আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৮- নামাযের ওয়াক্তের বিবরণ
হাদীস নং: ৫৪৭
আন্তর্জাতিক নং: ৫৭৪
৩৭৭। ফজরের নামাযের ফযীলত
৫৪৬। হুদবা ইবনে খালিদ (রাহঃ) ..... আবু বকর ইবনে আবু মুসা (রাহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) নামায আদায় করবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে।
ইবনে রাজা (রাহঃ) বলেন, হাম্মাম (রাহঃ) আবু জামরা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু বকর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স (রাহঃ) তাঁর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইসহাক (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
ইবনে রাজা (রাহঃ) বলেন, হাম্মাম (রাহঃ) আবু জামরা (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু বকর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স (রাহঃ) তাঁর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইসহাক (রাহঃ) ..... আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
باب فَضْلِ صَلاَةِ الْفَجْرِ
574 - حَدَّثَنَا هُدْبَةُ بْنُ خَالِدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنِي أَبُو جَمْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ صَلَّى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ» ،
وَقَالَ ابْنُ رَجَاءٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، أَنَّ أَبَا بَكْرِ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ أَخْبَرَهُ بِهَذَا، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا أَبُو جَمْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ
وَقَالَ ابْنُ رَجَاءٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، أَنَّ أَبَا بَكْرِ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ أَخْبَرَهُ بِهَذَا، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا أَبُو جَمْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَهُ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ঠাণ্ডাকালীন নামায বলে ফজর ও আসরের নামায বোঝানো হয়েছে। এ সময়দু'টি দিনের দুই প্রান্ত। এর মধ্যবর্তী সময় অপেক্ষা এ দুই সময়ে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে। সে হিসেবে এই দুই সময়কে ঠাণ্ডাকাল বলা হয়েছে। এ হাদীছে এ দুই সময়ের নামায পড়ার ফযীলত বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা জান্নাত লাভ হবে।
এ দুই সময়ের নামায অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাযের ফযীলত এত বেশি হওয়ার কারণ এই যে, তুলনামূলকভাবে এই দুই সময়ে নামায পড়া বেশি কঠিন। ফজরের সময় আবহাওয়া শীতল থাকায় এ সময় খুব মধুর ঘুম হয়। সেই ঘুম ছেড়ে নামাযের জন্য উঠে পড়া একটু কষ্টকরই বটে। নফস সহজে প্রস্তুত হতে চায় না। শয়তানও বাধা দেয়। তাই এ সময় নামায পড়তে হলে নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হতে হয়। সে জিহাদে যারা জিততে পারে তাদের পক্ষেই নামায পড়া সম্ভব হয়।
অনুরূপ আসরের নামায পড়তেও নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। কারণ এ সময়টি অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ততার। তখন দিনের কাজকর্ম সমাপ্ত করার চাপ থাকে। তা শেষ করতে না পারলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বলে নফস বোঝাতে থাকে। দুনিয়াবী ক্ষতিকে সাধারণত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শয়তান নানা বাহানা ও যুক্তি দাঁড় করাতে থাকে। তো নফস ও শয়তানের সেসব যুক্তি ও বাহানা উপেক্ষা করে কেবল সেই ব্যক্তিই নামাযে দাঁড়াতে পারে, যার ঈমান বড় মজবুত, যার নামাযের প্রতি মহব্বত আছে, যার আখিরাতে মুক্তিলাভের চিন্তা আছে, সর্বোপরি যার আছে আল্লাহর ভয় এবং তাঁর ভক্তি ও ভালোবাসা।
এ দুই নামাযে যেহেতু দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ ও আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় এবং নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধেও তুলনামূলক বেশি সংগ্রাম করতে হয়, তাই এর ছাওয়াবও তুলনামূলক বেশি। আবার অধিকতর ত্যাগ ও কষ্টস্বীকার সত্ত্বেও যখন এই দুই নামায আদায় করা হয়, তখন অন্যসব নামাযও যে অবশ্যই আদায় করা হবে তা তো বলাই বাহুল্য। কাজেই এ দুই নামাযে অধিকতর উৎসাহদান দ্বারা যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যত্নবান করে তোলারই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেননা যে ব্যক্তি এ দুই নামায ঠিকমত আদায় করবে, সে স্বাভাবিকভাবেই বাকি তিন নামাযও আদায় করবে। আর যখন কোনও ব্যক্তি পাঁচও নামায যথাযথভাবে আদায়ে যত্নবান থাকবে, তখন সে পুরো দীন ও শরী'আতের অনুসরণেই সচেষ্ট থাকবে। তার দ্বারা কোনও অন্যায় ও অপরাধ সহজে হবে না। নামায তো এমনই এক বিধান, যা তার আদায়কারীকে সমস্ত অন্যায় অপরাধ ও অশ্লীল কাজ থেকে হেফাজত করে।
যে ব্যক্তি পূর্ণ দীন ও শরী'আতের উপর চলবে তার পুরস্কার তো জান্নাতই। তো এ মহাপুরস্কার লাভে প্রধান ভূমিকা যে আমলের তা হচ্ছে ফজর ও আসরের নামায। সে কারণেই হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ দুই নামায আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আশা করি এ বিষয়টা বুঝে আসার পর কারও মনে এই প্রশ্ন জাগবে না যে, কেবল দুই ওয়াক্তের নামায পড়লেই জান্নাত পাওয়া যাবে, বাকি সব নামায পড়তে হবে না? তা পড়তে হবে অবশ্যই। কেননা তাও ফরয। শুধু এতটুকু কথা যে, এ দুই ওয়াক্ত আদায় করলে বাকিগুলো আদায় করা সহজ হয়ে যায়। আর সে কারণেই এই দুই ওয়াক্তের এত ছাওয়াব ও এত গুরুত্ব।
এ দুই ওয়াক্তের ফযীলত সম্পর্কে এছাড়া আরও হাদীছ আছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
إنكم سترون ربكم كما ترون هذا القمر لا تُضامون في رؤيته، فإن استطعتم ألا تغلبوا على صلاة قبل طلوع الشمس وقبل غروبها فافعلوا
“নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে, যেমন দেখে থাক এই চাঁদ, যা দেখতে তোমাদের পরস্পরে ভীড়ের মুখে পড়তে হয় না। সুতরাং (তোমরা যদি আল্লাহর দীদার লাভ করতে চাও, তবে) সূর্যোদয়ের আগের নামায ও সূর্যাস্তের আগের নামায যথাসম্ভব আদায়ে সচেষ্ট থাকবে।” সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৫৪, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৬৩৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৭২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৫৫১.
বিশেষভাবে আসরের নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ-
حافظوا على الصلوات والصلاة الوسطى
অর্থ : তোমরা নামাযসমূহের প্রতি পুরোপুরি যত্নবান থেক এবং (বিশেষভাবে)মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি।সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৮.
হাদীছে আসরের নামাযকেই মধ্যবর্তী নামায বলা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছের দাবি হচ্ছে ফজর ও আসরের নামায আদায়ের প্রতি অধিকতর যত্নবান থাকা।
খ. ফজরের আরামের ঘুম ছেড়ে উঠতে যতই কষ্টবোধ হোক, জান্নাতপ্রত্যাশীর অবশ্যকর্তব্য সে কষ্ট উপেক্ষা করে নামায আদায়ের জন্য উঠে পড়া।
গ. আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত যাতে কাজ গোছানোর ব্যস্ততায় আসরের জামাত ছুটে না যায়।
এ দুই সময়ের নামায অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাযের ফযীলত এত বেশি হওয়ার কারণ এই যে, তুলনামূলকভাবে এই দুই সময়ে নামায পড়া বেশি কঠিন। ফজরের সময় আবহাওয়া শীতল থাকায় এ সময় খুব মধুর ঘুম হয়। সেই ঘুম ছেড়ে নামাযের জন্য উঠে পড়া একটু কষ্টকরই বটে। নফস সহজে প্রস্তুত হতে চায় না। শয়তানও বাধা দেয়। তাই এ সময় নামায পড়তে হলে নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হতে হয়। সে জিহাদে যারা জিততে পারে তাদের পক্ষেই নামায পড়া সম্ভব হয়।
অনুরূপ আসরের নামায পড়তেও নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়। কারণ এ সময়টি অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ততার। তখন দিনের কাজকর্ম সমাপ্ত করার চাপ থাকে। তা শেষ করতে না পারলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বলে নফস বোঝাতে থাকে। দুনিয়াবী ক্ষতিকে সাধারণত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শয়তান নানা বাহানা ও যুক্তি দাঁড় করাতে থাকে। তো নফস ও শয়তানের সেসব যুক্তি ও বাহানা উপেক্ষা করে কেবল সেই ব্যক্তিই নামাযে দাঁড়াতে পারে, যার ঈমান বড় মজবুত, যার নামাযের প্রতি মহব্বত আছে, যার আখিরাতে মুক্তিলাভের চিন্তা আছে, সর্বোপরি যার আছে আল্লাহর ভয় এবং তাঁর ভক্তি ও ভালোবাসা।
এ দুই নামাযে যেহেতু দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ ও আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয় এবং নফস ও শয়তানের বিরুদ্ধেও তুলনামূলক বেশি সংগ্রাম করতে হয়, তাই এর ছাওয়াবও তুলনামূলক বেশি। আবার অধিকতর ত্যাগ ও কষ্টস্বীকার সত্ত্বেও যখন এই দুই নামায আদায় করা হয়, তখন অন্যসব নামাযও যে অবশ্যই আদায় করা হবে তা তো বলাই বাহুল্য। কাজেই এ দুই নামাযে অধিকতর উৎসাহদান দ্বারা যেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যত্নবান করে তোলারই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেননা যে ব্যক্তি এ দুই নামায ঠিকমত আদায় করবে, সে স্বাভাবিকভাবেই বাকি তিন নামাযও আদায় করবে। আর যখন কোনও ব্যক্তি পাঁচও নামায যথাযথভাবে আদায়ে যত্নবান থাকবে, তখন সে পুরো দীন ও শরী'আতের অনুসরণেই সচেষ্ট থাকবে। তার দ্বারা কোনও অন্যায় ও অপরাধ সহজে হবে না। নামায তো এমনই এক বিধান, যা তার আদায়কারীকে সমস্ত অন্যায় অপরাধ ও অশ্লীল কাজ থেকে হেফাজত করে।
যে ব্যক্তি পূর্ণ দীন ও শরী'আতের উপর চলবে তার পুরস্কার তো জান্নাতই। তো এ মহাপুরস্কার লাভে প্রধান ভূমিকা যে আমলের তা হচ্ছে ফজর ও আসরের নামায। সে কারণেই হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ দুই নামায আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আশা করি এ বিষয়টা বুঝে আসার পর কারও মনে এই প্রশ্ন জাগবে না যে, কেবল দুই ওয়াক্তের নামায পড়লেই জান্নাত পাওয়া যাবে, বাকি সব নামায পড়তে হবে না? তা পড়তে হবে অবশ্যই। কেননা তাও ফরয। শুধু এতটুকু কথা যে, এ দুই ওয়াক্ত আদায় করলে বাকিগুলো আদায় করা সহজ হয়ে যায়। আর সে কারণেই এই দুই ওয়াক্তের এত ছাওয়াব ও এত গুরুত্ব।
এ দুই ওয়াক্তের ফযীলত সম্পর্কে এছাড়া আরও হাদীছ আছে। যেমন এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ-
إنكم سترون ربكم كما ترون هذا القمر لا تُضامون في رؤيته، فإن استطعتم ألا تغلبوا على صلاة قبل طلوع الشمس وقبل غروبها فافعلوا
“নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে, যেমন দেখে থাক এই চাঁদ, যা দেখতে তোমাদের পরস্পরে ভীড়ের মুখে পড়তে হয় না। সুতরাং (তোমরা যদি আল্লাহর দীদার লাভ করতে চাও, তবে) সূর্যোদয়ের আগের নামায ও সূর্যাস্তের আগের নামায যথাসম্ভব আদায়ে সচেষ্ট থাকবে।” সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৫৪, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৬৩৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ নং ৪৭২৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৫৫১.
বিশেষভাবে আসরের নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছেঃ-
حافظوا على الصلوات والصلاة الوسطى
অর্থ : তোমরা নামাযসমূহের প্রতি পুরোপুরি যত্নবান থেক এবং (বিশেষভাবে)মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি।সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৮.
হাদীছে আসরের নামাযকেই মধ্যবর্তী নামায বলা হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছের দাবি হচ্ছে ফজর ও আসরের নামায আদায়ের প্রতি অধিকতর যত্নবান থাকা।
খ. ফজরের আরামের ঘুম ছেড়ে উঠতে যতই কষ্টবোধ হোক, জান্নাতপ্রত্যাশীর অবশ্যকর্তব্য সে কষ্ট উপেক্ষা করে নামায আদায়ের জন্য উঠে পড়া।
গ. আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত যাতে কাজ গোছানোর ব্যস্ততায় আসরের জামাত ছুটে না যায়।


বর্ণনাকারী: