মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

২৫. ফিতনাসমূহের বিবরণ

হাদীস নং: ৪৯৮
ফিতনার বিবরণ
হাদীস নং- ৪৯৮

আবুল জুল্লাস (রাহঃ) বলেন, আমি ঐ সমস্ত লোকজনের মধ্যে ছিলাম যারা আব্দুল্লাহ ইব্ন সাবাঈ থেকে এক ভয়াবহ কথা শুনেছি। আমরা তাকে আলী (রাযিঃ)-এর নিকট নিয়ে আসি। পথে তার গর্দানে আমরা কিছু চড়-থাপ্পড়ও দিয়েছি। আমরা হযরত আলী (রাযিঃ)-কে মসজিদের আঙ্গিনায় এক পা-এর উপর অপর পা দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে পাই। তিনি সাবাঈকে তার প্রচারিত কথা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সে তার কথা পুনরায় ব্যক্ত করে। তখন হযরত আলী (রাযিঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করছ? (অর্থাৎ ওহীর মাধ্যমে তুমি এটা অবগত হয়েছ যে, যেন তুমি নিজকে নবী হিসেবেই জেনেছ) অথবা আল্লাহর কিতার থেকে অথবা আল্লাহর রাসূল থেকে? সে বলল, না। তখন হযরত আলী (রাযিঃ) বললেন: তা হলে তুমি কার থেকে এটা বর্ণনা করছ? সে বলল, নিজের থেকে। তখন তিনি বললেন : যদি তুমি এটা বর্ণনা করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা আল্লাহর কিতাব থেকে অথবা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে, তা হলে আমি তোমাকে হত্যা করতাম। আর যদি এ ব্যাপারে আমার দিকে ইঙ্গিত বা আরোপ করতে, তা হলে আমি তোমাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করতাম। তখন তুমি হতে মিথ্যাবাদী। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে এবং তুমি তাদের মধ্যে একজন।
অন্য রিওয়ায়েতে আবুল জুল্লাস (রাহঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন: আমি ঐ সমস্ত লোকের মধ্যে একজন যারা আব্দুল্লাহ ইব্ন সাবাঈ থেকে মারাত্মক ও ভয়াবহ কথা শুনেছি। তখন আমরা তাকে হযরত আলী (রাযিঃ)-এর নিকট ধরে নিয়ে আসি। আমরা তাঁকে মসজিদের আঙ্গিনায় এক পা-এর উপর অন্য পা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখতে পাই। হযরত আলী (রাযিঃ) তাকে তার তার প্রচারিত কথা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে তার কথা পুনরায় ব্যক্ত করল। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এটা আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে বর্ণনা করছ (অর্থাৎ তুমি কি এটা ওহীর মাধ্যমে অবগত হয়েছ) অথবা আল্লাহর কিতাব থেকে পবিত্র কুরআনের উপর বাড়াবাড়ি করছ) অথবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে (আঁ হযরত (ﷺ)-এর উপর দোষারোপ করে)? সে বলল, না। তখন হযরত আলী (রাযিঃ) বললেন তাহলে কার কাছ থেকে এ কথা বর্ণনা করছ? সে বলল, নিজের মন থেকে। তখন তিনি বললেনঃ যদি তুমি বর্ণনার দাবি করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা তাঁর কিতাব থেকে অথবা তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে, তা হলে আমি তোমার গর্দান দ্বিখণ্ডিত করতাম। আর যদি তুমি এ কথা আমার দিকে আরোপ করতে, তাহলে তোমাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করতাম এবং তুমি মিথ্যাবাদী বলে প্রচারিত হতে (অর্থাৎ সাক্ষীর যোগ্য হতে পারতে না)। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এটা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের পূর্বে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে এবং তুমিই তাদের মধ্যে একজন।
عَنِ الْحَارِثِ، عَنْ أَبِي الْجُلَاسِ، قَالَ: كُنْتُ مِمَّنْ سَمِعَ مِنْ عَبْدِ اللهِ السَّبَائِيِّ كَلَامًا عَظِيْمًا، فَأَتَيْنَا بِهِ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، وَنَحْنُ نَهُزُّ عُنُقَهُ فِيْ طَرِيْقِهِ، فَوَجَدْنَاهُ فِي الرَّحْبَةِ، مُسْتَلْقِيًا عَلَى ظَهْرِهِ، وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى، فَسَأَلَهُ عَنِ الْكَلَامِ، فَتَكَلَّمَ بِهِ، فَقَالَ: أَتَرْوِيْهِ عَنِ اللهِ تَعَالَى، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ، فَقَالَ: لَا: فَعَنْ مَا تَرْوِيْ؟ قَالَ: عَنْ نَفْسِيْ، قَالَ: أَمَا إِنَّكَ لَوْ رَوَيْتَ عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ ضَرَبْتُ عُنُقَكَ، وَلَوْ رَوَيْتَهُ عَنِّيْ أَوْ جَعْتُكَ عُقُوْبَةً، فَكُنْتَ كَاذِبًا، وَلَكِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ [ص: 539] صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ: «بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ ثَلَاثُوْنَ كَذَّابًا، وَأَنْتَ مِنْهُمْ».
وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ أَبِي الْجُلَاسِ، قَالَ: كُنْتُ فِيْمَنْ سَمِعَ مِنْ عَبْدِ اللهِ السَّبَائِيِّ كَلَامًا عَظِيْمًا، فَأَتَيْنَا بِهِ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، فَوَجَدْنَاهُ فِي الرَّحْبَةِ، مُسْتَلْقِيًا عَلَى ظَهْرِهِ، وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى، فَسَأَلَهُ عَنِ الْكَلَامِ، فَتَكَلَّمَ، فَقَالَ: أَتَرْوِيْهِ عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَعَنْ مَنْ تَرْوِيْهِ؟ قَالَ: عَنْ نَفْسِيْ، قَالَ: أَمَا إِنَّكَ لَوْ رَوَيْتَ عَنِ اللهِ تَعَالَى، أَوْ عَنْ كِتَابِهِ، أَوْ عَنْ رَسُوْلِهِ ضَرَبْتُ عُنُقَكَ، وَلَوْ رَوَيْتَ عَنِّيْ أَوْ جَعْتُكَ عُقُوْبَةً، فَكُنْتَ كَاذِبًا، وَلَكِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ: «بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ ثَلَاثُوْنَ كَذَّابًا، فَأَنْتَ مِنْهُمْ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীসের মধ্যে মিথ্যাবাদীদের ব্যাখ্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রিশজন উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে তিরমিযী শরীফে একই বিষয়ে বর্ণিত আছে, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। প্রত্যেকেই এ দাবি করবে যে, সে আল্লাহর নবী। হযরত সাওবান (রা)-এর বর্ণনায় পূর্ণ ত্রিশজনের সংখ্যা এসেছে। কোন কোন রিওয়ায়েতে, যেমন ইমাম আহমদের রিওয়ায়েতে মিথ্যাবাদীদের সংখ্যা ত্রিশ উল্লেখ করা হয়েছে। তিবরানীর রিওয়ায়েতে সত্তরজনের কথা বলা হয়েছে। তবে এরদ্বারা মূলত অধিক সংখ্যক বুঝানো হয়েছে, কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান