মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১০. দুধপান করানোর বিধান

হাদীস নং: ২৮৩
দুধপান এবং বংশ সম্পর্কের কারণে হুরমত সাব্যস্ত হওয়া একই পর্যায়ের
হাদীস নং- ২৮৩

হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ নসব (বংশ) সূত্রে যারা হারাম, দুধপান সূত্রেও তারা হারাম। দুধ সামান্য পান করুক বা অধিক।
عَنِ الْحَكَمِ، عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ شُرَيْحٍ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ، قَلِيلُهُ وَكَثِيرُهُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসের বিষয়বস্তু নিয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম
আবূ হানীফা (র)-এর মতে শিশুর একবার দুধপান এবং তা পেটে প্রবেশই হারাম হওয়ার জন্য যথেষ্ট। হযরত আলী (রা) হযরত ইবন মাসউদ (রা), হযরত ইবন উমর (রা), হযরত ইবন আব্বাস (রা), হযরত হাসান বসরী, হযরত সাঈদ ইবন মুসাইয়্যেব, হযরত তাউস, হযরত আতা, হযরত মাকহুল, হযরত মুহরী, হযরত কাতাদা ও অন্যান্যগণ (র) একই মত পোষণ করেন। হযরত ইবন মুনযির (র) বলেন, অধিকাংশ ফকীহ এতে ঐকমত্য পোষণ করেন।
ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে এক অথবা দুই অথবা পাঁচবারের চেয়ে কমে হারাম হওয়া প্রমাণিত হয় না। তিনি হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন: لا تحرم المصة ولا المصتان (এক অথবা দু'বার দুধপান করার ফলে হারাম হওয়া প্রমাণিত হয় না)। হযরত আয়েশা (রা)-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেছেন, কুরআন মজীদে দশবার চোষার কথা ছিল। এতে পাঁচবার চোষা রহিত হয়ে গিয়েছে এবং পাঁচ বাকী রয়েছে যা আঁ-হযরত (সা)-এর ইনতিকালের পূর্ব পর্যন্ত বহাল ছিল।
হানাফী মাযহাবের স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীসের দলীল রয়েছে। কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ (তোমাদের মাতাগণ যারা তোমাদেরকে
দুধপান করিয়েছেন)। (৪ : ২৩) এতে সাধারণ দুধপান করানোকে হারাম হওয়ার কারণ স্থির কর হয়েছে। এখানে এক বা দু'বার পানের শর্ত নেই। এ অবস্থায় خبرواحد দ্বারা কিভাবে কুরআন মাজীদের উপর শর্ত আরোপ করা যায়? হাদীসসমূহের মধ্যে এ হাদীসও একটি শক্তিশালী দলীল। এতে হারাম হওয়ার জন্য কমবেশির প্রশ্ন উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মুয়াত্তা গ্রন্থে ইমাম মুহাম্মদ (র) সাঈদ ইবন মুসায়্যিব, হযরত উরওয়া ইবন যুবায়ের এবং হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে হাদীস সংকলন করেছেন যাতে একবার দুধপান করাকে হারাম হওয়ার কারণ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিবেক ও জ্ঞান এটাই বলে যে, যে একবারও দুধপান করে, সে যেন (পুরোপুরি) দুধপান করল। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) বলেন, দুধ কম হোক বা বেশি, হারাম হওয়াকে প্রমাণিত করে, যেমন কম হোক অথবা বেশি খেয়ে ফেলা রোযা ভঙ্গের কারণ হয়ে থাকে। হযরত আয়েশা (রা)-এর হাদীস হলো مضطرب যার দ্বারা ইমাম শাফিঈ (র) দলীল পেশ করেছেন। সুতরাং হানাফী মাযহাবই সঠিক।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ২৮৩ | মুসলিম বাংলা