মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৮. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়
হাদীস নং: ২৭৯
মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করা হারাম
হাদীস নং- ২৭৯
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করার ব্যাপারে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করার ব্যাপারে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
عَنْ مَعْنٍ، قَالَ: وَجَدْتُ بِخَطِّ أَبِي عَوْفٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: «نُهِينَا أَنْ نَأْتِيَ النِّسَاءَ فِي مَحَاشِهِنَّ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সহীহ রেওয়ায়েত অনুযায়ী মলদ্বারে সঙ্গম করা হারাম। এর উপর শরীয়তের কঠোর হুঁশিয়ারী ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কখনো এটাকে ছোট ধরনের লাওয়াতাত বলা হয়েছে। সুতরাং সুনানে আহমদ ও তাহাভীতে আমর ইবন শুআয়ব (রা) সূত্রে মরফু হাদীস বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সা)-এর নিকট এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করে থাকে। তখন তিনি বলেনঃ এটা এক প্রকার মৈথুন। ইমাম আহমদ, আবু দাউদ ও নাসাঈ হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে মরফু হাদীস বর্ণনা করেন مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا (যে মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করে, সে অভিশপ্ত)। যে মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করেছে অথবা যে গণকের কাছে গমন করে এবং এর সত্যতা প্রমাণ করে, তবে সে ঐ বস্তুর সাথে কুফরী করে যা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে (অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের উপর)। সিহাহ সিত্তাহ গ্রন্থে এ হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। لا يَنْظُرُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَى رَجُلٍ أَتَى امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا (আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন এরূপ ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না, যে তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করেছে)।
এ সমস্ত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায় সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম এ কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
সাহাবীগণের মধ্যে হযরত ইবন উমর (রা) অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। সুতরাং বুখারী শরীফে কুরআন মজীদের আয়াত فَأْتُوا حَرْثَكُمْ এর তাফসীরে হযরত ইবন উমর (রা) থেকে তাফসীরে বর্ণিত আছেঃ يأتها فِي دُبُرِهَا এবং তিবরানীতেও এর ব্যাখ্যা রয়েছে। ইমামগণের মধ্যে ইমাম মালিক-এর মাযহাবও এটা এবং তিনি এটা জায়েয মনে করেন। কিন্তু চূড়ান্ত নীরিক্ষায় দেখা যায় যে, হযরত ইবন উমর (রা)-ও এটা হারাম জানতেন। তাই ইমাম বুখারী (র)-এর রচিত ইতিহাস গ্রন্থ কিতাবুল কুনায় এবং ইমাম আবু হানীফা (র) থেকে বর্ণিত نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবন উমর (রা)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে : قبلا ودبرا فى الماتى وحده لاغير “আগে-পিছে যেদিক থেকে ইচ্ছা হোক না কেন, কিন্তু স্থান একটি (যোনী) হতে হবে, অন্য কোন স্থান হবে না।"
সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর সঠিক মাযহাব হলো এই যে, মলদ্বারে সঙ্গম করা হারাম। ইমাম মালিক (র) সম্পর্কেও পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, অবশেষে তিনিও বিষয়টি হারাম হওয়ার ব্যাপারে তাঁর মতামত পেশ করেছেন। খতীব বাগদাদী ইসরাঈল ইবন রূহ (র)-এর সূত্রে এক রেওয়ায়েত করেন যে, তিনি বলেন, আমি ইমাম মালিক (র)-এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। তখন তিনি বলেন حَرْثَ হলে কৃষির জায়গা, সুতরাং জননেন্দ্রীয় (যোনী) থেকে বাইরে না যাওয়া। এবার তিনি বলেন, হে আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম মালিক)। লোকজন বলে থাকে যে, আপনি এটা জায়েয বলে মত পোষণ করেন। তখন ইমাম মালিক (র) বলেন, তারা আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে থাকে। সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত রেওয়ায়েতের উপর নির্ভর করে তাঁর পুরাতন ছাত্রগণ এটা হারাম হওয়ার পক্ষে তাঁর মাযহার নির্ধারণ করেন। তাই আল্লামা ইবন কায়্যিম অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে বলেছেন, এখন وطى فى الدبر -এর পক্ষে মত পোষণকারী কেউ নেই এবং যারা পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরাম থেকে এ রেওয়ায়েত করেছেন, তারা ধোকার মধ্যে রয়েছেন।
উপরোক্ত আলোচনায় এটাও উল্লেখ্য যে, নারী তার স্বামীর এবং স্বামী তার স্ত্রীর গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে কি না? এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো এই এটা বৈধ, হারাম নয়। কেননা ইবন সাদ তাবাকাতে, তিবরানী কবীরে সাদ ইবন মাসউদ (রা) থেকে মরফূ হাদীস বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সা) বলেছেন : إن الله تعالى جعلها لك لباسا وجعلك لها لباسا، وأهلي يرون عورتي، وأنا أرى ذلك منهم (নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তোমার স্ত্রীকে তোমার জন্য পোশাক স্বরূপ বানিয়েছেন এবং তোমাকেও তার জন্য পোশাক স্বরূপ বানিয়েছেন। আমার স্ত্রীগণ আমার গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ করে এবং আমিও তাদের গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ করি)। এতে পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক স্বরূপ)। এমনিভাবে সুনানে আরবাআর মধ্যে বাহয ইবন হাকীম (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, মুআবিয়া ইবন হায়দা (রা) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) ইরশাদ করেন احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ (স্বীয় গোপন অঙ্গ তোমার স্ত্রী ও তোমার দাসী ছাড়া অন্য সবার থেকে হিফাযত কর)।
অবশ্য উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) থেকে এর বিপরীত প্রমাণও রয়েছে। তিনি বলেছেন, তিনি আঁ হযরত (সা)-এর গোপন অঙ্গ দেখেননি। তাই সঙ্গমের সময় স্ত্রীর গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ করা সঙ্গমের আদব বিরোধী বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। ইবন আদী হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে মরফু হাদীস বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার স্ত্রী বা দাসীর সাথে সঙ্গম করবে, তখন যেন তার গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ না করে। কেননা এতে চোখের জ্যোতি বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। মোট কথা শরীয়তে সাধারণভাবে এটা জায়েয আছে এবং কুরআনের আয়াতেও এর দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। তবে আদব এটাই যা উপরে বলা হয়েছে।
এ সমস্ত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায় সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম এ কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
সাহাবীগণের মধ্যে হযরত ইবন উমর (রা) অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। সুতরাং বুখারী শরীফে কুরআন মজীদের আয়াত فَأْتُوا حَرْثَكُمْ এর তাফসীরে হযরত ইবন উমর (রা) থেকে তাফসীরে বর্ণিত আছেঃ يأتها فِي دُبُرِهَا এবং তিবরানীতেও এর ব্যাখ্যা রয়েছে। ইমামগণের মধ্যে ইমাম মালিক-এর মাযহাবও এটা এবং তিনি এটা জায়েয মনে করেন। কিন্তু চূড়ান্ত নীরিক্ষায় দেখা যায় যে, হযরত ইবন উমর (রা)-ও এটা হারাম জানতেন। তাই ইমাম বুখারী (র)-এর রচিত ইতিহাস গ্রন্থ কিতাবুল কুনায় এবং ইমাম আবু হানীফা (র) থেকে বর্ণিত نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবন উমর (রা)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে : قبلا ودبرا فى الماتى وحده لاغير “আগে-পিছে যেদিক থেকে ইচ্ছা হোক না কেন, কিন্তু স্থান একটি (যোনী) হতে হবে, অন্য কোন স্থান হবে না।"
সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর সঠিক মাযহাব হলো এই যে, মলদ্বারে সঙ্গম করা হারাম। ইমাম মালিক (র) সম্পর্কেও পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, অবশেষে তিনিও বিষয়টি হারাম হওয়ার ব্যাপারে তাঁর মতামত পেশ করেছেন। খতীব বাগদাদী ইসরাঈল ইবন রূহ (র)-এর সূত্রে এক রেওয়ায়েত করেন যে, তিনি বলেন, আমি ইমাম মালিক (র)-এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। তখন তিনি বলেন حَرْثَ হলে কৃষির জায়গা, সুতরাং জননেন্দ্রীয় (যোনী) থেকে বাইরে না যাওয়া। এবার তিনি বলেন, হে আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম মালিক)। লোকজন বলে থাকে যে, আপনি এটা জায়েয বলে মত পোষণ করেন। তখন ইমাম মালিক (র) বলেন, তারা আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে থাকে। সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত রেওয়ায়েতের উপর নির্ভর করে তাঁর পুরাতন ছাত্রগণ এটা হারাম হওয়ার পক্ষে তাঁর মাযহার নির্ধারণ করেন। তাই আল্লামা ইবন কায়্যিম অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে বলেছেন, এখন وطى فى الدبر -এর পক্ষে মত পোষণকারী কেউ নেই এবং যারা পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরাম থেকে এ রেওয়ায়েত করেছেন, তারা ধোকার মধ্যে রয়েছেন।
উপরোক্ত আলোচনায় এটাও উল্লেখ্য যে, নারী তার স্বামীর এবং স্বামী তার স্ত্রীর গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে কি না? এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো এই এটা বৈধ, হারাম নয়। কেননা ইবন সাদ তাবাকাতে, তিবরানী কবীরে সাদ ইবন মাসউদ (রা) থেকে মরফূ হাদীস বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সা) বলেছেন : إن الله تعالى جعلها لك لباسا وجعلك لها لباسا، وأهلي يرون عورتي، وأنا أرى ذلك منهم (নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তোমার স্ত্রীকে তোমার জন্য পোশাক স্বরূপ বানিয়েছেন এবং তোমাকেও তার জন্য পোশাক স্বরূপ বানিয়েছেন। আমার স্ত্রীগণ আমার গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ করে এবং আমিও তাদের গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ করি)। এতে পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য পোশাক স্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক স্বরূপ)। এমনিভাবে সুনানে আরবাআর মধ্যে বাহয ইবন হাকীম (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, মুআবিয়া ইবন হায়দা (রা) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) ইরশাদ করেন احْفَظْ عَوْرَتَكَ إِلاَّ مِنْ زَوْجَتِكَ أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ (স্বীয় গোপন অঙ্গ তোমার স্ত্রী ও তোমার দাসী ছাড়া অন্য সবার থেকে হিফাযত কর)।
অবশ্য উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) থেকে এর বিপরীত প্রমাণও রয়েছে। তিনি বলেছেন, তিনি আঁ হযরত (সা)-এর গোপন অঙ্গ দেখেননি। তাই সঙ্গমের সময় স্ত্রীর গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ করা সঙ্গমের আদব বিরোধী বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। ইবন আদী হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে মরফু হাদীস বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার স্ত্রী বা দাসীর সাথে সঙ্গম করবে, তখন যেন তার গোপন অঙ্গ প্রত্যক্ষ না করে। কেননা এতে চোখের জ্যোতি বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। মোট কথা শরীয়তে সাধারণভাবে এটা জায়েয আছে এবং কুরআনের আয়াতেও এর দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। তবে আদব এটাই যা উপরে বলা হয়েছে।
