ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার
১৩. রাষ্ট্র ও প্রশাসন
হাদীস নং: ১৯৬০
নেতৃত্ব বা দায়িত্ব লাভের আগ্রহ বা লোভ নিন্দনীয়
(১৯৬০) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অচিরেই তোমরা নেতৃত্ব ও দায়িত্বের লোভ করবে এবং কিয়ামতের দিন তা অনুতাপ ও অনুশোচনার কারণ হবে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه مرفوعا: إنكم ستحرصون على الإمارة وستكون ندامة يوم القيامة
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, অচিরেই তোমরা নেতৃত্বের প্রতি লালায়িত হবে। কথাটি যদিও বলা হয়েছে তাদের লক্ষ্য করে, কিন্তু এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য পরবর্তী উম্মতকে। কেননা সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন দুনিয়াবিমুখ। অর্থ-সম্পদ, পদ ও ক্ষমতা কোনওকিছুর প্রতি তাদের লোভ ছিল না। কাজেই তারা ক্ষমতার লোভ করবেন, এটা ভাবা যায় না। সুতরাং তিনি এ কথা বলেছিলেন মূলত পরবর্তীকালের লোক সম্পর্কে। এটা তাঁর এক ভবিষ্যদ্বাণী। তাঁর এ ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তীকালের মানুষ ঠিকই ক্ষমতার লোভে পড়ে গিয়েছিল। তারা তাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরে রাখেনি। ফলে তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয়ে যায়। সে অবক্ষয়ের ধারায় তারা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এমনকি তারা ক্ষমতার প্রতিও লালায়িত হয়ে ওঠে। ক্ষমতার দাবিতে একে অন্যের সঙ্গে হানাহানিতেও লিপ্ত হয়। অথচ ক্ষমতা এমন জিনিস নয়, যার জন্য লোভ করা যায়। কেননা এটা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের জন্য বহুবিধ ক্ষতির কারণ। আসল ক্ষতি তো আখিরাতের ক্ষতি। সে সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
وَسَتَكُوْنُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ (অথচ কিয়ামতের দিন তা হবে অনুতাপের কারণ)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নেতৃত্বের যোগ্য নয়, তা সত্ত্বেও নেতৃত্ব গ্রহণ করে, তারপর নেতৃত্বের দায়-দায়িত্ব পালনেও অবহেলা করে, কিয়ামতের দিন এ নেতৃত্ব তার জন্য অনুতাপের কারণ হবে। কেননা নেতৃত্ব গ্রহণ করতে গিয়ে যাদের হক নষ্ট করেছিল, তারপর নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর যাদের অধিকার খর্ব করেছিল, তাদের সমস্ত পাওনা কিয়ামতের দিন মিটিয়ে দিতে হবে। তা মেটাতে গিয়ে নিজের যতটুকু নেকী ছিল তা তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। তারপরও যা বাকি থাকবে, তার বদলে তাদের পাপসমূহ নিজ কাঁধে বহন করতে হবে। এভাবে তাকে পরিণামে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। এ তো হল আখিরাতের ক্ষতি। দুনিয়ায়ও নেতৃত্ব ও ক্ষমতা মানুষের নানা দুর্ভোগের কারণ হয়ে থাকে। এর কারণে মান-সম্মান নষ্ট হয়। ক্ষমতার পালাবদলে ক্ষমতাসীনদের জেল-জরিমানার শিকার হতে হয়। অনেক সময় প্রাণও বিসর্জন দিতে হয়। ফলে একসময় এহেন সর্বনাশা ক্ষমতার মোহে পড়ার দরুন অনুতপ্ত হতে হয়, আক্ষেপ করতে হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إنْ شِئتمْ أنبأتُكمْ عنِ الإمارةِ ، وما هِيَ ؟ أوَّلُها مَلامةٌ ، وثانِيها نَدامةٌ ، وثالِثُها عذابٌ يومَ القيامةِ ؛ إلَّا مَنْ عدَلَ
তোমরা চাও তো নেতৃত্ব কী তা তোমাদের বলে দিই! তার শুরুটা হল তিরস্কার, মাঝখানটায় অনুতাপ, তৃতীয় পর্যায়ে কিয়ামত দিবসের আযাব। তবে যে ব্যক্তি ন্যায় ও ইনসাফ করে, তার কথা আলাদা। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৩২; মুসনাদুল বাযযার: ২৭৫৬)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি লোভের বশবর্তী হয়ে ক্ষমতার মসনদে বসে, সে আল্লাহ তা'আলার সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে যথাযথভাবে দায়-দায়িত্ব পালন করতে পারে না। ফলে সে মানুষের কাছে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়। তারপর যখন ক্ষমতার পালাবদল হয় তখন কৃতকর্মের যে খেসারত দিতে হয়, সেজন্য তাকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হয়। পরিশেষে যখন পরকালীন বিচারের সম্মুখীন হতে হয়, তখন জাহান্নামের আযাব অবধারিত হয়ে যায়। তবে যে ব্যক্তি শাসনকার্য ও নেতৃত্ব পালনে ন্যায় ও ইনসাফের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়, সে এসব দুর্ভোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। সুতরাং এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
نِعْمَ الشَّيْءُ الإِمَارَةُ لِمَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا وَحِلّهَا ، وَبِئْسَ الشَّيْءُ الْإِمَارَةُ لِمَنْ أَخَذَهَا بِغَيْرِ حَقهَا فَتَكُوْنُ عَلَيْهِ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
নেতৃত্ব ওই ব্যক্তির জন্য বড় উত্তম বস্তু, যে তা ন্যায়ানুগভাবে ও বৈধ পন্থায় গ্রহণ করে। আবার নেতৃত্ব ওই ব্যক্তির জন্য বড় মন্দ বস্তু, যে ব্যক্তি তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে। ফলে কিয়ামতের দিন তার জন্য তা আক্ষেপের কারণ হবে। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৪৮৩১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
নেতৃত্ব ও ক্ষমতা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের জন্য ক্ষতিকর। তাই এর জন্য লোভ করতে নেই।
وَسَتَكُوْنُ نَدَامَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ (অথচ কিয়ামতের দিন তা হবে অনুতাপের কারণ)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নেতৃত্বের যোগ্য নয়, তা সত্ত্বেও নেতৃত্ব গ্রহণ করে, তারপর নেতৃত্বের দায়-দায়িত্ব পালনেও অবহেলা করে, কিয়ামতের দিন এ নেতৃত্ব তার জন্য অনুতাপের কারণ হবে। কেননা নেতৃত্ব গ্রহণ করতে গিয়ে যাদের হক নষ্ট করেছিল, তারপর নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর যাদের অধিকার খর্ব করেছিল, তাদের সমস্ত পাওনা কিয়ামতের দিন মিটিয়ে দিতে হবে। তা মেটাতে গিয়ে নিজের যতটুকু নেকী ছিল তা তাদেরকে দিয়ে দিতে হবে। তারপরও যা বাকি থাকবে, তার বদলে তাদের পাপসমূহ নিজ কাঁধে বহন করতে হবে। এভাবে তাকে পরিণামে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। এ তো হল আখিরাতের ক্ষতি। দুনিয়ায়ও নেতৃত্ব ও ক্ষমতা মানুষের নানা দুর্ভোগের কারণ হয়ে থাকে। এর কারণে মান-সম্মান নষ্ট হয়। ক্ষমতার পালাবদলে ক্ষমতাসীনদের জেল-জরিমানার শিকার হতে হয়। অনেক সময় প্রাণও বিসর্জন দিতে হয়। ফলে একসময় এহেন সর্বনাশা ক্ষমতার মোহে পড়ার দরুন অনুতপ্ত হতে হয়, আক্ষেপ করতে হয়। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إنْ شِئتمْ أنبأتُكمْ عنِ الإمارةِ ، وما هِيَ ؟ أوَّلُها مَلامةٌ ، وثانِيها نَدامةٌ ، وثالِثُها عذابٌ يومَ القيامةِ ؛ إلَّا مَنْ عدَلَ
তোমরা চাও তো নেতৃত্ব কী তা তোমাদের বলে দিই! তার শুরুটা হল তিরস্কার, মাঝখানটায় অনুতাপ, তৃতীয় পর্যায়ে কিয়ামত দিবসের আযাব। তবে যে ব্যক্তি ন্যায় ও ইনসাফ করে, তার কথা আলাদা। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৩২; মুসনাদুল বাযযার: ২৭৫৬)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি লোভের বশবর্তী হয়ে ক্ষমতার মসনদে বসে, সে আল্লাহ তা'আলার সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে যথাযথভাবে দায়-দায়িত্ব পালন করতে পারে না। ফলে সে মানুষের কাছে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়। তারপর যখন ক্ষমতার পালাবদল হয় তখন কৃতকর্মের যে খেসারত দিতে হয়, সেজন্য তাকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হয়। পরিশেষে যখন পরকালীন বিচারের সম্মুখীন হতে হয়, তখন জাহান্নামের আযাব অবধারিত হয়ে যায়। তবে যে ব্যক্তি শাসনকার্য ও নেতৃত্ব পালনে ন্যায় ও ইনসাফের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়, সে এসব দুর্ভোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। সুতরাং এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
نِعْمَ الشَّيْءُ الإِمَارَةُ لِمَنْ أَخَذَهَا بِحَقِّهَا وَحِلّهَا ، وَبِئْسَ الشَّيْءُ الْإِمَارَةُ لِمَنْ أَخَذَهَا بِغَيْرِ حَقهَا فَتَكُوْنُ عَلَيْهِ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
নেতৃত্ব ওই ব্যক্তির জন্য বড় উত্তম বস্তু, যে তা ন্যায়ানুগভাবে ও বৈধ পন্থায় গ্রহণ করে। আবার নেতৃত্ব ওই ব্যক্তির জন্য বড় মন্দ বস্তু, যে ব্যক্তি তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে। ফলে কিয়ামতের দিন তার জন্য তা আক্ষেপের কারণ হবে। (তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৪৮৩১)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
নেতৃত্ব ও ক্ষমতা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের জন্য ক্ষতিকর। তাই এর জন্য লোভ করতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
