ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৪৩. যাবতীয় মা'ছুর দোয়া-যিক্‌র

হাদীস নং: ২৬৮৩
অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে কী করবে
(২৬৮৩) জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তবে সে যেন তার বামদিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর কাছে তিনবার শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং সে যে পার্শ্বে শুয়ে ছিল সেই পার্শ্ব বদল করে।
عن جابر رضي الله عنه مرفوعا: إذا رأى أحدكم الرؤيا يكرهها فليبصق عن يساره ثلاثا وليستعذ بالله من الشيطان ثلاثا وليتحول عن جنبه الذي كان عليه.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে অপ্রীতিকর বা মন্দ স্বপ্ন দেখলে বামদিকে তিনবার থুথু ফেলার কথা বলা হয়েছে এবং তিনবার শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতে তথা أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجيمِ পড়তে বলা হয়েছে।

এখানে আছে- وَلْيَتَحَوَّلْ عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ (আর সে যেন যে কাতে শোওয়া ছিল তা পরিবর্তন করে)। অর্থাৎ ডানকাতে শোওয়া থাকলে বামকাতে ঘুরে যাবে এবং বামকাতে শোওয়া থাকলে ডানকাতে ঘুরে যাবে। এমনিভাবে চিৎ হয়ে শোওয়া অবস্থায় দুঃস্বপ্ন দেখলে সেই অবস্থা পরিবর্তন করবে এবং ডানকাতে শোবে। এ পরিবর্তন দ্বারা যেন বোঝানো উদ্দেশ্য যে, আমি যেমন আমার শয়নের অবস্থা পরিবর্তন করলাম, তেমনি যেন আমার স্বপ্নও পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর পর যেন এ মন্দ স্বপ্নের বদলে আমি ভালো স্বপ্ন দেখতে পাই।

এ হাদীছটিতে মন্দ স্বপ্ন দেখার পর যে কাজগুলো করতে বলা হয়েছে, এছাড়াও কিছু করণীয় আছে, যা অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন শোওয়া থেকে উঠে পড়া এবং নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়া। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُمْ فَلْيُصَلِّ
'তোমাদের কেউ যদি অপসন্দনীয় কোনও স্বপ্ন দেখে, তবে সে যেন উঠে যায় এবং নামায পড়ে’।
(সহীহ মুসলিম : ২২৬৩; সুনানে আবূ দাউদ: ৫০১৯; জামে তিরমিযী: মাজাহ: ৩৯১০; মুসনাদুল বাযযার: ৯৮২৮ : ২২৭০; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৯১০; মুসনাদুল বাযযার : ৯৮২৮)

উল্লেখ্য, মন্দ স্বপ্নের বেলায় তার ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যেসব কাজ করতে বলা হয়েছে তার সবগুলোই করা জরুরি নয়। তা করলে তো ভালো, নচেৎ এসব কাজের কিছুও যদি করা হয়, তাতেও মন্দ স্বপ্ন ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছায় আত্মরক্ষা হয়ে যাবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মন্দ স্বপ্নে শয়তানের প্রভাব ও সক্রিয়তা থাকে। তাই তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য কিছু ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাসমূহ নিম্নরূপ-

১. আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় গ্রহণ করা অর্থাৎ أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجيمِ পড়া। এটা তিনবার পড়া ভালো।

২. বামদিকে তিনবার থুথু ফেলা।

৩. শোওয়ার অবস্থা পরিবর্তন করা।

৪. তা প্রিয়-অপ্রিয় কাউকেই না বলা।

৫. শোওয়া থেকে উঠে পড়া এবং অন্ততপক্ষে দু'রাকাত নামায পড়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন