ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৭. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬৩০
স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ার পাপ
(১৬৩০) আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করেন, কিন্তু সে অস্বীকার করে, ফলে স্বামী তার উপর ক্রোধান্বিত হয়ে রাত্রি কাটান তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশতাগণ ওই স্ত্রীকে অভিশাপ দিতে থাকেন। ( মুসলিমের অন্য বর্ণনায়: ‘তবে আসমানে যিনি আছেন তিনি তার উপর ক্রোধান্বিত থাকবেন, যতক্ষণ না স্বামী স্ত্রীর উপর সন্তুষ্ট হবেন')।
عن أبي هريرة رضي الله عنه مرفوعا: إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح... كان الذي في السماء ساخطا عليها حتى يرضى عنها

হাদীসের ব্যাখ্যা:

স্বামীর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীর বিছানায় আসতে অস্বীকৃতির বিষয়ে হাদীসে কঠিন ধমকি বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীসে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আর কোন কোন হাদীসে ফেরেশতাদের লানতের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যাইহোক ফিরিশতাদের এ লা'নত করা এবং আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণ হল শরীআতে বিবাহের বিধান যে উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, স্ত্রীর আচরণ তার পরিপন্থী। এ বিধানের একটি বড় উদ্দেশ্য জৈবচাহিদা পূরণ। ইসলাম মানুষের স্বভাবগত কোনও চাহিদাকেই সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেনি; বরং তা বৈধভাবে পূরণের ব্যবস্থা দান করেছে। পেটে ক্ষুধা লাগা একটি স্বভাবগত বিষয়। এর জন্য মানুষের খাদ্যচাহিদা দেখা দেয়। এ চাহিদা পূরণের জন্য চাইলে মানুষ যে-কোনও উপায়ই অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু শরীআত এ ব্যাপারে সীমারেখা টেনে দিয়েছে। কোনও উপায়কে বৈধ করেছে এবং কোনওটাকে অবৈধ বলেছে। মানুষের কর্তব্য অবৈধ উপায় পরিহার করে ক্ষুধা নিবারণের বৈধ উপায় অবলম্বন করা।

কামচাহিদার ব্যাপারটাও সেরকমই। এর জন্য নানা অবৈধ উপায় আছে, কিন্তু শরীআত তা হারাম করেছে। মানুষ যাতে বৈধ উপায়ে এ চাহিদা পূরণ করতে পারে, সে লক্ষ্যেই বিবাহের ব্যবস্থা দান করেছে। কাজেই স্ত্রী যদি স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়, তবে এটা হবে সে লক্ষ্যের পরিপন্থী। এ ক্ষেত্রে স্বামী হয়তো চাহিদা অবদমন করতে বাধ্য হবে, যা তার শরীরের উপর এক অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ। সে হিসেবে স্ত্রীর পক্ষ থেকে তার উপর একরকম জুলুম করা হবে। অন্যথায় স্বামী অবৈধ কোনও পন্থা অবলম্বন করবে। এতে যে গুনাহ হয়, বলাবাহুল্য তার দায় স্ত্রীর উপরও বর্তায়। এ কারণেই ফিরিশতাদের লা'নত ও আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি।

উল্লেখ্য, স্ত্রীর সাড়াদান না করাটা যদি ওজরবশত হয়, তবে স্বামীর কর্তব্য সে ওজর বিবেচনা করা। কারও কারও স্থায়ী ওজরও থাকে। সে ক্ষেত্রে যদি আরেকটি বিবাহের সামর্থ্য থাকে এবং স্বামীও তাতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তবে স্ত্রীর তাতে বাধা হওয়া সমীচীন নয়। স্বামীর যদি দ্বিতীয় বিবাহের সামর্থ্য না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে সে নিজেও মা'যূর বৈকি। তার কর্তব্য হবে সংযম অবলম্বন করা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্বামীর বিশেষ ডাকে সাড়া না দেওয়া স্ত্রীর জন্য গুরুতর পাপ। প্রত্যেক স্ত্রীর এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
ফিকহুস সুনান - হাদীস নং ১৬৩০ | মুসলিম বাংলা