ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৪২. ইহসান-আত্মশুদ্ধির অধ্যায়

হাদীস নং: ২৫৮৯
অত্যাচার ও কৃপণতার নিন্দা
(২৫৮৯) আবু যার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পালনকর্তা আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ, আমি আমার নিজের উপরে যুলুম হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম করে দিয়েছি, কাজেই তোমরা পরস্পরে যুলুম করবে না।
عن أبي ذر رضي الله عنه مرفوعا: فيما يرويه عن ربه أنه قال: يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرما فلا تظالموا.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি একটি হাদীছে কদুসী। আল্লাহ তা'আলার নাযিল করা ভাব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ ভাষায় আল্লাহ তা'আলার যবানীতে বর্ণনা করেছেন। এ জাতীয় হাদীছকে হাদীছে কুদসী বলে। এটি অত্যন্ত মূল্যবান, সারগর্ভ ও উপদেশপূর্ণ হাদীছ। মৌলিকভাবে এতে আল্লাহ তা'আলার বড়ত্ব বর্ণিত হয়েছে। তিনি সবদিক থেকেই বেনিয়ায, কারও প্রতি তাঁর কোনও মুখাপেক্ষিতা নেই, তাঁর ভাণ্ডারে কোনওকিছুর অভাব নেই, তিনি ন্যায় বিচারক, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, কর্মফলদাতা, রিযকদাতা, সর্বপ্রকার প্রয়োজন সমাধাকারী, হিদায়াতদাতা ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ হাদীছের আলোচ্য বিষয়।

আল্লাহ কারও প্রতি জুলুম করেন না

এ হাদীছে আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম বলেন-

يَا عِبَادِي! إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي

“হে আমার বান্দাগণ! আমি জুলুম করাকে নিজের প্রতি হারাম করেছি'। এর মানে তিনি কারও প্রতি জুলুম করেন না। তাঁর প্রতিটি কাজই ইনসাফপূর্ণ। তিনি যখন সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক, মহাবিশ্বে যা-কিছু আছে সবই তাঁর কর্তৃত্বাধীন, তখন আপন সৃষ্ট ও আপন মালিকানাধীন বস্তুতে তাঁর যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে। তিনি অসীম হিকমতওয়ালা। যা-কিছুই করেন, তার মধ্যে তাঁর কোনও না কোনও হিকমত থাকে। তাঁর হিকমত পুরোপুরি বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি অতি সামান্য। তাই কোনও কাজের হিকমত বুঝে না আসলেও স্বীকার করে নিতে হবে, তিনি সে কাজ ন্যায়ানুগভাবেই করেছেন। আমরা বুঝি না বলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। কিন্তু যদি চিন্তা করা হয় কাজটি হিকমতওয়ালা মালিক আপন মালিকানার ভেতর করেছেন, কাজেই তা ন্যায়ানুগ না হয়ে পারে না, তবে মনের সব প্রশ্ন ও খটকা মুহূর্তেই দূর হয়ে যেতে পারে।
বান্দাকে তার আমলের বদলা দেওয়ার ব্যাপারেও আল্লাহ তা'আলা বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না; বরং সে ক্ষেত্রেও তিনি রহমতের আচরণই করে থাকেন। ইরশাদ হয়েছে-

مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَى إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ (160)

অর্থ : যে ব্যক্তি কোনও পুণ্য নিয়ে আসবে, তার জন্য অনুরূপ তার দশগুণ (ছাওয়াব) রয়েছে। আর যে ব্যক্তি কোনও অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে কেবল তারই সমান প্রতিফল দেওয়া হবে। আর তাদের প্রতি কোনও জুলুম করা হবে না।সূরা আন'আম, আয়াত ১৬০
অর্থাৎ নেক কাজের ছাওয়াব তিনি বিন্দুমাত্র কম দেবেন না; বরং পাওনার চেয়ে অন্ততপক্ষে দশগুণ বেশি দেবেন। বেশি কত দেবেন তার কোনও সীমা নেই। আর পাপ কাজের বদলা বা শাস্তি একটুও বেশি দেবেন না; বরং ন্যায্য পরিমাণই দেবেন। এমনকি অনেক পাপের বদলা তিনি দেবেনই না, নিজ দয়ায় মাফ করে দেবেন।

একের প্রতি অন্যের জুলুম হারাম ও নাজায়েয

অতঃপর ইরশাদ করেন-

وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا، فَلَا تَظَالَمُوا

“আমি তোমাদের জন্য পারস্পরিক জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একে অন্যের প্রতি জুলুম করো না'।
এক জুলুম হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। এটা কেন জুলুম, তা জুলুম শব্দের অর্থের প্রতি লক্ষ করলে বোঝা যায়। জুলুম অর্থ হচ্ছে যে জিনিস যেখানকার নয় তা সেখানে রাখা। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করার মধ্যে এ অর্থ পাওয়া যায়। কেননা শিরক ও অংশীদারিত্ব মাখলুকের বিষয়। মানুষ একজন আরেকজনের শরীক ও অংশীদার হয় বিভিন্ন কাজে, যেমন ব্যবসাবাণিজ্য, ক্ষমতা, নির্মাণকার্য, গবেষণাকর্ম ইত্যাদি। এ সকল কাজ যখন একা একজন করতে পারে না, তখন অন্যকে শরীক করে নেয়। কিংবা কেউ যখন কাউকে একাকী কোনও কাজ করতে না দিতে চায়, তখন সে জোরপূর্বক তার সঙ্গে শরীক হয়ে যায়। আল্লাহ তা'আলার ক্ষেত্রে এটা অচল। আল্লাহ তা'আলা একাই সব কাজ করেন ও করার ক্ষমতা রাখেন। ফলে তাঁর কাজে তাঁর পক্ষ থেকে কাউকে শরীক করে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। আবার তিনি সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশীল। কাজেই কেউ জোরপূর্বক তাঁর কাজে ভাগ বসাবে ও শরীক হয়ে যাবে তাও সম্ভব নয়। সুতরাং তাঁর কোনও শরীক থাকার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় কাউকে তাঁর শরীক বলে বিশ্বাস করলে তো এটাই হয় যে, যে বস্তু যেখানকার নয় সেখানে রাখা হল। অর্থাৎ শরীককে এমন জায়গায় রাখা হল, যে জায়গাটা তার নয় এবং যেখানে সে থাকতে পারে না। এটা তো জুলুমই হল; বরং এটা সর্বাপেক্ষা কঠিনতম জুলুম, যা করলে মানুষ কাফের ও বেঈমান হয়ে যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

অর্থ : নিশ্চয়ই শিরক মহাজুলুম
সূরা লুকমান, আয়াত ১৩

শিরকের নিচের পর্যায়ের জুলুম হল মানুষের একের উপর অন্যের জুলুম করা। এর দ্বারা মানুষ কাফের না হলেও এটা কঠিন পাপ। কুরআন ও হাদীছে এর জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

মানুষের পারস্পরিক জুলুম তিন প্রকার হতে পারে :

ক. কারও জানের উপর জুলুম করা অর্থাৎ কাউকে হত্যা করা বা মারধর করা।

খ. মালের উপর জুলুম। অর্থাৎ অন্যায়ভাবে কারও অর্থসম্পদ গ্রাস করা, যেমন চুরি করা, ডাকাতি করা, সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, ওজনে কম দেওয়া, মালে ভেজাল দেওয়া, আমানতের খেয়ানত করা ইত্যাদি।

গ. ইজ্জত-সম্মানের উপর জুলুম। অর্থাৎ কারও প্রতি এমন আচরণ করা, যাতে তার মানসম্মান ক্ষুণ্ণ হয়, যেমন গালি দেওয়া, অপবাদ দেওয়া, গীবত করা, ব্যঙ্গবিদ্রূপ করা ইত্যাদি।
কুরআন ও হাদীছে এ তিনও প্রকার জুলুমকে হারাম করা হয়েছে। যেসব কাজ দ্বারা কোনও রকমের জুলুম হয়ে যায়, তা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আখিরাতে তার জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ তা'আলাই হিদায়াতের মালিক

অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ

“হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হিদায়াত দিই, সে ছাড়া তোমাদের সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও, আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করব।”
ضَالٌّ -এর অর্থ দু'টি। ক. দীন ও শরী'আত সম্পর্কে অনবহিত এবং
খ. সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত।
শব্দটি ضلالة থেকে নির্গত, যার অর্থ শরী'আত সম্পর্কে বেখবর থাকা ও সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া।
এর বিপরীত হচ্ছে হিদায়াত।
হিদায়াত অর্থ- ক. দীন ও শরী'আত সম্পর্কে অবহিত করা
খ. সত্য-সঠিক পথে পরিচালিত করা। কুরআন মাজীদে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-

وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَى (7)

অর্থ : এবং তিনি তোমাকে পেয়েছিলেন পথ সম্পর্কে অনবহিত; অতঃপর তোমাকে পথ দেখিয়েছেন।সূরা দুহা, আয়াত ৭
এখানে দুলালাত ও হিদায়াতের প্রথম অর্থ বোঝানো উদ্দেশ্য। অপরদিকে আয়াত-

فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ

['বস্তুত আল্লাহ যাকে চান বিপথগামী করেন আর যাকে চান সঠিক পথে পরিচালিত করেন।সূরা ফাতির, আয়াত ৮। -এর দুলালাত ও হিদায়াত দ্বারা দ্বিতীয় অর্থ বোঝানো হয়েছে।
দুনিয়ায় এমন কোনও মানুষ যদি থাকে, যার কাছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াত পৌঁছেনি এবং তাঁর আনা সত্যদীন তথা ইসলাম সম্পর্কে সে জানতে পারেনি, সে এই অর্থে ضَالٌّ যে, দীন ও শরী'আত সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ বেখবর। আর যারা ইসলাম সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তা গ্রহণ করে নেয়নি তারা দ্বিতীয় অর্থে ضَالٌّ অর্থাৎ তারা সত্যদীন সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তা থেকে বিমুখ ও বিচ্যুত। ইহুদী-খ্রিষ্টানসহ জগতের অধিকাংশ মানুষই এ শ্রেণির।
যারা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিয়ে থাকে তারা যদিও হিদায়াতপ্রাপ্ত, কিন্তু তাদের মধ্যেও অনেক স্তরভেদ রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে আছে পুরোপুরি হিদায়াতপ্রাপ্ত। তারা বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করে থাকে এবং কুরআন-সুন্নাহে যে আমল-আখলাক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তার পুরোপুরি অনুসরণ করে। আবার অনেকের ‘আকীদা-বিশ্বাস ত্রুটিপূর্ণ। কাজেই তাদের হিদায়াতে ঘাটতি আছে। আমল-আখলাকের ত্রুটি তো আছে অধিকাংশ লোকেরই। কাজেই আমলীভাবে তাদের হিদায়াতও পূর্ণাঙ্গ নয়। তবে ‘আকীদা-বিশ্বাসে ত্রুটি থাকলে সেটা বিপজ্জনক। কোনও ত্রুটি দ্বারা মানুষ এমন গোমরাহ হয়ে যায় যে, যদ্দরুন সে ইসলাম থেকেই খারিজ হয়ে যায়। আর কোনও কোনও ত্রুটি দ্বারা ইসলাম থেকে খারিজ না হলেও প্রকৃত মু'মিন থাকে না। তারা কাফের না হলেও একরকম গোমরাহ তো বটেই।
আল্লাহ তা'আলা বলছেন- আমি যাকে হিদায়াত দিই, সে ছাড়া তোমাদের সকলেই পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ। হিদায়াত ও গোমরাহীর সকল স্তরই এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা'আলা যাকে যে স্তরের হিদায়াত দান করেছেন, সে সেই স্তরের হিদায়াত লাভ করেছে। আর যাকে যে স্তরের দুলালাত ও গোমরাহীর মধ্যে রেখেছেন, সে সেই স্তরে রয়ে গেছে।
গোমরাহী থেকে মুক্তি ও হিদায়াত দান যেহেতু আল্লাহ তা'আলাই করেন, তাই তিনি বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও, আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব।
তিনি তাঁর এ নির্দেশ পালনের সহজ ব্যবস্থাও দান করেছেন। তিনি নামাযে সূরা ফাতিহা পড়াকে ওয়াজিব ও বাধ্যতামূলক করেছেন। এর একটি আয়াত হচ্ছে-

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

‘আপনি আমাদেরকে সরল-সঠিক পথের হিদায়াত করুন'।

অর্থাৎ সরল-সঠিক পথ তথা ঈমান ও ইসলামের উপর পরিচালিত করুন। রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে কতবার এ সূরা পড়া হয়ে থাকে। প্রত্যেকবারই আল্লাহ তা'আলার কাছে হিদায়াতের দু'আ করা হয়। আল্লাহ তা'আলা বান্দার দু'আ কবুল করে থাকেন। শুধু দরকার একটু মনোযোগ। বান্দা যদি আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে কাতরভাবে তাঁর দরবারে নিজ মনোবাঞ্ছা পেশ করে, তবে আল্লাহ তা'আলা তা পূরণ করেনই। তিনি তো বলেই দিয়েছেন-

ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ

অর্থ : তোমরা আমার কাছে দু'আ কর, আমি কবুল করব।সূরা গাফির, আয়াত ৬০

বর্তমান সময়টা বড় কঠিন। মানুষের পুরোনো শত্রু নফস ও শয়তান তো আছেই। পুরোনো অনেক ফিতনাও বহাল তবিয়তে আছে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন নতুন গোমরাহী। মানুষকে বিপথগামী করার বহুমুখী আয়োজন পৃথিবীর সর্বত্র। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় ভ্রান্তপথের হাতছানি। এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা সাহায্য না করলে এবং তিনি নিজ রহমতে সঠিক পথে না রাখলে বিপথগামিতা অনিবার্য। কাজেই নামাযের প্রত্যেক রাক'আতে যখন পড়ি- اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (আপনি আমাদেরকে সরল-সঠিক পথের হিদায়াত করুন), তখন আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে অত্যন্ত বিনয় ও কাতরতার সঙ্গেই এটা পড়া উচিত এবং মনে প্রবল আশা রাখা উচিত যে, তিনি আমার এ দু'আ কবুল করবেন এবং হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। আর যদি জীবনের কোনও ক্ষেত্রে হিদায়াতের বাইরে গিয়ে থাকি, তা ‘আকীদা-বিশ্বাসে হোক বা আমল-আখলাকে, তিনি আমাকে তা থেকে উদ্ধার করে পুরোপুরি হিদায়াতের উপর নিয়ে আসবেন। ইনশাআল্লাহ্ আল্লাহ তা'আলার শেখানো এ দু'আ খাঁটি মনে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়তে থাকলে তিনি আমাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত হিদায়াতের উপর রাখবেন এবং সকল গোমরাহী থেকে রক্ষা করবেন।

আল্লাহ তা'আলাই রিযকদাতা

অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبادِي! كُلكُم جَائِعٌ إِلا مَن أَطعمتُه فَاستَطعِمُونِي أُطعِمكُم

হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে খাদ্য দিয়েছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি তোমাদেরকে খাদ্য দেব'।
পূর্বে হিদায়াত সম্পর্কে আলোচনা করার পর এবার খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে। এ দু'টি বিষয়ই আল্লাহর হাতে। আর বান্দা এ দুটিরই মুখাপেক্ষী।
মানুষ মূলত আত্মা ও দেহ- এ দুইয়ের সমষ্টির নাম। আত্মার খাদ্য হল হিদায়াত, আর দেহের খাদ্য দুনিয়ার পানাহার সামগ্রী। আগে বলা হয়েছে, আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান না করেন সে পথভ্রষ্ট থেকে যায়। অর্থাৎ হিদায়াতের খোরাক না পাওয়ার কারণে মানুষের রূহানী শক্তি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন সে পাশবশক্তির দ্বারা পরিচালিত হয় এবং হিংসা-বিদ্বেষ, লোভলালসা প্রভৃতি রিপুর কবলে পড়ে মানবরূপী পশুতে পরিণত হয়ে যায়; বরং কুরআনের ভাষায় সে পশুরও অধম হয়ে যায়। এ পরিণতি থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় মানুষের রূহানী খাদ্য অর্থাৎ আসমানী হিদায়াতের ব্যবস্থা করেছেন।
দেহ হচ্ছে রূহের বাহন। দেহ ছাড়া সে অচল। তাই দেহেরও পরিপুষ্টি জরুরি। তাই আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় এর জন্যও খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। দুনিয়ায় যত পশুপক্ষী আছে, সবারই খাদ্য আল্লাহর যিম্মায়। তিনি ঘোষণা করেন-

وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا

অর্থ : ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনও প্রাণী নেই, যার রিযিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। সূরা হুদ, আয়াত ৬
আল্লাহ তা'আলাই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তাঁর ইচ্ছায়ই নদীনালায় পানি প্রবাহিত হয়। মাটির উর্বরাশক্তি তাঁরই দান। তিনি মাটি থেকে শস্যদানার অঙ্কুরোদগম ঘটান। সূর্যালোক দ্বারা তার পুষ্টি যোগান। তাঁর ইচ্ছায়ই চারাগাছ ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে তা ফল ও ফসলে পূর্ণতা লাভ করে। আল্লাহর ইচ্ছা না হলে গাছে ফল ও ফসল ধরানো কার পক্ষে সম্ভব?
ক্ষেত্রবিশেষে এর পেছনে মানুষের মেহনত আছে বটে, কিন্তু সে মেহনতের আসবাব-উপকরণও আল্লাহ তা'আলাই যোগান। কত শ্রম ও মেহনতই তো বৃথা যায়। আল্লাহর যখন ফসল দেওয়ার ইচ্ছা না হয়, হাজার চেষ্টা করেও মানুষ ফসল পায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় অল্প মেহনতেও প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়। যারা প্রকৃত চক্ষুষ্মান তারা ঠিকই বোঝে মানুষের মেহনত ও দৌড়ঝাঁপ আল্লাহপ্রদত্ত এক বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা। এর আড়ালে আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাই আসল জিনিস। যাবতীয় ফল-ফসল ও খাদ্য-পানীয় তাঁর ইচ্ছারই প্রকাশ। এ হাকীকত দেখার চোখ যার নেই, সে কেবল বাহ্যিক আসবাব-উপকরণে ঘুরপাক খায় আর মনে করে, এর দ্বারাই সব হয়ে যায়। মূলত এ হাকীকত বোঝার জন্য আসমানী হিদায়াত প্রয়োজন। সেজন্যই আল্লাহ তা'আলা আগে হিদায়াতের কথা বলে রিযকের বিষয়টা উল্লেখ করেছেন, যাতে ওই হিদায়াতের আলোকে মানুষ বুঝতে পারে যে, আমরা যে খাদ্য-পানীয় লাভ করছি তা কেবল আমাদের মেহনতের ফল নয়; বরং তারও প্রকৃত দাতা আল্লাহ তা'আলাই । তিনি দান না করলে খাদ্য-পানির ব্যবস্থা করে নিজ ক্ষুধা-পিপাসা মেটানোর ক্ষমতা কোনও মানুষের নেই।
তো আল্লাহ তা'আলাই যেহেতু প্রকৃত রিযকদাতা, তাই বান্দার কর্তব্য তাঁর কাছ থেকে রিযক চেয়ে নেওয়া। এ হাদীছে সে নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। যারা তাঁর কাছে রিযক চায় না তাদেরকেও তিনি রিযক দেন বটে, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া আর মু'মিনদেরকে দেওয়ার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। তারা আল্লাহর কঠিন পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। তারা মনে করে তাদের সব উপার্জন কেবলই তাদের মেহনতের ফল, যেমন কারুন মনে করত। এ মনে করাই এক কঠিন গুনাহ। এর জন্য আখিরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। দুনিয়ায়ও আল্লাহ তা'আলা অনেক সময় এর শাস্তি দেখিয়ে দেন। এরূপ উপার্জনের মধ্যে বেবরকতী তো আছেই, সেইসঙ্গে আছে হাজারও পেরেশানি। তারপর আবার তার ব্যবহার হয় অবৈধ পন্থায় ও নানা অবৈধ কাজে। এভাবে পাপের উপর পাপের দীর্ঘ সিলসিলা।
পক্ষান্তরে মু'মিনদেরকে আল্লাহ তা'আলা যে রিযক দেন তা তো আল্লাহ তা'আলা দিতেনই, কিন্তু তাঁর কাছে চাওয়ার কারণে একটি বাড়তি ইবাদতও হয়ে যায়। আর তারা সে রিযকের ব্যবহার করে আল্লাহর দেওয়া হিদায়াতের আলোকে। ফলে সে ব্যবহার দ্বারাও ছাওয়াব পেয়ে যায়। তারা খাদ্য-পানি দ্বারা অর্জিত শক্তিকেও ব্যবহার করে আল্লাহর হুকুম পালনে। তাতেও ছাওয়াব হতে থাকে। এভাবে ছাওয়াবের উপর ছাওয়াবের দীর্ঘ সিলসিলা। এটা আল্লাহর কাছে চাওয়ার বরকত। তাই বান্দার কল্যাণার্থেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে রিযক চাওয়ার শিক্ষা দান করেছেন।
কিন্তু মানুষ বড় বে-সবর। একটু কষ্ট দেখা দিলেই অন্যের কাছে হাত পাতে। খাদ্য- পানির জন্য মাখলুকের দুয়ারে ধরণা দেয়। চিন্তা করে না, যার দুয়ারে ধরনা দিচ্ছে সেও তার মতই একজন দুর্বল অক্ষম সৃষ্টি। তারও রিয্ক তো আল্লাহ তা'আলাই যোগান। কাজেই তার কাছে হাত পেতে কেন নিজেকে ছোট করছি? হতে পারে এ ক্ষণিকের কষ্ট আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আল্লাহ দেখছেন বান্দা তাঁর দিকে রুজু করে, না মাখলুকের কাছে হাত পাতে। কেন আমি অন্যের কাছে হাত পেতে এ পরীক্ষায় ফেল করতে যাচ্ছি? এমনও তো হতে পারে, এই ক্ষণিকের কষ্টের মধ্যেই আমার কল্যাণ নিহিত, যে কল্যাণ আমি না জানলেও আল্লাহ তা'আলা ঠিকই জানেন। তাই আমার তো কর্তব্য আমার কল্যাণ বিবেচনায় আল্লাহ তা'আলা যে অবস্থাকে আমার জন্য পসন্দ করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। সেইসঙ্গে আমি যেহেতু দুর্বল বান্দা, তাই সর্বশক্তিমান রিযকদাতার কাছে নিজ অক্ষমতা প্রকাশ করে দু'আ করতে থাকা, তিনি যেন আমার কষ্ট দূর করে দেন এবং আমার জন্য খায়রের ফয়সালা করেন।

আল্লাহ তা'আলাই মানুষের বস্ত্রদাতা

তারপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ عَارٍ، إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ، فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ

‘হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে বস্ত্র দিয়েছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন। সুতরাং তোমরা আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দেব'।
বস্তুত লেবাসপোশাকও মানুষের জন্য আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। এর মাধ্যমে মানুষ তার লজ্জা নিবারণ করে ও নিজেকে সুসজ্জিত করে। বিনা পোশাকে মানুষের কেবল নির্লজ্জতাই প্রকাশ পায় না, সে কদাকারও হয়ে ওঠে। জগতে একজন নগ্ন মানুষ অপেক্ষা অসুন্দর আর কোনও বস্তু নেই। তাই তো আল্লাহ তা'আলা মানুষকে এ নি'আমতের মহিমা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন-

يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا

অর্থ : হে আদমের সন্তানসন্ততি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে এবং তা শোভাস্বরূপ।সূরা আ'রাফ, আয়াত ২৬
পোশাকের প্রয়োজন মানুষের শীত ও তাপ নিবারণের জন্যও। এ নি'আমত না হলে শীত ও তাপের মওসুমে মানুষের কষ্টের কোনও সীমা থাকত না। পৃথিবীতে তার প্রাণরক্ষা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ত। সে সংকট থেকে রক্ষার জন্যও আল্লাহ তা'আলা তাকে পোশাকের নি'আমত দান করেছেন। তাছাড়া সংগ্রামমুখর এ পৃথিবীতে আত্মরক্ষার জন্যও বিভিন্ন রকম পোশাকের প্রয়োজন হয়। পোশাকের এসব উপকারিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য ইরশাদ হয়েছে-

وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأْسَكُمْ

অর্থ : আর তিনি তোমাদের জন্য বানিয়েছেন এমন পোশাক, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং এমন পোশাক, যা যুদ্ধকালে তোমাদেরকে রক্ষা করে।সূরা নাহল, আয়াত ৮১
বাহ্যত পোশাক তৈরিতে মানুষের বিভিন্ন চেষ্টা-মেহনতের ভূমিকা থাকলেও এর প্রকৃত দাতা আল্লাহ তা'আলাই। এর মূল উপাদান আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। তিনিই মানুষকে তা দ্বারা পোশাক তৈরির কলাকৌশল শিক্ষা দিয়েছেন এবং মানব-প্রকৃতিতে পোশাকের চাহিদা নিহিত রেখেছেন। মস্তিষ্কবিকৃত ও বুদ্ধিভ্রষ্ট লোকের পোশাকবিমুখতা সভ্য সমাজের পক্ষে কতই না অস্বস্তিকর। আল্লাহ তা'আলা যাদের মস্তিষ্ক ঠিক রেখেছেন এবং বিবেকবুদ্ধি অবিকৃত রেখেছেন, তারা পোশাককে সভ্য মানুষের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ মনে করে। এই যে পোশাকমুখী স্বভাব, এও তো খাদ্যচাহিদার মতই মহান সৃষ্টিকর্তার দান। যে ব্যক্তি খাদ্যচাহিদা থেকে বঞ্চিত, তার সম্মুখে হাজারও রকম উপাদেয় খাদ্য থাকলেও তা তার কোনও কাজে আসে না। তদ্রূপ পোশাকের চাহিদাবিহীন ব্যক্তিও পোশাকের উপকার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে। কাজেই এ চাহিদাও আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট নি'আমত।
মোটকথা স্বভাবের ভেতর পোশাক ব্যবহারের চাহিদা, মানব অস্তিত্বের জন্য পোশাকের বহুমুখী প্রয়োজনীয়তা, সে প্রয়োজন পূরণের জন্য পোশাকের উপাদান- উপকরণ সৃষ্টি এবং পোশাক তৈরির কলাকৌশল সবই আল্লাহ তা'আলারই দান। তিনি এসব দান না করলে মানুষকে উলঙ্গ থাকতে হত, মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনও ভেদাভেদ থাকত না এবং একপর্যায়ে মানুষের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত। কাজেই সর্বতোভাবে পোশাকের প্রকৃত দাতা যেহেতু আল্লাহ তা'আলাই, তাই তাঁর কাছেই এটা চাওয়া উচিত, কোনও মাখলুকের কাছে নয়।
আরেক আছে বিমূর্ত পোশাক। অর্থাৎ এমন পোশাক, যা কোনও বস্তু নয়; বরং তা মানুষের অর্জনীয় এক গুণ। দীনী পরিভাষায় তাকে তাকওয়া বলা হয়ে থাকে। বাহ্যিক পোশাক দ্বারা যেমন মানুষ নিজ লজ্জা নিবারণ করে এবং শীত ও তাপ থেকে আত্মরক্ষা করে, তেমনি ‘তাকওয়া' নামক পোশাক দ্বারা সে নাফরমানী, পাশবগুণাবলি এবং নফস ও শয়তানের হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তাই বাহ্যিক পোশাকের চেয়ে এই অভ্যন্তরীণ পোশাক আরও বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা বাহ্যিক পোশাক না হলে আকৃতিগতভাবে মানুষ পশুর মত হয়ে যায়, আর তাকওয়া না থাকলে মানুষ প্রকৃতিগতভাবে পশু হয়ে যায়; বরং তখন সে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায়। এই গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ

অর্থ : এবং তাকওয়ার পোশাকই শ্রেষ্ঠতম। সূরা আ'রাফ, আয়াত ২৬

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য বাহ্যিক পোশাক অর্জনের জন্য যেমন চেষ্টা করে থাকি, তেমনি তাকওয়ার পোশাক অর্জনের জন্যও চেষ্টারত থাকা এবং তাকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা।

আল্লাহর ক্ষমাশীলতা

তারপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي! إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا، فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ

'হে আমার বান্দাগণ! তোমরা দিবারাত্র ভুল করে থাক, আর আমি সমস্ত ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিই। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব'।
এটাও বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট নি'আমত যে, বান্দা দিবারাত্র হাজারও রকম গুনাহ করা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা তা ক্ষমা করে দেন। উচিত তো ছিল দিবারাত্র আল্লাহর 'ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানো, এক মুহূর্তও নাফরমানীতে নষ্ট না করা। আল্লাহ তা'আলা দিনরাত তো তাঁর নাফরমানী করার জন্য দেননি, দিয়েছেন মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের সুবিধার্থে। সেই হিসেবে দিনরাত মানুষের জন্য কত বড়ই না নি'আমত। নি'আমতের দাবি হচ্ছে তার সদ্ব্যবহার করা। যে-কোনও নি'আমতকে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ব্যবহার করলেই তার সদ্ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত ছিল দিনরাতের সবটা সময় আল্লাহর হুকুম মোতাবেক কাটানো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কী করছি? করছি পাপাচার ও নাশোকরী। অন্যদিকে আল্লাহ তা'আলা করছেন ক্ষমার আচরণ।
দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষই শিরক ও কুফরে লিপ্ত। তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর অগণিত নি'আমত তাদের ভোগ করতে দিচ্ছেন। এও তাঁর একরকম ক্ষমাশীলতা। অন্যথায় কবেই তারা সব ধ্বংস হয়ে যেত।
যে সকল কাফের ও মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করে, তিনি তাদের অতীতজীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। যে সকল ঈমানদার সগীরা গুনাহে লিপ্ত হয়, বিভিন্ন নেক আমল ও বিপদ-আপদের বিনিময়ে তাদের সেসব গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। তারা কোনও কবীরা গুনাহ করলে তাদের জন্য তাওবার দরজা খোলা রয়েছে। তাওবা করলে তিনি সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি ঘোষণা করেন-

وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ

অর্থ : যে-কেউ তাওবা করে, আমি তার জন্য মহাক্ষমাশীল।সূরা ত্বহা, আয়াত ৮২

তিনি আরও ইরশাদ করেন-

قُلْ يَاعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (53)

অর্থ : বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজ সত্তার উপর সীমালংঘন করেছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।`সূরা যুমার, আয়াত ৫৩
যতক্ষণ না মৃত্যুর আভাস দেখা দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাওবা করার সুযোগ আছে।
যথাযথ শর্ত মোতাবেক তাওবা করলে আল্লাহ তা'আলা তাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। ‘তাওবা’ অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দেখুন, রিয়াযুস সালেহীন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৭-১৩৬
মোটকথা, আল্লাহ তা'আলার ক্ষমাশীলতা অপরিসীম এবং একমাত্র তিনিই ক্ষমা করার মালিক। এমন কোনও গুনাহ নেই, তাওবা করলে যা তিনি ক্ষমা করেন না। আর তিনি ক্ষমা না করলে এমন কেউ নেই, যে তা ক্ষমা করতে পারে। সুতরাং কেউ যত বড় পাপীই হোক না কেন, হতাশার কোনও কারণ নেই। সে খাটিমনে তাওবা করলে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করবেন। আর আমরা প্রত্যেকেই তো হরহামেশা গুনাহ করেই থাকি। কেবল নবীগণই মা'সুম। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে নিজেকে নিষ্পাপ বলে দাবি করতে পারে। তো আমরা প্রত্যেকেই যখন পাপী, তখন আমাদের একান্ত কর্তব্য খাঁটিমনে তাওবা করা এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তিনি বান্দাকে উৎসাহ দিচ্ছেন, যেন তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তিনি ক্ষমা করতেই চান। সে কারণেই নিজ দয়ায় উদাসীন বান্দাকে ক্ষমা প্রার্থনার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। আমাদের কর্তব্য তাঁর এ ডাকে সাড়া দিয়ে অবিলম্বে তাওবা-ইস্তিগফারে রত হওয়া। হে আল্লাহ! আমরা অতি বড় গুনাহগার। আপনি আমাদের তাওবা কবুল করুন এবং নিজ দয়ায় আমাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমীন।

আল্লাহ তা'আলার সর্বব্যাপী ক্ষমতা ও অভাবমুক্ততা

তারপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي! إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي، فَتَنْفَعُونِي

“হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কিছুতেই আমার ক্ষতি করতে সক্ষম নও যে, তোমরা আমার ক্ষতি করবে। এবং তোমরা আমার উপকার করারও ক্ষমতা রাখ না যে, তোমরা আমার উপকার করবে।”
কেননা আল্লাহ তা'আলা ঐশ্বর্য্যময়, তাঁর কোনও প্রকার অভাব নেই। তিনি সর্বশক্তিমান, তাঁর কোনও প্রকার দুর্বলতা নেই। পক্ষান্তরে মানুষ মূলতই দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত। দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত মাখলুক কিভাবে সর্বশক্তিমান ও ঐশ্বর্য্যময় সৃষ্টিকর্তার কোনও উপকার বা ক্ষতি করবে? বরং সে নিজেই সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার জন্য আল্লাহ তা'আলারই মুখাপেক্ষী। এমনিভাবে কোনও উপকার লাভ করতে চাইলে তাও কেবল তাঁরই কাছে পেতে পারে, কোনও মাখলুকের কাছে নয়। তাই মানুষের কর্তব্য, যে-কোনও উপকার লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তা'আলারই শরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁরই কাছে দু'আ করা।

মানুষের ‘ইবাদত-বন্দেগী তার নিজেরই স্বার্থে

অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا

‘হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষ ও জিন্ন যদি তোমাদের মধ্যকার সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাকী ব্যক্তির কলবের মত (কলববিশিষ্ট) হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুমাত্র বৃদ্ধি করবে না'।
কেউ কেউ বলেন, এর দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বোঝানো হয়েছে। কেননা তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাকী। এক হাদীছে তিনি ইরশাদ করেছেন-

إِنَّ أَتْقَاكُمْ وَأَعْلَمُكُمْ بِاللَّهِ أَنَا

“আমি তোমাদের সকলের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করি এবং আল্লাহর সম্পর্কে তোমাদের সকলের চেয়ে বেশি জানি। সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২০; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ১৭৪২
বলা হয়েছে, সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষ ও প্রত্যেক জিন্ন যদি সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাকীর মত মুত্তাকী হয়ে যায়, অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার সমস্ত আদেশ-নিষেধ সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেনে চলে এবং তার পরও মানুষের পক্ষে যত নফল ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব তাও পূর্ণমাত্রায় করে আর এভাবে সকল জিন্ন ও ইনসান। তাকওয়া-পরহেযগারী ও ইবাদত-বন্দেগীর সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাতে আল্লাহর রাজত্বে কিছু বাড়বে না এবং তাদের সে ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা আল্লাহর কোনও উপকার লাভ হবে না। কেননা তাঁর রাজত্ব ও ক্ষমতায় কিছুমাত্র শূন্যতা নেই, যা মাখলুকের ‘ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা পূর্ণ করা হবে। বরং তাদের ‘ইবাদত-বন্দেগী তাদের নিজেদেরই স্বার্থে। এতে তাদের দুনিয়ায়ও কল্যাণ এবং আখিরাতেও কল্যাণ। দুনিয়ায় এর মধ্যে নিহিত রয়েছে স্বস্তিকর জীবন এবং আখিরাতে এর মাধ্যমে হবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ। কাজেই সে কল্যাণ লাভের জন্যই প্রত্যেকের কর্তব্য 'ইবাদত-বন্দেগীর সাথে জীবনযাপন করা।
পাপ ও অবাধ্যতার বিষয়টাও এরকমই। এর পরবর্তী বাক্যে আল্লাহ তা'আলা জানিয়েছেন, পৃথিবীর শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত জিন্ন ও মানুষ আছে, তারা সকলে যদি সর্বাপেক্ষা পাপিষ্ঠ ব্যক্তির মত পাপী হয়ে যায়, ধরে নেওয়া যাক ইবলীসের মত কিংবা দাজ্জালের মত, তাতে আল্লাহর রাজত্বের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং যে যতটুকু পাপ করে বা করবে, তার ক্ষতি তার নিজেরই। সে ক্ষতি দুনিয়ায়ও এবং আখিরাতেও। তাই তাদের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজন নিজেদেরই স্বার্থে, যাতে উভয় জাহানে তারা পাপাচারের ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে। হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সকল পাপাচার থেকে হেফাজত করুন এবং আপনার বাধ্য ও অনুগত বান্দা হয়ে চলার তাওফীক দিন- আমীন।

আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত

তারপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ

'হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষ ও জিন্ন যদি একটি ময়দানে দাঁড়িয়ে যায়, তারপর আমার কাছে চায় আর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বিষয় দিয়ে দিই, তবে তা আমার ভাণ্ডারে যা আছে তা থেকে অতটুকুই কমায়,যতটুকু একটি সুঁই সাগরে ঢোকানো হলে তা তার পানি কমাতে পারে'।
এখানে আল্লাহর ভাণ্ডারকে সমুদ্র এবং মানুষকে প্রদত্ত নি'আমতরাশিকে সুঁইয়ের মাথায় লেগে আসা পানির সাথে তুলনা করা হয়েছে বাহ্যদৃষ্টি হিসেবে, বাস্তব অবস্থা হিসেবে নয়। কেননা বাস্তবতা তো এই যে, আল্লাহর ভাণ্ডারকে সাগরের সাথে তুলনা করা চলে না। কেননা সাগর যত বড়ই হোক না কেন তা সসীম, আর আল্লাহর ভাণ্ডার অসীম। এমনিভাবে সাগরে সুঁই ডোবালে তার মাথায় যে পানি লেগে আসে তাতে একটু হলেও সাগরের পানি কমে, যদিও তা চোখে পড়ে না। কিন্তু আল্লাহর ভাণ্ডার থেকে যতই দেওয়া হোক না কেন তাতে আল্লাহর ভাণ্ডার বিন্দুমাত্র কমে না। কারণ যা অসীম তা কোনও কিছুতেই কমে না।
যা অসীম তা তো কমেই না, অনেক সময় সসীম বস্তুও কমে না, যেমন আগুন। একটি প্রদীপ থেকে লক্ষ প্রদীপ জ্বালালেও সে প্রদীপের আগুন বিন্দুমাত্র হ্রাস পায় না। “ইলম ও জ্ঞানের বিষয়টাও এরকমই। তা থেকে যতই বিলানো হোক একটুও কমে না। বরং “ইলম যত বিতরণ করা হয় ততই বাড়ে। সসীম বস্তুর যখন এ অবস্থা যে, তার কোনও কোনওটি থেকে যতই বিতরণ করা হোক না কেন কিছুমাত্র কমে না, তখন আল্লাহর অসীম ভাণ্ডারে হ্রাস পাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

তাহলে প্রশ্ন জাগে, এ হাদীছে যে বলা হল-

مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ البَحْرَ

“তবে তা আমার ভাণ্ডারে যা আছে তা থেকে অতটুকুই কমায়, যতটুকু একটি সুঁই সাগরে ঢোকানো হলে তা তার পানি কমাতে পারে'?
এর উত্তর এই যে, এখানে বাস্তবিক কমার কথা বলা হয়নি, বরং না কমার বিষয়টাকে উপমা দ্বারা বোঝানো হয়েছে মাত্র। কেননা সুঁইয়ের মাথায় লেগে যে পানি আসে তাতে সাগরের পানি বাস্তবিকপক্ষে কমলেও দৃশ্যত কমে না। সুঁইয়ের মাথায় আর কতটুকু পানি আসে? সাগর থেকে হাজার হাজার মন পানি তুললেও যতটুকু কমে তা চোখে দেখা যায় না । তাই প্রকৃতপক্ষে কমলেও বলা হয়ে থাকে, একটুও কমেনি। বিপুল দান সত্ত্বেও একটুও না কমার বিষয়টা বোঝানোর জন্য মানুষের পক্ষে এটাই মোক্ষম দৃষ্টান্ত। এজন্যই আল্লাহ তা'আলা তাঁর ভাণ্ডার থেকে না কমার বিষয়টাকে সাগরের সাথে তুলনা করেছেন। সুতরাং এটা কেবলই উপমা; এর বাস্তবিক অর্থ বোঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, এর দ্বারা আল্লাহর ভাণ্ডার থেকে একটু হলেও কমার সন্দেহ করা যাবে।
এই উপমা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বান্দাকে আল্লাহ তা'আলার কাছে চাইতে উৎসাহ দেওয়া। মানুষ একের কাছে অন্যে বেশি চাইতে অনেক সময় এ কারণে কুণ্ঠাবোধ করে যে, না জানি এতে তার সম্পদে টান পড়ে যায়। আল্লাহ জানাচ্ছেন, তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত। সেখান থেকে কমার কোনও প্রশ্ন নেই। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন-

يَدُ اللَّهِ مَلْأَى لاَ تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ، وَقَالَ: أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالأَرْضَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ

“আল্লাহর হাত ভরা। দিবারাত্রের নিরবচ্ছিন্ন দান তা কমাতে পারে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা দেখ না আসমান-যমীন সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত তিনি কত দান করেছেন? তা তো তাঁর হাতের সম্পদ কিছুমাত্র কমাতে পারেনি।" সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৪৬৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৯৩; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩০৪৫; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮১৪০; বাগাবী, হাদীছ নং ১৬৫৬
সুতরাং হে বান্দা! তোমার যত ইচ্ছা চাইতে থাক। তুমি প্রাণভরে চাও। আমার ভাণ্ডারে কোনও অভাব নেই। তোমাদের সকল সৃষ্টিকেও তোমাদের চাহিদা মোতাবেক সবকিছু দিলেও আমার ভাণ্ডার থেকে কিছুমাত্র কমবে না। কাজেই কমে যাবে সেই চিন্তা করে তোমার চাওয়া বন্ধ করো না। তুমি চাইতে থাক। আমার ভাণ্ডার যেমন অফুরন্ত, তেমনি আমি অতি মহানুভব। আমার কাছে চাইলে আমি খুশি হই। তুমি যত চাইবে তত খুশি হব।
কিন্তু বান্দার চাওয়াও যে বড় সসীম। আল্লাহ বান্দাকে যত দিতে চান, বান্দা ততটা চাওয়ারও ক্ষমতা রাখে না। তাই আল্লাহ তা'আলা বান্দার চাওয়ার বাইরেও দেন। আমরা ইহজগতে যা-কিছু ভোগ করছি তার কতটুকু চেয়ে নিয়েছি? বেশিরভাগই আল্লাহ তা'আলা চাওয়া ছাড়াই দিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের চাওয়াও বড় ত্রুটিপূর্ণ। অনেক সময়ই যা কল্যাণকর তা চাই না। আবার যা ক্ষতিকর তা চাই। আল্লাহ তাআলা যেহেতু অতি দয়ালু, তাই দেওয়ার বেলায় তিনি যা কল্যাণকর তা-ই দেন। আবার অনেক সময় কল্যাণকর যা চাওয়া হয় তার সবটাও দেন না। কারণ এটা দুনিয়া। এটা সবকিছুর উপযোগী নয়। আল্লাহ তা'আলা দেওয়ার বেলায় বান্দার উপযোগিতা বিবেচনা করেই দেন।
জান্নাতে মানুষের বুদ্ধিবিবেক হবে সুস্থ ও সুষ্ঠু। সেখানে অকল্যাণকর কিছু চাইবে না। সেখানে বান্দা প্রাণভরে চাইতে থাকবে, আল্লাহও দিতে থাকবেন। একপর্যায়ে বান্দার চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তা'আলা আরও কী কী চাওয়া যায় তা শিখিয়ে দেবেন। সবশেষে বলবেন, এই যা তুমি নিজে চাইলে আর আমি যা-কিছু শিখিয়ে দিলাম, সবকিছু তোমাকে দেওয়া হল এবং দেওয়া হল এর দশগুণ- সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ায় যেহেতু আমাদের বুদ্ধিবিবেক সুস্থ ও সুষ্ঠু নয়, তাই সব চাওয়া সঠিক হয় না। অনেক ভুলচুক হয়ে যায়। কিন্তু বান্দার চাওয়াটা যে আল্লাহর অনেক প্রিয়! যত চাওয়া যায় ততই তিনি খুশি হন। তাই তাঁর কাছে বেশি বেশি চাইতেও হবে এবং যথাসম্ভব সঠিক জিনিস চাইতে হবে। এর জন্য উত্তম পন্থা হল কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা যেসব দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন এবং হাদীছে যেসব দু'আ পাওয়া যায় তাকে মূলনীতি বানানো। তারপর সরাসরি সেগুলো পড়া এবং তার আলোকে নিজ কাম্যবস্তু আল্লাহ তা'আলার কাছে চাওয়া।
হে আল্লাহ! আমরা ওই সকল কল্যাণ আপনার কাছে চাই, যা আপনার প্রিয় নবী ও হাবীব সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে চেয়েছিলেন এবং ওই সকল অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি, যা থেকে আপনার কাছে আপনার প্রিয় নবী ও হাবীব সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন।

বান্দার আমলসমূহের সংরক্ষণ ও তার প্রতিদান

তারপর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-

يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ، ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا

'হে আমার বান্দাগণ! এসব তোমাদের আমল, যা আমি তোমাদের জন্য হিসাব করে রাখি। তারপর আমি তোমাদেরকে তার পুরোপুরি বদলা দেব'।
আল্লাহ তা'আলা বান্দার প্রতিটি কথা ও কাজ সংরক্ষণ করে রাখেন। এক তো সংরক্ষণ করেন নিজ ইলমের মাধ্যমে, আরেক করেন ফিরিশতাদের মাধ্যমে। সংরক্ষণের তৃতীয় ব্যবস্থা হচ্ছে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য।
আল্লাহ তা'আলা সর্বজ্ঞানী, সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশ্রোতা। বান্দার প্রতিটি কাজকর্ম তিনি জানেন। তিনি জানেন তার মনের গোপন কল্পনাও। তিনি তার প্রতিটি কাজ দেখেন, তা যত গোপনেই করুক। তিনি তার প্রতিটি কথা শোনেন, তা যত নীরবেই বলুক। কুরআন মাজীদের বহু আয়াতে আল্লাহ তাআলা এসব বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজেই যখন সব জানেন ও দেখেন, তখন ফিরিশতা দিয়ে সংরক্ষণের কোনও প্রয়োজন ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি এরূপ একটা ব্যবস্থা রেখেছেন। বান্দা যখন যা করে, ফিরিশতাগণ তা লিখে রাখেন। তারা লেখেন মানুষের প্রতিটি কথাও। ফিরিশতাগণ মানুষের কথা ও কাজ যাতে লেখেন তাকে আমলনামা বলা হয়। কিয়ামতের দিন আমলনামা খুলে দেওয়া হবে। মানুষকে তা পড়তে বলা হবে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا (13) اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا (14)

অর্থ : এবং কিয়ামতের দিন আমি (তার আমলনামা) লিপিবদ্ধরূপে তার সামনে বের করে দেব, যা সে উন্মুক্ত পাবে। (বলা হবে) তুমি নিজ আমলনামা পড়। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ১৩-১৪
মানুষ তার আমলনামা পড়বে এবং এই দেখে হয়রান হয়ে যাবে যে, তার জীবনের খুটিনাটি সবকিছুই তাতে লেখা রয়েছে, কোনওকিছুই বাদ যায়নি। সে বলে উঠবে-

يَاوَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا

অর্থ : হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। সূরা কাহফ, আয়াত ৪৯
সেদিন মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও সাক্ষ্য দিতে বলা হবে। প্রত্যেক অঙ্গ তাকে দিয়ে যে কাজ করা হয়েছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (24)

অর্থ : যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা সাক্ষ্য দেবে।সূরা নূর, আয়াত ২৪

অপর এক আয়াতে আছে-

حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (20)

অর্থ : অবশেষে যখন তারা তার (অর্থাৎ আগুনের) কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।সূরা হা-মীম সাজদা, আয়াত ২০
যদিও বান্দাকে কর্মফল দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা'আলার নিজ জ্ঞানই যথেষ্ট এবং তিনি যে কারও প্রতি জুলুম করেন না তাও স্থিরীকৃত, তা সত্ত্বেও আমলনামা ও বিভিন্ন রকম সাক্ষীর ব্যবস্থা কেবল এ কারণে যে, তাঁর ন্যায়বিচারের বিষয়টা যাতে সকলের সামনে পরিস্ফুট হয়ে উঠে এবং কারও কোনওরকম প্রশ্ন তোলার অবকাশ না থাকে।
প্রত্যেকের কৃতকর্ম তার সামনে তুলে ধরার পর আল্লাহ তা'আলা তার পুরোপুরি প্রতিদান দেবেন। নেককারকে তার নেক কাজের পুরস্কার দান করবেন এবং পাপী ব্যক্তিকে দেবেন তার পাপের শাস্তি। এতে কারও প্রতি কোনও জুলুম করা হবে না। অর্থাৎ নেক কাজের যে পুরস্কার প্রাপ্য তা থেকে কম দেওয়া হবে না এবং পাপ কাজের শাস্তিও ন্যায্য পরিমাণের বেশি দেওয়া হবে না।

তারপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-

فَمنْ وجَد خَيراً فَليحمَدِ اللَّهَ، ومَن وَجدَ غَيرَ ذَلك فَلا يَلُومُ إِلا نَفسهُ

'সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম বিনিময় লাভ করবে, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি তার বিপরীত কিছু পাবে, সে যেন কেবল তার নিজেকেই দোষারোপ করে'।
উত্তম বিনিময়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রশংসা তথা শোকর আদায় করতে হবে এ কারণে যে, প্রকৃতপক্ষে তিনিই গোমরাহী থেকে হিদায়াত দান করেছিলেন এবং তিনিই নেক কাজের তাওফীক দিয়েছিলেন। তিনি হিদায়াত দান না করলে তাকে গোমরাহীর অন্ধকারেই পড়ে থাকতে হত এবং তিনি তাওফীক না দিলে পাপ কাজের ভেতর দিয়েই তার ইহজীবন কাটত। ফলে আজ উত্তম বিনিময় লাভের সৌভাগ্য তার হত না; বরং পাপীদের মত জাহান্নামের কঠিন শাস্তিতে নিপতিত থাকতে হত। এই উপলব্ধি থেকেই জান্নাতবাসীগণ এই বলে আল্লাহর শোকর আদায় করবে যে-

وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ

অর্থ : আর তারা বলবে, সমস্ত শোকর আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এই স্থানে পৌঁছিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে না পৌঁছালে আমরা কখনই (এ স্থলে) পৌঁছতে পারতাম না। সূরা আ'রাফ, আয়াত ৪৩
আর মন্দ প্রতিদানের ক্ষেত্রে নিজেকে দোষারোপ করবে এ কারণে যে, তার এ পরিণতির জন্য দায়ী সে নিজেই, অন্য কেউ নয়। আল্লাহ তা'আলা তো তার সামনে ভালো ও মন্দ পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। তাকে বিবেকবুদ্ধি দিয়েছিলেন এবং দিয়েছিলেন ইচ্ছাশক্তি। নবী-রাসূল পাঠিয়ে তাকে সত্য-সঠিক পথে চলার দা'ওয়াতও দেওয়া হয়েছিল। কোন্ কাজ করলে সে জান্নাত লাভ করতে পারবে আর কোন্ কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হবে, আসমানী কিতাবের মাধ্যমে তাও সুস্পষ্টভাবে তার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বোঝানো-সমঝানোর কোনও পথ বাকি রাখা হয়নি। তারপরও সে নিজ খেয়ালখুশিমত চলেছে। দুনিয়ার নগদ সুখের খাতিরে আখিরাতের স্থায়ী সুখকে বিসর্জন দিয়েছে। আর সেই নগদ সুখ পাওয়ার জন্য শরী'আতের আদেশ অমান্য করে নিষিদ্ধ পথে চলেছে। বোঝানো-সমঝানোর সব ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে অন্ধের মত নফসের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থেকেছে। সেই স্বেচ্ছাচারিতা ও ইন্দ্রিয়পরবশতার খেসারতই আজ তাকে দিতে হচ্ছে। কাজেই সে দোষারোপ নিজেকে নয় তো আর কাকে করবে? সুতরাং সেদিন পাপী ব্যক্তিগণ হাত কামড়াবে আর রাসূলের দেখানো পথে না চলার কারণে আক্ষেপ করতে থাকবে, যেমন ইরশাদ হয়েছে-

وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا (27) يَاوَيْلَتَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا (28)

অর্থ : এবং যেদিন জালেম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ ধরতাম! হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।সূরা ফুরকান, আয়াত ২৭-২৮

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহ তা'আলা জুলুম হারাম করেছেন। কাজেই কারও প্রতি যাতে কোনও জুলুম না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং যে-কারও জান, মাল ও ইজ্জতের উপর আঘাত করা হতে বেঁচে থাকার জন্য সচেষ্ট থাকা অতি জরুরি।

খ. আল্লাহ তা'আলাই হিদায়াতের মালিক। কাজেই গোমরাহী থেকে বাঁচা ও হিদায়াতের পথে চলার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার কাছে হিদায়াতের জন্য দু'আ করাও কর্তব্য।

গ. আল্লাহ তা'আলাই রিযকদাতা। কাজেই জীবিকা অর্জনে সচেষ্ট থাকার সাথে সাথে এর জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করাও জরুরি। কোনও অভাব-অনটন দেখা দিলে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহ তা'আলার কাছেই অভাব মোচনের জন্য দু'আ করতে হবে।

ঘ. লেবাস-পোশাক আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নি'আমত। কাজেই এর সদ্ব্যবহার করা এবং এর জন্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা একান্ত কর্তব্য।

ঙ. বাহ্যিক লেবাস-পোশাক অর্জনের জন্য যেমন চেষ্টা করা হয়ে থাকে, তারচে' আরও বেশি চেষ্টা করা উচিত অভ্যন্তরীণ লেবাস তথা তাকওয়া অর্জনের জন্য।

চ. দিন ও রাত মানুষের জন্য আল্লাহ তা'আলার এক শ্রেষ্ঠতম দান। এর প্রকৃত শোকর হচ্ছে তাকওয়ার পথে চলা অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী সময় কাটানো।

ছ. আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল। তাওবা করলে তিনি বান্দার সব গুনাহই ক্ষমা করে দেন। কাজেই আমরা দিবারাত্র যেসব গুনাহ করছি, এর জন্য উচিত তাঁর কাছে তাওবা- ইস্তিগফার করা, যাতে গুনাহর বোঝা নিয়ে কবরে যেতে না হয়।

জ. গুনাহ যত কঠিন ও যত বেশিই হোক না কেন, খাঁটিমনে তাওবা করলে আল্লাহ ঠিকই ক্ষমা করেন। তাই কোনও অবস্থায়ই হতাশ হওয়া উচিত নয়।

ঝ, বান্দার ‘ইবাদত-বন্দেগী দ্বারা আল্লাহর কোনও লাভ হয় না এবং তাদের পাপাচারেও তাঁর কোনও ক্ষতি নেই। এর লাভ-ক্ষতি সবই বান্দার নিজের। তাই নিজ স্বার্থেই বান্দার কর্তব্য পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা ও 'ইবাদত-বন্দেগীতে মনোযোগী হওয়া।

ঞ. আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত। তিনি যতই দান করেন তা থেকে কিছুই কমে না। বান্দা যত চায় তিনি তত খুশি হন এবং বান্দার কল্যাণ অনুযায়ী নিজ ভাণ্ডার থেকে দিতে থাকেন। তাই বান্দার কর্তব্য তার কল্যাণকর সবকিছু তাঁর কাছে চাইতে থাকা এবং চাইতে কখনও ক্লান্তি বোধ না করা।

ট. এ হাদীছে বর্ণিত প্রতিটি বিষয় মুজাহাদা ও সাধনার দাবি করে। সুতরাং নফস ও শয়তান এবং আমলে বাধা দানকারী সকল পক্ষের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন মুজাহাদা ও সাধনায় রত থাকা একান্ত কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন