আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৪- আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫৯৯৯
৩১৮০. সন্তানকে আদর-স্নেহ করা, চুমু দেয়া ও আলিঙ্গন করা।
৫৫৭৩। ইবনে আবু মারইয়াম (রাহঃ) ......... উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী (ﷺ) এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল, তার স্তন দুধে পূর্ণ ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিত এবং দুধ পান করাতো। নবী (ﷺ) আমাদের বলেনঃ তোমরা কি মনে কর, এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ না। ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো করবে না। তারপর তিনি বলেনঃ এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার উপর তদপেক্ষা অধিক দয়ালু।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে যে যুদ্ধবন্দী মহিলার কথা বলা হয়েছে, কোনও বর্ণনায় তার নাম পাওয়া যায় না। হাদীছটির বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, মহিলাটি তার শিশুসন্তান হারিয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘক্ষণ দুধপান করাতে না পারার কারণে তার বুকে দুধ জমা হয়ে গিয়েছিল। এতে তার কষ্ট হচ্ছিল। একে তো সন্তান হারানোর উদ্বেগ, তার উপর বুকে দুধ জমা হওয়ার কষ্ট। এ কারণে সামনে যে শিশুকেই পাচ্ছিল, তাকেই জড়িয়ে ধরে দুধপান করাচ্ছিল। পরিশেষে যখন নিজের সন্তানটিকে পেয়ে গেল, অমনি সে উচ্ছ্বসিত মমতায় তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল ও দুধপান করাতে থাকল। এ দৃশ্য রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও দেখছিলেন, সঙ্গে সাহাবীগণও দেখছিলেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার মমতা সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার জন্য মোক্ষম দৃষ্টান্ত পেয়ে গেলেন। তিনি বললেন
أترون هذه المرأة طارحة ولدها في النار؟
(তোমরা কি মনে কর এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে)? অর্থাৎ এমনিই তো সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা অন্যসব মমতা অপেক্ষা অনেক বেশি। তদুপরি হারিয়ে যাওয়া সন্তান ফিরে পাওয়ায় তার মমতা ও ভালোবাসার যে আকুলতা তোমরা দেখতে পাচ্ছ, এ অবস্থায় তার পক্ষে কি এ সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করা সম্ভব? সাহাবায়ে কেরাম স্বতঃস্ফূর্ত জবাব দিলেন যে, না তা কিছুতেই সম্ভব নয়।
তখন তিনি তাঁর এ বিখ্যাত উক্তিটি উচ্চারণ করলেন যে, لله أرحم بعباده من هذه بولدها
(নিজ সন্তানের প্রতি এই মহিলার যতটা মায়া, নিজ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলা তারচে'ও বেশি মমতাবান)। 'নিজ বান্দা' বলে ইসলামের উপর মৃত্যুবরণকারী বান্দাদের বোঝানো হয়েছে। অপর এক বর্ণনা দ্বারা এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। হযরত আনাস রাযিঃ বর্ণনা করেন যে
مر النبي صلى الله عليه وسلم في نفر من أصحابه وصبي في الطريق، فلما رأت أمه القوم خشيت على ولدها أن يوطأ، فأقبلت تسعى وتقول: ابني ابني، وسعت فأخذته، فقال القوم: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم، ما كانت هذه لتلقي ابنها في النار. قال: فخفضهم النبي صلى الله عليه وسلم فقال: ولا الله عز وجل يلقي حبيبه في النار"
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীসহ কোথাও যাচ্ছিলেন। তখন রাস্তার মাঝখানে একটি শিশু অবস্থান করছিল। তার মা যখন দেখল একদল লোক এগিয়ে আসছে, তখন আশঙ্কা করল তার শিশুটি বুঝি তাদের পায়ের নিচেই পিষ্ট হয়ে যায়। অমনি সে এই বলতে বলতে দৌড়ে আসল যে, আমার ছেলে, আমার ছেলে। এভাবে সে দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে তুলে নিল। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ মায়ের পক্ষে তো কখনও তার ছেলেটিকে আগুনে ফেলা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলাও তাঁর বন্ধুকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন না।
'বন্ধু' শব্দটির ব্যবহার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে কাফেরগণ এ দয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ দয়া কেবল তারাই পাবে, যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পেরেছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মায়ের মমতা অন্য সকলের মায়া-মমতার ঊর্ধ্বে। প্রত্যেক সন্তানের মায়ের সে মমতা উপলব্ধি করা উচিত।
খ. বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার মমতা মায়ের মমতার চেয়েও অনেক বেশি। তাই তিনি মুমিন বান্দাকে জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি দেবেন না। সুতরাং আমরা যাতে ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করে আল্লাহর সে মমতা লাভ করতে পারি, সেই আশায় মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর হুকুমমতো চলতে সচেষ্ট থাকব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
গ. গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বোঝানো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষাদান পদ্ধতির একটি অংশ।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার মমতা সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার জন্য মোক্ষম দৃষ্টান্ত পেয়ে গেলেন। তিনি বললেন
أترون هذه المرأة طارحة ولدها في النار؟
(তোমরা কি মনে কর এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে)? অর্থাৎ এমনিই তো সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা অন্যসব মমতা অপেক্ষা অনেক বেশি। তদুপরি হারিয়ে যাওয়া সন্তান ফিরে পাওয়ায় তার মমতা ও ভালোবাসার যে আকুলতা তোমরা দেখতে পাচ্ছ, এ অবস্থায় তার পক্ষে কি এ সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করা সম্ভব? সাহাবায়ে কেরাম স্বতঃস্ফূর্ত জবাব দিলেন যে, না তা কিছুতেই সম্ভব নয়।
তখন তিনি তাঁর এ বিখ্যাত উক্তিটি উচ্চারণ করলেন যে, لله أرحم بعباده من هذه بولدها
(নিজ সন্তানের প্রতি এই মহিলার যতটা মায়া, নিজ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলা তারচে'ও বেশি মমতাবান)। 'নিজ বান্দা' বলে ইসলামের উপর মৃত্যুবরণকারী বান্দাদের বোঝানো হয়েছে। অপর এক বর্ণনা দ্বারা এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। হযরত আনাস রাযিঃ বর্ণনা করেন যে
مر النبي صلى الله عليه وسلم في نفر من أصحابه وصبي في الطريق، فلما رأت أمه القوم خشيت على ولدها أن يوطأ، فأقبلت تسعى وتقول: ابني ابني، وسعت فأخذته، فقال القوم: يا رسول الله صلى الله عليه وسلم، ما كانت هذه لتلقي ابنها في النار. قال: فخفضهم النبي صلى الله عليه وسلم فقال: ولا الله عز وجل يلقي حبيبه في النار"
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীসহ কোথাও যাচ্ছিলেন। তখন রাস্তার মাঝখানে একটি শিশু অবস্থান করছিল। তার মা যখন দেখল একদল লোক এগিয়ে আসছে, তখন আশঙ্কা করল তার শিশুটি বুঝি তাদের পায়ের নিচেই পিষ্ট হয়ে যায়। অমনি সে এই বলতে বলতে দৌড়ে আসল যে, আমার ছেলে, আমার ছেলে। এভাবে সে দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে তুলে নিল। লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ মায়ের পক্ষে তো কখনও তার ছেলেটিকে আগুনে ফেলা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলাও তাঁর বন্ধুকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন না।
'বন্ধু' শব্দটির ব্যবহার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে কাফেরগণ এ দয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ দয়া কেবল তারাই পাবে, যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পেরেছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মায়ের মমতা অন্য সকলের মায়া-মমতার ঊর্ধ্বে। প্রত্যেক সন্তানের মায়ের সে মমতা উপলব্ধি করা উচিত।
খ. বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার মমতা মায়ের মমতার চেয়েও অনেক বেশি। তাই তিনি মুমিন বান্দাকে জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি দেবেন না। সুতরাং আমরা যাতে ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করে আল্লাহর সে মমতা লাভ করতে পারি, সেই আশায় মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর হুকুমমতো চলতে সচেষ্ট থাকব। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন।
গ. গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বোঝানো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষাদান পদ্ধতির একটি অংশ।
