' অপেক্ষা বেশি আলোচিত।
তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ হতে আমি যে পিছিয়ে থেকেছিলাম আমার সেই বৃত্তান্ত এই যে, ওই যুদ্ধে আমি যখন তাঁর থেকে পিছিয়ে থাকি, তখন আমি যতবেশি সক্ষম ও সচ্ছল ছিলাম অতটা আর কখনও ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর আগে আমি কখনও একত্রে দু'টি বাহনের মালিক হইনি। অথচ এই যুদ্ধকালে দু'টি বাহন আমি জমা করে ফেলেছিলাম। যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনও যুদ্ধে গমনের ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি (কৌশলস্বরূপ) তার বিপরীত দিকের ইঙ্গিত করতেন। অতঃপর যখন এই যুদ্ধের পালা আসল এবং এই যুদ্ধ অভিযানটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন প্রচণ্ড গরমে এবং অভিমুখী হয়েছিলেন দূরবর্তী সফর ও মরুপ্রান্তরের আর অভিমুখী হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক শত্রুবাহিনীর, তাই তিনি মুসলিমদের কাছে তাদের ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেন (আগের মত কোনদিকে যাচ্ছেন তা গোপন রাখেননি), যাতে তারা তাদের যুদ্ধাভিযানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং তিনি কোন দিকে যাওয়ার ইচ্ছা করছেন তা তাদের জানিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে মুসলিমগণ ছিলেন প্রচুরসংখ্যক। কোনও সংরক্ষণকারী বই তাদের সংরক্ষণ করত না, এর দ্বারা তিনি রেজিষ্ট্রার বোঝাচ্ছিলেন।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, কোনও লোক তাতে অনুপস্থিত থাকতে চাইলে অবশ্যই তার ধারণা হত তার সে অনুপস্থিতির কথা গোপন থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার ব্যাপারে ওহী নাযিল হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ যুদ্ধাভিযানটি চালিয়েছিলেন এমন এক সময়, যখন গাছের ফল ও ছায়া ছিল সুখকর। আর আমি তো তার প্রতি বেশি আসক্ত।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেললেন এবং তাঁর সংগে মুসলিমগণও। আমি প্রতিদিন ভোরবেলা তাঁর সংগে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বের হতাম। কিন্তু কোনোকিছু সম্পন্ন না করেই ফিরে আসতাম। মনে মনে বলতাম, আমি যখন ইচ্ছা করি তখনই তা করতে সক্ষম। এভাবেই আমার এই গড়িমসি চলতে থাকল। অবশেষে মানুষের যাত্রা শুরুর সময় এসে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ভোরবেলা বের হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সংগে মুসলিমগণও। কিন্তু আমি আমার প্রস্তুতি কিছুমাত্র সম্পন্ন করতে পারলাম না। তারপর আবার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বের হলাম, আবার ফিরে আসলাম কিন্তু কিছুই সম্পন্ন করলাম না। এভাবে আমার গড়িমসি চলল। ওদিকে তারা দ্রুত চলতে থাকলেন এবং অভিযানকারীগণ সামনে এগিয়ে গেলেন। পরিশেষে আমি ইচ্ছা করলাম রওয়ানা হয়ে যাব এবং তাদের ধরে ফেলব। আহা! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু তা করা আমার পক্ষে সম্ভব হল না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বের হয়ে যাওয়ার পর যখনই আমি লোকজনের মধ্যে বের হতাম, তখন এই দৃশ্য আমাকে কষ্ট দিত যে, যুদ্ধে অনুপস্থিতিতে আমার অনুরূপ দেখতাম এমন কোনও লোককে, যে মুনাফিকীর অভিযোগে অভিযুক্ত। অথবা এমন দুর্বল শ্রেণীভুক্ত কোনও লোককে, যাদের আল্লাহ তা'আলা নিষ্কৃতি দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকে না পৌছা পর্যন্ত আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবুকে পৌঁছার পর তিনি লোকজনের মধ্যে বসা। এ অবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, কা'ব ইবনে মালিক কী করল (অর্থাৎ তার খবর কী)? বনু সালিমার জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে আটকে রেখেছে তার কাপড়জোড়া এবং নিজের দুই কাঁধের প্রতি দৃষ্টিপাত (অর্থাৎ আত্মাভিমান)। কিন্তু হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. তার এ কথার প্রতিবাদ করলেন এবং) তাকে বললেন, তুমি নেহাত মন্দ বলেছ। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমরা তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া কিছুই জানি না ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। তিনি এ অবস্থায়ই ছিলেন। সহসা সাদা পোশাকের জনৈক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, যার থেকে ক্রমে মরীচিকা সরে যাচ্ছে (অর্থাৎ ক্রমেই সামনে এগিয়ে আসছে)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আবু খায়ছামা হও। সহসা দেখা গেল তিনি আবু খায়ছামা আনসারীই বটে। তিনিই ওই ব্যক্তি, এক সা' খেজুর সদাকা করলে মুনাফিকরা যাকে কটাক্ষ করেছিল।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, পরিশেষে যখন আমি খবর পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক থেকে ফেরত রওয়ানা হয়ে গেছেন, তখন আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল। মনে মনে আমি মিথ্যা রচনা করছিলাম আর বলছিলাম, আমি আগামীকাল তাঁর ক্রোধ থেকে কিভাবে নিষ্কৃতি পাব? এ ব্যাপারে আমি আমার খান্দানের প্রত্যেক বিচক্ষণ ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য নিতে থাকি? যখন বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা মুনাওয়ারায়) এসে পৌঁছেছেন, তখন আমার অন্তর থেকে সব মিথ্যা দূর হয়ে গেল। আমি বুঝে ফেললাম, মিথ্যা কোনও কিছুর দ্বারা আমি কখনোই তাঁর (ক্রোধ) থেকে নিস্তার পাব না। সুতরাং আমি সত্য বলতে স্থিরসংকল্প হলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পৌঁছালেন। তিনি যখনই কোনও সফর থেকে ফিরে আসতেন, প্রথমে মসজিদে ঢুকতেন এবং দু'রাকআত নামায পড়তেন। তারপর লোকজনের সংগে বসতেন। (এ বারও) যখন তা করে সারলেন, মুনাফিকগণ তাঁর কাছে এসে অজুহাত দেখাতে লাগল এবং তারা তাঁর কাছে শপথ করতে লাগল (যে, তারা যা বলছে সত্যই বলছে)। তারা ছিল আশিজনের কিছু বেশি। তিনি তাদের প্রকাশ্য ওজর-অজুহাত গ্রহণ করে নিলেন, তাদেরকে বাইআত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের মনের অবস্থা আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলেন।
অবশেষে আমি আসলাম। আমি যখন সালাম দিলাম, তিনি মুচকি হাসলেন ক্রুদ্ধ ব্যক্তির মুচকি হাসার মত। তারপর বললেন, এস। আমি হেঁটে হেঁটে আসলাম এবং তাঁর সম্মুখে বসলাম। তিনি বললেন, তুমি অনুপস্থিত থাকলে কেন? তুমি না তোমার বাহন কিনে রেখেছিলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! যদি আপনি ছাড়া দুনিয়াদার কোনও ব্যক্তির সামনে আমি বসতাম, তবে আমি বিশ্বাস করি কোনও ওজর দেখিয়ে তার ক্রোধ থেকে আমি নিষ্কৃতি পেয়ে যেতাম। আমাকে যথেষ্ট বাগবৈদগ্ধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তো জানি আজ যদি আপনাকে এমন কোনও মিথ্যাকথা বলি, যা দ্বারা আপনি আমার প্রতি খুশি হয়ে যান, তবে অচিরেই আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আপনাকে অসন্তুষ্ট করে দেবেন।
আর যদি আমি আপনাকে সত্যকথা বলি, যে কথায় আপনি আমার প্রতি মনক্ষুন্ন হন, তবে সে ব্যাপারে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম পরিণামের আশা করি। আল্লাহর কসম! আমার কোনও ওজর ছিল না। এবং আল্লাহর কসম! আমি যখন আপনার সংগে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকি, তখন যতটা সক্ষম ও সচ্ছল ছিলাম, অতটা আর কখনও ছিলাম না।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথা শুনে বললেন, এই লোক সত্যকথা বলেছে। তারপর বললেন, ওঠ (এবং অপেক্ষায় থাক), যাবত না আল্লাহ তোমার সম্পর্কে ফয়সালা দান করেন।
বনু সালিমার কিছু লোক আমার পেছনে পেছনে চলল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম! তুমি এর আগে আর কোনও অপরাধ করেছ বলে তো আমরা জানি না। অন্যান্য যারা যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিল, তারা যেমনটা ওজর-অজুহাত প্রদর্শন করেছে, তেমনি তুমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোনও অজুহাত প্রদর্শন করতে পারলে না? তোমার অপরাধ মোচনের জন্য তো তোমার পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইস্তিগফারই যথেষ্ট ছিল। এভাবে তারা আমাকে ভর্ৎসনা করতে থাকল। পরিশেষে আমি ইচ্ছা করে ফেললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে যাব এবং (তাঁর কাছে দেওয়া পূর্বের বক্তব্যের জন্য) নিজেকে মিথ্যুক ঠাওরাব (অর্থাৎ আমি আগে ভুল বলেছিলাম, আসলে আমার এই এই ওজর ছিল) ।
তারপর আমি তাদের বললাম, আমার মত এ অবস্থার সম্মুখীন আর কেউ হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, তোমার মত অবস্থার সম্মুখীন আরও দু'জন লোক হয়েছেন। তারাও তোমার অনুরূপ কথা বলেছেন এবং তাদেরকেও তোমার অনুরূপ বলে দেওয়া হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তারা বলল, মুরারা ইবন রাবীআ আমিরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী। তারা দু'জন নেককার লোকের নাম আমার কাছে উল্লেখ করল, যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমি বললাম, তাদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ রয়েছে।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, তারা যখন ওই দুই ব্যক্তির কথা আমাকে বলল, আমি (আমার সত্যে অবিচল থাকার সংকল্পে) চলে গেলাম। ওদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা যুদ্ধাভিযানে যোগদান থেকে বিরত থেকেছিল, তাদের মধ্য থেকে আমাদের এই তিনজনের সংগে লোকজনকে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন। ফলে মানুষ আমাদের পরিত্যাগ করল। কিংবা তিনি বললেন, আমাদের কাছে তারা বদলে গেল । এমনকি আমার কাছে পৃথিবীটাই অপরিচিত হয়ে গেল। এ যেন সেই পৃথিবী নয়, যাকে আমি চিনি। এ অবস্থায় আমাদের কাটল পঞ্চাশ রাত।
ওদিকে আমার দুই সংগী দুর্বল হয়ে পড়ল এবং তারা নিজ ঘরে বসে কাঁদতে থাকল। আর আমি ছিলাম সকলের মধ্যে যুবক এবং তাদের চেয়ে বেশি শক্তিমান। তাই আমি বের হতাম এবং মুসলিমদের সংগে নামাযে হাজির হতাম। আমি বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম, কিন্তু কেউ আমার সংগে কথা বলত না।
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতাম এবং তাঁকে সালাম দিতাম যখন তিনি নামাযের পর আপন স্থানে বসা থাকতেন। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি কি সালামের জবাবে ওষ্ঠদ্বয় নেড়েছেন, না নাড়েননি? তারপর আমি তাঁর কাছাকাছি স্থানে নামায পড়তাম এবং চোরা চোখে তাঁকে দেখতাম। যখন আমি নামাযে অভিনিবিষ্ট হতাম, তিনি আমার দিকে তাকাতেন। আবার যখন তাঁর দিকে ফিরতাম, আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে যখন আমার প্রতি মুসলিমদের কঠোরতা দীর্ঘায়িত হল, তখন একদিন আমি এগিয়ে গেলাম এবং আবু কাতাদার বাগানের প্রাচীর টপকালাম। তিনি আমার চাচাত ভাই এবং আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। আমি তাকে সালাম দিলাম, কিন্তু তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। তখন তাকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করি তুমি কি আমার সম্পর্কে জান যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি? তিনি নীরব থাকলেন। আমি ফের তাকে কসম দিয়ে ওই কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি নীরবই থাকলেন। ফের তাকে কসম দিয়ে ওই কথা বললাম। এবার তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তার এ কথায় আমার দু'চোখ ছাপিয়ে পানি নামল। আমি সরে আসলাম এবং প্রাচীর টপকালাম।
একদিনকার কথা, আমি মদীনার বাজারে হাঁটছি। সহসা দেখি শামের যারা মদীনায় খাদ্যশস্য বিক্রি করতে এসেছে তাদের মধ্যকার এক নাবাতী (কৃষক) বলছে, কে আমায় বলতে পারে কা'ব ইবন মালিককে কোথায় পাব? তখন লোকজন আমার দিকে ইশারা করতে লাগল । শেষে সে আমার কাছে আসল এবং আমার হাতে গাসসান রাজার একটি চিঠি অর্পণ করল। আমি লিখতে পড়তে জানতাম। সুতরাং চিঠিটি পড়লাম। দেখি কি, তাতে লেখা আছে- অতঃপর বক্তব্য এই যে, আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে তোমার নেতা তোমার প্রতি কঠোরতা করছেন। আল্লাহ তা'আলা তো তোমাকে এমন ঘরে জন্ম দেননি, যেখানে তুমি লাঞ্ছিত হবে এবং তোমার অধিকার খর্ব করা হবে। (তা সত্ত্বেও যখন তুমি সেই অবস্থার শিকার) অতএব তুমি আমাদের কাছে চলে এস। আমরা তোমার সমব্যাথী হব। চিঠিটি পড়ে আমি বললাম, এটাও একটা পরীক্ষা। সুতরাং আমি সেটি নিয়ে চুলার কাছে গেলাম এবং সেটি জ্বালিয়ে দিলাম।
এভাবে যখন পঞ্চাশ দিন থেকে চল্লিশ দিন গত হল আর এ সময় ওহীও থেমে থাকল, তখন সহসা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দূত আমার নিকট এসে উপস্থিত। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে আদেশ করছেন, যেন নিজ স্ত্রী থেকে দূরে থাক। আমি বললাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দেব? কিংবা আমি কী করব? তিনি বললেন, না, তার থেকে দূরে থাকবে। তার কাছে যাবে না। আমার দুই সঙ্গীর কাছেও তিনি অনুরূপ নির্দেশ দিয়ে পাঠান। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পরিবারে চলে যাও। তাদের কাছেই থাকতে থাক, যাবত না আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে ফয়সালা দান করেন।
এ নির্দেশের পর হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আবেদন জানাল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন উমাইয়া একজন অথর্ব বৃদ্ধ । তার কোনও খাদেম নেই। আমি যদি তার খেদমত করি, আপনি কি অপসন্দ করবেন? তিনি বললেন, না। তবে সে যেন তোমার সাথে মিলিত না হয়। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তার অবস্থা তো এই যে, কোনও কিছুর প্রতিই তার কোনও নড়াচড়া নেই। এবং আল্লাহর কসম! তার এই ঘটনা ঘটার পর থেকে এই পর্যন্ত তিনি অবিরাম কেঁদে যাচ্ছেন।
হযরত কা'ব রাঃ বলেন, (হিলাল ইবনে উমাইয়া সম্পর্কে এ কথা জানার পর) আমার পরিবারের কেউ কেউ আমাকে বলল, তুমিও যদি তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইতে? তিনি তো হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তার স্বামীর খেদমত করার অনুমতি দিয়েছেন।
আমি বললাম, আমি তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাব না। কি জানি, তার ব্যাপারে আমি তাঁর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে কী বলবেন? আমি যে একজন যুবা পুরুষ!
এভাবে আরও দশদিন কাটালাম। আমাদের সংগে কথা বলা নিষেধ করে দেওয়ার পর থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল। পঞ্চাশতম রাতের ভোরে আমি আমাদের একটি ঘরের ছাদে ফজরের নামায পড়লাম। নামাযের পরে আমি বসা আছি। আর আমার অবস্থা তো সেটাই, যা আল্লাহ তাআলা আমদের সম্পর্কে (কুরআন মাজীদে) বর্ণনা করেছেন। আমার পক্ষে আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এই প্রশস্ত পৃথিবী আমার জন্যে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তো ওই বসা অবস্থায় হঠাৎ আমি জনৈক আওয়াজদাতার আওয়াজ শুনতে পেলাম। সে সালা' পাহাড়ের উপর উঠে উচ্চস্বরে বলছে, হে কা'ব ইবন মালিক, সুসংবাদ নাও! এ কথা শুনতেই আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। বুঝে ফেললাম মুক্তি এসে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায আদায়ের পর ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন। ফলে লোকজন আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়ে পড়েছে। আমার দুই সঙ্গীর কাছে সুসংবাদদাতাগণ চলে গেছে।
এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চড়ে আমার দিকে ছুটে পড়েছে। আর আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি আমার দিকে দৌড় দিয়েছে। সে-ই পাহাড়ের উপর উঠে আওয়াজ দিয়েছে। ঘোড়ার চেয়ে তার আওয়াজই ছিল বেশি দ্রুতগামী। তারপর আমি যার আওয়াজ শুনেছিলাম সে যখন সুসংবাদ জানাতে আমার কাছে আসল, আমি আমার কাপড়দু'টি খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম- তার সুসংবাদ দানের পুরস্কারে। আল্লাহর কসম! সেদিন ওই দু'টি ছাড়া আমি আর কোনও কাপড়ের মালিক ছিলাম না। পরে আমি দু'টি কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লাম। তারপর লোকজন তাওবা কবুলের জন্য মুবারকবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে দলে দলে এসে আমার সংগে সাক্ষাত করল। তারা আমাকে বলছিল, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা কবুল তোমার জন্য শুভ হোক। অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন। তাঁর চারপাশে লোকজন বসা। তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ রাযি. আমার দিকে ছুটে আসলেন। তিনি এসে আমার সংগে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে শুভেচ্ছা জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া আর একজন লোকও ওঠেনি।
হযরত কা'ব ইবনে মালিক রাঃ হযরত তালহা রাযি.-এর এ আচরণ কখনও ভোলেননি।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলাম, তখন আনন্দে তাঁর চেহারায় বিদ্যুৎ খেলছিল। তিনি বললেন, সুসংবাদ নাও তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিবসের! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ সুসংবাদ কি আপনার পক্ষ থেকে, না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, না, বরং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আনন্দিত হতেন, তখন তাঁর চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। মনে হত যেন তাঁর চেহারা চাঁদের একটি টুকরো। আমরা তাঁর এ অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলাম । আমি তাঁর সামনে বসার পর বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার তাওবার একটা অংশ এই যে, আমি আমার যাবতীয় সম্পদ থেকে মুক্ত হয়ে যাব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে সদাকা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু সম্পদ নিজের কাছে রেখে দাও। এটাই তোমার পক্ষে শ্রেয়। আমি বললাম, (ঠিক আছে) খায়বারে (গনীমতের হিস্যা হিসেবে) আমার যে অংশ আছে তা রেখে দেব।
আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা আমাকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন কেবলই সত্য বলার সুবাদে। সুতরাং আমার তাওবার একটা অংশ এও যে, আমি যতদিন জীবিত থাকি কেবল সত্য কথাই বলব।
(হযরত কা'ব রাযি. বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলার কারণে আল্লাহ তা'আলা আমাকে যেমন পুরস্কৃত করেছেন, অন্য কোনও মুসলিমকে সত্য বলার দরুন আল্লাহ তা'আলা এর চেয়ে উত্তম পুরস্কার দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি ওই কথা বলার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনও কোনও মিথ্যা বলার ইচ্ছা করিনি। আমি আশা করি বাকি জীবনেও আল্লাহ তা'আলা আমাকে হেফাজত করবেন।
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেন-
لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (117)
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (118) يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ (119)
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ সদয় দৃষ্টি দিয়েছেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মুহূর্তে নবীর সঙ্গে থেকেছিল, যখন তাদের একটি দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান, পরম দয়ালু। এবং সেই তিন জনের প্রতিও (আল্লাহ সদয় হলেন), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না এ পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল, তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠল এবং তারা উপলব্ধি করল, আল্লাহর (ধরা) থেকে খোদ তাঁর আশ্রয় ছাড়া কোথাও আশ্রয় পাওয়া যাবে না, পরে আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হলেন, যাতে তারা তারই দিকে রুজু করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।- তাওবাঃ ১১৭-১১৯
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমাকে হিদায়াত দান করার পর আল্লাহ তা'আলা আমার দৃষ্টিতে আমাকে এরচে' বড় কোনও নি'আমত দেননি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সত্য বলেছিলাম, তাঁর সংগে আমি মিথ্যা বলিনি। নতুবা আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়েছে ওই সকল লোক, যারা মিথ্যা বলেছিল। কেননা যারা মিথ্যা বলেছিল, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সর্বাপেক্ষা কঠিন কথা বলেছেন । আল্লাহ তা'আলা বলেন-
{سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ (95) يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ (96)} [التوبة: 95، 96]
অর্থ : তোমরা যখন তাদের কাছে ফিরে যাবে, তখন তারা তোমাদের সামনে আল্লাহর কসম করবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। নিশ্চয়ই তারা (আপাদমস্তক) অপবিত্র। আর তারা যা অর্জন করছে তজ্জন্য তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তোমরা যাতে তাদের প্রতি খুশি হয়ে যাও সেজন্য তারা তোমাদের সামনে কসম করবে, অথচ তোমরা তাদের প্রতি খুশি হলেও আল্লাহ (এরূপ) অবাধ্য লোকদের প্রতি খুশি হবেন না। তাওবাঃ ৯৫-৯৬
হযরত কা'ব রাযি. বলেন, আমাদের তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কসম করে মিথ্যা বলেছিল, তিনি তাদের অজুহাত গ্রহণ করেছিলেন, তাদের বাই'আত করেছিলেন এবং তাদের পক্ষে ইস্তিগফার করেছিলেন। তাদের থেকে আলাদা করে আমাদের তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা বিলম্বিত রাখেন। পরিশেষে আল্লাহ তা'আলা সে ব্যাপারে ফয়সালা দান করেন। এ বিষয়টিই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে বলেন-
وَعَلَى الثَّلَثَةِ الَّذِينَ خَلِفُوا
'এবং সেই তিন জনের প্রতিও (আল্লাহ সদয় হলেন), যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়েছিল।
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা যে বলেছেন, এর দ্বারা যুদ্ধাভিযান থেকে আমাদের পিছিয়ে থাকার কথা বোঝানো হয়নি; বরং যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে শপথ করেছিল ও মিথ্যা অজুহাত দেখিয়েছিল, যা তিনি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, তাদের থেকে আলাদাভাবে আমাদের পিছিয়ে রাখা ও আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখার কথা বোঝানো হয়েছে - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৪৪১৮,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৯)
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধাভিযানে বের হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার। তিনি বৃহস্পতিবার বের হওয়া পছন্দ করতেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি দিনের প্রথম প্রহর ছাড়া সফর থেকে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসার পর তিনি প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং দু' রাক'আত নামায পড়তেন। তারপর সেখানে বসতেন।
2 - باب التوبة
21 - وعن عبدِ الله بن كعبِ بنِ مالكٍ، وكان قائِدَ كعبٍ - رضي الله عنه - مِنْ بَنِيهِ حِينَ عمِيَ، قَالَ: سَمِعتُ كَعْبَ بنَ مالكٍ - رضي الله عنه - يُحَدِّثُ بحَديثهِ حينَ تَخلَّفَ عن رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةِ تَبُوكَ. قَالَ كعبٌ: لَمْ أتَخَلَّفْ عَنْ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةٍ غزاها قط إلا في غزوة تَبُوكَ، غَيْرَ أنّي قَدْ تَخَلَّفْتُ في غَزْوَةِ بَدْرٍ، ولَمْ يُعَاتَبْ أَحَدٌ تَخَلَّفَ عَنْهُ؛ إِنَّمَا خَرَجَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - والمُسْلِمُونَ يُريدُونَ عِيرَ (1) قُرَيْشٍ حَتَّى جَمَعَ الله تَعَالَى بَيْنَهُمْ وبَيْنَ عَدُوِّهمْ عَلَى غَيْر ميعادٍ. ولَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - لَيلَةَ العَقَبَةِ حينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلامِ، وما أُحِبُّ أنَّ لي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ، وإنْ كَانَتْ بدرٌ أذْكَرَ في النَّاسِ مِنْهَا.
وكانَ مِنْ خَبَري حينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رسولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - في غَزْوَةِ تَبُوكَ أنِّي لم أكُنْ قَطُّ أَقْوى ولا أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عنْهُ في تِلكَ الغَزْوَةِ، وَالله ما جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا في تِلْكَ الغَزْوَةِ وَلَمْ يَكُنْ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - يُريدُ غَزْوَةً إلاَّ وَرَّى (2) بِغَيرِها حَتَّى كَانَتْ تلْكَ الغَزْوَةُ، فَغَزَاها رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في حَرٍّ شَديدٍ، واسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيدًا وَمَفَازًا، وَاستَقْبَلَ عَدَدًا كَثِيرًا، فَجَلَّى للْمُسْلِمينَ أمْرَهُمْ ليتَأهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهمْ فأَخْبرَهُمْ بوَجْهِهِمُ الَّذِي يُريدُ، والمُسلِمونَ مَعَ رسولِ الله كثيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابٌ حَافِظٌ «يُريدُ بذلِكَ الدّيوَانَ» (3) قَالَ كَعْبٌ: فَقَلَّ رَجُلٌ يُريدُ أَنْ يَتَغَيَّبَ إلاَّ ظَنَّ أنَّ ذلِكَ سيخْفَى بِهِ ما لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْيٌ مِنَ الله، وَغَزا رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - تِلْكَ الغَزوَةَ حِينَ طَابَت الثِّمَارُ وَالظِّلالُ، فَأنَا إلَيْهَا أصْعَرُ (4)، فَتَجَهَّزَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - وَالمُسْلِمُونَ مَعَهُ وطَفِقْتُ أغْدُو لكَيْ أتَجَهَّزَ مَعَهُ،
فأرْجِعُ وَلَمْ أقْضِ شَيْئًا، وأقُولُ في نفسي: أنَا قَادرٌ عَلَى ذلِكَ إِذَا أَرَدْتُ، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمادى بي حَتَّى اسْتَمَرَّ بالنَّاسِ الْجِدُّ، فأصْبَحَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - غَاديًا والمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أقْضِ مِنْ جِهَازي شَيْئًا، ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أقْضِ شَيئًا، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بي حَتَّى أسْرَعُوا وتَفَارَطَ الغَزْوُ، فَهَمَمْتُ أَنْ أرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ، فَيَا لَيْتَني فَعَلْتُ، ثُمَّ لم يُقَدَّرْ ذلِكَ لي، فَطَفِقْتُ إذَا خَرَجْتُ في النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَحْزُنُنِي أنِّي لا أرَى لي أُسْوَةً، إلاّ رَجُلًا مَغْمُوصًا (1) عَلَيْهِ في النِّفَاقِ، أوْ رَجُلًا مِمَّنْ عَذَرَ اللهُ تَعَالَى مِنَ الضُّعَفَاءِ، وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى بَلَغَ تَبُوكَ، فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ في القَوْمِ بِتَبُوكَ: «ما فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ: يا رَسُولَ اللهِ، حَبَسَهُ بُرْدَاهُ والنَّظَرُ في عِطْفَيْهِ (2). فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ - رضي الله عنه: بِئْسَ مَا قُلْتَ! واللهِ يا رَسُولَ اللهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ إلاَّ خَيْرًا، فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم. فَبَيْنَا هُوَ عَلى ذَلِكَ رَأى رَجُلًا مُبْيِضًا يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم: «كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ»، فَإذَا هُوَ أبُو خَيْثَمَةَ الأنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِيْنَ لَمَزَهُ المُنَافِقُونَ.
قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا بَلَغَنِي أنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلًا مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَثِّي، فَطَفِقْتُ أتَذَكَّرُ الكَذِبَ وأقُولُ: بِمَ أخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غَدًا؟ وأسْتَعِيْنُ عَلى ذَلِكَ بِكُلِّ ذِي رأْيٍ مِنْ أهْلِي، فَلَمَّا قِيْلَ: إنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - قّدْ أظَلَّ قَادِمًا، زَاحَ عَنّي البَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَيءٍ أَبَدًا، فَأجْمَعْتُ صدْقَهُ وأَصْبَحَ رَسُولُ الله - صلى الله عليه وسلم - قَادِمًا، وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ، فَلَمَّا فَعَلَ ذلِكَ جَاءهُ المُخَلَّفُونَ يَعْتَذِرونَ إِلَيْه ويَحْلِفُونَ لَهُ، وَكَانُوا بِضْعًا وَثَمانينَ رَجُلًا، فَقَبِلَ مِنْهُمْ عَلانِيَتَهُمْ وَبَايَعَهُمْ واسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلى الله تَعَالَى، حَتَّى جِئْتُ، فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ المُغْضَبِ. ثُمَّ قَالَ: «تَعَالَ»، فَجِئْتُ أمْشي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ، فقالَ لي: «مَا خَلَّفَكَ؟ ألَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ؟» قَالَ: قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنّي والله لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا لَرَأيتُ أنِّي سَأخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ؛ لقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلًا، ولَكِنِّي والله لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ اليوم حَدِيثَ كَذبٍ تَرْضَى به عنِّي
لَيُوشِكَنَّ الله أن يُسْخِطَكَ عَلَيَّ، وإنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدقٍ تَجِدُ عَلَيَّ فِيهِ إنّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى الله - عز وجل - والله ما كَانَ لي مِنْ عُذْرٍ، واللهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ.
قَالَ: فقالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أمَّا هَذَا فقَدْ صَدَقَ، فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ فيكَ». وَسَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَة فاتَّبَعُوني فَقالُوا لِي: واللهِ مَا عَلِمْنَاكَ أذْنَبْتَ ذَنْبًا قَبْلَ هذَا لَقَدْ عَجَزْتَ في أَنْ لا تَكونَ اعتَذَرْتَ إِلَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - بما اعْتَذَرَ إليهِ المُخَلَّفُونَ، فَقَدْ كَانَ كَافِيكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - لَكَ.
قَالَ: فَوالله ما زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُّ أَنْ أرْجعَ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فأُكَذِّبَ نَفْسِي، ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ: هَلْ لَقِيَ هذَا مَعِيَ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالُوا: نَعَمْ، لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلانِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ، وَقيلَ لَهُمَا مِثْلَ مَا قيلَ لَكَ، قَالَ: قُلْتُ: مَنْ هُما؟ قَالُوا: مُرَارَةُ بْنُ الرَّبيع الْعَمْرِيُّ، وهِلاَلُ ابنُ أُمَيَّةَ الوَاقِفِيُّ؟ قَالَ: فَذَكَرُوا لِي رَجُلَينِ صَالِحَينِ قَدْ شَهِدَا بَدْرًا فيهِما أُسْوَةٌ، قَالَ: فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُما لِي. ونَهَى رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - عَنْ كَلامِنا أيُّهَا الثَّلاثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ، فاجْتَنَبَنَا النَّاسُ - أوْ قَالَ: تَغَيَّرُوا لَنَا - حَتَّى تَنَكَّرَتْ لي في نَفْسي الأَرْض، فَمَا هِيَ بالأرْضِ الَّتي أعْرِفُ، فَلَبِثْنَا عَلَى ذلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً. فَأمّا صَاحِبَايَ فَاسْتَكَانا وقَعَدَا في بُيُوتِهِمَا يَبْكيَان. وأمَّا أنَا فَكُنْتُ أشَبَّ الْقَومِ وأجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أخْرُجُ فَأشْهَدُ الصَّلاَةَ مَعَ المُسْلِمِينَ، وأطُوفُ في الأَسْوَاقِ وَلا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ، وَآتِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ في مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاةِ، فَأَقُولُ في نَفسِي: هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْه برَدِّ السَّلام أَمْ لاَ؟ ثُمَّ أُصَلِّي قَريبًا مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ، فَإِذَا أقْبَلْتُ عَلَى صَلاتِي نَظَرَ إلَيَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أعْرَضَ عَنِّي، حَتَّى إِذَا طَال ذلِكَ عَلَيَّ مِنْ جَفْوَةِ المُسْلِمينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جِدارَ حائِط أبي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وأَحَبُّ النَّاس إِلَيَّ، فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ فَوَاللهِ مَا رَدَّ عَليَّ السَّلامَ، فَقُلْتُ لَهُ: يَا أَبَا قَتَادَةَ، أنْشُدُكَ بالله هَلْ تَعْلَمُنِي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ - صلى الله عليه وسلم -؟ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ، فَقَالَ: اللهُ ورَسُولُهُ أَعْلَمُ. فَفَاضَتْ عَيْنَايَ، وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ الجِدَارَ، فَبَيْنَا أَنَا أمْشِي في سُوقِ الْمَدِينة إِذَا نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ (1) أهْلِ الشَّام مِمّنْ قَدِمَ بالطَّعَامِ يَبيعُهُ بِالمَدِينَةِ يَقُولُ: مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ؟ فَطَفِقَ النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إلَيَّ حَتَّى جَاءنِي فَدَفَعَ إِلَيَّ كِتَابًا مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ، وَكُنْتُ كَاتبًا.
فَقَرَأْتُهُ فإِذَا فِيهِ: أَمَّا بَعْدُ، فإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنا أنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللهُ بدَارِ هَوانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ (1)، فَالْحَقْ بنَا نُوَاسِكَ، فَقُلْتُ حِينَ قَرَأْتُهَا: وَهَذِهِ أَيضًا مِنَ البَلاءِ، فَتَيَمَّمْتُ بهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا، حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْيُ إِذَا رسولُ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - يَأتِيني، فَقالَ: إنَّ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَأمُرُكَ أَنْ تَعْتَزِلَ امْرَأتَكَ، فَقُلْتُ: أُطَلِّقُهَا أمْ مَاذَا أفْعَلُ؟ فَقالَ: لاَ، بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا، وَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَيَّ بِمِثْلِ ذلِكَ. فَقُلْتُ لامْرَأتِي: الْحَقِي بِأهْلِكِ (2) فَكُوني عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ في هَذَا الأمْرِ. فَجَاءتِ امْرَأةُ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَتْ لَهُ: يَا رَسُولَ الله، إنَّ هِلاَلَ بْنَ أمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ، فَهَلْ تَكْرَهُ أَنْ أخْدُمَهُ؟ قَالَ: «لاَ، وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ» فَقَالَتْ: إِنَّهُ واللهِ ما بِهِ مِنْ حَرَكَةٍ إِلَى شَيْءٍ، وَوَالله مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَومِهِ هَذَا. فَقَالَ لي بَعْضُ أهْلِي: لَو اسْتَأْذَنْتَ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - في امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِن لاِمْرَأةِ هلاَل بْنِ أمَيَّةَ أَنْ تَخْدُمَهُ؟ فَقُلْتُ: لاَ أسْتَأذِنُ فيها رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - وَمَا يُدْرِيني مَاذَا يقُول رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ، وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ! فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ (3) لَنا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنا، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا، فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحالِ الَّتي ذَكَرَ الله تَعَالَى مِنَّا، قَدْ ضَاقَتْ عَلَيَّ نَفْسي وَضَاقَتْ عَلَيَّ الأرْضُ بِمَا رَحُبَتْ، سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أوفَى عَلَى سَلْعٍ (4) يَقُولُ بِأعْلَى صَوتِهِ: يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أبْشِرْ، فَخَرَرْتُ سَاجِدًا (5)، وَعَرَفْتُ أنَّهُ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ. فآذَنَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - النَّاسَ بِتَوْبَةِ الله - عز وجل - عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاةَ الفَجْر فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا، فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَيَّ مُبَشِّرونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَيَّ فَرَسًا وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أسْلَمَ قِبَلِي، وَأَوْفَى عَلَى الْجَبَلِ، فَكانَ الصَّوْتُ أسْرَعَ مِنَ الفَرَسِ، فَلَمَّا جَاءني الَّذِيسَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُني نَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَيَّ فَكَسَوْتُهُمَا إيَّاهُ بِبشارته، وَاللهِ مَا أمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ، وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ فَلَبسْتُهُما، وَانْطَلَقْتُ أتَأمَّمُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَتَلَقَّاني النَّاسُ فَوْجًا فَوْجًا يُهنِّئونَني بالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِي: لِتَهْنِكَ تَوْبَةُ الله عَلَيْكَ. حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - جَالِسٌ حَوْلَه النَّاسُ، فَقَامَ (1) طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ - رضي الله عنه - يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَني وَهَنَّأَنِي، والله مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ المُهَاجِرينَ غَيرُهُ - فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ.قَالَ كَعْبٌ: فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُور: «أبْشِرْ بِخَيْرِ يَومٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُذْ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ» فَقُلْتُ: أمِنْ عِنْدِكَ يَا رَسُول الله أَمْ مِنْ عِندِ الله؟ قَالَ: «لاَ، بَلْ مِنْ عِنْدِ الله - عز وجل -»، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ وَكُنَّا نَعْرِفُ ذلِكَ مِنْهُ، فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُولهِ. فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «أمْسِكَ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ». فقلتُ: إِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيبَر. وَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى إِنَّمَا أنْجَانِي بالصِّدْقِ، وإنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ لا أُحَدِّثَ إلاَّ صِدْقًا مَا بَقِيتُ، فوَالله مَا عَلِمْتُ أَحَدًا مِنَ المُسْلِمينَ أبْلاهُ الله تَعَالَى في صِدْقِ الحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - أحْسَنَ مِمَّا أبْلانِي الله تَعَالَى، واللهِ مَا تَعَمَّدْتُ كِذْبَةً مُنْذُ قُلْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِلَى يَومِيَ هَذَا، وإنِّي لأرْجُو أَنْ يَحْفَظَنِي الله تَعَالَى فيما بَقِيَ، قَالَ: فأَنْزَلَ الله تَعَالَى: {لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ} حَتَّى بَلَغَ: {إِنَّهُ بِهِمْ رَؤُوفٌ رَحِيم وَعَلَى الثَّلاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ} حَتَّى بَلَغَ: {اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ} [التوبة: 117 - 119] قَالَ كَعْبٌ: واللهِ ما أنْعَمَ الله عَليَّ مِنْ نعمةٍ
قَطُّ بَعْدَ إذْ هَدَاني اللهُ للإِسْلامِ أَعْظَمَ في نَفْسِي مِنْ صِدقِي رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - أَنْ لا أكونَ كَذَبْتُهُ، فَأَهْلِكَ كما هَلَكَ الَّذينَ كَذَبُوا؛ إنَّ الله تَعَالَى قَالَ للَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أنْزَلَ الوَحْيَ شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ، فقال الله تَعَالَى: {سَيَحْلِفُونَ بِاللهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لا يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ} [التوبة: 95 - 96] قَالَ كَعْبٌ: كُنّا خُلّفْنَا أيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أمْرِ أُولئكَ الذينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وأرجَأَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - أمْرَنَا حَتَّى قَضَى الله تَعَالَى فِيهِ بذِلكَ. قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَلَى الثَّلاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا} وَليْسَ الَّذِي ذَكَرَ مِمَّا خُلِّفْنَا تَخلُّفُنَا عن الغَزْو، وإنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إيّانا وإرْجَاؤُهُ أمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ واعْتَذَرَ إِلَيْهِ فقبِلَ مِنْهُ (1). مُتَّفَقٌ عليه. (2)
وفي رواية: أنَّ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - خَرَجَ في غَزْوَةِ تَبْوكَ يَومَ الخَميسِ وكانَ يُحِبُّ أَنْ يخْرُجَ يومَ الخمِيس.
وفي رواية: وكانَ لاَ يقْدمُ مِنْ سَفَرٍ إلاَّ نَهَارًا في الضُّحَى، فإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بالمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيهِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি তাওবা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ। এতে হযরত কা'ব ইবনে মালিক রাযি.-এর নিজ জবানীতে তার তাওবা কবুলের বৃত্তান্ত বিবৃত হয়েছে। তাঁর এ ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ও শিক্ষাপ্রদ।

তাবুকের যুদ্ধ
তাবুকের যুদ্ধাভিযান সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৯ সালের রজব মাসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ পেলেন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদিনা মুনাওয়ারায় এক জোরদার হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি সে শাম ও আরবের সীমান্ত এলাকায় এক বিশাল বাহিনীও মোতায়েন করেছে। যদিও সাহাবায়ে কিরান এ যাবতকাল বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, কিন্তু তার সবক'টিই হয়েছিল জাযিরাতুল আরবের ভেতরে। কোনও বহিঃশক্তির সাথে এ পর্যন্ত মোকাবেলা হয়নি। এবার তারা সেই পরীক্ষার সম্মুখীন। তাও দুনিয়ার এক বৃহৎ শক্তির সাথে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই সামনে অগ্রসর হয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সুতরাং তিনি সকল মুসলিমকে এ যুদ্ধে শরীক হওয়ার হুকুম দিলেন।
মুসলিমদের পক্ষে এটা ছিল এক অগ্নিপরীক্ষা। কেননা দীর্ঘ ১০ বছর উপর্যুপরি যুদ্ধ শেষে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে যাওয়া মানে সেই সুযোগটিও হারানো। দ্বিতীয়ত সময়টা ছিল এমন, যখন বাগানের খেজুর পাকছিল, যেই খেজুরের উপর মদীনাবাসীদের সারা বছরের জীবিকা নির্ভরশীল ছিল। তৃতীয়ত ছিল প্রচণ্ড গরমের মৌসুম। যেন আকাশ থেকে আগুন ঝরছে। ভূমি থেকেও যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। তদুপরি ছিল তাবুকের সুদীর্ঘ সফর। মদীনা হতে তাবুক প্রায় ৮০০ মাইল দূরে অবস্থিত। দুর্গম মরুভূমির পথ। বাহনের সংখ্যাও খুব কম। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সেই বৃহত্তম শক্তির রণকৌশল সম্পর্কেও মুসলিমদের জানাশোনা ছিল না। কিন্তু এতকিছু সংকট সত্ত্বেও শাহাদাতের প্রেরণায় উজ্জীবিত সাহাবীগণ এ অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। তারা দলে দলে এসে নাম লেখালেন। যথাসাধ্য প্রস্তুতি শেষে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ হাজার সাহাবায়ে কিরামের এক বাহিনী নিয়ে তাবুকের উদ্দেশে বের হয়ে পড়লেন। আল্লাহ তা'আলা হিরাক্লিয়াস ও তার বাহিনীর উপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দুঃসাহসিক অভিযানের এমন প্রভাব ফেললেন যে, তারা কালবিলম্ব না করে ফেরত চলে গেল। ফলে যুদ্ধ আর হল না। তবে যুদ্ধ না হলেও এ অভিযানে ইসলাম ও মুসলিম বাহিনীর বিজয় ঠিকই অর্জিত হল। কেননা একে তো সেকালের বৃহত্তম শক্তির উপর ইসলামী শক্তির প্রভাব পড়েছিল এবং তারা ইসলাম ও তার অনুসারীদের আমলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। দ্বিতীয়ত তাদের ফিরে যাওয়ায় আশপাশের ক্ষুদ্র রাজন্যবর্গ ক্রমবর্ধমান ইসলামী শক্তির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। তাই তারা কালবিলম্ব না করে তাবুকে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে সাক্ষাত করে এবং তাঁর সংগে সন্ধি স্থাপন করে। তাছাড়া এ অভিযানের মাধ্যমেই কে খাঁটি মুসলিম এবং কে মুনাফিক তা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়, যা কুরআন মাজীদের সূরা তাওবায় বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে।

মুনাফিকদের অধিকাংশই এ যুদ্ধে যোগদান থেকে বিরত থাকে। তাদের কিছুসংখ্যক দুরভিসন্ধীমূলকভাবে এতে শরীক হয়েছিল। তিনজন খাঁটি মুসলিমেরও এতে যোগদান করা হয়নি। তাদের দ্বারা গড়িমসি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ গড়িমসির দরুন তারা যারপরনাই অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং এজন্য তাদেরকে এমন কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, তাওবার ইতিহাসে যা এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সেই পরীক্ষায় উত্তর এ মহান সাহাবীদেরকে মহত্তর মানবরূপে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে। সেই তিনজনের একজন হলেন হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি.। এই সুদীর্ঘ হাদীছখানিতে মূলত তাঁর জবানীতে তাদের তাওবা কবুলের বৃত্তান্তই বিবৃত হয়েছে।

‘আকাবার বাই'আতের ঘটনা
‘আকাবা জামরাতুল-উখরার নিকটবর্তী একটি উপত্যকার নাম। এখানে মদীনার আনসারগণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাংগে সাক্ষাত করে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তারা মদীনার ইহুদীদের কাছ থেকে শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। সে নবী কেমন হবেন, তাঁর হুলিয়া ও বৈশিষ্ট্যাবলী কী, তাদের কাছ থেকে তারা তা অবহিত হয়েছিল। আগে থেকেই তাদের হজ্জ উপলক্ষে পবিত্র মক্কা মুকাররামায় আসা-যাওয়া ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের পরও তাদের সে যাতায়াত অব্যাহত ছিল।

হজ্জের মৌসুমে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনা-মুযদালিফায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এই দাওয়াতী ব্যস্ততার এক পর্যায়ে একদল আনসারের সংগে তাঁর সাক্ষাত হয়। আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ছিল তাঁর দীনকে বিজয়ী করবেন এবং তাঁর নবীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের বীজ এই সাক্ষাতকারেই বপন হয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কুরআন মাজীদ পড়ে শোনালেন এবং আল্লাহর দীন বোঝালেন। কুরআন মাজীদের আয়াত এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য তাদের অন্তরে রেখাপাত করে। ফলে সেই মুহূর্তেই তারা ইসলাম গ্রহণ করে এবং নিজ দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দীপনা নিয়ে ফিরে যায়। তারা মদীনায় ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিষয়ে মানুষকে অবহিত করলেন এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানালেন। সে আহ্বানে মদীনার লোকজন স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াদান করে। ফলে মদীনার আনসারদের ভেতর ইসলামের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

পরের বছর হজ্জ মৌসুমে ১২জন আনসার মক্কায় আগমন করেন। তারা ‘আকাবায় নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এটাই ‘আকাবার প্রথম বাই'আত। এ বাই'আতের বিষয়বস্তু ছিল এই যে, তারা আল্লাহর সংগে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না,সন্তান হত্যা করবে না, কারও নামে অপবাদ রটাবে না এবং কোনও সৎকাজে বাধা দেবে না। যদি তারা এগুলো পূরণ করে, তবে জান্নাত লাভ করবে। আর এর অন্যথা করলে বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। তিনি চাইলে শাস্তি দেবেন অথবা ক্ষমা করবেন। বাইআত শেষে তারা মদীনায় ফিরে গেলেন। তাদেরকে কুরআনের তালীম, ইসলাম শিক্ষা ও দীনী বিধি-বিধান সম্পর্কে অবহিত করার জন্য শিক্ষকরূপে হযরত মুসআব ইবন উমায়র রাযি.-কে পাঠিয়ে দিলেন।
অতঃপর পবিত্র মদীনায় ইসলাম প্রচার বেগবান হয়ে উঠল। মদীনার প্রধান দুই গোত্র আওস ও খাযরাজের নেতৃবর্গসহ প্রায় অধিকাংশ লোকই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল। পরের বছর বিপুল উদ্দীপনায় তাদের একটি বড়সড় দল মক্কা মুকাররামায় আগমন করল। এ দলের লোকসংখ্যা ছিল পঁচাত্তরজন। তিয়াত্তরজন পুরুষ দু’জন মহিলা। এবারে তাদের আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনায় গমনের প্রস্তাব দেওয়া। তাদের জানা ছিল পবিত্র মক্কায় তিনি ইসলাম প্রচারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন এবং মক্কাবাসীগণ নতুন ধর্ম প্রচারের কারণে তাঁকে ও তাঁর মুষ্টিমেয় অনুসারীকে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন করছে। তাদের লক্ষ্য সেই জুলুম নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষা করা এবং মদীনা মুনাওয়ারাকে ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করা।

তারা রাতের বেলা ‘আকাবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে সাক্ষাত করলেন। সেখানে জরুরি সব কথার এক পর্যায়ে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরতের দাওয়াত দিলেন। তাদের এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে চাচা আব্বাস রাযি. জানতে পেরেছিলেন। যদিও তিনি তখনও পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেননি, কিন্তু মহান ভাতিজার মর্যাদা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে নিজ ভাই আবূ তালিবের মতই সচেতন ছিলেন। কাজেই তিনি 'আকাবার আলোচনায় নিজের উপস্থিত থাকা জরুরি মনে করলেন। সময়মত তিনি এসেও গেলেন। তিনি আনসারদের লক্ষ্য করে একটি সারগর্ভ বক্তৃতা দিলেন। তাতে বললেন“হে খাযরাজ (ও আওস) গোত্রের লোকেরা! আমাদের কাছে মুহাম্মাদের কী মর্যাদা তা আপনাদের অজানা নয়। আমরা তাঁকে আমাদের সম্প্রদায়ের হাত থেকে এ যাবত রক্ষা করে এসেছি। তাঁর প্রতিপক্ষও আমাদেরই মত ধারণা রাখে। কাজেই তাঁর দেশ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর অবস্থান অত্যন্ত সুরক্ষিত। কিন্তু তবুও তিনি আপনাদের কাছে চলে যেতে এবং আপনাদের মাঝে থাকতে ইচ্ছুক। চিন্তা করে দেখুন, আপনারা যদি তাঁকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেন এবং শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আপনাদের থাকে, তবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করুন। পক্ষান্তরে যদি মনে করেন আপনারা তাঁকে রক্ষা করতে পারবেন না এবং তাঁকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন, তবে আপনারা এর থেকে বিরত থাকুন। তিনি নিজ দেশে ও নিজ গোত্রে নিরাপদে আছেন।”

আনসারগণ বললেন, আমরা আপনার বক্তব্য শুনলাম। এবার ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কথা বলুন এবং নিজের পক্ষে ও নিজ রব্বের পক্ষে আমাদের থেকে যে অঙ্গীকার নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন তা নিয়ে নিন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা বললেন। তিনি প্রথমে কুরআন তিলাওয়াত করলেন, তারপর তাদের সামনে ইসলামের ব্যাখ্যা দিলেন এবং ইসলামের প্রতি তাদের উৎসাহ দান করলেন। তারপর বললেন, আমি এ মর্মে তোমাদের থেকে বাই'আত (প্রতিশ্রুতি) গ্রহণ করছি যে, তোমরা তোমাদের নারী ও শিশুদের যেভাবে রক্ষা কর তেমনি আমাকেও রক্ষা করবে।
তারা আল্লাহর নামে শপথ করে এই প্রতিশ্রুতি তাঁকে দান করলেন। তারপর বললেন, মদীনার ইহুদীদের সাথে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক আছে। এ বাই'আতের মাধ্যমে আমরা তা ছিন্ন করতে চাচ্ছি। পরে এমন তো হবে না যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ যখন আপনাকে বিজয় দান করবেন, তখন আপনি আমাদের ছেড়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসবেন? নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথা শুনে মৃদু হাসলেন। তারপর এই বলে তাদের আশ্বস্ত করলেন যে, তোমাদের রক্ত আমার রক্ত। তোমাদের জীবন-মরণের সাথে আমার জীবন-মরণ গাঁথা থাকবে। আমি তোমাদের, তোমরা আমার। তোমরা যাদের সাথে লড়বে, আমি তাদের সাথে লড়ব। তোমরা যাদের সাথে শান্তি স্থাপন করবে, আমিও তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করব। এভাবে 'আকাবার দ্বিতীয় বাই'আত সম্পন্ন হল।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আনসারদের পক্ষে এ বাই'আত ছিল এক চ্যালেঞ্জিং পদক্ষেপ। এটা ছিল সমগ্র আরব: বরং সমস্ত বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর। সমগ্র বিশ্ব তখন শিরক-কবলিত। তাওহীদের দাওয়াত ছিল শিরকী আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত। অন্ধকারাচ্ছন্ন মুশরিকদের সে আঘাত সহ্য করার কথা নয়। বরং এ দাওয়াত আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী ইহুদী-খৃষ্টানদের জন্যও প্রীতিকর ছিল না, যেহেতু তারাও প্রকৃত তাওহীদের বিশ্বাস থেকে সরে এসেছিল। ফলে এ দাওয়াতের পক্ষাবলম্বন দ্বারা ইহুদী-খৃষ্টানসহ সারা বিশ্বের সমস্ত পৌত্তলিক ও নাস্তিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত শক্তির মুখোমুখি হওয়া ছিল অনিবার্য। খোদ মদীনার ভেতরই শক্তিশালী ইহুদী গোত্রসমূহের বসবাস। এহেন পরিস্থিতিতে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্রয় দান করলে যে ভেতরের ও বাইরের সবরকম শক্তির বিরুদ্ধে জানবাজি রেখে লড়তে হবে, মুষ্টিমেয় আনসারদের সে কথা ভালোভাবেই জানা ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার তো তাঁর দীনকে বিজয় করার ছিল। তিনি আনসারদের অন্তরে হিম্মত দিলেন, ঈমানী উদ্দীপনা দিলেন এবং দিলেন কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতে অটল-অবিচল থাকার দৃঢ় সংকল্প। ফলে সম্ভাব্য সকল ঝুঁকি মাথায় নিয়েই তারা ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার সাথে বাই'আত সম্পন্ন করলেন।

‘আকাবার এই বাই'আত ইসলামী ইতিহাসের এক মহিমময় ঘটনা। মদীনা মুনাওয়ারার ইসলামের কেন্দ্রীয় মর্যাদালাভ, বদর যুদ্ধে জয়লাভ, মক্কাবিজয়, ইসলামী খেলাফতের বিপুল বিস্তার এবং বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের ভিত্তি এই বাই'আতের মাধ্যমেই স্থাপিত হয়েছিল। যারা এই বাই'আতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই সুমহান ব্যক্তিবর্গের অন্তরে এর মূল্য ও মর্যাদাবোধ সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে এটা স্বাভাবিক কথা। মূল্যবোধের সেই অবস্থান থেকেই হযরত কা'ব ইবন মালিক রাযি. বলেছিলেন, ‘আকাবার বাই'আতের বিপরীতে বদর যুদ্ধের উপস্থিতিকে আমি পসন্দ করব না, (অর্থাৎ এমন যদি হত যে, আমি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু ‘আকাবার বাই'আতে শরীক থাকিনি, এটা আমার পক্ষে প্রীতিকর হত না) যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে ‘আকাবা অপেক্ষা বেশি আলোচিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও নেককাজে গড়িমসি করতে নেই। গড়িমসি করলে অনেক সময়ই সেই নেককাজ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, যেমন হযরত কা'ব রাযি. ও তাঁর দুই সঙ্গী তাবুকের যুদ্ধাভিযানে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন।

খ. ইসলাম গ্রহণের বাই'আত ছাড়াও দীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাই'আত জায়েয। ‘আকাবার বাই'আত সে রকমেরই ছিল। এর দ্বারা খাঁটি পীরের হাতে বাই'আতের বৈধতা প্রমাণিত হয়।

গ. সর্বাবস্থায় সত্য বলা উচিত। সত্য বললে প্রথমদিকে কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হলেও পরিণাম সর্বদা শুভই হয়ে থাকে। হযরত কা'ব রাযি.-এর সত্যবলা সে কথাই প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে মিথ্যার পরিণাম সর্বদা অশুভই হয়, তাতে সাময়িক যত সুবিধাই দেখা যাক না কেন।

ঘ. সর্বাবস্থায় আমীর, উসতায ও শায়খের হুকুম শিরোধার্য করা উচিত। তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর হুকুম পালন করতে পারলে তা অভাবনীয় সুফল বয়ে আনে।

ঙ. মিথ্যা অজুহাত প্রদর্শন মুনাফিকদের কাজ। তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

চ. নিজেদের পরিকল্পনা ও গতিবিধি সম্পর্কে শত্রুপক্ষ যাতে অবহিত হতে না পারে, সেই লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থাগ্রহণ অধিনায়কের যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার পরিচায়ক এটা বিজয় ও সাফল্য লাভের পক্ষে সহায়ক।

ছ. কারও দ্বারা কোনও অপরাধ হয়ে গেলে তার সংশোধনকল্পে তার সংগে কথা বন্ধের শাস্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

জ. সফর থেকে ফিরে আসার পর প্রথমেই ঘরে না ঢুকে মসজিদে যাওয়া এবং দু' রাক'আত নামায পড়া মুস্তাহাব।

ঝ. কারও ভালো কিছু ঘটলে তাকে সে সম্পর্কে সুসংবাদ শোনানো একটি ইসলামী আদব। এর দ্বারা সুসংবাদদাতার মনের ঔদার্য প্রকাশ পায় এবং পরস্পরে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।

ঞ. সুসংবাদদাতাকে পুরস্কৃত করা মুস্তাহাব।

ট, কারও সুখকর কিছু ঘটলে সেজন্যে তাকে অভিনন্দন জানানো চাই।

ঠ. আগুম্ভককে স্বাগত জানানোর জন্য উঠে এগিয়ে যাওয়া ও তার সাথে মুসাফাহা করা একটি প্রশংসনীয় কাজ।

ড. অমুসলিম শত্রুর তোষামোদে ভুলতে নেই। অনেক সময় তা ঈমান হরণেরও কারণ হয়ে থাকে। সেজন্যই হযরত কা'ব রাযি. গাস্সানের রাজার চিঠিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং সেটি আগুনে পুড়ে ফেলেছেন।

ঢ. দীনের স্বার্থ আত্মীয়তারও উপরে। কাজেই দীনের কারণে যদি আত্মীয়কে পরিত্যাগ করতে হয়, তবে তা করাই বাঞ্ছনীয়। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলে হযরত কা'ব রাযি.-এর সাথে তাঁর চাচাত ভাই কথা বলতে রাজি হননি।

ণ. আমীরের কর্তব্য তার অধীনস্থদের খোঁজখবর রাখা ও তাদের সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ত. আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কোনও নি'আমত লাভ হলে তার শোকরস্বরূপ দান-সদাকা করা মুস্তাহাব।

থ. ইসলামের সাধারণ শিক্ষা এটাই যে, যার অর্থ-সম্পদ আছে সে সমস্ত সম্পদ দান-সদাকা না করে একটা অংশ ওয়ারিশদের জন্য রেখে দেবে, যাতে তাদের অন্যদের কাছে হাত পেতে বেড়াতে না হয়।

দ. বিশেষ কোনও আমলের বদৌলতে কোনও নি'আমত লাভ হলে তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সেই আমলে আরও বেশি যত্নবান হওয়া উচিত, যেমন হযরত কা'ব রাযি. সত্য বলার বদৌলতে আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমাপ্রাপ্তির নি'আমত লাভ করেছিলেন। ফলে তিনি জীবনভর সত্যবাদিতায় অবিচল থাকবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।

ধ. কারও সামনে অন্য কারও গীবত ও সমালোচনা করা হলে তার কর্তব্য প্রতিবাদ করা এবং তার প্রশংসনীয় দিক তুলে ধরা, যেমন হযরত কা'ব রাযি.-এর সমালোচনা করা হলে হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, আমরা তো কা'বকে ভালো বলেই জানি।

ন. কারও পক্ষ থেকে কোনও উপকার ও সদাচরণ পেলে তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। হযরত কা'ব রাযি. হযরত তালহা রাযি.-এর সদাচরণ জীবনভর মনে রেখেছিলেন।

এ হাদীছে এছাড়া আরও বহু শিক্ষা আছে। সংক্ষেপ করার লক্ষ্যে এখানেই ক্ষান্ত করা হল।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)