ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার
৩. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১০৭৮
মৃত্যুর স্মরণ করার মর্যাদা
(১০৭৮) আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা আনন্দ-ধ্বংসকারীর (মৃত্যুর) কথা বেশী বেশী স্মরণ করবে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه مرفوعا: أكثروا ذكر هاذم اللذات
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে বলা হয়েছে। মৃত্যুকে বলা হয়েছে স্বাদ-আহ্লাদ বিনাশকারী। অতিরিক্ত আনন্দ-ফুর্তি ও স্বাদ-আহ্লাদ ঈমান-আমলের পক্ষে নেহাৎ ক্ষতিকর। তাই ঈমান-আমল রক্ষার তাগিদে এর থেকে বাঁচা দরকার। তা বাঁচা সম্ভব মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করার দ্বারা।
কেউ যখন আনন্দ-ফুর্তিতে থাকে, তখন যদি কারও মৃত্যুসংবাদ আসে, তবে মুহূর্তের মধ্যে অন্তর থেকে আনন্দ-ফুর্তি উবে যায়। আর তা যদি কোনও প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ হয়, তবে আনন্দের স্থানে বিষাদ ছেয়ে যায়। মানুষের কাছে নিজ প্রাণই সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। ফুর্তির সময় যদি সেই প্রাণ মালাকুল মাওতের কবজায় চলে যাওয়ার কথা স্মরণ হয়ে যায়, তবে এক মুহূর্তও সে ফুর্তি বাকি থাকতে পারে না।
বেশি আনন্দ-ফুর্তি মানুষের মন শক্ত করে দেয়। শক্ত মন ফুর্তিভরে পাপকর্মে লিপ্ত হয়। নরম মনের মানুষ পাপ করলেও ভয়-ভীতির সঙ্গে করে। কিন্তু শক্ত মনের মানুষ তা করে স্পর্ধার সঙ্গে। তাই মন যাতে শক্ত না হতে পারে, সে লক্ষ্যে ফুর্তিনাশা মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা চাই। তা স্মরণ করতে হবে মনে মনেও এবং মুখেও। মুখে পরস্পরে মৃত্যুর আলোচনা করলে তার সুফল বেশি পাওয়া যায়। যে অন্তরে মৃত্যুচিন্তা জাগ্রত থাকে, সে অন্তর সহজে পাপকর্মের দিকে ঝুঁকবে না; বরং ইবাদত-আনুগত্য করতেই বেশি আগ্রহী হবে।
একদিন আয়ু ফুরিয়ে যাবে। মালাকুল মাওত এসে প্রাণ সংহার করবে। আমার চেয়ে অল্প বয়সেরও বহু লোককে ইহজগৎ ত্যাগ করতে হয়েছে। আমার সমবয়সী অনেকেও এ জগৎ ছেড়ে চলে গেছে। আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে। মৃত্যু থেকে রেহাই নেই কারও। মৃত্যুর যন্ত্রণা বড় কঠিন যন্ত্রণা। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ
মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যিই আসবে।(সূরা কাফ (৫০), আয়াত ১৯)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَات
নিশ্চয়ই মৃত্যুর আছে অনেক যন্ত্রণা।(সহীহ বুখারী: ৪৪৪৯)
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, মৃত্যুর সর্বাপেক্ষা লঘু যন্ত্রণা তরবারির একশটি আঘাতের সমান। এ যদি হয় লঘু যন্ত্রণা, তবে কঠিন যন্ত্রণা কেমন! হযরত উমর রাযি. মৃত্যুযন্ত্রণা সম্পর্কে হযরত কা'ব ইবন উবাঈ রাযি.-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! মৃত্যু হল আদমসন্তানের উদরে বিপুল কাঁটাযুক্ত একটা গাছের মতো। যে কাঁটাগুলো তার প্রতিটি শিরা ও প্রতিটি জোড়ায় বিদ্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় প্রচণ্ড বাহুবলসম্পন্ন এক ব্যক্তি সেই গাছটি ধরে টেনে বের করছে (এবার ভাবুন এতে সে ব্যক্তির কেমন কষ্ট হবে? মৃত্যুযন্ত্রণা এরকমই)। এ কথা শুনে হযরত উমর রাযি. কাঁদতে থাকলেন (আল্লাহ তা'আলা আমাদের সে যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করুন)।
সুস্থ-অসুস্থ প্রত্যেকের মৃত্যু সম্পর্কে এসব কথা নিয়মিত ভাবা উচিত। নিয়মিত ভাবতে থাকলে অন্তরে এ চিন্তা বসে যাবে। ফলে প্রতিটি কথা ও কাজ এ চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। মৃত্যুচিন্তা ধনীর ধনের দর্প চূর্ণ করে। মৃত্যুর পাশে বিপুল ধনকেও বড় অল্প মনে হয়, বড় তুচ্ছ মনে হয়। মৃত্যুচিন্তা দরিদ্রকে তার দারিদ্র্যে তুষ্ট রাখে। তাকে লোভী হতে দেয় না। মৃত্যুচিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে সর্বস্তরের মানুষকে। সুতরাং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও শরী'আতের অনুসরণ করার পক্ষে মৃত্যুচিন্তা সর্বাপেক্ষা বেশি সহায়ক। সে কারণেই এ হাদীছ আমাদেরকে মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে বলেছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এ হাদীছের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অতিরিক্ত আনন্দ-ফুর্তি ঈমান-আমলের পক্ষে ক্ষতিকর।
খ. আনন্দ-ফুর্তির সীমালঙ্ঘন রোধে মৃত্যুচিন্তা খুব কার্যকর।
গ. কখনও-সখনও নয়; বরং বেশি বেশি পরিমাণে মৃত্যুর কথা চিন্তা করতে হবে।
কেউ যখন আনন্দ-ফুর্তিতে থাকে, তখন যদি কারও মৃত্যুসংবাদ আসে, তবে মুহূর্তের মধ্যে অন্তর থেকে আনন্দ-ফুর্তি উবে যায়। আর তা যদি কোনও প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ হয়, তবে আনন্দের স্থানে বিষাদ ছেয়ে যায়। মানুষের কাছে নিজ প্রাণই সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। ফুর্তির সময় যদি সেই প্রাণ মালাকুল মাওতের কবজায় চলে যাওয়ার কথা স্মরণ হয়ে যায়, তবে এক মুহূর্তও সে ফুর্তি বাকি থাকতে পারে না।
বেশি আনন্দ-ফুর্তি মানুষের মন শক্ত করে দেয়। শক্ত মন ফুর্তিভরে পাপকর্মে লিপ্ত হয়। নরম মনের মানুষ পাপ করলেও ভয়-ভীতির সঙ্গে করে। কিন্তু শক্ত মনের মানুষ তা করে স্পর্ধার সঙ্গে। তাই মন যাতে শক্ত না হতে পারে, সে লক্ষ্যে ফুর্তিনাশা মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা চাই। তা স্মরণ করতে হবে মনে মনেও এবং মুখেও। মুখে পরস্পরে মৃত্যুর আলোচনা করলে তার সুফল বেশি পাওয়া যায়। যে অন্তরে মৃত্যুচিন্তা জাগ্রত থাকে, সে অন্তর সহজে পাপকর্মের দিকে ঝুঁকবে না; বরং ইবাদত-আনুগত্য করতেই বেশি আগ্রহী হবে।
একদিন আয়ু ফুরিয়ে যাবে। মালাকুল মাওত এসে প্রাণ সংহার করবে। আমার চেয়ে অল্প বয়সেরও বহু লোককে ইহজগৎ ত্যাগ করতে হয়েছে। আমার সমবয়সী অনেকেও এ জগৎ ছেড়ে চলে গেছে। আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে। মৃত্যু থেকে রেহাই নেই কারও। মৃত্যুর যন্ত্রণা বড় কঠিন যন্ত্রণা। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ
মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যিই আসবে।(সূরা কাফ (৫০), আয়াত ১৯)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَات
নিশ্চয়ই মৃত্যুর আছে অনেক যন্ত্রণা।(সহীহ বুখারী: ৪৪৪৯)
কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, মৃত্যুর সর্বাপেক্ষা লঘু যন্ত্রণা তরবারির একশটি আঘাতের সমান। এ যদি হয় লঘু যন্ত্রণা, তবে কঠিন যন্ত্রণা কেমন! হযরত উমর রাযি. মৃত্যুযন্ত্রণা সম্পর্কে হযরত কা'ব ইবন উবাঈ রাযি.-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! মৃত্যু হল আদমসন্তানের উদরে বিপুল কাঁটাযুক্ত একটা গাছের মতো। যে কাঁটাগুলো তার প্রতিটি শিরা ও প্রতিটি জোড়ায় বিদ্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় প্রচণ্ড বাহুবলসম্পন্ন এক ব্যক্তি সেই গাছটি ধরে টেনে বের করছে (এবার ভাবুন এতে সে ব্যক্তির কেমন কষ্ট হবে? মৃত্যুযন্ত্রণা এরকমই)। এ কথা শুনে হযরত উমর রাযি. কাঁদতে থাকলেন (আল্লাহ তা'আলা আমাদের সে যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করুন)।
সুস্থ-অসুস্থ প্রত্যেকের মৃত্যু সম্পর্কে এসব কথা নিয়মিত ভাবা উচিত। নিয়মিত ভাবতে থাকলে অন্তরে এ চিন্তা বসে যাবে। ফলে প্রতিটি কথা ও কাজ এ চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। মৃত্যুচিন্তা ধনীর ধনের দর্প চূর্ণ করে। মৃত্যুর পাশে বিপুল ধনকেও বড় অল্প মনে হয়, বড় তুচ্ছ মনে হয়। মৃত্যুচিন্তা দরিদ্রকে তার দারিদ্র্যে তুষ্ট রাখে। তাকে লোভী হতে দেয় না। মৃত্যুচিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে সর্বস্তরের মানুষকে। সুতরাং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও শরী'আতের অনুসরণ করার পক্ষে মৃত্যুচিন্তা সর্বাপেক্ষা বেশি সহায়ক। সে কারণেই এ হাদীছ আমাদেরকে মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে বলেছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এ হাদীছের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অতিরিক্ত আনন্দ-ফুর্তি ঈমান-আমলের পক্ষে ক্ষতিকর।
খ. আনন্দ-ফুর্তির সীমালঙ্ঘন রোধে মৃত্যুচিন্তা খুব কার্যকর।
গ. কখনও-সখনও নয়; বরং বেশি বেশি পরিমাণে মৃত্যুর কথা চিন্তা করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
