মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১৮. ফযীলত ও সম্মানের বর্ণনা
হাদীস নং: ৩৮৮
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উম্মতের ফীলত
হাদীস নং-৩৮৮
হযরত আবু বুরদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন : কিয়ামতের দিন সমস্ত লোকজনকে সিজদার জন্য আহবান করা হবে। কাফিরগণ সিজদা করার শক্তি পাবে না। সমস্ত উম্মতের মধ্যে আমার উম্মতগণ দু'টি দীর্ঘ সিজদা করবে। তিনি বলেন : আমার উম্মতগণকে বলা হবে, মাথা উঠাও। আমি নিশ্চয়ই তোমাদের শত্রু ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদেরকে তোমাদের পরিবর্তে অগ্নির (দোযখের) জন্য বদল করে দিয়েছি।
হযরত আবু বুরদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন : কিয়ামতের দিন সমস্ত লোকজনকে সিজদার জন্য আহবান করা হবে। কাফিরগণ সিজদা করার শক্তি পাবে না। সমস্ত উম্মতের মধ্যে আমার উম্মতগণ দু'টি দীর্ঘ সিজদা করবে। তিনি বলেন : আমার উম্মতগণকে বলা হবে, মাথা উঠাও। আমি নিশ্চয়ই তোমাদের শত্রু ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদেরকে তোমাদের পরিবর্তে অগ্নির (দোযখের) জন্য বদল করে দিয়েছি।
عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ أَنْ يَسْجُدُوا، سَجَدَتْ أُمَّتِي مَرَّتَيْنِ قَبْلَ الْأُمَمِ طَوِيلًا، قَالَ: فَيُقَالُ: ارْفَعُوا رُءُوسَكُمْ، فَقَدْ جَعَلْتُ عَدْلَكُمُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى فِدَاءَكُمْ مِنَ النَّارِ "
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. এটা হলো ইহকাল ও পরকালের সর্দার হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা)-এর প্রতি সদকা। আল্লাহ্ তা'আলা এ সম্মানের দ্বারা তাঁর উম্মতকে গৌরবান্বিত করেছেন যে, তাদের দুশমন আহলি কিতাব তথা ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে তিনি তাদের পরিবর্তে দোযখের জন্য নির্বাচন করেছেন।
২. অন্য এক হাদীছে আছে-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، أَعْطى الله كُلَّ رَجُلٍ مِنْ هَذِه الأمة رَجُلاً مِن الكفار، فيقال له هذَا فِداؤُكَ مِنَ النَّارِ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা এ উম্মতের প্রত্যেককে একজন করে কাফের দেবেন। তারপর বলা হবে, এ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ।
অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির বিনিময়ে সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং মুসলিম ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে জান্নাত দান করা হবে। কী এ কথার অর্থ? ইমাম নববী রহ. বলেন, প্রত্যেক মুসলিমকে যে একজন ইহুদী বা একজন খৃষ্টান দিয়ে বলা হবে এ হল জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ, এর অর্থ হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত একটি হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে-
مَا مِنكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا لَهُ مَنزِلَانِ مَنْزِل فِي الْجَنَّةِ، وَمَنْزِل فِي النَّارِ، فَإِذَا مَاتَ، فَدَخَلَ النَّارَ، وَرِثَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنْزِلَهُ، فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
'প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আছে দু'টি ঠিকানা। একটি ঠিকানা জান্নাতে, আরেকটি ঠিকানা জাহান্নামে। সে (কাফের ব্যক্তি) যখন মারা যায়, জাহান্নামে প্রবেশ করে আর জান্নাতবাসী তার ঠিকানার অধিকারী হয়ে যায়। এটাই আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর মর্ম যে- (তারাই হবে উত্তরাধিকারী - সুরা মুমিনূন : ১০)।
অর্থাৎ ইমাম নববী রহ. বলতে চাচ্ছেন যে, হাদীছটি দ্বারা বাহ্যত যে অর্থ বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। কেননা তাতে একজনের পাপের বোঝা আরেকজনের উপর ফেলা হয় এবং একজনের বদলে আরেকজনকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرُى
'প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না।
মূলত হাদীছটি দ্বারা রূপক অর্থ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা নিজ অনুগ্রহে মুমিন-মুসলিমদের পাপরাশি মাফ করে দেবেন এবং তাদের থেকে তা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু ইহুদী-নাসারা ও অন্যান্য কাফেরদের কৃত গুনাহ তাদের কাধে থেকে যাবে। তা মাফ করা হবে না। তাদেরকে সে গুনাহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। তাদের জন্য জান্নাতেও একটা স্থান ছিল। কুফরীর কারণে তারা তা থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তা'আলা নিজ মেহেরবানীতে জান্নাতবাসীদেরকে তা দিয়ে দেবেন।
জান্নাতবাসীদেরও একটা স্থান জাহান্নামে আছে। ঈমানের বদৌলতে তারা তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে অদল-বদল। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামের ঠিকানার পরিবর্তে চলে যাবে জান্নাতে। অপরদিকে জাহান্নামীগণ তাদের জান্নাতের ঠিকানার বদলে স্থান পাবে জাহান্নামে। প্রকৃতপক্ষে অদল-বদল নয়; প্রত্যেকেই আপন আপন কর্মফল অনুযায়ী প্রাপ্য ঠিকানায়ই যাবে।
ইমাম নববী রহ. বলেন- মুক্তিপণ কথার অর্থ জাহান্নামে প্রবেশের জন্য তুমি অর্পিত হচ্ছিলে। এ হল তা থেকে তোমার মুক্তির বদলা। কেননা আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের জন্য একটা সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যা দিয়ে তিনি জাহান্নাম ভরবেন। কাফেরগণ যখন তাদের গুনাহ ও কুফরের দরুন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা মুসলিমদের জন্য দৃশ্যত মুক্তিপণস্বরূপ হয়ে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি আমাদের জন্য অনেক বড় আশা জাগানিয়া। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারলে আশা করি আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন।
খ. কুফরের পরিণতি অতি ভয়ংকর। কুফরের সঙ্গে মৃত্যু হলে ক্ষমার আশা নেই। তাই ইহুদী-খৃষ্টান বা অন্য কোনও কাফের সম্প্রদায়ের কুফরী আকীদা-বিশ্বাস যাতে আমাদের মধ্যে ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকা চাই।
২. অন্য এক হাদীছে আছে-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، أَعْطى الله كُلَّ رَجُلٍ مِنْ هَذِه الأمة رَجُلاً مِن الكفار، فيقال له هذَا فِداؤُكَ مِنَ النَّارِ
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা এ উম্মতের প্রত্যেককে একজন করে কাফের দেবেন। তারপর বলা হবে, এ হচ্ছে জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ।
অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তির বিনিময়ে সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং মুসলিম ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়ে জান্নাত দান করা হবে। কী এ কথার অর্থ? ইমাম নববী রহ. বলেন, প্রত্যেক মুসলিমকে যে একজন ইহুদী বা একজন খৃষ্টান দিয়ে বলা হবে এ হল জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তিপণ, এর অর্থ হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত একটি হাদীছ দ্বারা স্পষ্ট হয়। তাতে আছে-
مَا مِنكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا لَهُ مَنزِلَانِ مَنْزِل فِي الْجَنَّةِ، وَمَنْزِل فِي النَّارِ، فَإِذَا مَاتَ، فَدَخَلَ النَّارَ، وَرِثَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنْزِلَهُ، فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
'প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আছে দু'টি ঠিকানা। একটি ঠিকানা জান্নাতে, আরেকটি ঠিকানা জাহান্নামে। সে (কাফের ব্যক্তি) যখন মারা যায়, জাহান্নামে প্রবেশ করে আর জান্নাতবাসী তার ঠিকানার অধিকারী হয়ে যায়। এটাই আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর মর্ম যে- (তারাই হবে উত্তরাধিকারী - সুরা মুমিনূন : ১০)।
অর্থাৎ ইমাম নববী রহ. বলতে চাচ্ছেন যে, হাদীছটি দ্বারা বাহ্যত যে অর্থ বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। কেননা তাতে একজনের পাপের বোঝা আরেকজনের উপর ফেলা হয় এবং একজনের বদলে আরেকজনকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرُى
'প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, তার লাভ-ক্ষতি অন্য কারও উপর নয়, স্বয়ং তার উপরই বর্তায় এবং কোনও ভার বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না।
মূলত হাদীছটি দ্বারা রূপক অর্থ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা নিজ অনুগ্রহে মুমিন-মুসলিমদের পাপরাশি মাফ করে দেবেন এবং তাদের থেকে তা মিটিয়ে দেবেন। কিন্তু ইহুদী-নাসারা ও অন্যান্য কাফেরদের কৃত গুনাহ তাদের কাধে থেকে যাবে। তা মাফ করা হবে না। তাদেরকে সে গুনাহের বোঝা নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। তাদের জন্য জান্নাতেও একটা স্থান ছিল। কুফরীর কারণে তারা তা থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তা'আলা নিজ মেহেরবানীতে জান্নাতবাসীদেরকে তা দিয়ে দেবেন।
জান্নাতবাসীদেরও একটা স্থান জাহান্নামে আছে। ঈমানের বদৌলতে তারা তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। বাহ্যত দেখা যাচ্ছে অদল-বদল। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামের ঠিকানার পরিবর্তে চলে যাবে জান্নাতে। অপরদিকে জাহান্নামীগণ তাদের জান্নাতের ঠিকানার বদলে স্থান পাবে জাহান্নামে। প্রকৃতপক্ষে অদল-বদল নয়; প্রত্যেকেই আপন আপন কর্মফল অনুযায়ী প্রাপ্য ঠিকানায়ই যাবে।
ইমাম নববী রহ. বলেন- মুক্তিপণ কথার অর্থ জাহান্নামে প্রবেশের জন্য তুমি অর্পিত হচ্ছিলে। এ হল তা থেকে তোমার মুক্তির বদলা। কেননা আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের জন্য একটা সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন, যা দিয়ে তিনি জাহান্নাম ভরবেন। কাফেরগণ যখন তাদের গুনাহ ও কুফরের দরুন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তারা মুসলিমদের জন্য দৃশ্যত মুক্তিপণস্বরূপ হয়ে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছটি আমাদের জন্য অনেক বড় আশা জাগানিয়া। ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারলে আশা করি আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন।
খ. কুফরের পরিণতি অতি ভয়ংকর। কুফরের সঙ্গে মৃত্যু হলে ক্ষমার আশা নেই। তাই ইহুদী-খৃষ্টান বা অন্য কোনও কাফের সম্প্রদায়ের কুফরী আকীদা-বিশ্বাস যাতে আমাদের মধ্যে ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকা চাই।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
