মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

২৮. কিয়ামতের আলামত ও জান্নাতের গুণাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২৩
কিয়ামত ও জান্নাতের গুণাবলী অধ্যায়
হাদীস নং-৫২৩

হযরত উম্মে হানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ্ তা'আলা বেহেশতের মধ্যে মিশ্ক-আম্বরের এক শহর তৈরী করেছেন, যার পানি হলো সুমিষ্ট ও সুপেয় বৃক্ষসমূহ হবে নূরের তৈরী, সেখানে থাকবে অপূর্ব সুন্দরী হুরগণ, যাদের সত্তরটি করে চুলের গোছা হবে। এদের মধ্যে যদি একজনও দুনিয়াতে নূর বিকীরণ করে, তা হলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত আলোয় আলোকিত হয়ে যাবে এবং নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের মধ্যবর্তী স্থানে তাদের সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়বে। লোকজন আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল। এগুলো কাদের জন্য ? আঁ হযরত (ﷺ) বললেন: যারা কর্জ আদায়ের ব্যাপারে একটু সহজ ও সহানুভূতিশীল হয়।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, হুযূর (ﷺ) বলেছেন: বেহেশতে এ হুরদের মধ্যে যদি একজন ভূপৃষ্ঠে আগমণ করে, তা হলে এর পূর্ব থেকে পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থান সম্পূর্ণ আলোকময় হয়ে উঠবে এবং নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের মধ্যবর্তী স্থান তার সুগন্ধে সুবাসিত হয়ে যাবে।
অপর এক রিওয়ায়েতে আছে, হযরত উম্মে হানী (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : আল্লাহ তা'আলা মিশক-আম্বর দ্বারা একটি শহর তৈরী করেছেন যা আরশের নীচে লটকানো অবস্থায় আছে। এর বৃক্ষসমূহ নূরের তৈরী, পানি হলো সুমিষ্ট। এতে রক্ষিত ‍হুরগণ বেহেশতের ঘাস থেকে তৈরী। এদের প্রত্যেকের সত্তরটি করে চুলের বেণী বা গুচ্ছ হবে। যদি তাদের মধ্যে একজনকে পূর্ণ দিগন্তে লটকিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তা পশ্চিম দিগন্তের সমস্ত কিছুই আলোকময় করে দেবে।
عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ لِلَّهِ مَدِينَةً خُلِقَتْ مِنْ مِسْكٍ أَذْفَرَ، مَاؤُهَا السَّلْسَبِيلُ، وَشَجَرُهَا مِنْ نُورٍ، فِيهَا حُورٌ حِسَانٌ عَلَى كُلِّ وَاحِدَةٍ سَبْعُونَ ذُؤَابَةً، لَوْ أَنَّ وَاحِدَةً مِنْهَا أَشْرَقَتْ فِي الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، وَلَمَلَأَتْ مِنْ طِيبِ رِيحِهَا مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لِمَنْ هَذَا؟ قَالَ: لِمَنْ كَانَ سَمْحًا فِي التَّقَاضِي "، وَفِي رِوَايَةٍ، قَالَ: «لَوْ أَنَّ وَاحِدَةً مِنَ الْحُورِ الْعِينِ أَشْرَفَتْ، لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، وَلَمَلَأَتْ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ مِنْ طِيبِهَا» .
وَفِي رِوَايَةٍ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ مَدِينَةً خُلِقَتْ مِنْ مِسْكٍ أَذْفَرَ، مُعَلَّقَةً تَحْتَ الْعَرْشِ، وَشَجَرُهَا مِنْ نُورٍ، وَمَاؤُهَا السَّلْسَبِيلُ، وَحُورُ عِينِهَا خُلِقَتْ مِنْ بَنَاتِ الْجِنَانِ، عَلَى كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ سَبْعُونَ ذُؤَابَةً، لَوْ أَنَّ وَاحِدَةً مِنْهُنَّ عُلِّقَتْ فِي الْمَشْرِقِ، لَأَضَاءَتْ أَهْلَ الْمَغْرِبِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বেহেশত ও বেহেশতের সৃষ্টি সম্পর্কে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। খতীব ও তাঁর তারীখে বোগদাদীর মধ্যে হযরত আনাস (রা) থেকে মরফূ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, হুরগণকে জাফরান দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তিবরানী কবীরে একই ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইব্ন মারদুবীয়া হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, ফিরিশতাগণের তাসবীহ থেকে হুরগণের সৃষ্টি হয়েছে। তিবরানী হযরত সাঈদ ইব্ন আমির (রা) থেকে মরফু হাদীস বর্ণনা করেন, যদি বেহেশতের নারীদের (হুরগণের) মধ্য হতে কোন নারী (হুর) ভূপৃষ্ঠে স্বীয় আলো ফেলে, তা হলে ভূপৃষ্ঠ মিশকের সুগন্ধে ভরপুর হয়ে যাবে এবং চন্দ্র-সূর্য স্বীয় আলো ত্যাগ করবে।
ইমাম গাযালী (র) মিনহাজুল আবেদীন গ্রন্থে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন, একবার সুফয়ান সওরীর কোন ছাত্র তাঁকে বললেনঃ হযরত! আপনি দীনি মাসায়েলের বিশ্লেষণ ও গবেষণার কাজে এমন গভীরভাবে নিয়োজিত থাকেন যে, আপনার বাহ্যিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করলে আপনার জন্য আফসোস হয়। যদি আপনি পরিশ্রম একটু হ্রাস করেন এবং দীনি গবেষণার কাজ সামান্য কম করেন, তাহলেও আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান অনুযায়ী কাজ চলবে। তখন তিনি বললেন : কেন আমি আমার জীবন ইলমের গবেষণার ব্যয় করব না, যখন এ বিষয় সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস আমি জ্ঞাত হয়েছি যে, বেহেশতবাসী তাদের জন্য নির্ধারিত বেহেশতে অবস্থান করবে, তখন হঠাৎ বিরাট এক নূরের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়বে, যার ফলে আটটি বেহেশত আলোকময় হয়ে পড়বে। অনিবার্য কারণে বেহেশতবাসী এ ধারণা করবে যে, এটা আল্লাহ্ তা'আলার নূরের দ্যুতি। সুতরাং সবাই এর সামনে মাথা নত করে সিজদা করবে। তখন অদৃশ্য থেকে আওয়ায হবে যে, তোমরা নিজেদের মাথা উঠাও, ধোকা খেও না। এটা প্রভুর নূর নয়, এটা হলো বেহেশতের এক হুরের দ্যুতি যে তার স্বামীর সামনে হেসে দিয়েছিল। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে বেহেশতে যাওয়ার তৌফিক দিন। আমীন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান