মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৬. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৮
আইয়্যামে তাশরীকে রোযা রাখা নিষেধ
২১৮। হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আইয়ামে তাশরীকের দিন (অর্থাৎ যিলহজ্ব মাসের ১১,১২,ও ১৩ তারিখ) রোযা রাখার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।
একই সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ দিন রোযা রাখা থেকে নিষেধ করেছেন যেদিন রমযান হিসেবে সন্দেহ করা হয় (অর্থাৎ ২৯শে শাবান মেঘ ও ধূলিবালির কারণে চাঁদ না দেখার কারণে যদি সন্দেহ হয় যে, এই রাত কি ১লা রমযানের না শাবানের ৩০ তারিখের ? সুতরাং আগামীকাল যেহেতু সন্দেহের দিন, তাই রোযা রাখা নিষেধ)।
عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ قَزْعَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ صِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ» وَبِهِ: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ صِيَامِ الْيَوْمِ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ أَنَّهُ مِنْ رَمَضَانَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসে يوم الشك বা সন্দেহের দিন রোযা রাখার ব্যাপারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এই দিন রোযা না রাখার ব্যাপারে আরো অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। তিরমিযী, নাসাঈ ও অন্যান্য হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি এই দিন রোযা রাখে, সে যেন আবুল কাসিম অর্থাৎ হুযূর (সা)-এর সাথে নাফরমানী করল। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম বিষয় হলো এই যে, রমযানের এক অথবা দু'দিন পূর্বে রোযা রাখার ফলে রমযানের রোযার অতিরিক্ত বা সংযোজন মনে হয় এবং খ্রীস্টানদের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি হয়। কেননা তাদের উপর গ্রীষ্মকালে রোযা ফরয হয়েছিল এবং এটা তাদের জন্য অসহনীয় ছিল। এইজন্য তারা এই রোযাকে নির্ধারিত স্থান থেকে হটিয়ে এর উপর কয়েকটি অতিরিক্ত রোযা করে নিয়েছে। সুতরাং এই অবস্থা যদি চালু হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ লোক এই ভুলের শিকার হয়ে পড়বে যে, এই রোযাও ফরয। সুতরাং এই দৃষ্টিকোণ থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মতানৈক্য হলো এই যে, উক্ত নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসের কারণে এই দিন রোযা রাখা মাকরূহ বলা হয়েছে। কিন্তু নফল রোযা মাকরূহ নয়; বরং এটা মুস্তাহাব। কেননা অন্য হাদীসে এই নিষেধাজ্ঞার বিধান থেকে নফল রোযা পৃথক করার বিষয়ে রিওয়ায়েত বর্ণিত আছে। যেমনঃ
قوله عليه السلام لا تـقـدمـوا رمضـان بـصـوم يوم او يومين الا رجل كان يصوم صوما فيصومه
“রমযানের এক অথবা দু'দিন পূর্বে রোযা রাখবে না। তবে ঐ ব্যক্তি, যে যে কোন দিন রোযা রাখায় অভ্যস্ত, সে যেন ঐ দিন রোযা রাখে।" অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কোন দিন রোযা রাখার অভ্যাস করে ফেলে, যেমন সোমবার দিন, তা হলে ঐ ব্যক্তি তার অভ্যাস অনুযায়ী ঐ দিন রোযা রাখবে। অথবা এটা বিশেষভাবে উলামায়ে কিরামের জন্য জায়েয় যাঁরা এটা প্রচার করবেন না। সাধারণ লোকদের জন্য সন্দেহের দিন (يوم الشك) অর্ধ দিবস পর্যন্ত অপেক্ষা করা জায়েয। এরপর তারা ইফতার করবে। নতুবা সাধারণ লোকদের জন্য এই নফল রোযার অভ্যাস অনিষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই নফল রোযাও একটি বিশেষ অবস্থার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ প্রত্যেক মাস ইবাদত অর্থাৎ রোযার উপর শেষ করা সুন্নত। সুতরাং এই সম্মান থেকে শা'বান কেন শূন্য থাকবে ? সাধারণের জন্য যেহেতু অন্য আশংকা রয়েছে, তাই তাদের জন্য এটা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ২১৮ | মুসলিম বাংলা