ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৪২. ইহসান-আত্মশুদ্ধির অধ্যায়

হাদীস নং: ২৫৫৫
প্রতিবেশী ও অতিথির অধিকার
(২৫৫৫) আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে । যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه مرفوعا: من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم جاره ومن كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজের হুকুমদানের আগে আল্লাহ ও শেষদিবসে বিশ্বাসের বরাত দিয়েছেন। অর্থাৎ যার এ বিশ্বাস আছে তার এ বিষয়টি পালনে যত্নবান থাকা একান্ত কর্তব্য।

ঈমানের মূল স্তম্ভ সাতটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশতাদের প্রতি বিশ্বাস, আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস, শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস, তাকদীরে বিশ্বাস এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস। এ হাদীছে তার মধ্যে মাত্র দু'টি অর্থাৎ আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ এ দু'টির উপর যার বিশ্বাস আছে, বাকি পাঁচটিতে বিশ্বাস আপনা-আপনিই তার উপর অবধারিত হয়ে যায়। শরীআতের যাবতীয় বিধানের ভিত্তি মূলত এ দু'টি বিশ্বাসের উপরই। কেননা যার আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে এবং আখেরাতের হিসাব-নিকাশেরও ভয় আছে, সেই তো শরীআত মেনে চলতে সচেষ্ট থাকবে। এরূপ বিশ্বাস থাকলেই সে আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসূলের শিক্ষার দ্বারস্থ হবে। নবী-রাসূলের শিক্ষার উৎস আসমানী কিতাব, যা তাঁরা ফিরিশতাদের মাধ্যমে লাভ করে থাকেন। সুতরাং বিশ্বাসীগণ আসমানী কিতাব ও ফিরিশতাদের উপরও ঈমান রাখবে। আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস থাকলে তাতে বর্ণিত কোনওকিছুর উপরই অবিশ্বাস করার সুযোগ থাকে না। ফলে তাকদীর ও পুনরুত্থানে বিশ্বাসও অবধারিত হয়ে যায়। ব্যস এভাবে আল্লাহ ও শেষদিবসের বিশ্বাস অন্যসবকিছুর বিশ্বাসকেও অবধারিত করে।

যাহোক এ হাদীছে বলা হয়েছে-যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। অন্য বর্ণনায় আছে,

من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يؤذ جاره

(যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার কর্তব্য প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া)। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখার উদ্দেশ্য তো দুনিয়ায় তাঁর আনুগত্য করে আখেরাতে তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করা। তাঁর নৈকট্যের স্থান হলো জান্নাত। সেখানে রয়েছে সম্মানজনক জীবনের যাবতীয় উপকরণ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে জানাচ্ছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করে জান্নাতের সম্মানজনক জীবনের অধিকারী হতে চায়, তার কর্তব্য তার নিকটবর্তী বাসিন্দা বা প্রতিবেশীকে কোনওরূপ কষ্ট না দেওয়া। সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে যাতে প্রতিবেশীর জান, মাল ও ইজ্জতের কোনওরকম ক্ষতি তার দ্বারা না হয়ে যায়। এমনিভাবে কোনও কথা ও কোনও কাজ দ্বারা যাতে সে কষ্ট না পায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য প্রতিবেশীর কাছেই খোঁজ নেওয়া কর্তব্য যে, তার দ্বারা তারা কোনও প্রকারে কষ্ট পাচ্ছে কি না। বরং খোঁজখবর না রাখাও এক প্রকার কষ্টদানই বটে। অনেকে এমনও আছে, যারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না; তাদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে এবং তাদের দরজা প্রতিবেশীদের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। এ আচরণ ইসলামী শিক্ষার সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم ضيفه (যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার কর্তব্য অতিথির প্রতি সম্মানজনক আচরণ করা)। অতিথি গরীব-ধনী, আত্মীয়-অনাত্মীয় যেই হোক না কেন তাকে খুশিমনে গ্রহণ করা চাই। এমন কোনও আচরণ তার সঙ্গে করা যাবে না, যা অতিথির পক্ষে মর্যাদাকর নয়। সুতরাং মেজবানের কর্তব্য তার সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত করা, নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তার জন্য ভালো মেহমানদারীর ব্যবস্থা করা, সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে ভালো জায়গায় থাকতে দেওয়া, তার ওযূ-গোসলের প্রতি লক্ষ রাখা, তাকে সঙ্গ দেওয়া, বিদায়কালে তাকে এগিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে তার পথখরচা দিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তার প্রতি সম্মানজনক আচরণের একটি হলো অতিথি যেখানে বসবে, নিজে তার চেয়ে একটু নিচে বসা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যে ব্যক্তি নিজেকে মুমিন বলে বিশ্বাস করে তার কর্তব্য প্রতিবেশীকে সম্মান করা , কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা।

খ. অতিথির সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা ঈমানের দাবি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ফিকহুস সুনান - হাদীস নং ২৫৫৫ | মুসলিম বাংলা