মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৫. যাকাত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৮
রিকাযের বিধান
১৯৮। হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যা আল্লাহ্ খনির মধ্যে প্রোথিত করে রেখেছেন বা জমির মধ্যে তৈরী হয়ে থাকে, তাকে রিকায বলে।
عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّكَازُ مَا رَكَزَهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي الْمَعَادِنِ الَّذِي تَنْبُتُ فِي الْأَرْضِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রশ্ন হতে পারে রিকায় (ركاز) কি? রিকায় ঐ বস্তুকে বলা হয় যা আল্লাহ খনির মধ্যে তৈরি করে থাকেন। এটা জমির মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে। ইমাম শাফিঈ, ইমাম মালিক এবং ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মধ্যে রিকায় (ركاز) সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। মতপার্থক্যের মূল বিষয় হলো এই যে, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (র) খনির মধ্যে যাকাত আরোপ করে থাকেন এবং রিকায়কে আইয়ামে জাহিলিয়াতের গুপ্তধনের অন্তর্ভুক্ত করে এতে এক-পঞ্চমাংশ (خمس) যাকাতের বিধান আরোপ করে থাকেন। ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (র) নিজেদের মাযহাবের স্বপক্ষে মুয়াত্তা ইমাম মালিক থেকে বিলাল ইবনে হারিস আল-মুযানী (রা) বর্ণিত হাদীস পেশ করে থাকেন। উক্ত হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা) ফরা' নামক খনিসমূহ হযরত বিলাল ইবনে হারিস আল-মুযানীর নিকট জায়গীর হিসেবে প্রদান করেন। কিন্তু ঐ খনি থেকে যাকাত ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করা হয়নি। ইমাম আবূ হানীফা (র) তাঁর মতামতের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন থেকে দলীল পেশ করেছেন। মূলত আরবী ركاز শব্দের অভিধানিক অর্থ নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মাটির ভিতর থেকে যে মালামাল বের করা হয়ে থাকে, তা তিনভাগে বিভক্ত। কানয (كنز), মাদান (معدن) এবং বিকায (ركاز)।
كنز ঐ কোষাগারকে বলা হয় যা মানুষ নিজেরাই মাটির ভিতর পুঁতে রাখে। معدن ঐ খনিকে বলা হয় যা জমি সৃষ্টির সাথে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে ركاز হলো আম তথা সাধারণ অর্থবোধক শব্দ এবং কানয ও মাদান উভয়টি এর অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ "তোমরা অবশ্যই এটা জেনে রাখ যে, গনীমত হিসেবে তোমরা যা লাভ করবে, এর এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য। "
প্রকাশ থাকে যে, গুপ্তধন এবং এর এলাকার ভূমি উভয়ের উপর গনীমত (غنيمت) শব্দ আরোপিত হয়ে থাকে। কেননা এটা প্রথমে কাফিরদের অধিকারে ছিল। অতঃপর মুসলমানদের অধিকারে এসেছে। যখন এ সমস্ত গনীমতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তখন এর উপর এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব হয়েছে। সুন্নতের দলীল হিসেবে সিহাহ সিত্তাহ হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে ! العجماء جبار والبير جبار والمعدن جبار وفي الركاز الخمس পশু কূপ এবং খনির মধ্যে কিছু ধার্য করা হয়নি। কিন্তু রিকায় (ركاز) -এর মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের বিধান রয়েছে।” সুতরাং ركاز -এর আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করে শুধু গুপ্তধনের (دفينة) অর্থ গ্রহণ করার মধ্যে কোন গুরুত্ব বহন করে না। বিশেষ করে যখন হুযূর (সা)-এর বর্ণনার দ্বারা এর স্বপক্ষে দলীল পাওয়া যায়। ইমাম মুহাম্মদ (র) স্বীয় হাদীস গ্রন্থ মুয়াত্তায় এবং ইমাম বায়হাকী (র) বর্ণনা করেন যে, যখন হুযূর (সা) বলেছেনঃ রিকাযে (ركاز ) এক-পঞ্চমাংশ দিতে হবে, তখন জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! রিকায (ركاز ) কি ? তখন তিনি বললেন, রিকায (ركاز) ঐ সম্পদকে বলা হয় যা আল্লাহ জমিতে খনির মধ্যে আকাশ ও পৃথিবী তৈরির সময় সৃষ্টি করেছেন।
এবার শাফিঈ মাযহাবের দলীলের জওয়াব হলো এই যে, ঐ হাদীসে বিলাল ইবনে হারিস আল-মুযানী প্রথমত মুনকাতি' (منقطع)। যেমন আবূ উবাইদ কিতাবুল আমওয়ালে এর ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়া কোথায় এটা প্রকাশ করা হয়েছে, যে খনি থেকে যাকাত আদায় করতে হবে এ ব্যাপারে হুযূর (সা) নির্দেশ দিয়েছেন। বরং কিয়াস এটাই বলে যে, ইজতিহাদের মাধ্যমে এই মতামত দেয়া হয়েছে। কেননা এই বিষয়ে নবী করীম (সা) থেকে কোন রিওয়ায়েত নেই।
হানাফী মাযহাবের স্বপক্ষে কিয়াসের দৃষ্টিকোণ থেকে দলীল হলো এই যে, খনি পূর্ণাঙ্গভাবে গনীমতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা প্রথমত এটা কাফিরদের অধিকারে ছিল। অতঃপর মুসলমানগণ স্বীয় ক্ষমতার বলে ঐ খনি অধিকার করার ফলে তা গনীমতের অন্তর্ভুক্ত হয়। যেহেতু গনীমতে এক-পঞ্চমাংশ দেওয়ার বিধান রয়েছে, তাই খনির মধ্যেও এক-পঞ্চমাংশ (خمس) দিতে হবে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ১৯৮ | মুসলিম বাংলা