আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৪- আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬২২০
৩২৮৪. ঢিল ছোঁড়া থেকে নিষেধ করা।
৫৭৮৭। আদম (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল মুযানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ঢিল ছুড়তে নিষেধ করেছেন। আর বলেনঃ এটা কোন শিকার মারতে পারবে না এবং শত্রুকেও আহত করতে পারবে না, বরং এটা তো কারো চোখ ফুঁড়ে দিতে পারে, আবার কারো দাত ভেঙ্গে দিতে পারে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাযি.–এর জনৈক আত্মীয় একবার খাযফ করেছিল। তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাযফ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা কোনও শিকার বধ করে না। লোকটি পুনরায় তা করল। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে বলছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন, তবুও তুমি আবার খাযফ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬২২০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৯৫৪; সুনানে আবূ দাউদ,হাদীছ নং ৫২৭০)
‘খাযফ' অর্থ বৃদ্ধাঙ্গুলির ওপর পাথরের টুকরা রেখে শাহাদাত আঙ্গুলের সাহায্যে নিক্ষেপ করা। এটা শিশু ও বালকদের খেলাবিশেষ। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন। তিনি নিষেধের কারণ বর্ণনা করেন যে, এভাবে পাথর ছোঁড়ার দ্বারা ক্ষতি ছাড়া কোনও উপকার নেই। এর দ্বারা না কোনও শিকার হত্যা করা যায়, না শত্রুকে ঘায়েল করা যায়। বরং ক্ষতির ভয় আছে। হয়তো কারও চোখে মুখে লেগে যাবে। ফলে চোখ কানা হয়ে যেতে পারে কিংবা ভেঙে যেতে পারে দাঁত। তাই এ জাতীয় খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ পরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে তাঁর শিক্ষা শতভাগ মেনে চলার চেষ্টা করতেন এবং তাঁরা বিশ্বাস করতেন তা মেনে চলার মধ্যেই কল্যাণ। তাই তাঁরা অন্যের কাছেও প্রচার করতেন। এ হাদীছটির বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাযি.-ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। একবার তাঁর কোনও এক আত্মীয়কে এভাবে পাথর ছুঁড়তে দেখে তাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং তাকে জানালেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু সে আত্মীয় বিষয়টিকে অতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। তাই আবারও সে একই কাজ করে বসে। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাযি. খুব রাগ করলেন এবং রাগ করে বললেন, আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না।
ঈমানের দাবিতে কারও সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করা
তাঁর এ রাগ করাটা ছিল ঈমানের দাবি। একজনকে তার কাজের ভুল ধরিয়ে দেওয়া হবে আর কাজটি যে ভুল তার প্রমাণে হাদীছ পেশ করা হবে, তা সত্ত্বেও সে সেই ভুল কাজটি করে যাবে এবং হাদীছের প্রতি মর্যাদা দেখাবে না, এটা কী করে মেনে নেওয়া যায়? তার এ আচরণ হাদীছের প্রতি একরকম অশ্রদ্ধা প্রকাশ। কেউ কোনও হাদীছের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাবে আর কোনও ঈমানদার ব্যক্তি তা মুখ বুজে সহ্য করবে তা কখনও হতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য ঈমানের তেজে জ্বলে ওঠা এবং তার সে আচরণের নিন্দা জানানো। একজন প্রকৃত মু'মিন ব্যক্তিগত বিষয়ে সহজে ক্রুদ্ধ হয় না। কিন্তু দীন ও ঈমানের প্রশ্নে সে এক জ্বলন্ত অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। এ ব্যাপারে সে কখনও আপোস করতে পারে না। আপোস করলে তার ঈমানের অঙ্গহানি হয়। কেননা এক হাদীছে আছেঃ-
أوثق عرى الإيمان الحب في الله، والبغض في الله
‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ক্রুদ্ধ হওয়া ঈমানের সর্বাপেক্ষা শক্ত হাতল। (মুসনাদ আবু দাউদ তয়ালিসী, হাদীছ নং ৭৮৩; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৭৬১)
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
أفضل الأعمال: الحب في الله والبغض في الله
“শ্রেষ্ঠতম আমল হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ক্রুদ্ধ হওয়া।” (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৫৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৩০৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মুগাফ্ফাল রাযি. এই বলে রাগ প্রকাশ করেছেন যে, আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না। এ ক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে যে, এক হাদীছে তো কারও সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এর উত্তর হচ্ছে, সে নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিগত বিষয়ে ও পার্থিব কাজে; দীনী বিষয়ে নয়। যে ব্যক্তি দীনের অমর্যাদা করবে কিংবা শিরক ও বিদ'আতী কাজে লিপ্ত থাকবে এবং বোঝালেও বুঝতে চাইবে না, তার সঙ্গে কথা বন্ধ করা তো তুচ্ছ বিষয়; বরং তার সঙ্গে স্থায়ীভাবেই সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলা উচিত।
তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখার অনুমতি আছে শাস্তিদানের জন্যও, যদি তা দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে অপরাধকারী ব্যক্তির সংশোধন করা ও তার অন্তরে অনুশোচনা জাগ্রত করা। ধারণা করা যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মুগাফফাল রাযি.-এর উদ্দেশ্যও সেরকমই ছিল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কারও সামনে কোনও অন্যায় কাজ হতে থাকলে তার কর্তব্য সে কাজের প্রতিবাদ করা।
খ. যে কাজে কোনও উপকার নেই বরং ক্ষতির আশঙ্কা আছে, তা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন গুলতি দিয়ে খেলা করা, নির্দিষ্ট কোনও নিশানা ছাড়া পিস্তল ও বন্দুকের গুলি ছোড়া, আতশবাজি করা ইত্যাদি।
গ. কারও সংশোধনের উদ্দেশ্যে কথা বন্ধ রাখার শাস্তি দেওয়া জায়েয।
ঘ. কারও সামনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনও হাদীছ পেশ করা হলে তার কর্তব্য- সে হাদীছ অনুযায়ী আমলের চেষ্টা করা এবং কোনও ওযরবশত আমল করতে না পারলে অন্ততপক্ষে হাদীছটির প্রতি আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফ্ফাল রাযি.–এর জনৈক আত্মীয় একবার খাযফ করেছিল। তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাযফ করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, এটা কোনও শিকার বধ করে না। লোকটি পুনরায় তা করল। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাকে বলছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন, তবুও তুমি আবার খাযফ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৬২২০; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৯৫৪; সুনানে আবূ দাউদ,হাদীছ নং ৫২৭০)
‘খাযফ' অর্থ বৃদ্ধাঙ্গুলির ওপর পাথরের টুকরা রেখে শাহাদাত আঙ্গুলের সাহায্যে নিক্ষেপ করা। এটা শিশু ও বালকদের খেলাবিশেষ। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা নিষেধ করেছেন। তিনি নিষেধের কারণ বর্ণনা করেন যে, এভাবে পাথর ছোঁড়ার দ্বারা ক্ষতি ছাড়া কোনও উপকার নেই। এর দ্বারা না কোনও শিকার হত্যা করা যায়, না শত্রুকে ঘায়েল করা যায়। বরং ক্ষতির ভয় আছে। হয়তো কারও চোখে মুখে লেগে যাবে। ফলে চোখ কানা হয়ে যেতে পারে কিংবা ভেঙে যেতে পারে দাঁত। তাই এ জাতীয় খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ পরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে তাঁর শিক্ষা শতভাগ মেনে চলার চেষ্টা করতেন এবং তাঁরা বিশ্বাস করতেন তা মেনে চলার মধ্যেই কল্যাণ। তাই তাঁরা অন্যের কাছেও প্রচার করতেন। এ হাদীছটির বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাযি.-ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। একবার তাঁর কোনও এক আত্মীয়কে এভাবে পাথর ছুঁড়তে দেখে তাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং তাকে জানালেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু সে আত্মীয় বিষয়টিকে অতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। তাই আবারও সে একই কাজ করে বসে। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাযি. খুব রাগ করলেন এবং রাগ করে বললেন, আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না।
ঈমানের দাবিতে কারও সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করা
তাঁর এ রাগ করাটা ছিল ঈমানের দাবি। একজনকে তার কাজের ভুল ধরিয়ে দেওয়া হবে আর কাজটি যে ভুল তার প্রমাণে হাদীছ পেশ করা হবে, তা সত্ত্বেও সে সেই ভুল কাজটি করে যাবে এবং হাদীছের প্রতি মর্যাদা দেখাবে না, এটা কী করে মেনে নেওয়া যায়? তার এ আচরণ হাদীছের প্রতি একরকম অশ্রদ্ধা প্রকাশ। কেউ কোনও হাদীছের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাবে আর কোনও ঈমানদার ব্যক্তি তা মুখ বুজে সহ্য করবে তা কখনও হতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য ঈমানের তেজে জ্বলে ওঠা এবং তার সে আচরণের নিন্দা জানানো। একজন প্রকৃত মু'মিন ব্যক্তিগত বিষয়ে সহজে ক্রুদ্ধ হয় না। কিন্তু দীন ও ঈমানের প্রশ্নে সে এক জ্বলন্ত অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। এ ব্যাপারে সে কখনও আপোস করতে পারে না। আপোস করলে তার ঈমানের অঙ্গহানি হয়। কেননা এক হাদীছে আছেঃ-
أوثق عرى الإيمان الحب في الله، والبغض في الله
‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ক্রুদ্ধ হওয়া ঈমানের সর্বাপেক্ষা শক্ত হাতল। (মুসনাদ আবু দাউদ তয়ালিসী, হাদীছ নং ৭৮৩; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৭৬১)
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
أفضل الأعمال: الحب في الله والبغض في الله
“শ্রেষ্ঠতম আমল হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ক্রুদ্ধ হওয়া।” (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৫৯৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৩০৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মুগাফ্ফাল রাযি. এই বলে রাগ প্রকাশ করেছেন যে, আমি তোমার সঙ্গে কখনও কথা বলব না। এ ক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে যে, এক হাদীছে তো কারও সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। এর উত্তর হচ্ছে, সে নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিগত বিষয়ে ও পার্থিব কাজে; দীনী বিষয়ে নয়। যে ব্যক্তি দীনের অমর্যাদা করবে কিংবা শিরক ও বিদ'আতী কাজে লিপ্ত থাকবে এবং বোঝালেও বুঝতে চাইবে না, তার সঙ্গে কথা বন্ধ করা তো তুচ্ছ বিষয়; বরং তার সঙ্গে স্থায়ীভাবেই সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলা উচিত।
তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখার অনুমতি আছে শাস্তিদানের জন্যও, যদি তা দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে অপরাধকারী ব্যক্তির সংশোধন করা ও তার অন্তরে অনুশোচনা জাগ্রত করা। ধারণা করা যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মুগাফফাল রাযি.-এর উদ্দেশ্যও সেরকমই ছিল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কারও সামনে কোনও অন্যায় কাজ হতে থাকলে তার কর্তব্য সে কাজের প্রতিবাদ করা।
খ. যে কাজে কোনও উপকার নেই বরং ক্ষতির আশঙ্কা আছে, তা থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন গুলতি দিয়ে খেলা করা, নির্দিষ্ট কোনও নিশানা ছাড়া পিস্তল ও বন্দুকের গুলি ছোড়া, আতশবাজি করা ইত্যাদি।
গ. কারও সংশোধনের উদ্দেশ্যে কথা বন্ধ রাখার শাস্তি দেওয়া জায়েয।
ঘ. কারও সামনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনও হাদীছ পেশ করা হলে তার কর্তব্য- সে হাদীছ অনুযায়ী আমলের চেষ্টা করা এবং কোনও ওযরবশত আমল করতে না পারলে অন্ততপক্ষে হাদীছটির প্রতি আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
