মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৮. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮১
বংশ (সন্তান) বিছানায় অবস্থানকারীর জন্য
হাদীস নং- ২৮১

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন নবজাত সন্তান বিছানার মালিকের অর্থাৎ স্বামীর এবং বিনাকারীর জন্য পায়।
عَنْ حَمَّادٍ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ، وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ফিরাশ (فراش) বিবাহিত স্ত্রী অথবা ক্রীতদাসী। এদেরকে এজন্য فراش বরা হয় যে, যৌন সম্ভোগের জন্য তাদেরকে শোয়ানো হয়ে থাকে। এখানে فراش এর অর্থ এ দুটো নয় যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয়, বরং এখানে صاحب فراش এর অর্থ স্বামী অথবা প্রভু এবং হাদীসে যে বলা হয়েছে, যিনাকারীর জন্য পাথর কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, যিনাকারীর জন্য পাথর নিক্ষেপের শাস্তি। অবশ্য প্রকাশ্য-বাক্য দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। কেননা শুধু পাথর নিক্ষেপ বংশ থেকে বঞ্চিত করে না। এখানে পাথরের অর্থ হলো অকৃতকার্য ও বঞ্চিত হওয়া। আরবের বাক পদ্ধতিতে (محاوره) অকৃতকার্যতাকে পাথর এবং চপেটাঘাত দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। উর্দু ভাষার বাক পদ্ধতিতেও বলা হয়, তার ভাগ্যে আছে মাটি অর্থাৎ তার ভাগ্যে আছে শুধু অকৃতকার্যতা। হাদীসের অর্থ হলো এই যে, বংশের সমস্ত কিছু যেমন উত্তরাধিকার ও অন্যান্য বিষয় স্বামী এবং মুনিবই পাবে, কিন্তু যিনাকারী এগুলো থেকে বঞ্চিত হবে।
এ বিষয়ে ইমাম আবু হানীফা (র), ইমাম মালিক (র) ও ইমাম শাফিঈ (র) এর মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, বংশ প্রমাণের জন্য যৌন সম্ভোগের সম্ভাবনা শর্ত নয়, শুধু বিবাহ হওয়াই বংশ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। বিবাহের ছয় মাসের মধ্যে যে শিশু জন্ম গ্রহণ করবে, সে ঐ স্বামীর ঔরসজাত বলে গণ্য হবে। বংশের সমস্ত অধিকারের হকদার তাকেই মানতে হবে, যিনাকারীকে নয়। মধ্যবর্তী সময়ে সঙ্গমের সম্ভাবনা থাকুক বা না থাকুক।
ইমাম শাফিঈ (র) ও ইমাম মালিক (র) বলেন, আকদের পর যৌন সম্ভোগও শর্ত। নতুবা এরদ্বারা বংশ প্রমাণিত হবে না। কিন্তু বিবেক, যুক্তি, ক্বিয়াস ও অবস্থার প্রেক্ষিতে ইমাম আবূ হানাফী (র) মতামত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। কেননা আকদ যেহেতু যৌন সম্ভোগের প্রমাণ বহন করে এবং এরদিকে আকর্ষণ করে, তাই এটা যৌন সম্ভোগের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে স্থির করা হয়- যা যৌন সম্ভোগের হুকুম বহন করে। যেমন ভ্রমণের কষ্টের কারণে ভ্রমণের কষ্টের সুযোগ হিসেবে কসর ইত্যাদিকে শরীয়তের স্থলাভিষিক্ত মনে করা হয়েছে। এতে কষ্ট হোক বা না হোক। এমনিভাবে এখানে দ্বিতীয় হাদীসের বাক্য مطلق বা শর্তহীন। এতে সম্ভোগের সম্ভাবনার সম্পর্ক কোথায়?
তৃতীয়ত শরীয়তে এর শুধু একটি উদাহরণ নয়, বরং একাধিক উদাহরণ রয়েছে। যেমন একজন বিবাহিতা নারী, যার স্বামী দীর্ঘ দিন থেকে সফরে রয়েছে, এর মধ্যে সে কয়বার ঋতুবতী হয়েছে। এরদ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তার গর্ভাশয় (رحم) বীর্য থেকে শূন্য আছে কিন্তু এতদসত্ত্বেও যদি এ স্বামী তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে। ইদ্দত গর্ভাশয়ের পরীক্ষার জন্য করা হয় যে, এটা বীর্য থেকে শূন্য কিনা। অথচ এ অবস্থায় ইদ্দত পালনের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু এখানে শরীয়ত ইদ্দত পালনকে বাধ্যতামূলক করেছে। কেননা শুধু বিবাহকে যৌন সম্ভোগের স্থলাভিষিক্ত মনে করা হয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান