রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৬
অধ্যায়: ১
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৬। সহীহ নিয়তে স্ত্রীর মুখে খাবার তুলে দিলেও ছওয়াব পাওয়া যায়:
হযরত সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (মালিক ইবন উহাইব ইবন আব্দি মানাফ ইবন যুহরা ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা'ব ইবন লুআঈ কুরাশী) রাযি. থেকে বর্ণিত। উল্লেখ্য, তিনি ওই বিশেষ দশজন সাহাবীর একজন, যাদের সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছিলেন (যাদেরকে "আশারায়ে মুবাশশারা' বলা হয়ে থাকে)। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার রোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখছেন। আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। এক কন্যা ছাড়া আমার আর কোনও ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দান করে দেব? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তবে তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, তিন ভাগের একভাগ। তিন ভাগের একভাগও বেশিই বটে। ওয়ারিশদেরকে তোমার ধনী রেখে যাওয়াটা তাদেরকে এমন গরীব রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় যা-কিছুই ব্যয় করো না কেন, তার জন্য তোমাকে প্রতিদান দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা রাখবে তার জন্যও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সঙ্গীদের (মৃত্যুর) পর পেছনে থেকে যাব? তিনি বললেন, তোমাকে যদি পেছনে রেখে দেওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তুমি কোনও আমল কর, তবে তা দ্বারা অবশ্যই তোমার মর্যাদা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। হয়তো তোমাকে পেছনে রেখে দেওয়া হবে, ফলে একদল মানুষ (অর্থাৎ মুমিনগণ) তোমার দ্বারা উপকৃত হবে এবং অপর একদল মানুষ (অর্থাৎ কাফেরগণ) তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদের জন্য তাদের হিজরতকে কার্যকর কর। তাদেরকে তাদের পেছনদিকে ফিরিয়ে দিও না। তবে বেচারা সা'দ ইবন খাওলা! (বর্ণনাকারী বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন; যেহেতু তিনি মক্কায় ইন্তিকাল করেন। বুখারী ও মুসলিম।- (বুখারী হাদীস নং ১২৯৫,মুসলিম হাদীস নং ১৬২৮)
হযরত সা'দ ইবন আবু ওয়াক্কাস (মালিক ইবন উহাইব ইবন আব্দি মানাফ ইবন যুহরা ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা'ব ইবন লুআঈ কুরাশী) রাযি. থেকে বর্ণিত। উল্লেখ্য, তিনি ওই বিশেষ দশজন সাহাবীর একজন, যাদের সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছিলেন (যাদেরকে "আশারায়ে মুবাশশারা' বলা হয়ে থাকে)। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তখন আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার রোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখছেন। আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। এক কন্যা ছাড়া আমার আর কোনও ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দান করে দেব? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তবে তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, তিন ভাগের একভাগ। তিন ভাগের একভাগও বেশিই বটে। ওয়ারিশদেরকে তোমার ধনী রেখে যাওয়াটা তাদেরকে এমন গরীব রেখে যাওয়া অপেক্ষা উত্তম যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় যা-কিছুই ব্যয় করো না কেন, তার জন্য তোমাকে প্রতিদান দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা রাখবে তার জন্যও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আমার সঙ্গীদের (মৃত্যুর) পর পেছনে থেকে যাব? তিনি বললেন, তোমাকে যদি পেছনে রেখে দেওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তুমি কোনও আমল কর, তবে তা দ্বারা অবশ্যই তোমার মর্যাদা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। হয়তো তোমাকে পেছনে রেখে দেওয়া হবে, ফলে একদল মানুষ (অর্থাৎ মুমিনগণ) তোমার দ্বারা উপকৃত হবে এবং অপর একদল মানুষ (অর্থাৎ কাফেরগণ) তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদের জন্য তাদের হিজরতকে কার্যকর কর। তাদেরকে তাদের পেছনদিকে ফিরিয়ে দিও না। তবে বেচারা সা'দ ইবন খাওলা! (বর্ণনাকারী বলেন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন; যেহেতু তিনি মক্কায় ইন্তিকাল করেন। বুখারী ও মুসলিম।- (বুখারী হাদীস নং ১২৯৫,মুসলিম হাদীস নং ১৬২৮)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
6 - وعن أبي إسحاقَ سَعدِ بنِ أبي وَقَّاصٍ مالِكِ بنِ أُهَيْب بنِ عبدِ منافِ بنِ زُهرَةَ بنِ كلابِ بنِ مُرَّةَ بنِ كعبِ بنِ لُؤيٍّ القُرشِيِّ الزُّهريِّ - رضي الله عنه - أَحَدِ العَشَرَةِ (2) المشهودِ لهم بالجنةِ - رضي الله عنهم - قَالَ: جاءنِي رسولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الوَدَاعِ مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بي، فقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنِّي قَدْ بَلَغَ بي مِنَ الوَجَعِ مَا تَرَى، وَأَنَا ذُو مالٍ وَلا يَرِثُني إلا ابْنَةٌ لي، أفأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: «لا»، قُلْتُ: فالشَّطْرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فقَالَ: «لا»، قُلْتُ: فالثُّلُثُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «الثُّلُثُ والثُّلُثُ كَثيرٌ - أَوْ كبيرٌ - إنَّكَ إنْ تَذَرْ وَرَثَتَكَ أغنِيَاءَ خيرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً (3) يتكفَّفُونَ النَّاسَ، وَإنَّكَ لَنْ تُنفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغي بِهَا وَجهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ في فِيِّ امْرَأَتِكَ»، قَالَ: فَقُلتُ: يَا رسولَ اللهِ، أُخلَّفُ (4) بعدَ أصْحَابي؟ قَالَ: «إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعملَ عَمَلًا تَبتَغي بِهِ وَجْهَ اللهِ إلاَّ ازْدَدتَ بِهِ دَرَجةً ورِفعَةً، وَلَعلَّكَ أَنْ تُخَلَّفَ حَتّى يَنتَفِعَ بِكَ أقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخرونَ. اللَّهُمَّ أَمْضِ لأصْحَابي هِجْرَتَهُمْ ولاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أعقَابهمْ، لكنِ البَائِسُ سَعدُ بْنُ خَوْلَةَ» يَرْثي لَهُ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - أَنْ ماتَ بمَكَّة. مُتَّفَقٌ عليهِ. (5)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে হযরত সা'দ রাযি. নিজ ঘটনা বর্ণনা করেন যে, তিনি বিদায় হজ্জের বছর মক্কা মুকার্রামায় কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সংবাদ পেয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে আসেন। কোনও সাহাবী অসুস্থ হলে তাকে দেখতে আসা তাঁর সাধারণ অভ্যাস ছিল। তিনি অন্যদেরকেও রোগী দেখতে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এটা তাঁর সুন্নত এবং এর অনেক ফযীলত।
হযরত সা'দ রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি তাঁকে জানালাম যে, আমার ওয়ারিশ তো মাত্র আমার এক কন্যা। অন্যদিকে আমার সম্পদ প্রচুর। এ অবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের তিন ভাগের দুইভাগ সদকা করে দিতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করলেন। তারপর তিনি অর্ধেকের কথা বললেন। তাও নিষেধ করলেন। শেষে যখন তিন ভাগের একভাগের কথা বললেন, তখন পরিমাণ হিসেবে এটাকেও বেশিই সাব্যস্ত করলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও অনুমতি দিয়ে দিলেন। সেইসংগে উপদেশ দিলেন যে, ধন–সম্পদ থাকলে তার একটা বড় অংশ সন্তানদের জন্য রেখে যাওয়া চাই। কেননা তা না হলে এ আশংকা আছে যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। আর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এটা অমর্যাদাকর।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে অপরের কাছে হাত পেতে বেড়ানোর নিন্দা করেছেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। তাঁর শিক্ষায় অপরের কাছে হাত পাতা অপেক্ষা খেটে খাওয়াই শ্রেয়। সেই শিক্ষা হিসেবেই তিনি হযরত সা'দ রাযি.–কে তার সম্পদের বড় অংশ ওয়ারিশদের জন্য রেখে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসংগে আরও জানান যে, অর্থ–সম্পদ থাকলে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে খাতেই ব্যয় করা হোক তাতে ছওয়াব পাওয়া যায়, যদি না তা শরী'আতবিরোধী কোনও কাজে ব্যয় করা হয়। স্ত্রী ও সন্তানদের হক আদায়ার্থে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তাতেও ছওয়াব পাওয়া যায়। এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, এমনকি স্ত্রীর মুখে যদি কোনও লোকমা তুলে দেওয়া হয়, তবে তাও ছওয়াবের কাজরূপে গণ্য হয়। এর দ্বারা সম্পদ উপার্জন, সংরক্ষণ ও সঠিক খাতে তা ব্যয়ের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
হযরত সা'দ রাযি.–এর আশংকা হয়েছিল যে, অসুস্থতার কারণে তাঁকে মক্কায় থেকে যেতে হবে। ফলে তাঁর হিজরত বাতিল হয়ে যাবে এবং হিজরত করে তিনি যে ছওয়াবের অধিকারী হয়েছিলেন তা থেকে মাহরুম হয়ে যাবেন। সে আশংকা থেকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার বন্ধুগণ মদীনায় ফিরে যাওয়ার পরও আমাকে কি মক্কায় থেকে যেতে হবে? আমার মৃত্যু কি এখানেই হয়ে যাবে? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে, না, তোমার এখানে থেকে যেতে হবে না এবং হিজরতও বাতিল হবে না। বরং এই সম্ভাবনা আছে যে, তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে এবং দাওয়াত ও জিহাদের মহান তৎপরতায় তোমার সময় কাটবে। ফলে একদিকে তোমার দ্বারা বহু মানুষ হেদায়াত পাবে এবং তারা জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাবে। বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহে প্রচুর গনীমত লাভ হবে এবং তা দ্বারা মুসলিমগণ উপকৃত হবে। দিকে দিকে ইসলাম ছড়িয়ে পড়বে এবং চারদিকে ইসলামের রাজ্যবিস্তার ঘটবে। মোটকথা তোমার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ'র প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে। অপরদিকে যাদের ভাগ্যে দীন ও ঈমান নেই, তোমার হাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কুফরী শক্তি রাজত্ব হারাবে। কেউ যুদ্ধে নিহত হবে এবং জাহান্নামে চলে যাবে। কেউ বন্দি হবে এবং দাসত্বের জীবনযাপন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারুক রাযি.–এর আমলে বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কাদেসিয়ার যুদ্ধে তো তিনিই সেনাপতি ছিলেন। আঞ্চলিক গভর্ণর হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ১৭ জন পুত্র ও ১২ জন কন্যাসন্তান রেখে যান। অথচ এ ঘটনার সময় তাঁর ছিল মাত্র এক কন্যাসন্তান।
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের জন্য দু'আ করেন, যেন আল্লাহ তা'আলা তাদের হিজরতকে কার্যকর করেন এবং তাদেরকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না দেন। অর্থাৎ তারা যেন ঈমানের উপরে অবিচলিত থাকেন এবং এমন যেন না হয় যে, তাদের কেউ মদীনা মুনাওয়ারা ছেড়ে পুনরায় মক্কা মুকাররামায় চলে এসেছেন এবং এখানেই তার মৃত্যু হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত এখানে হযরত সা'দ ইবন খাওলা রাযি.–এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হিজরতের পর তিনি মক্কা মুকাররামায় আসলে এখানেই তার মৃত্যু হয়েছিল। ফলে তার হিজরত অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কেউ অসুস্থ হয়েছে জানলে তাকে দেখতে যাওয়া উচিত। এটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
খ. উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ করতে চাইলে সে ব্যাপারে বিজ্ঞজনের সংগে পরামর্শ করা উচিত, যেমন হযরত সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাযি. তার সম্পদ দান করে দেওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে পরামর্শ করেছেন।
গ. মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তার সম্পদ দান করতে চায় বা সে সম্পর্কে অসিয়ত করতে চায়, তবে তা সর্বোচ্চ এক–তৃতীয়াংশের ভেতর করতে পারে, এর বেশি করা জায়েয নয়। উত্তম হল এক–তৃতীয়াংশেরও নিচে রাখা
ঘ. সম্পদ যদি অল্প হয়, তবে মুমূর্ষুকালে তা দান–খয়রাত না করে ওয়ারিশদের জন্য রেখে দেওয়াই ভালো।
ঙ. অন্যের কাছে কিছু চাওয়া ও হাত পেতে বেড়ানো অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। যথাসম্ভব খেটে খাওয়াই ইসলামের শিক্ষা।
চ. দান–খয়রাতে সুনাম–সুখ্যাতি নয়, বরং একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি কামনাই লক্ষ হওয়া উচিত।
ছ. আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সন্তান–সন্ততি ও আত্মীয়–স্বজনের পেছনে খরচ করলেও ছওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়াটাও একটি ছওয়াবের কাজ।
হযরত সা'দ রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি তাঁকে জানালাম যে, আমার ওয়ারিশ তো মাত্র আমার এক কন্যা। অন্যদিকে আমার সম্পদ প্রচুর। এ অবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের তিন ভাগের দুইভাগ সদকা করে দিতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করলেন। তারপর তিনি অর্ধেকের কথা বললেন। তাও নিষেধ করলেন। শেষে যখন তিন ভাগের একভাগের কথা বললেন, তখন পরিমাণ হিসেবে এটাকেও বেশিই সাব্যস্ত করলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও অনুমতি দিয়ে দিলেন। সেইসংগে উপদেশ দিলেন যে, ধন–সম্পদ থাকলে তার একটা বড় অংশ সন্তানদের জন্য রেখে যাওয়া চাই। কেননা তা না হলে এ আশংকা আছে যে, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। আর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এটা অমর্যাদাকর।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীছে অপরের কাছে হাত পেতে বেড়ানোর নিন্দা করেছেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। তাঁর শিক্ষায় অপরের কাছে হাত পাতা অপেক্ষা খেটে খাওয়াই শ্রেয়। সেই শিক্ষা হিসেবেই তিনি হযরত সা'দ রাযি.–কে তার সম্পদের বড় অংশ ওয়ারিশদের জন্য রেখে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসংগে আরও জানান যে, অর্থ–সম্পদ থাকলে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে খাতেই ব্যয় করা হোক তাতে ছওয়াব পাওয়া যায়, যদি না তা শরী'আতবিরোধী কোনও কাজে ব্যয় করা হয়। স্ত্রী ও সন্তানদের হক আদায়ার্থে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তাতেও ছওয়াব পাওয়া যায়। এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, এমনকি স্ত্রীর মুখে যদি কোনও লোকমা তুলে দেওয়া হয়, তবে তাও ছওয়াবের কাজরূপে গণ্য হয়। এর দ্বারা সম্পদ উপার্জন, সংরক্ষণ ও সঠিক খাতে তা ব্যয়ের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়।
হযরত সা'দ রাযি.–এর আশংকা হয়েছিল যে, অসুস্থতার কারণে তাঁকে মক্কায় থেকে যেতে হবে। ফলে তাঁর হিজরত বাতিল হয়ে যাবে এবং হিজরত করে তিনি যে ছওয়াবের অধিকারী হয়েছিলেন তা থেকে মাহরুম হয়ে যাবেন। সে আশংকা থেকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার বন্ধুগণ মদীনায় ফিরে যাওয়ার পরও আমাকে কি মক্কায় থেকে যেতে হবে? আমার মৃত্যু কি এখানেই হয়ে যাবে? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে, না, তোমার এখানে থেকে যেতে হবে না এবং হিজরতও বাতিল হবে না। বরং এই সম্ভাবনা আছে যে, তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে এবং দাওয়াত ও জিহাদের মহান তৎপরতায় তোমার সময় কাটবে। ফলে একদিকে তোমার দ্বারা বহু মানুষ হেদায়াত পাবে এবং তারা জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাবে। বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহে প্রচুর গনীমত লাভ হবে এবং তা দ্বারা মুসলিমগণ উপকৃত হবে। দিকে দিকে ইসলাম ছড়িয়ে পড়বে এবং চারদিকে ইসলামের রাজ্যবিস্তার ঘটবে। মোটকথা তোমার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ'র প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে। অপরদিকে যাদের ভাগ্যে দীন ও ঈমান নেই, তোমার হাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কুফরী শক্তি রাজত্ব হারাবে। কেউ যুদ্ধে নিহত হবে এবং জাহান্নামে চলে যাবে। কেউ বন্দি হবে এবং দাসত্বের জীবনযাপন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ও উমর ফারুক রাযি.–এর আমলে বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কাদেসিয়ার যুদ্ধে তো তিনিই সেনাপতি ছিলেন। আঞ্চলিক গভর্ণর হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ১৭ জন পুত্র ও ১২ জন কন্যাসন্তান রেখে যান। অথচ এ ঘটনার সময় তাঁর ছিল মাত্র এক কন্যাসন্তান।
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের জন্য দু'আ করেন, যেন আল্লাহ তা'আলা তাদের হিজরতকে কার্যকর করেন এবং তাদেরকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না দেন। অর্থাৎ তারা যেন ঈমানের উপরে অবিচলিত থাকেন এবং এমন যেন না হয় যে, তাদের কেউ মদীনা মুনাওয়ারা ছেড়ে পুনরায় মক্কা মুকাররামায় চলে এসেছেন এবং এখানেই তার মৃত্যু হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত এখানে হযরত সা'দ ইবন খাওলা রাযি.–এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হিজরতের পর তিনি মক্কা মুকাররামায় আসলে এখানেই তার মৃত্যু হয়েছিল। ফলে তার হিজরত অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কেউ অসুস্থ হয়েছে জানলে তাকে দেখতে যাওয়া উচিত। এটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
খ. উল্লেখযোগ্য কোনও কাজ করতে চাইলে সে ব্যাপারে বিজ্ঞজনের সংগে পরামর্শ করা উচিত, যেমন হযরত সা'দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাযি. তার সম্পদ দান করে দেওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে পরামর্শ করেছেন।
গ. মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি তার সম্পদ দান করতে চায় বা সে সম্পর্কে অসিয়ত করতে চায়, তবে তা সর্বোচ্চ এক–তৃতীয়াংশের ভেতর করতে পারে, এর বেশি করা জায়েয নয়। উত্তম হল এক–তৃতীয়াংশেরও নিচে রাখা
ঘ. সম্পদ যদি অল্প হয়, তবে মুমূর্ষুকালে তা দান–খয়রাত না করে ওয়ারিশদের জন্য রেখে দেওয়াই ভালো।
ঙ. অন্যের কাছে কিছু চাওয়া ও হাত পেতে বেড়ানো অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। যথাসম্ভব খেটে খাওয়াই ইসলামের শিক্ষা।
চ. দান–খয়রাতে সুনাম–সুখ্যাতি নয়, বরং একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি কামনাই লক্ষ হওয়া উচিত।
ছ. আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সন্তান–সন্ততি ও আত্মীয়–স্বজনের পেছনে খরচ করলেও ছওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেওয়াটাও একটি ছওয়াবের কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
