আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৪- আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬০৪০
৩২০৩. ভালবাসা আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে আসে।
৫৬১৪। আমর ইবনে আলী (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে ডেকে বলেন, আল্লাহ তাআলা অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তুমিও তাকে ভালবাসবে। তখন জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাকে ভালবাসেন এবং তিনি আসমানবাসীদের নিকট ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ তাআলা অমুককে ভালবাসেন, অতএব তোমরাও তাকে ভালবাসবে। তখন আসমানবাসীরাও তাকে ভালবাসতে শুরু করে। তারপর আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে যমীনবাসীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করা হয়।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যারা আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা, সাধারণত মানুষ তাদের ভালোবাসে। ওলী-বুযুর্গগণ পৃথিবীর সমস্ত মাখলূকের ভালোবাসা পায়। তারা সর্বজনপ্রিয় হয়ে যায়। অন্যদিকে পাপী ও অসৎকর্মশীলদের সকলে ঘৃণা করে। এর রহস্য কী? আলোচ্য হাদীছে এর জবাব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর কোনও বান্দাকে ভালোবাসলে তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাকে ভালোবাসতে হুকুম দেন। ফলে জিবরীল আলাইহিস সালাম তাকে ভালোবাসেন। তারপর তাকে ভালোবাসে সকল আসমানবাসী। তারপর পৃথিবীবাসীদের অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করে দেওয়া হয়। তাকে সকলের কাছে মকবূল করে তোলা হয়। সে হয়ে যায় সকলের প্রিয়। বোঝা গেল, পৃথিবীতে কারও সর্বজনপ্রিয় হওয়ার উৎস হলো আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহ তাআলা কাউকে ভালোবাসলেই সে সকলের প্রিয় হয়ে যায়। তাহলে কারও সর্বজনপ্রিয় হওয়াটা এ কথার আলামত যে, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালোবাসেন।

প্রকাশ থাকে যে, কারও প্রতি আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা থাকার অর্থ তিনি তার কল্যাণ চান ও তাকে তার কৃতকর্মের জন্য পুরস্কৃত করেন। ফিরিশতাদের পক্ষ থেকে ভালোবাসার অর্থ তার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, তার দোজাহানের কল্যাণ কামনা করা এবং তার প্রতি তাদের আকর্ষণ বোধ করা। মাখলূকাতের ভালোবাসার অর্থ হলো তার প্রতি সুধারণা রাখা, শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করা এবং সাধ্যানুযায়ী বিপদ-আপদ থেকে তাকে সুরক্ষা দেওয়া।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আল্লাহ তাআলা কাউকে ভালোবাসেন তখনই, যখন সে আল্লাহর মর্জিমত চলে। যেমন পেছনের হাদীছে আছে- বান্দা নফল ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একপর্যায়ে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। কুরআন মাজীদেও ইরশাদ হয়েছে إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا 'যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, নিশ্চয়ই দয়াময় (আল্লাহ) সত্বর তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালোবাসা।৩১৬

এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে

إن العبد ليلتمس مرضاة الله، فلا يزال بذلك، فيقول الله لجبريل : إن فلانا عبدي يلتمس أن يرضيني، ألا وإن رحمتي عليه، فيقول جبريل : رحمة الله على فلان ويقولها حملة العرش، ويقولها من حولهم، حتى يقولها أهل السماوات السبع ثم تهبط له إلى الأرض

“বান্দা নিরবচ্ছিন্নভাবে নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি সন্ধানে লিপ্ত থাকে। শেষে আল্লাহ জিবরীলকে বলেন, আমার অমুক বান্দা আমাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টায় লেগে আছে। শুনে রাখ, তার উপর আমার রহমত রয়েছে। জিবরীল বলেন, অমুকের উপর আল্লাহর রহমত। তারপর আরশবাহী ফিরিশতাগণও বলেন, অমুকের উপর আল্লাহর রহমত। একই কথা বলেন আরশের চারপাশের ফিরিশতাগণ। তারপর সাত আসমানের অধিবাসীগণও সে কথা বলে থাকে। তারপর পৃথিবীতে তার উপর রহমত বর্ষিত হয়।৩১৭

মুসলিম শরীফের বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, কারও প্রতি মানুষের অন্তরে ঘৃণা ও অশ্রদ্ধা জন্মানোরও মূল কারণ এটাই যে, সে প্রথমে আল্লাহ তাআলার কাছে অপ্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলার কাছে অপ্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণে পর্যায়ক্রমে সে সাত আসমানের ফিরিশতাদের কাছে অপ্রিয় হয়ে যায়। সবশেষে পৃথিবীবাসীর কাছেও তাকে অপ্রিয় করে তোলা হয়।

আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় হওয়ার কারণ যেমন ছিল তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তেমনি তাঁর কাছে অপ্রিয় হওয়ার কারণ তাঁর আদেশ-নিষেধ অমান্য করা। সুতরাং কারও দ্বারা নাফরমানির কাজ হওয়া আল্লাহর কাছে তার অপ্রিয় হওয়ার আলামত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও প্রতি ব্যাপকভাবে মানুষের অন্তরে সমাদর ও শ্রদ্ধাভক্তি থাকা আল্লাহ তাআলার কাছে তার প্রিয় হওয়ার আলামত।

খ. জনমনে কারও ঘৃণ্য ও ধিকৃত হওয়াটা আল্লাহর কাছে তার অপ্রিয় হওয়ার আলামত।

৩১৬. সূরা মারয়াম (১৯), আয়াত ৯৬

৩১৭. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২৪০১; তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ১২৪০
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন