আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৪- আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫৯৭০
৩১৬৩. আদব-শিষ্টাচার অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি।
৫৫৪৫। আবুল ওয়ালীদ (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ সময়মত নামায আদায় করা। (আব্দুল্লাহ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ পিতা মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। (আব্দুল্লাহ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আব্দুল্লাহ বলেনঃ নবী (ﷺ) এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি যদি তাকে আরও বেশী প্রশ্ন করতাম, তিনি আমাকে আরো অধিক জানাতেন।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারা নেক আমলের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের আগ্রহ-উদ্দীপনার পরিচয় পাওয়া যায়। জানতে চাচ্ছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে কোন আমল সবচে' বেশি প্রিয়। অর্থাৎ কোন আমল করলে আল্লাহ তাআলার বেশি নৈকট্য লাভ হবে। এ জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্য আল্লাহর কাছে যে আমল বেশি প্রিয় এবং যা দ্বারা তাঁর নৈকট্য বেশি লাভ হবে তাতে বেশি যত্নবান থাকা। দুনিয়াদারীতেও মানুষ সবচে' বেশি লাভজনক কাজ খোঁজে। সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস ছিল যে কাজ আখেরাতের পক্ষে বেশি লাভজনক তা জেনে নিয়ে তাতে বেশি বেশি মশগুল থাকা। এটা তাঁদের আখেরাতমুখী মানসিকতার পরিচায়ক।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে জানালেন, ওয়াক্তমত নামায পড়া। অর্থাৎ ঈমানের পর ওয়াক্তমত নামায পড়া শ্রেষ্ঠতম আমল। এটাই আল্লাহ তাআলার কাছে সবচে' বেশি পসন্দ এবং এর দ্বারাই আল্লাহ তাআলার বেশি নৈকট্য লাভ করা যায়। অপর এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন الصلاة خير موضوع، فمن استطاع أن يستكثر فليستكثر 'নামায আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠতম কাজ। যার পক্ষে সম্ভব সে যেন তা বেশি বেশি করে। ৬৩

ওয়াক্তমত নামায পড়া যখন শ্রেষ্ঠ আমল, তখন প্রত্যেকের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ওয়াক্তমত আদায়ে সচেষ্ট থাকা। সতর্ক থাকা উচিত যাতে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও নামায কাযা না হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃত নামায কাযা করা কবীরা গুনাহ। হাঁ, অসুস্থতা, ঘুম, শত্রুর হামলা বা অন্য কোনও গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণে ওয়াক্তমত আদায় করতে না পারলে ভিন্ন কথা, তাতে গুনাহ নেই।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাযি. জানতে চাইলেন, তারপর অর্থাৎ নামাযের পর কোন আমল আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পিতা-মাতার আনুগত্য।

এর দ্বারা বোঝা গেল বান্দার হক আদায় করাও আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় আমল। এর দ্বারাও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়। আরও বোঝা গেল বান্দার হকসমূহের মধ্যে পিতা-মাতার আনুগত্য করার স্থান সবার উপরে। সুতরাং যদি কেউ আল্লাহ তাআলার কোনও প্রিয় আমলের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে চায়, তবে তার উচিত পিতা-মাতার আনুগত্য করা, তাদের বেশি বেশি খেদমত করা এবং তাদেরকে খুশি রাখতে সচেষ্ট থাকা।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে তৃতীয় পর্যায়ে আল্লাহ তাআলার বেশি প্রিয় আমল হিসেবে জিহাদের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার কালেমা ও তাঁর দেওয়া দীন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সসস্ত্র সংগ্রাম করা। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে জিহাদের উচ্চ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীছও আছে প্রচুর। বস্তুত এটি ইসলামের এক স্থায়ী বিধান। এ বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর জন্য প্রত্যেক মুমিনের সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত। অন্তরে দৃঢ় সংকল্প রাখা উচিত যে, যখনই আল্লাহর পথে জিহাদের অবকাশ আসবে, নিজ জান-মাল নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাতে অংশগ্রহণ করবে।

এ হাদীছে লক্ষণীয় যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার আনুগত্য করাকে জিহাদের মাঝখানে স্থান দিয়েছেন। নামাযকে হাদীছে দীনের স্তম্ভ বলা হয়েছে। আর জিহাদ সম্পর্কে আছে, এটি ইসলামের শীর্ষচূড়া। পিতা-মাতার আনুগত্যকে এ উভয় বিধানের মাঝখানে উল্লেখ করার দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে এর গুরুত্ব কত বেশি এবং এটা কত উচ্চস্তরের আমল।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ঈমানের পর নামাযই আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। সুতরাং আমাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ আমলে মনোযোগী থাকতে হবে।

খ. পিতা-মাতার আনুগত্য করাও আল্লাহ খুব পসন্দ করেন। কোনও সন্তানের এ বিষয়ে গাফলাতি করা উচিত নয়।

গ. আল্লাহর পথে জিহাদও একটি শ্রেষ্ঠতম আমল। এর জন্যও প্রত্যেকের প্রস্তুত থাকা চাই।

ঘ. জিজ্ঞাসা করা দীনী ইলম হাসিলের একটি উত্তম পন্থা। কাজেই যার যা জানা নেই, নির্ভরযোগ্য কোনও আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তা জেনে নেওয়া উচিত।

৬৩. তাবারানী, আল মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৪৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৩৬১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২১৫৪৬
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৫৫৪৫ | মুসলিম বাংলা