মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৩
তাহাজ্জুদ নামাযের বর্ণনা
১৭৩। হযরত আবু জাফর (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ)-এর রাতের নামায ছিল তের রাকাআত। এর মধ্যে তিন রাকাআত বিতর এবং দু'রাকাআত ফজরের সুন্নত ছিল।
عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ «أَنَّ صَلَاةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاللَّيْلِ كَانَتْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنْهُنَّ ثَلَاثُ رَكَعَاتِ الْوِتْرِ، وَرَكْعَتَيِ الْفَجْرِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসের দ্বারা তাহাজ্জুদের নামায আট রাকাআত প্রতীয়মান হয়। এর সাথে বিতর অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসে হানাফী মাযহাবের সত্যতা প্রমাণ করে। তাহাজ্জুদ সম্পর্কে তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) পবিত্র মাহে রমযান ও রমযানের বাইরে এগার রাকাআতের অধিক তাহাজ্জুদ পড়তেন না। চার রাকাআত পড়তেন যার সময়ের লীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রশ্নের অবকাশ নেই। অতঃপর তিন রাকাআত (বিতর) পড়তেন। তিরমিযী এই হাদীসকে হাসান ও সহীহ বলেছেন। তাহাজ্জুদ সম্পর্কে মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের শেষে বলা হয়েছে, ثم أوتر بثلث অর্থাৎ “এরপর তিন রাকাআত বিতর আদায় করেন।” উপরোক্ত দু'টি হাদীসের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, বিতর তিন রাকাআত। তবে তিন রাকাআত থেকে কমবেশির রিওয়ায়েতে ঐ সময়ের কথা বলা হয়েছে, যখন বিতর সম্পর্কে স্থীর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অতঃপর তিন রাকাআত হিসেবে চূড়ান্তভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং এর উপর আমল চলতে থাকে। সুতরাং এই সমস্ত সহীহ হাদীস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ এর বিরোধিতা করে বলে যে, তিন রাকাআত সম্পর্কে কোন হাদীস নেই, তা হলে কোন বিবেকবান ব্যক্তি এটা গ্রহণ করতে সম্মত হবে না।

বস্তুত ফজরের সুন্নত তাহাজ্জুদ নামাযের অন্তর্ভুক্ত। শুধু একই সময় হওয়ার কারণে এবং অধিকাংশ রিওয়ায়েত অনুযায়ী হুযূর (সা) এরপর আরাম করতেন না- এই কারণে। রিওয়ায়েতে বলা হয়েছে : بعد تبين الفجر অর্থাৎ “সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পর তিনি সুন্নত আদায় করেন।" আবার, কোন কোন রিওয়ায়েতে বলা হয়েছে بين الندائين অর্থাৎ "আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে" এই সুন্নত পড়া হয়। মোট কথা, সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, ফজরের সুন্নত তাহাজ্জুদের সাথে আদায় করা হয়নি; বরং সুবহে সাদিকের পর তা পড়া হয়।
তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে বিভিন্ন বিওয়ায়েত পাওয়া যায়। এতে তের, এগার, সাত ও পাঁচ রাকাআতের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে তের রাকআতের অধিক কোন বর্ণনা নেই। এ ছাড়া তাহাজ্জুদ হুযূর (সা)-এর উপর ফরয ছিল, না উম্মতের উপরও ফরয ছিল, এটা নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো এই যে, তাহাজ্জুদ শুধু আঁ হযরত (সা)-এর উপর ফরয ছিল, অথবা উম্মতের উপরও, কিন্তু পরে তা রহিত করা হয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান