রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২০
অধ্যায়: ২ তাওবা।
২০। যতবড় পাপীই হোক, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন
হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্বকালীন লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছিল। তারপরে সে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তাকে জনৈক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী)-এর খোঁজ দেওয়া হল। সে তার কাছে আসল এবং বলল যে, সে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছে তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? রাহিব বললঃ না, তখন সে তাকেও হত্যা করল এবং তার দ্বারা একশ সংখ্যা পূর্ণ করল। তারপর পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে জানতে চাইল। তাকে জনৈক আলেমের সন্ধান দেওয়া হল। সে তার কাছে গিয়ে বলল যে, সে একশ জন লোককে হত্যা করেছে। তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কে বান্দা ও তাওবার মাঝখানে অন্তরায় সৃষ্টি করে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করে। তুমি তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে রত থাক। তুমি নিজ ভূমিতে ফিরে যেও না। কেননা সেটি একটি মন্দ জায়গা।
সুতরাং লোকটি রওয়ানা হয়ে গেল। যখন পথের মাঝখানে পৌঁছল, তার মৃত্যু এসে গেল। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতাদের মধ্যে বিবাদ লেগে গেল। রহমতের ফিরিশতাগণ বললেন, সে তাওবা করে এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর অভিমুখী হয়ে এসেছে। আর আযাবের ফিরিশতাগণ বললেন, সে কখনও কোনও ভালো কাজ করেনি। এ অবস্থায় তাদের কাছে এক ফিরিশতা মানুষের বেশে আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাদের মধ্যে বিচারক বানালেন। তিনি বললেন, উভয় দিকের জমি পরিমাপ করে দেখ, সে কোন দিকের বেশি কাছে ছিল। সে সেই দিকেরই গণ্য হবে। তারা পরিমাপ করল। দেখতে পেল যেই স্থানে যেতে চেয়েছিল, সে তারই বেশি নিকটবর্তী । সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তাকে গ্রহণ করল- বুখারী ও মুসলিম।” (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭০,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৬)
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে এক বিঘত পরিমাণ উৎকৃষ্ট জনপদটির নিকটবর্তী ছিল। সুতরাং তাকে সেই জনপদেরই একজন ধরা হল।
সহীহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা এই জমিকে হুকুম দিলেন- দূরবর্তী হও। আর ওই ভূমিকে হুকুম দিলেন- নিকটবর্তী হও। এবং বললেন, উভয়ের মধ্যে পরিমাপ কর। তারা তাকে এক বিঘত পরিমাণ ওই ভূমির নিকটবর্তী পেল। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।
অপর এক বর্ণনায় আছে, সে তার বুক ঠেলে ওই দিকে সরে গেল।
হযরত আবু সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের পূর্বকালীন লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছিল। তারপরে সে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তাকে জনৈক রাহিব (খৃষ্টান সন্ন্যাসী)-এর খোঁজ দেওয়া হল। সে তার কাছে আসল এবং বলল যে, সে নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছে তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? রাহিব বললঃ না, তখন সে তাকেও হত্যা করল এবং তার দ্বারা একশ সংখ্যা পূর্ণ করল। তারপর পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে জানতে চাইল। তাকে জনৈক আলেমের সন্ধান দেওয়া হল। সে তার কাছে গিয়ে বলল যে, সে একশ জন লোককে হত্যা করেছে। তার কি তাওবার কোনও সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কে বান্দা ও তাওবার মাঝখানে অন্তরায় সৃষ্টি করে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করে। তুমি তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে রত থাক। তুমি নিজ ভূমিতে ফিরে যেও না। কেননা সেটি একটি মন্দ জায়গা।
সুতরাং লোকটি রওয়ানা হয়ে গেল। যখন পথের মাঝখানে পৌঁছল, তার মৃত্যু এসে গেল। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতাদের মধ্যে বিবাদ লেগে গেল। রহমতের ফিরিশতাগণ বললেন, সে তাওবা করে এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর অভিমুখী হয়ে এসেছে। আর আযাবের ফিরিশতাগণ বললেন, সে কখনও কোনও ভালো কাজ করেনি। এ অবস্থায় তাদের কাছে এক ফিরিশতা মানুষের বেশে আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাদের মধ্যে বিচারক বানালেন। তিনি বললেন, উভয় দিকের জমি পরিমাপ করে দেখ, সে কোন দিকের বেশি কাছে ছিল। সে সেই দিকেরই গণ্য হবে। তারা পরিমাপ করল। দেখতে পেল যেই স্থানে যেতে চেয়েছিল, সে তারই বেশি নিকটবর্তী । সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তাকে গ্রহণ করল- বুখারী ও মুসলিম।” (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭০,মুসলিম হাদীস নং ২৭৬৬)
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে এক বিঘত পরিমাণ উৎকৃষ্ট জনপদটির নিকটবর্তী ছিল। সুতরাং তাকে সেই জনপদেরই একজন ধরা হল।
সহীহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাআলা এই জমিকে হুকুম দিলেন- দূরবর্তী হও। আর ওই ভূমিকে হুকুম দিলেন- নিকটবর্তী হও। এবং বললেন, উভয়ের মধ্যে পরিমাপ কর। তারা তাকে এক বিঘত পরিমাণ ওই ভূমির নিকটবর্তী পেল। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।
অপর এক বর্ণনায় আছে, সে তার বুক ঠেলে ওই দিকে সরে গেল।
2 - باب التوبة
20 - وعن أبي سَعيد سَعْدِ بنِ مالكِ بنِ سِنَانٍ الخدريِّ - رضي الله عنه: أنّ نَبِيَّ الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكمْ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وتِسْعينَ نَفْسًا، فَسَأَلَ عَنْ أعْلَمِ أَهْلِ الأرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَاهِبٍ، فَأَتَاهُ. فقال: إنَّهُ قَتَلَ تِسعَةً وتِسْعِينَ نَفْسًا فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوبَةٍ؟ فقالَ: لا، فَقَتَلهُ فَكَمَّلَ بهِ مئَةً، ثُمَّ سَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الأَرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَجُلٍ عَالِمٍ. فقَالَ: إِنَّهُ قَتَلَ مِائَةَ نَفْسٍ فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ؟ فقالَ: نَعَمْ، ومَنْ يَحُولُ بَيْنَهُ وبَيْنَ التَّوْبَةِ؟ انْطَلِقْ إِلى أرضِ كَذَا وكَذَا فإِنَّ بِهَا أُناسًا يَعْبُدُونَ الله تَعَالَى فاعْبُدِ الله مَعَهُمْ، ولاَ تَرْجِعْ إِلى أَرْضِكَ فَإِنَّهَا أرضُ سُوءٍ، فانْطَلَقَ حَتَّى إِذَا نَصَفَ الطَّرِيقَ أَتَاهُ الْمَوْتُ، فاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ ومَلائِكَةُ العَذَابِ. فَقَالتْ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ: جَاءَ تَائِبًا، مُقْبِلًا بِقَلبِهِ إِلى اللهِ تَعَالَى، وقالتْ مَلائِكَةُ العَذَابِ: إنَّهُ لمْ يَعْمَلْ خَيرًا قَطُّ، فَأَتَاهُمْ مَلَكٌ في صورَةِ آدَمِيٍّ فَجَعَلُوهُ بَيْنَهُمْ - أيْ حَكَمًا - فقالَ: قِيسُوا ما بينَ الأرضَينِ فَإلَى أيّتهما كَانَ أدنَى فَهُوَ لَهُ. فَقَاسُوا فَوَجَدُوهُ أدْنى إِلى الأرْضِ التي أرَادَ، فَقَبَضَتْهُ مَلائِكَةُ الرَّحمةِ». مُتَّفَقٌ عليه. (1) [ص:17]
وفي رواية في الصحيح: «فَكَانَ إلى القَريَةِ الصَّالِحَةِ أقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أهلِهَا».
وفي رواية في الصحيح: «فَأَوحَى الله تَعَالَى إِلى هذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وإِلَى هذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي، وقَالَ: قِيسُوا مَا بيْنَهُما، فَوَجَدُوهُ إِلى هذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ». وفي رواية: «فَنَأى بصَدْرِهِ نَحْوَهَا».
وفي رواية في الصحيح: «فَكَانَ إلى القَريَةِ الصَّالِحَةِ أقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أهلِهَا».
وفي رواية في الصحيح: «فَأَوحَى الله تَعَالَى إِلى هذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وإِلَى هذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي، وقَالَ: قِيسُوا مَا بيْنَهُما، فَوَجَدُوهُ إِلى هذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ». وفي رواية: «فَنَأى بصَدْرِهِ نَحْوَهَا».
হাদীসের ব্যাখ্যা:
তাওবা সম্পর্কে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীছ। আল্লাহ তা'আলা যে কত উপায়ে বান্দার তাওবা কবুল করেন, এ হাদীছে তা স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে একজন মানুষ যত বড় পাপীই হোক, তার তাওবা করার সুযোগ থাকে এবং সময়মত তাওবা করলে তা আল্লাহ কবূলও করেন। যেমন হাদীছে বর্ণিত লোকটি একজন ঘোরতর পাপী ছিল। একশ'জন লোকের হত্যাকারী। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।
ঘটনাটির সারমর্ম এই যে, আমাদের পূর্বের জাতি খুব সম্ভব খৃষ্টান জাতির মধ্যে এক ব্যক্তি এক এক করে ৯৯জন লোককে হত্যা করেছিল। নিশ্চয়ই তার এ পাপ অতি গুরুতর। কাজেই যখন তাওবার উদ্দেশ্যে কোনও রাহিবের কাছে আসল, তখন সে রাহিবও তার তাওবা করার সুযোগ আছে বলে মনে করেনি। তার কাছে মনে হয়েছে এমন ঘোরতর পাপীর আবার কিসের তাওবা!
মূলত এটা ছিল সে রাহিবের অজ্ঞতা। একজন পাপী, যে কিনা তাওবা করতে এসেছে, তাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করা কোনও জ্ঞানীজনের কাজ হতে পারে না। আল্লাহর রহমত তাঁর ক্রোধের উপর প্রবল। যত বড় পাপীই হোক না কেন সে যদি একবার অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেন। তাই এ ব্যক্তিকে নিরাশ করা রাহিবের উচিত হয়নি। এ অনুচিত কাজ করার “যে পরিণাম হওয়ার কথা তাই হয়েছে। এর ফলে তার মনে হতাশা দেখার পাশাপাশি প্রচণ্ড ক্রোধেরও সঞ্চার হয়েছে। হতাশ মনের লোক নির্দ্বিধায় যে-কোনও কাজ করে ফেলতে পারে। ক্রোধোন্মত্ত ব্যক্তিরও কোনও বিবেচনাবোধ থাকে না। ফলে যে-কোনও গর্হিত কাজ সে অনায়াসে করে ফেলে।
হাদীছে বর্ণিত ব্যক্তির মধ্যে সেই ক্রোধ ও হাতাশা- এ দুইই দেখা দিয়েছিল। ফলে তৎক্ষণাৎ সে রাহিবকে হত্যা করে আর এভাবে সে একশ'র কোটা পূর্ণ করে ফেলে। সর্বশেষ এ হত্যার পর তার মধ্যে আবারও অনুশোচনা জাগে। সুতরাং কিভাবে তার মুক্তিলাভ ও তাওবার ব্যবস্থা হতে পারে, তা জানার জন্য বড় কোনও আলেমের সন্ধান করল। তাকে এক আলেমের সন্ধান দেওয়া হল এবং সে তার কাছে চলে গেল।
এবারের ব্যক্তি যথার্থই আলেম ছিলেন। তিনি তাকে হত্যশ করলেন না; বরং এই বলে তার মনে আশার সঞ্চার করলেন যে, কে পাপী ব্যক্তি ও তাওবার মাঝখানে বাধার সৃষ্টি করতে পারে? আল্লাহ অসীম রহমতের মালিক। তাঁর কাছে তাওবার দুয়ার চির উন্মুক্ত। তিনি সকল পাপীকেই ক্ষমা করেন। তোমাকেও ক্ষমা করবেন। তবে হাঁ, পুনরায় যাতে পাপে লিপ্ত না হও, তাই তোমার আত্মসংশোধনের দরকার। সেই সংশোধনের জন্য প্রয়োজন সৎসঙ্গ। তাই নিজ এলাকা ছেড়ে তাকে এমন এক জনপদে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন, যেখানে কিছু সংলোক বাস করে এবং আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর ভেতর মশগুল থাকে। তাদের সাহচর্যে কিছুদিন কাটালে তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। আল্লাহর হুকুমমত চলার মানসিকতা তৈরি হবে। নেক কাজের অভ্যাস গড়ে উঠবে। সবরকম বদ অভ্যাস দূর হয়ে যাবে। আর এভাবে ক্রমে সেও একজন সৎলোকে পরিণত হবে।
এই আলেমের পরামর্শ মোতাবেক পাপী লোকটি ওই নেককারদের কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়ে গেল। যেতে যেতে যখন তার বাড়ি ও নেককারদের এলাকার মাঝ বরাবর পৌঁছল, তখন তার আয়ু ফুরিয়ে গেল। এখন কে তার জান কবজ করবে? রহমতের ফিরিশতা, না আযাবের ফিরিশতা? ফিরিশতাদের দুই দলই উপস্থিত হয়ে গেলেন। আযাবের ফিরিশতাদের কথা- সে একজন ঘোর পাপী। কখনও নেককাজ করেনি। আমরাই তার জান কবজ করব। রহমতের ফিরিশতাদের দাবি তারা জান কাবজ করবেন। কারণ সে পাপী হলেও এখন তো তাওবা করেছে এবং সংশোধনের ইচ্ছায় নেককারদের সাহচর্য নিতে চেয়েছে। উভয়েরই শক্ত যুক্তি। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যে পরম দয়ালু। তিনি দয়ার আচরণ করলেন। একজন ফিরিশতার মাধ্যমে ফয়সালা নিলেন উভয়দিকের রাস্তা মেপে দেখা হোক। যেদিকের রাস্তা কম হবে, অর্থাৎ সে যেদিকের বেশি কাছে হবে তাকে সেই দিকেরই গণ্য করা হবে। যদি সে নেককারদের বেশি কাছে হয়, তবে তাকে নেককারদের একজন গণ্য করা হবে আর সে হিসেবে রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবজ করবেন। অন্যথায় তার জান কবজ করবেন আযাবের ফিরিশতাগণ। সুতরাং পথ মাপা শুরু হল। ওদিকে আল্লাহ তা'আলা যমীনের প্রতি হুকুম জারি করলেন। নেককারদের দিকের ভূমিকে বললেন, সংকুচিত হয়ে যাও। আর ওদিকের ভূমিকে বললেন, প্রসারিত হয়ে যাও। ভূমি হুকুম পালন করল। ফলে মেপে দেখা গেল নেককারদের দিকে দূরত্ব এক বিঘত কম এবং সে তাদেরই বেশি কাছে। সুতরাং ফয়সালা মোতাবেক রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবজ করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও দ্বারা যত বড় পাপই হোক না কেন, তাওবা কবুলের ব্যাপারে হতাশ হওয়া উচিত নয়। খাঁটি তাওবা করলে আল্লাহ তা'আলা বড় থেকে বড় পাপও ক্ষমা করেন।
খ. খাঁটি তাওবার একটা অংশ নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করা। নিজেকে সংশোধন করার প্রকৃষ্ট উপায় নেককার লোকদের সাহচর্যগ্রহণ।
গ. নেককার লোকদের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পথ চলাও এক মূল্যবান ইবাদত। এর অছিলায়ও আল্লাহ তা'আলা গুনাহ মাফ করেন।
ঘ. মানুষের ভালো-মন্দরূপে গড়ে উঠার পেছনে পরিবেশের ভূমিকা থাকে। তাই নিজের আমল-আখলাক তৈরি ও হেফাজতকল্পে মন্দ পরিবেশ পরিত্যাগ ও ভালো পরিবেশ অবলম্বন জরুরি।
ঙ. দীনী বিষয়ে সুযোগ্য আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এরূপ আলেম কাছে না পাওয়া গেলে শারীরিক চিকিৎসার্থে যেমন দূরে যাওয়া হয়, তেমনি এ ব্যাপারেও দূরের কোনও যোগ্য আলেমের কাছে যেতে হবে।
চ. অযোগ্য ও বেআমল আলেমের সাহচর্য ক্ষতিকর।
ছ. অন্যকে পরামর্শদানে, বিশেষত দীনী বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। ভুল পরামর্শে অন্যের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
জ. যে বিষয়ে ভালো জানা নেই, সে বিষয়ে মাসআলা বলা ও ফতোয়া দেওয়া থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ঝ. পাপী ব্যক্তিকে হতাশ না করে তাকে তাওবার প্রতি উৎসাহিত করা ও আল্লাহর রহমত লাভে আশাবাদী করে তোলাই তার প্রকৃত কল্যাণকামিতা।
ঞ. নরহত্যা মহাপাপ। কুরআন মাজীদের ভাষ্যমতে যে-কোনও একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা জগতের সমস্ত মানুষকে হত্যা করার সমতুল্য।
ট. এ হাদীছ দ্বারা ইলমেরও ফযীলত জানা যায়। একজন পরহেযগার আলেম কেবল নিজেই ভ্রান্তপথ থেকে বেঁচে থাকে না। তার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা অপরাপর মানুষকেও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন ও সুপথে পরিচালিত করেন। এ হাদীছে এ ছাড়া আরও বহু শিক্ষা আছে। সংক্ষেপ করার তাগিদে এখানেই ক্ষান্ত করা হল।
ঘটনাটির সারমর্ম এই যে, আমাদের পূর্বের জাতি খুব সম্ভব খৃষ্টান জাতির মধ্যে এক ব্যক্তি এক এক করে ৯৯জন লোককে হত্যা করেছিল। নিশ্চয়ই তার এ পাপ অতি গুরুতর। কাজেই যখন তাওবার উদ্দেশ্যে কোনও রাহিবের কাছে আসল, তখন সে রাহিবও তার তাওবা করার সুযোগ আছে বলে মনে করেনি। তার কাছে মনে হয়েছে এমন ঘোরতর পাপীর আবার কিসের তাওবা!
মূলত এটা ছিল সে রাহিবের অজ্ঞতা। একজন পাপী, যে কিনা তাওবা করতে এসেছে, তাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করা কোনও জ্ঞানীজনের কাজ হতে পারে না। আল্লাহর রহমত তাঁর ক্রোধের উপর প্রবল। যত বড় পাপীই হোক না কেন সে যদি একবার অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেন। তাই এ ব্যক্তিকে নিরাশ করা রাহিবের উচিত হয়নি। এ অনুচিত কাজ করার “যে পরিণাম হওয়ার কথা তাই হয়েছে। এর ফলে তার মনে হতাশা দেখার পাশাপাশি প্রচণ্ড ক্রোধেরও সঞ্চার হয়েছে। হতাশ মনের লোক নির্দ্বিধায় যে-কোনও কাজ করে ফেলতে পারে। ক্রোধোন্মত্ত ব্যক্তিরও কোনও বিবেচনাবোধ থাকে না। ফলে যে-কোনও গর্হিত কাজ সে অনায়াসে করে ফেলে।
হাদীছে বর্ণিত ব্যক্তির মধ্যে সেই ক্রোধ ও হাতাশা- এ দুইই দেখা দিয়েছিল। ফলে তৎক্ষণাৎ সে রাহিবকে হত্যা করে আর এভাবে সে একশ'র কোটা পূর্ণ করে ফেলে। সর্বশেষ এ হত্যার পর তার মধ্যে আবারও অনুশোচনা জাগে। সুতরাং কিভাবে তার মুক্তিলাভ ও তাওবার ব্যবস্থা হতে পারে, তা জানার জন্য বড় কোনও আলেমের সন্ধান করল। তাকে এক আলেমের সন্ধান দেওয়া হল এবং সে তার কাছে চলে গেল।
এবারের ব্যক্তি যথার্থই আলেম ছিলেন। তিনি তাকে হত্যশ করলেন না; বরং এই বলে তার মনে আশার সঞ্চার করলেন যে, কে পাপী ব্যক্তি ও তাওবার মাঝখানে বাধার সৃষ্টি করতে পারে? আল্লাহ অসীম রহমতের মালিক। তাঁর কাছে তাওবার দুয়ার চির উন্মুক্ত। তিনি সকল পাপীকেই ক্ষমা করেন। তোমাকেও ক্ষমা করবেন। তবে হাঁ, পুনরায় যাতে পাপে লিপ্ত না হও, তাই তোমার আত্মসংশোধনের দরকার। সেই সংশোধনের জন্য প্রয়োজন সৎসঙ্গ। তাই নিজ এলাকা ছেড়ে তাকে এমন এক জনপদে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন, যেখানে কিছু সংলোক বাস করে এবং আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর ভেতর মশগুল থাকে। তাদের সাহচর্যে কিছুদিন কাটালে তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। আল্লাহর হুকুমমত চলার মানসিকতা তৈরি হবে। নেক কাজের অভ্যাস গড়ে উঠবে। সবরকম বদ অভ্যাস দূর হয়ে যাবে। আর এভাবে ক্রমে সেও একজন সৎলোকে পরিণত হবে।
এই আলেমের পরামর্শ মোতাবেক পাপী লোকটি ওই নেককারদের কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়ে গেল। যেতে যেতে যখন তার বাড়ি ও নেককারদের এলাকার মাঝ বরাবর পৌঁছল, তখন তার আয়ু ফুরিয়ে গেল। এখন কে তার জান কবজ করবে? রহমতের ফিরিশতা, না আযাবের ফিরিশতা? ফিরিশতাদের দুই দলই উপস্থিত হয়ে গেলেন। আযাবের ফিরিশতাদের কথা- সে একজন ঘোর পাপী। কখনও নেককাজ করেনি। আমরাই তার জান কবজ করব। রহমতের ফিরিশতাদের দাবি তারা জান কাবজ করবেন। কারণ সে পাপী হলেও এখন তো তাওবা করেছে এবং সংশোধনের ইচ্ছায় নেককারদের সাহচর্য নিতে চেয়েছে। উভয়েরই শক্ত যুক্তি। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যে পরম দয়ালু। তিনি দয়ার আচরণ করলেন। একজন ফিরিশতার মাধ্যমে ফয়সালা নিলেন উভয়দিকের রাস্তা মেপে দেখা হোক। যেদিকের রাস্তা কম হবে, অর্থাৎ সে যেদিকের বেশি কাছে হবে তাকে সেই দিকেরই গণ্য করা হবে। যদি সে নেককারদের বেশি কাছে হয়, তবে তাকে নেককারদের একজন গণ্য করা হবে আর সে হিসেবে রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবজ করবেন। অন্যথায় তার জান কবজ করবেন আযাবের ফিরিশতাগণ। সুতরাং পথ মাপা শুরু হল। ওদিকে আল্লাহ তা'আলা যমীনের প্রতি হুকুম জারি করলেন। নেককারদের দিকের ভূমিকে বললেন, সংকুচিত হয়ে যাও। আর ওদিকের ভূমিকে বললেন, প্রসারিত হয়ে যাও। ভূমি হুকুম পালন করল। ফলে মেপে দেখা গেল নেককারদের দিকে দূরত্ব এক বিঘত কম এবং সে তাদেরই বেশি কাছে। সুতরাং ফয়সালা মোতাবেক রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবজ করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও দ্বারা যত বড় পাপই হোক না কেন, তাওবা কবুলের ব্যাপারে হতাশ হওয়া উচিত নয়। খাঁটি তাওবা করলে আল্লাহ তা'আলা বড় থেকে বড় পাপও ক্ষমা করেন।
খ. খাঁটি তাওবার একটা অংশ নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করা। নিজেকে সংশোধন করার প্রকৃষ্ট উপায় নেককার লোকদের সাহচর্যগ্রহণ।
গ. নেককার লোকদের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পথ চলাও এক মূল্যবান ইবাদত। এর অছিলায়ও আল্লাহ তা'আলা গুনাহ মাফ করেন।
ঘ. মানুষের ভালো-মন্দরূপে গড়ে উঠার পেছনে পরিবেশের ভূমিকা থাকে। তাই নিজের আমল-আখলাক তৈরি ও হেফাজতকল্পে মন্দ পরিবেশ পরিত্যাগ ও ভালো পরিবেশ অবলম্বন জরুরি।
ঙ. দীনী বিষয়ে সুযোগ্য আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এরূপ আলেম কাছে না পাওয়া গেলে শারীরিক চিকিৎসার্থে যেমন দূরে যাওয়া হয়, তেমনি এ ব্যাপারেও দূরের কোনও যোগ্য আলেমের কাছে যেতে হবে।
চ. অযোগ্য ও বেআমল আলেমের সাহচর্য ক্ষতিকর।
ছ. অন্যকে পরামর্শদানে, বিশেষত দীনী বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। ভুল পরামর্শে অন্যের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
জ. যে বিষয়ে ভালো জানা নেই, সে বিষয়ে মাসআলা বলা ও ফতোয়া দেওয়া থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ঝ. পাপী ব্যক্তিকে হতাশ না করে তাকে তাওবার প্রতি উৎসাহিত করা ও আল্লাহর রহমত লাভে আশাবাদী করে তোলাই তার প্রকৃত কল্যাণকামিতা।
ঞ. নরহত্যা মহাপাপ। কুরআন মাজীদের ভাষ্যমতে যে-কোনও একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা জগতের সমস্ত মানুষকে হত্যা করার সমতুল্য।
ট. এ হাদীছ দ্বারা ইলমেরও ফযীলত জানা যায়। একজন পরহেযগার আলেম কেবল নিজেই ভ্রান্তপথ থেকে বেঁচে থাকে না। তার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা অপরাপর মানুষকেও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন ও সুপথে পরিচালিত করেন। এ হাদীছে এ ছাড়া আরও বহু শিক্ষা আছে। সংক্ষেপ করার তাগিদে এখানেই ক্ষান্ত করা হল।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: